Home   |   About   |   Terms   |   Contact    
RiyaButu
A platform for writers

তিন্নি


Bengali Short Story


All Bengali Stories    45    46    47    48    49    50    51    52    (53)     54   

লেখক - সমরেশ মুখোপাধ্যায়, মণিপাল, কর্ণাটক

তিন্নি
লেখক - সমরেশ মুখোপাধ্যায়, মণিপাল, কর্ণাটক
১৯-০৮-২০১৯ ইং

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ আমাদের এই ওয়েবসাইট ( RiyaButu.com )-এ প্রকাশিত গল্পগুলির মধ্যে থেকে কিছু গল্প নিয়ে এবছরই প্রকাশিত হবে আমাদের 'রিয়াবুটু'র গল্প'।
--------------------------



◕ তিন্নি

টুঙ্কু, বাপন, সোনাই - এসব ডাক নাম। পাড়ার দুর্গাপুজোর সুভেনিরের ভেতরের পাতায় তলার দিকে - যাদের বাদ দিয়ে চলে না - শিরোনামে এসব নাম পদবী ছাড়াই ছাপা হয়। দু এক লাইনেই শেষ। সুভেনিরের বেশিরভাগ পাতা জুড়ে থাকে বিজ্ঞাপন, যা কেউ পড়েও না। যারা বিজ্ঞাপন দেয়, তারাও তা জানে। তবু দেয়। এসব কেবল পরিচিতি‌র সুবাদে অনিচ্ছাকৃত অনুদান।

কিন্তু টুঙ্কু, বাপনের মতো ছোটদের কাছে ঐ তিন লাইনের গুরুত্ব অনেক। লক্ষ্মী পুজোর দিন সুভেনির বেড়িয়েছে। প্যান্ডেলে পাতা ত্রিপলে গোটা দশেক কচি একটা সুভেনিরের ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়েছে। নিজের নাম দেখে শিশু কণ্ঠের উৎসাহিত আওয়াজ ওঠে, এই তো আমার নাম। ছাপার অক্ষরে নিজের নাম দেখে উল্লাস অনুভবের মাধ্যমেই হয়তো নাম-মাহাত্ম্য উপলব্ধির হাতেখড়ি হয়। ভবিষ্যতে যার অমোঘ প্রভাব হয়তো ওদের কাউকে তাড়িয়ে বেড়াবে।

ছ বছরের তিন্নি কয়েকবার খুঁটিয়ে দেখেও ওর নাম দেখতে পায়নি। দল থেকে সরে এসে একাকী একটা চেয়ারে বসেছিল ও। দিলীপকাকু তিন্নির পাশে এসে বসে বলেন, এমা, পুজোর দিনে তিন্নির মুখ এমন ভার কেন? পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকায় তিন্নি। তার প্রতিমা‌র মতো সুন্দর মুখ চাপা অভিমানে টসটস করছে। ধীর স্বরে বলে, বইতে আমার নাম নেই। দিলীপকাকুই ছিলেন সুভেনিরের দায়িত্বে। তাই এই বিচ্যুতিতে উনি অত্যন্ত লজ্জিত হয়ে এত্তবড় জিভ কেটে বলেন, এমা তাই নাকি? এহেঃ, তাহলে তো বড় ভুল হয়ে গেছে। আচ্ছা আমি এক কাজ করছি। এখনো সুভেনির বিতরণ শুরু হয়নি। আমি নিজে তোর নাম পেন দিয়ে সব কটা সুভেনিরে লিখে দিচ্ছি। ঠিক আছে? মন খারাপ ক‍রে না সোনা।

দিলীপকাকু‌র আন্তরিকতা তিন্নির শিশু মনকেও স্পর্শ করে। সত্যিই তো, ভুল তো হতেই পারে। পরক্ষণেই মনে হয়, এখন আর হাতে লিখেই বা কি হবে? বন্ধুরাতো সবাই জেনেই গেছে আমার নাম নেই। এখন লিখলেও ওতে সবার নাম থাকবে ছাপার অক্ষরে আর আমারটাই শুধু পেনে। ফ্যাকাসে হাসে তিন্নি। দিলীপকাকু এই অস্বস্তিকর প্রসঙ্গ বদলাতে বলেন, ঐ দ্যাখ, তিন্নি, আইসক্রিম-ওলা এসেছে, চল আমরা আইসক্রিম খাই। তুই কী খাবি?

একটা অরেঞ্জ ক্যান্ডি চুষতে চুষতে বাড়ির দিকে হাঁটা দেয় তিন্নি। কাছেই বাড়ি। রাস্তার পাশে রায়বাড়ির রকের কাছে এসে থমকে পড়ে তিন্নি। মনে পড়ে যায় চতুর্থীর সকালের ঘটনাটা।

পুজো কমিটি থেকে বিশ পয়সার কুপনের কুড়ি পাতার এক এক‌টা বই ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে পাড়ার কচি কাঁচাদের। ওরা মৌমাছি বাহিনী। এমন কিছু পয়সা ওতে আসে না কিন্তু এভাবে ওদের পাড়ার পুজোয় জড়িয়ে রাখা হয়। অচেনা কেউ গেলে ওরা বই হাতে পিছু নেয়। কেউ কেউ নেয়। অনেকেই নেয় না। পাড়ায় পাড়ায় পুজো। সব জায়গাতেই ক্ষুদের দলের উৎসাহের সীমা নেই। কত কুপন নেবে। সবাই ছোট, তায় পাড়ার মধ্যে। তাই, নিন না কাকু, নিন না কাকু, করে সাথে সাথে হাঁটলেও ইচ্ছা না হলে মুখে কিছু না বলে অনেকেই নির্বিকার ভাবে চলে যায়। তারা জানে খানিক এসেই ওরা রণে ভঙ্গ দেবে। পাকড়াও করবে অন্য কাউকে। কেউ আবার কুপন নিয়ে দশমী অবধি রেখে দেয়। কেউ গছাতে এলে পকেট থেকে বের করে দেখা‌য়। ওদেরই কেউ আগে গছিয়েছে। ওরা জিভ কেটে পালায়।

তিন্নির ছোট থেকেই মান অপমান বোধ খুব প্রখর। বন্ধুদের কুপন বিক্রি ও খুঁটিয়ে দেখেছে। কেউ নিঃশব্দে ভাবলেশহীন মুখে চলে যায়। কেউ মাছি তাড়ানোর ভঙ্গি করে, যেন ভিখারি পয়সা চাইছে। তিন্নির খুব মনে লাগে। দুদিন হয়ে গেছে স্বপন‌কাকু একটা কুপনের বই দিয়েছে। কিন্তু এইসব দেখে, প্রত্যাখ্যানের আশঙ্কায়, এখনও অবধি ও মুখ ফুটে কাউকে বলতেই পারলো না, তো বেচবে কি। একবার ভাবে স্বপনকাকুকে গিয়ে বলে, আপনি এটা ফেরৎ নিয়ে নিন, আমার দ্বারা হবে না। আবার ভাবে তাহলে তো কাকলি বা তাতানের কাছে মান ইজ্জত বলে আর কিছু থাকবে না। এর মধ্যেই ওরা একটা বই শেষ করে দ্বিতীয় বইয়ের অর্ধেক বেচে ফেলেছে। সবাই ভাববে তিন্নি একটা ঢেঁড়স। একটা বই বেচতে পারলেই ক্লাব থেকে আলুর দম খাওয়ানো হবে। সেটা এমন কিছু বড় ব্যাপার নয়। মা তার থেকে ঢের ভালো আলুর দম বানায়। তবে স্বোপার্জিত আলুর দমের স্বাদ‌ই আলাদা।

বাড়ি গিয়ে তিন্নি মায়ের কাছে আবদার করে, তুমিই পুরো বইটা নিয়ে নাও না মা। মায়ের হাসি পায়। তিনি জানেন তার লাজুক মেয়ের স্বভাব। ষষ্ঠীর দিন সন্ধ্যায় তো হিসাব দিতে হবে, তখন যা বেঁচে থাকবে তিনি না হয় নিয়ে নেবেন। কিন্তু তিনি চান তিন্নিও একটু চেষ্টা করুক। এত মুখচোরা হলে কী চলে। তিনি কৃত্রিম ছলনা করে বলেন, ইইইঃ, ইল্লি আর কী! বেচতেই যদি না পারবে তো নিয়েছ কেন? আর নিয়েছ যখন তখন একটু চেষ্টা করো দ্যাখো না। পাড়ার পুজোয় তোমারও কিছু অবদান থাকলে তো ভালোই।

চতুর্থীর দিন সকালে তিন্নি এই রকটায় একটা সাদা ফ্রক পড়ে পা ঝুলিয়ে বসে ছিল। ছোট্ট একটা পরীর মতো লাগছিল ওকে। মধ্য তিরিশের এক সুদর্শন ভদ্রলোক আসছিলেন। চোখে রোদ চশমা। এই রকের কাছে এসে উনি একটু দাঁড়ালেন। একটা জুতোর ফিতে আলগা হয়ে গেছে। হাতের এ্যাটাচিটা রকে রেখে পা টা রকের কোনায় তুলে তিনি জুতোর ফিতে‌ বাঁধছিলেন। তিন্নির মনে হল এনাকে বলা যায়। টুপ করে নেমে তাঁর।পাশে গিয়ে তিন্নি কচি উজ্জ্বল মুখটা তুলে রিনরিনে গলায় বলে, কাকু, একটা কুপন নিন না।

ভদ্রলোক কিছুক্ষণ স্থির দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে রইলেন। তিন্নি ততক্ষণে সাহস ক‍রে প্রথম কুপনটা ছিঁড়ে ওর ফর্সা কচি হাতে বাড়িয়ে ধরেছে। দুচোখে তিরতিরে দ্বিধা। দু হাঁটুতে হাতের ভর দিয়ে উনি তিন্নির মাথার কাছে ঝুঁকে এসে খুব নরম ভাবে বললেন,

-তোমার নাম কী?

-তিন্নি

-বাঃ, খুব মিষ্টি নাম তো! এটা কী?

-পুজোর কুপন। কুড়ি পয়সা দাম। আপনি একটা নিন না। বলার ভঙ্গিতে প্রচ্ছন্ন আকুলতা।

-আমি এটা নিলে কি তোমার ভালো লাগবে?

তিন্নির মায়াময় চোখে এই প্রথম দেখা যায় প্রত্যাশার ঝিলিক। বড় করে মাথাটা একপাশে হেলিয়ে সায় দেয় ও। ডান হাতের দুটো আঙ্গুলে কুপনটা তখনো প্রজাপতির মতো ধরা।

-আচ্ছা তিন্নি আমি কী করলে তুমি খুব খুশি হবে?

তিন্নি একথার অর্থ বুঝতে না পেরে দিশেহারা ভাবে তাকিয়ে থাকে।

-তোমার ঐ বইতে আর কটা কুপন আছে?

-উনিশটা। দু দিন হয়ে গেল স্বপনকাকু দিয়েছে। আমি এখনও অবধি একটাও বেচতে পারি নি। নিজের ব্যর্থতা স্বীকার করতে গিয়ে লজ্জায় ছোট্ট মুখটা করুণ দেখায়।

-যদি আমি তোমার গোটা বইটা নিয়ে নি? তুমি কি তাহলে খুউউব খুশি হবে? এবার খুব‌টা একটু টেনে বলেন উনি।

একটা সূর্যমুখীতে যেন নিমেষে খেলা করে যায় শতেক সূর্যের ঝলক। তবু যেন ঠিক বিশ্বাস হয় না। আপনি পুরো বইটাই নেবেন? সত্যি?

-নিশ্চয়ই, এই নাও, বলে ভদ্রলোক দুটি নতুন দু টাকার নোট বাড়িয়ে দেন তিন্নির দিকে। একটা কচি হাত কুপনের বইটা তুলে দেয় বাড়িয়ে থাকা এক পরিণত হাতে। তিন্নির মনে হয় কাকুটা কী ভালো!

কুপনের বইটা পকেটে ফেলে, উনি তিন্নির একমাথা কোঁকড়া চুলে হাত বুলিয়ে বলেন, ভালো থেকে তিন্নি। পুজোয় খুব আনন্দ করো। মাত্র চার টাকায় উনি যা অনাবিল আনন্দ পেলেন তা ওকে বলা যায় না। তাই হাসি মুখে তিন্নিকে হাত নেড়ে চলে যান উনি। আনন্দে আত্মহারা হয়ে তিন্নি ছুট লাগায় বাড়ির দিকে। এক্ষুনি গিয়ে বলতে হবে মাকে, জানো মা, আজ কী হয়েছে? (সমাপ্ত)

গোয়েন্দা গল্প ও উপন্যাস:
নয়নবুধী   
মাণিক্য   
সর্দার বাড়ির গুপ্তধন রহস্য   
প্রেমিকার অন্তর্ধান রহস্য   
লুকানো চিঠির রহস্য   
কান্না ভেজা ডাকবাংলোর রাত    


All Bengali Stories    45    46    47    48    49    50    51    52    (53)     54   


## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers. The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation. Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##


◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717