Home   |   About   |   Terms   |   Contact    
RiyaButu
A platform for writers

লুকানো চিঠির রহস্য


ত্রিপুরার বাংলা গোয়েন্দা গল্প


All Bengali Stories    33    34    35    (36)     37    38    39    40   

-হরপ্রসাদ সরকার, ধলেশ্বর - ১৩, আগরতলা, ত্রিপুরা ( পশ্চিম )

লুকানো চিঠির রহস্য
পর্ব ১৫
( ত্রিপুরার বাংলা গোয়েন্দা গল্প )
রাজবংশী সিরিজের চতুর্থ গোয়েন্দা গল্প
- হরপ্রসাদ সরকার, ধলেশ্বর-১৩, আগরতলা
২৩-০১-২০১৯ ইং

সমগ্র পর্বগুলি: সমগ্র পর্বগুলি

◕ লুকানো চিঠির রহস্য
পর্ব ১৫

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ আমাদের এই ওয়েবসাইট ( RiyaButu.com )-এ প্রকাশিত গল্পগুলির মধ্যে থেকে কিছু গল্প নিয়ে এবছরই প্রকাশিত হবে আমাদের 'রিয়াবুটু'র গল্প'।
--------------------------

কেবিনে ঢুকে ভদ্রবাবু নিজের চেয়ারটি এগিয়ে দিলেন ম্যাডামের দিকে। চন্দ্রবালা দেবী মৃদু হেসে বললেন, "না- থাক ভদ্রবাবু, এই ভদ্রতার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। কিন্তু, ওটা আপনার চেয়ার। আপনার চেয়ার আপনারই থাকবে, আপনি বসুন। আমার স্বামী আপনাকে যে দায়িত্ব দিয়ে গেছেন, আপনি সেই দায়িত্ব আগের মতই পালন করবেন, এ কথা আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি।"

বেশ একটা অস্বস্তি নিয়ে ভদ্রবাবু তার চেয়ারটিতে বসলেন। এপাশের চেয়ারগুলিতে বাকিরা বসল। একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে চন্দ্রবালা বললেন, "মিস্টার রাজবংশী, কিছুক্ষণের মধ্যেই যা-যা ঘটে গেল, কিছুই যে আমার মাথায় ঢুকছে না! আমি কোন কিছুই বুঝতে পারছি না, পরবর্তী কিছু আন্দাজও করতে পারছি না। মনে হচ্ছে হঠাৎ এক-সাগর জলে পড়ে গেছি। আমাকে সব কিছু একটু খুলে বলতে পারেন?"

"ওকে ম্যাডাম। আপনি যখন জানতে চাইছেন তখন কিছু কথা আপনাকে খুলে জানানো দরকার, এর প্রয়োজনও আছে। একটা কথা জানতে আমার বিন্দুমাত্র বাকী নেই যে, বাহাদুরের খুনিরা বাহাদুরের খুব ঘনিষ্ঠজন। বাহাদুরের অনেক গোপন কথা, যা আপনিও জানেন না, সেই কথাগুলি ঐ খুনিরা কিন্তু খুব জানে, এটা আমার কাছে খুব পরিষ্কার।"

"সে কথা তো বুঝলাম, কিন্তু আপনি আমাকে চিনলেন কী ভাবে? আমিই যে এই কোম্পানির মালিক, তা জানলেন কী ভাবে?"

একটু মুচকি হাসে, মনের কথা মনে ঘুচিয়ে নিয়ে রাজবংশী বলতে শুরু করল, "এই কোম্পানিতে ঢুকার সময় কোম্পানির নামটি আমাকে খুব আকৃষ্ট করে। 'মুনমে মাইক্রো ফাইনাইন্স' নামটিতে 'মুনমে' শব্দটি কেন রাখা হল, এর অর্থ কী, এই কয়েকটি প্রশ্ন বারবার আমার মনে খোঁচা দিতে লাগল। ভদ্রবাবুর কাছ থেকে বাহাদুরের ক্রিয়া-চরিত্র যখন সব শুনলাম, এবং কোম্পানির যা পরিস্থিতি দেখলাম তাতে আমার মনে একটা বদ্ধমূল ধারণা জন্মাল যে, হোক-না হোক বাহাদুরের হাতে নিশ্চয়ই কিছু কল-কাঠি ছিল। ঐ সময়েই হঠাৎ আমার মনে বাহাদুরের 'মোবাইল ফুল' শব্দটির সাইকোলজি কাজ করল। মনে হল এই 'মুনমে' শব্দটির পিছনেও বাহাদুরের হাত থাকা সম্ভব। আমি ঝটপট বাহাদুরের সেই সাইকোলজিটি ধরতে চেষ্টা করি, এবং সেই মতন 'মুনমে' শব্দটিকে ভাঙার চেষ্টা করি। এক টোকাতেই শব্দটি দুই টুকরো হয়ে যায়। একটি 'মুন' অপরটি 'মে'। শব্দটি দুই টুকরা হতেই আপনার নামটি আমার চোখের সামনে ঝলমল করে উঠে। 'মুন' মানে চন্দ্র, আর 'মে' মানে মেয়ে, আর মেয়ে থেকে বালা। আমরা জানি মেয়ের প্রতিশব্দ বালা, যেমন মধুবালা, সাবিত্রী বালা, চন্দ্রবালা। ফলে চন্দ্রবালাই যে 'মুনমে' তা বুঝতে আমার আর বিন্দু মাত্র বাকী রইল না। এবার শুধু প্রয়োজন ছিল সঠিক প্রমাণের। তাও সম্পূর্ণ হল বাহাদুরের কল লিস্ট পাবার পর। ভদ্রবাবু আমাকে বলেছিলেন, বাহাদুর প্রায়ই কোম্পানির মালিকের সাথে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা বলতেন। সেই সূত্র মেনে কল লিস্ট দেখার পর যে নম্বরটি পাওয়া যায় তাতেই বেড়িয়ে আসেন চন্দ্রবালা দেবী।"

"আপনি ঠিক কথাই বলেছেন, মিস্টার রাজবংশী। সে যখন খুব হ্যাপি মুডে থাকত, তখন আমাকে আদরে করে 'মুনমে' ডাকত। আমিও ভাবতাম, নামটির মানে কী? কিন্তু সে আমার নামে কোম্পানি খুলতে গেল কেন?"

"বাহাদুর নিজে ছিলেন জন্মসূত্রে নেপালি, তাই উনার নামে এখানে ব্যবসা খুলে বসা অনেক ঝামেলার ছিল। কিন্তু আপনি নেপালি হলেও জন্মসূত্রে ভারতীয়। তাই আপনার নামে এখানে ব্যবসা শুরু করতে ওর কোনও অসুবিধা ছিল না। আচ্ছা, বাহাদুর কী কখনো আপনার কাছ থেকে আপনার কাগজপত্র চেয়ে নিয়েছিলেন?"

একটু ভেবে চন্দ্রবালা বললেন, "হ্যাঁ, সে তো আমাদের বিয়ের অনেক বছর আগের কথা। কোনও এক কারণে সে আমার কিছু কাগজ-পত্র নিয়েছিল বৈকি। তখন তো আর এত কথা বুঝতে পারি নি, ভাবিও নি। আচ্ছা মানলাম, আমার কাগজ-পত্র দিয়েই সে এই কোম্পানি খুলে বসল, কিন্তু আমাকে বলতে বাধা কোথায় ছিল, আমাকে কেন সে এই কোম্পানিতে আসতে দেয় নি?"

"এই দুটি প্রশ্নের উত্তর আপনিই কিন্তু আমাকে আগে দিয়েছিলেন। তবু আমি আবার বলছি, মিস্টার বাহাদুর চাইতেন না উনার অতি সুন্দরী বউ প্রকাশ্যে আসুক, এই কোম্পানিতে এসে কাজ করুক। তিনি চাইতেন না, বাইরের কেউ ডেব-ডেব করে উনার সুন্দরী বউকে দেখতে থাকুক। তাই তিনি উনার সামগ্রিক প্রচেষ্টায় নিজের অতি সুন্দরী বৌকে এই কোম্পানি থেকে চিরকাল আড়াল করে রেখেছিলেন। কিন্তু এটা অবশ্যই একটা রহস্য যে, তিনি ত্রিপুরাতে উনার ব্যবসা খুলতে গেলেন কেন? আরও একটি প্রশ্ন, সেই ফতুর আলিটি কে? সে কোথায়? এই ফতুর আলি কিন্তু এক অতি গুরুত্বপূর্ণ সূত্র। কারণ সে এই কোম্পানিতে শুরু থেকেই ছিল। আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে, বাহাদুরের শেষ দিন পর্যন্ত দু'জনের মধ্যে ঘনিষ্ট মেলামেশা ছিল। সুতরাং এই কোম্পানি অনেক কিছুই ফতুর আলির জানার কথা।"

"তাহলে এখন আমাদের পরের পদক্ষেপ কী?" বললেন চন্দ্রবালা।

"এই মুহূর্তে আপনাকে একটাই জরুরী কাজ করতে হবে; এই কোম্পানিটিকে সামলানো। বাহাদুরের মৃত্যুর পর কোম্পানিটি খুব বেহাল দশাতে আছে, বলতে পারেন দিশা হীন অবস্থা, কোনও কিছুই ঠিক নেই। সবার আগে একে দিশা দিতে হবে। কোম্পানির স্টাফরা এখনো বেতন পান নি। এই সমস্যাটি দূর করতে হবে।"

চন্দ্রবালা দেবী ভদ্রবাবুর দিকে ঘুরে বললেন, "ভদ্রবাবু, কোম্পানির সকল স্টাফদের বেতন সর্বমোট কত?"

ভদ্রবাবু একটু মাথা চুলকে বললেন, "ম্যাডাম, প্রতিমাসে আপনিই তো আড়াই লাখ টাকার চেক কোম্পানির একাউন্টে জমা করতেন কর্মচারীদের বেতনের জন্য।"

হাসতে-হাসতে রাজবংশী বলল, "ভদ্রবাবু, আপনি ভুল বলছেন। সেই টাকা চন্দ্রবালা দেবী জমা করতেন না, জমা করতেন বাহাদুর প্রসাদ জং। চন্দ্রবালা দেবী তো দুই ঘণ্টা আগেও এই কোম্পানির কথা জানতেন না।"

একটু ভাবুক হাসি হেসে চন্দ্রবালা বললেন, "ও, এবার বুঝতে পারছি, এই কারণেই বুঝি বাহাদুর প্রতি মাসে আমার কাছ থেকে চেক সই করিয়ে নিত। আমি প্রশ্ন করলে বলত, 'ওগো, তোমার একাউন্টের দিকে চেয়ে দেখো, আমি তোমার একাউন্ট থেকে টাকা নিলে তোমার টাকা কমে না, বরং বাড়ে।' সত্যিই তো। আমি দেখতাম আমার টাকা মাস-মাস বেড়েই চলছে, কোনোদিন কমেনি। আমি এ নিয়ে ওকে অনেকবার প্রশ্ন করেছি। আমার প্রশ্ন শুনে ও শুধু হাসত। আমার মনে সন্দেহ যে হয়নি, তা নয়। খুব চাপা-চাপি করলে বলত, "আমার একটা কাজ চলছে। সেটা শেষ হোক, তখন সব কিছু তোমাকে খুলে বলব।' হায়রে! সে কথা বলার সুযোগ সে আর পেল না। না জানি আমার কাছে কত কিছু বলার ছিল তার। কত রহস্যই না তার কাছে লুকানো ছিল! কে আর তা খুলে বলবে আমাকে? সে তো আমাকে ছেড়ে গিয়েও তার ডুরিতে বেঁধে গেল। হায়রে, আমার তো সব গেল, সব গেল, সব গেল!" ঝর-ঝর করে তার চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়তে লাগল। নিজেকে সামলে নিয়ে চোখ মুছতে-মুছতে বললেন, "ভদ্রবাবু, কালকের মধ্যেই সবার বেতন হওয়া চাই। এই নিন, চেক সই করে দিচ্ছি।"

ব্যাগ থেকে চেক-বুক বের করে খস-খস করে একটি চেক সই করে তা তুলে দিলেন ভদ্রবাবুর হাতে। ভদ্রবাবু চেকটি হাতে নিয়ে দেখলেন তাতে নাম লেখা, পি. চন্দ্রবালা রাখী।

Next Part

সমগ্র পর্বগুলি: সমগ্র পর্বগুলি

রাজবংশী সিরিজের অন্য গোয়েন্দা গল্প:
মাণিক্য   
সর্দার বাড়ির গুপ্তধন রহস্য   
প্রেমিকার অন্তর্ধান রহস্য   
গোয়েন্দা গল্পের সম্পূর্ণ তালিকা

All Bengali Stories    33    34    35    (36)     37    38    39    40   


## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers. The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation. Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##


◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717