Home   |   About   |   Terms   |   Contact    
RiyaButu
A platform for writers

প্রেমিকার অন্তর্ধান রহস্য


ত্রিপুরার বাংলা গোয়েন্দা গল্প


All Bengali Stories    22    23    24    25    26    27    28    29    30    31    (32)     33      

-হরপ্রসাদ সরকার, ধলেশ্বর - ১৩, আগরতলা, ত্রিপুরা ( পশ্চিম )

প্রেমিকার অন্তর্ধান রহস্য
( ত্রিপুরার বাংলা গোয়েন্দা গল্প )
- হরপ্রসাদ সরকার, ধলেশ্বর, আগরতলা
২৮-০২-২০১৮ ইং



আগের পর্ব গুলি: ১ম পর্ব   


◕ প্রেমিকার অন্তর্ধান রহস্য
২ য় পর্ব

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ আমাদের এই ওয়েবসাইট ( RiyaButu.com )-এ প্রকাশিত গল্পগুলির মধ্যে থেকে কিছু গল্প নিয়ে এবছরই প্রকাশিত হবে আমাদের 'রিয়াবুটু'র গল্প'।
--------------------------

রাজবংশী ডাকল,"কেউ কি বাড়িতে আছেন?"

কোন সাড়া শব্দ পাওয়া গেল না। তবে দূরে কয়েকজন লোকের কথাবার্তা শোনা গেল। কিছু দিনমজুর একটু দূরে একটি পাতকুয়োর পাশে বড় বড় গর্ত খুঁড়ছে। তাদেরই অস্পষ্ট কথাবার্তা কানে ভেসে-ভেসে আসছে। রাজবংশী ঐ দিনমজুরগুলির দিকে তাকিয়ে আবার জোরালো গলায় ডাকল,"কেউ কি বাড়ি আছেন?" উদ্দেশ্য প্রণোদিত রাজবংশীর এই ডাক দিনমজুরগুলির কানে গিয়েও বাজল। ওরা নিজেদের কথা থামিয়ে রাজবংশীর দিকে ফিরে তাকাল আর কাকে যেন কী ইশারা করল। পাশাপাশি রাজবংশীর ডাক শুনে একটি মাটির ঘর থেকে একজন কৃশকায় বৃদ্ধ বের হয়ে এলেন। পড়নে মলিন ধুতি। গায়ে শত ছিঁড়া একটি সবুজ সুয়েটার। মাথার সাদা-কালো চূল। দীর্ঘদিন মাথায় তেল-জল যে পড়েনি তা আর বলে দেওয়ার দরকার নেই। চোখ গুলি বেশ ঘোলা। ধীর পায়ে উনি কাছে এসে বললেন,"বাবু, কাকে চাই?"

ওসি সাহেব সত্যিই বলেছিলেন বৃদ্ধকে দেখলেই মনে মায়া আসে। দেখলেই বুঝা যায়, লোকটি খুব সহজ-সরল। সূর্যকে কি তার নিজের পরিচয় দিতে হয়! মন না চাইতেও সসম্মানে রাজবংশীর হাত আপনি উপরে উঠে এল, "নমস্কার, আপনি কী নবদ্বীপ চক্রবর্তী?"

বৃদ্ধও হাত জোর করে বললেন,"হ্যাঁ, আমি নবদ্বীপ চক্রবর্তী। আপনাকে তো চিনলাম না?"

রাজবংশী হেসে বলল,"না! আপনি আমাকে চিনবেন না। আমি এখানে এই প্রথম এসেছি। আপনার সাথে বনশ্রী ঘোষালের হত্যার ব্যাপারে কিছু কথা ছিল।"

নবদ্বীপ চক্রবর্তী ভাবলেন এই দু'জন বুঝি বনশ্রীর বাপের বাড়ির লোক। তাই মাথা নুইয়ে বললেন,"বাবা, আর কী জানার বাকী আছে বল? তবু যদি নতুন কিছু জানতে চাও জিজ্ঞেস কর। আমি যা জানি সব বলব, কোন কিছুই লোকাব না। সত্য নিয়ে যখন জীবন শুরু হয়েছে তখন সত্য দিয়েই সব শেষ হোক। সত্যের যজ্ঞে আমার দেহ-সংসার, স্ত্রী, পুত্র সব শেষ হয়ে যাক, আমার আফসোস হবে না। তবু আমি কখনোই স্বীকার করব না যে, বনশ্রীকে আমরা হত্যা করেছি। বনশ্রী আমার ছেলের বৌ নয়, সে তো আমার মেয়ে, আমার মা! ঘোর কলিযুগ হলেও আমি এখনো এত নীচ হতে পারিনি যে নিজের মা'কে খুন করব, তার উপর অত্যাচার করব। সে ছিল আমার মা, আমার মা লক্ষ্মী।" কথাগুলি বলতে বলতে বৃদ্ধ বেশ আবেগপ্রবণ হয়ে গেলেন।

ঠিক এমন সময়েই ঘরের পিছন থেকে দু-জন লোক বের হল। বুঝা গেল দিনমজুরেরা এদেরকেই ইশারা করেছিল। বাবুরা বেশ-ভূষাতে খুব ফিট-ফাট। বেশ হম্বিতম্বি নিয়ে ওরা উঠানে হাজির হল। কিন্তু সময়ের কোন রেখায়, কোন লগ্নে কী খেলা যে লুকিয়ে থাকে তা কি কেউ জানে? এখানেও তেমনটাই হল। যে লোকগুলি ঘরের পিছন থেকে বের হয়ে এল তাদের মধ্যে একজন রাজবংশীকে নিজের সামনে দেখে একেবারে আঁতকে উঠল। যেন যমদূতকে দেখতে পেল সে। এমন চমক লাগল তার যে, পালাতে চেয়েও পারল না, আবার কাঁধ ঝাঁকিয়ে দু-পা পিছাতেও পারল না। তার চেহারা ডরে-ভয়ে ধপ করে লাল হয়ে উঠল। গাল-ঠোট কাঁপতে লাগল। রাজবংশীও বেশ অবাক হয়ে গেল লোকটিকে দেখে। বিস্ময়ের সুরে সে বলল,"আরে পটাশ! তুই এখানে? কী করছিস?"

পটাস আমতা আমতা করে বলল,"না-মানে- হ্যাঁ, এসেছিলাম-ঐ- ঐ, এখানে একটা কাজে এসেছিলাম। তুই হঠাৎ এখানে কী মনে করে?"

রাজবংশী কিছু বলতে যাচ্ছিল তখন পটাশের পাশের লোকটি ঘেক-ঘেক করে পটাশকে প্রশ্ন করল,"কে ও?"

পটাশ শুকনো হাসি হেসে বলল,"ওর নাম রাজবংশী, আমার কলেজের বন্ধু! একসাথেই পড়াশুনা করেছি। সেই কলেজ জীবন থেকেই সে আমাকে আদর করে পটাশ বলে ডাকে। তবে আমার ভাল নাম কিন্তু পটভবেশ ঘোষ। রাজবংশীর ভাল নাম অনুব্রত রাজবংশী, মস্ত প্রাইভেট ডিটেকটিভ। আর তার পাশের লোকটি হচ্ছে সদানন্দ বসাক, ডাক নাম সাধুদা, রাজের সহকারী।"

রাজবংশী প্রায় ধমকের সুরে বলল,"তুই এখানে কী করছিস রে পটাশ? তোর এখানে কী কাজ?"

পটাস কিছু বলার আগেই সেই লোকটি দুই পা এগিয়ে এল। বেশ চড়া সুর ধরে বলল,"তুই কে রে, আমাদের কাজের খোঁজ নিতে এসেছিস? নিজেকে খুব বড় দারোগা ভাবছিস, না? তোর ডিটেকটিভ-গিরি আমি ...। আমার সামনে এসে দাদাগিরি দেখাচ্ছিস? মনে হচ্ছে দাদা-লঙ্কাকে এখনো তোর চেনা হয়নি! শোন, আমার নাম মহিষাসুর ঘোষাল। দাদা-লঙ্কা বললে সমগ্র কাশীপুর চিনে। তুই ও চিনবি। বুঝতে পেরেছি, এবার তোর খবর ও নিতে হবে আমার।" কথাগুলি বলে লোকটা নবদ্বীপ চক্রবর্তীর দিকে ঘুরে দাঁড়াল। প্রচণ্ড ধমক দিয়ে বলল," এই নবদ্বীপ, এ কোন ঘাটের মড়াদের বাড়িতে ডেকে এনেছিস? কেন ডেকে এনেছিস?নিজের পাল্লা ভারি করতে? এর ফল ভাল হবে না বলছি! তোর হাড়গোড় সব ভেঙ্গে আমি কুত্তাকে খাইয়ে দেব। এই চ্যাঙা-ব্যাঙাকে এখুনি লাথি মেরে তোর বাড়ি থেকে বের করে দে! আমি মুখে চোঙা লাগিয়ে কথা বলছি না। কান দিয়ে শোন। যা বলছি তা কর, নইলে কিন্তু তোর ঘাড় ভেঙ্গে দেব, বিপদের শেষ হবে না তোর।"

দাদা-লঙ্কার এই ধমকি শুনে নবদ্বীপ চক্রবর্তী ভয়ে থর থর করে কাঁপতে লাগলেন। তিনি দুই হাত জোর করে রাজবংশীকে কিছু একটা বিনতি করতে যাচ্ছিলেন, তার আগেই রাজবংশী বেশ জোরে এক ধমক মারল নবদ্বীপ চক্রবর্তীকে, "আপনি থামুন তো কাকা! আপনি একদম চুপ থাকবেন। কোন কথা যেন আপনার মুখ থেকে না বের হয়। যা করার আমি করব। আমি যখন আছি সব আমিই দেখব। কুকুর মুগুর ছাড়া কখনোই সোজা হয় না। দাদা-লঙ্কা কী আর দাদা-হনুকে চিনে?"

রাজবংশীর ধমক খেয়ে নবদ্বীপ চক্রবর্তী থতমত খেয়ে গেল, একেবারে ক্যাবলার মত দাঁড়িয়ে রইল। রাজবংশী কয়েক পা এগিয়ে পটভবেশের সামনে পথ আটকে দাঁড়াল। দিনমজুরদের ডাক দিল,"এই শোনো! তোমরা সবাই এদিকে এস!"

তার কথা অবহেলা করার ক্ষমতা দিনমজুরদের ছিল না। কাজ ছেড়ে সবাই তার সামনে এসে দাঁড়াল। রাজবংশীর চোখ তখন আগুনের মত জ্বলছে। সে হিংস্র বাঘের মত বলল,"তোমরা ওখানে কী করছিলে?"

একজন দিনমজুর মিন-মিন করে বলল,"গর্ত করছিলাম দাদা!"

"গর্ত খুঁড়ছিলে? কেন?"

দিনমজুরটি দাদা-লঙ্কাকে দেখিয়ে বলল,"ঐ বাবুই আমাদের ডেকে এনেছেন?"

"ঠিক আছে তোমরা এখানেই দাঁড়িয়ে থাক। যতক্ষণ না বলছি ততক্ষণ কিন্তু একজনও এখান থেকে এক পা'ও বাড়াবে না।" এবার সে পটভবেশের দিকে ঘুরে বলল,"কী রে? তোরা যে আমার কাকার বাড়িতে এসে এভাবে গর্ত খুঁড়ছিস, মালিকের পারমিশন নিয়েছিলি তো? নো-অবজেক্সন সার্টিফিকেট, সেই লেটারটি কই, দেখা।"

যেন একটা ঝটকা খেয়ে উঠল পটভবেশ,"মানে! না-মানে, কীসের পারমিশন? কীসের লেটার? কার বাড়ি? তুই যা খুশি তা, আবোল-তাবোল বললেই হল নাকি?"

ধপ করে জ্বলে উঠল রাজবংশী। বেশ ধারালো স্বরে সদানন্দকে চীৎকার করে আদেশ দিল,"সাধুদা, জলদি থানায় ফোন কর। এখানে মস্ত একটি চক্রান্ত চলছে, ষড়যন্ত্র চলছে। গর্ত খুঁড়ে লাস লুকানোর চেষ্টা হচ্ছে। টন-টন ব্রাউন-সুগার লুকানোর চেষ্টা চলছে। জলদি থানায় ফোন কর, জলদি।"

সদানন্দ যেন তৈরিই ছিল। সে ঝটপট নিজের মোবাইল ফোনটি দ বের করে থানায় ফোন করে দিল। ওপাশ থেকে 'হ্যালো' ভেসে আসতেই সে ফোনের লাউড স্পীকারটি অন করে দিল। তারপর রাজবংশী যা যা বলেছিল, ঠিক তেমনটাই ফোনে বলে দিল। ওপাশে ভীষণ তৎপরতা, ভীষণ ব্যস্ততা ফোনের মাঝেই টের পাওয়া গেল। নবদ্বীপ চক্রবর্তীর বাড়িতে এমন ভাবে হঠাৎ করে পরিবেশ পরিস্থিতি উল্টে যাবে, পাল্টে যাবে তা কেউই ভাবতে পারেনি। এক পলকের উদ্দাম ঝড়ে উঠানের হাওয়া-বাতাস উথাল-পাথাল হয়ে গেল। পটভবেশের নিজের ঢেকুর নিজের গলাতেই আটকে গেছে। সে কী করবে না কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। দিশাহারা হয়ে উদভ্রান্তের মত এদিক ওদিক তাকাচ্ছে কিন্তু পালাতে পারছে না। পালিয়ে গেলেই তো সর্বনাশ। রাজবংশী যেমন স্বভাবের লোক, লাস লুকানোর কেস ঠুকবে তো ঠুকবেই, আরও না জানি কত কেস হাতে পায়ে জড়াবে তার ঠিক ঠিকানা নেই। তার চেয়ে অপমান-লাঞ্ছনা সহ্য করে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকা অনেক ভাল। দাদা-লঙ্কারও ঠিক লঙ্কা দহন দশা। অবস্থার চাপে তার পেট-পুটর একাকার হয়ে গেছে। দাদা-হনুর এক আঘাতে এতক্ষণের ফট-ফটানি চুপসে গেল, হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে গেল তার। এমন ভেজালে জীবনে আর কোনদিন পড়েনি সে। সুযোগ থাকা স্বত্বেও, চেয়েও পালাতে পারছে না। এ কেমন জালে জড়াল সে? এ কেমন জাল ফেলল রাজবংশী? দাদা-লঙ্কা কী ভেবে কী করছিল, পলকেই এ কী হয়ে গেল? কিছু বলার কিংবা পালিয়ে যাবার কোন উপায়ই রাখল না লোকটি। গায়ের জোরে পালিয়ে গেলে কতগুলি কেসে যে ফাঁসাবে, কে জানে? দিনমজুরেরা চুপ করে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইল। দীর্ঘদিন পরে মুক্তির স্বাদ পেয়ে নবদ্বীপ চক্রবর্তী টান-টান হয়ে মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়ালেন, বুক ভরে ফুরফুর করে বেশ লম্বা একটা শ্বাস টান দিলেন। নববর্ষের নতুন উদ্দীপ্ত সূর্যের দিকে তাকিয়ে দৃঢ় ভাবে মাথা তুললেন। ঘরের ভীতর থেকে উনার বৌ ললিতা-দেবী আঁচলে চোখ মুছতে মুছতে দরজার এক পাশে, আড়ালে এসে দাঁড়ালেন। আজ বুঝি আকাশপটে নবগ্রহের মঙ্গল ঘট বসেছে।

কিছুক্ষণের মধ্যেই ছয়-সাতজনের একটি পুলিশের দল নবদ্বীপ চক্রবর্তীর বাড়ির সামনে জীপ থেকে নামল। ফাঁদে পড়া পাখির মত ছটফট করতে লাগল পটভবেশ আর দাদা-লঙ্কা। কিন্তু উপায় নেই। কয়েক মিনিটেই হাওয়া বদল করে যেই ভয়ানক ঝড়ে রাজবংশী তাদের ফাঁসিয়ে দিল, তাতে সকল অত্যাচার সহ্য করে দাঁড়িয়ে থাকা ছাড়া আর কোন উপায়ই নেই। গা-জোরামি দেখালেই বিপদ, পালিয়ে গেল তো মহাবিপদ। পুলিশ এসে উঠানে দাঁড়াল। এস-আই কাজল মল্লিক নিজের টুপি ঠিক করতে করতে বললেন,"আরে রাজবংশী-বাবু! আপনি? এখানে? কী ব্যাপার?"

রাজবংশী চট করে নিজের রূপ-রং পাল্টে নিয়ে খুব স্বাভাবিক সুরে বলল,"আরে কাজল-বাবু! আপনি! আসুন-আসুন! আপনার সাথে দু'জনের পরিচয় করিয়ে দেই। এই হলেন পটভবেশ ঘোষ। ত্রিপুরার ইতিহাসের বিশেষজ্ঞ। তবে স্কুল জীবন থেকে এখন পর্যন্ত বিভিন্ন ক্রিমিনাল কেসে এবং বেশ কিছু ৪২০ কেসে কয়েকবার জেলখানা ঘুরে এসেছেন। আর ইনি হলেন মহিষাসুর ঘোষাল। মনে হয় ইনি নিশ্চয়ই আপনাদের পরিচিত। পুলিশের বড় খাতায় এখনো উনার নাম নেই। তবে ছোট খাতায় উনার নাম নিশ্চয়ই আছে। এবার দেখুন উনারা এখানে কী কাজে জুটেছেন? ঐ দেখুন, বিনা অনুমতিতে আমার কাকার জায়গায় জোর করে কতগুলি রহস্যময় বড় বড় গর্ত খোঁড়ে যাচ্ছেন। এখানে কোন স্মাগলিং এর মাল কিংবা কোন লাস লুকিয়ে রাখলে কেউ টেরই পাবে না। অবশেষে অপরাধী ধরা পরুক বা না পরুক, পুলিশের জালে তো নবদ্বীপ চক্রবর্তীই আটকাবেন। কী, কিছু কী ভুল বলেছি? তাই ঘটনাটি প্রথমেই আপনাদের নজরে দিয়ে রাখলাম। আপনি চাইলে আমি এখুনি লিখিত অভিযোগ জমা দিতে পারি। আর যদি বলেন FIR করতে, তবে এখুনি একটি FIR করে দেব।"

এস-আই কাজল মল্লিক মহিষাসুর ঘোষালকে কড়া স্বরে জিজ্ঞেস করলেন,"এ সব কী চলছে মহিষাসুর-বাবু?"

এবার গা ঝাড়া দিয়ে একটু গরম দেখিয়ে দাদা-লঙ্কা কয়েক কদম এগিয়ে এল। বলল,"দেখুন কাজল-বাবু, আমার ছোট বোনকে এরা খুন করেছে। খুন করে লাস গুম করে দিয়েছে। হয়তো এই মাটির তলাতেই আমার বোনের লাস পুঁতে রেখেছে। অসম্ভবের কিছু নেই। মনে রাখবেন, এটা একটা খুনির বাড়ি। এখানে আমার বোনের লাস খোঁজার জন্য মাটি খুঁড়ব, এতে আবার কিসের পারমিশন? কার পারমিশন? বোন গেছে আমার, অত্যাচার করেছে ওরা, আর আমিই হবো দোষী?"

রাজবংশী মহিষাসুর ঘোষালের গলার উত্তাপে উত্তাপ মিলিয়ে বলল,"না! না! আপনি খুনি বললেই তো নবদ্বীপ চক্রবর্তী খুনি হয়ে গেলেন না! উল্টো আমি যদি বলি, আপনিই খুন করেছেন আপনার বোনকে! তবে আপনি কি মেনে নেবেন? না! আপনি মানবেন না! ঠিক তেমনি, আমরাও মানব কেন? আপনি খুনি বললেই নবদ্বীপ চক্রবর্তী খুনি হয়ে যাবেন নাকি? এসব ক্ষেত্রে আপনার-আমার কথার কোন দাম নেই। তার জন্য কোর্ট-কাছারি রয়েছে, পুলিশ-আদালত রয়েছে। আপনি গা-জোরামি দেখাতে পারেন, কিন্তু এখানে অন্তত তা আর কাজে লাগবে না।"

জোরে জোরে কথা বললেও মহিষাসুরের বুক ধুর-ধুর করছে। এই লোকটির সাথে বেশী কথা বললে না জানি আবার কোন বিপাকে ফেলে দেয়। তাই সে রাজবংশীকে পাশ কাটিয়ে কাজল মল্লিকের কাছে গিয়ে বলল,"দেখুন কাজল-বাবু, আমি ওর বক-বককে কোন পাত্তা দিতে রাজী নই। আমি যা করছি তাতে আসলে পুলিশকেই সাহায্য করছি। আমার বোনের লাস পুলিশও খুঁজছে, আমিও খুঁজছি। আমি কোন খোঁজ পেলে তো আপনাদেরই খবরটা দেব।"

মহিষাসুর রাজবংশীকে পাশ কাটালেও রাজবংশী কি আর ছেড়ে দেবার পাত্র? সে বেশ সুর ধরে বলল,"আপনার কথা আমার বেশ ভাল লেগেছে মহিষাসুর-বাবু। আপনি পুলিশকে সাহায্য করতে চাইছেন, এ তো অতি উত্তম কথা, উত্তম কাজ। তবে পরের বার থেকে যখন আপনি মাটি খুঁড়া-খুঁড়ি করবেন, কিংবা অন্য কোনও তল্লাসি চালাবেন তখন কিন্তু দু'পক্ষের লোকই থাকা উচিত। পাশাপাশি পুলিশের লোকজনও আমাদের সাথে থাকবে। আপনার পক্ষের লোকজন, নবদ্বীপ চক্রবর্তীর পক্ষের আমি থাকলাম আর নিরপেক্ষ ভাবে পুলিশের লোকজন থাকল। এতে তো সবারই মঙ্গল। তাতে তদন্তের কাজ আরও সুন্দর ও সুষ্ঠু ভাবে দ্রুত গতিতে এগুতে পারে। কী বলেন কাজল-বাবু? আমি কি কিছু ভুল বলেছি? কী বলিস রে পটাশ?"

রাজবংশীীর কথা শুনে পটভবেশ আর মহিষাসুরের মুখ শুকিয়ে গেল। এস-আই কাজল মল্লিক অতি উৎসাহে বললেন,"খুব ভাল! খুব ভাল! এ তো দারুণ প্রস্তাব। আর তো কোন ঝামেলাই রইল না। এতে সবার কথাই রইল, সব দিকই থাকল। আপনি কী বলেন মহিষাসুর-বাবু?"

দাদা-লঙ্কা নীরবে মাথা নেড়ে সম্মতি জানাল। কিন্তু তিনি যে এই প্রস্তাবের ঘোর বিরোধী এবং খুব অনিচ্ছা স্বত্বে, চাপে পড়ে এই প্রস্তাবের সমর্থন করছেন তা বুঝতে বাকী রইল না রাজবংশীর। সমাধানের সুরে সে আবার বলল,"তাহলে পুলিশের সামনে আমাদের সকলের মধ্যে এই কথাই রইল, এই বোঝাপড়াই রইল যে, পরের বার থেকে যখনই মহিষাসুর-বাবু এখানে এসে খুঁড়া-খুঁড়ি করবেন, বা অন্য কোন তল্লাসি চালাবেন, তিনি আমাকে আর পুলিশকে অবশ্যই আগে থেকে জানিয়ে রাখবেন, যাতে আমরাও উপস্থিত থাকতে পারি এবং উনাকে সহায়তা করতে পারি। অন্যথা উনার তল্লাসি বেআইনি বলে ধরা হবে, তখন কিন্তু আমি উনার বিরুদ্ধে FIR করতে এক মিনিটও দেরী করব না। এখন পরবর্তী কাজটি হল, ঐ ঘরের পিছনে যে আটখানা বড় বড় গর্ত খুঁড়া হয়েছে সেখানে সবাই মিলে তল্লাসি চালানো।"

দাঁত কটমট করতে করতে দাদা-লঙ্কা দিনমজুরদের আদেশ দিলেন,"এই যা:! গর্ত গুলি বন্ধ করে দিয়ে আয়।" দিনমজুররা চুপচাপ গর্ত বন্ধ করতে চলে গেল। রাজবংশী এস-আই কাজলকে বলল,"ধন্যবাদ কাজল-বাবু! বাধ্য হয়েই আপনার সাহায্য নিতে হয়েছিল। আপনি আসতে একটি খুব বড় সমস্যা গোড়াতেই সমাধান হয়ে গেল। এই জন্য আপনাকে আবারও অসংখ্য ধন্যবাদ।"

রাজবংশী আর মহিষাসুরকে ধন্যবাদ জানিয়ে হাসিমুখে বিদায় নিলেন এস-আই কাজল মল্লিক। পুলিশ বিদায় নেবার পর রাজবংশীর দিকে এক তীব্র বিষাক্ত চাহনি দিয়ে চুপচাপ উঠান ছেড়ে পথের দিকে হাটা দিল মহিষাসুর। তার পিছন পিছন চলতে লাগল দিনমজুরেরা। সবার পিছনে চলতে লাগল পটভবেশ। হঠাৎ রাজবংশী পটভবেশকে ডাকল,"এই পটাস শোন!"
পরবর্তী পর্ব   

আগের পর্ব গুলি: ১ম পর্ব   

অন্য গোয়েন্দা গল্প:

মাণিক্য   
সর্দার বাড়ির গুপ্তধন রহস্য   



All Bengali Stories    22    23    24    25    26    27    28    29    30    31    (32)    

## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers. The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation. Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##


◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717