Home   |   About   |   Terms   |   Contact    
RiyaButu
A platform for writers

লুকানো চিঠির রহস্য


ত্রিপুরার বাংলা গোয়েন্দা গল্প


All Bengali Stories    33    34    35    (36)     37    38    39    40   

-হরপ্রসাদ সরকার, ধলেশ্বর - ১৩, আগরতলা, ত্রিপুরা ( পশ্চিম )

লুকানো চিঠির রহস্য
পর্ব ১৬
( ত্রিপুরার বাংলা গোয়েন্দা গল্প )
রাজবংশী সিরিজের চতুর্থ গোয়েন্দা গল্প
- হরপ্রসাদ সরকার, ধলেশ্বর-১৩, আগরতলা
৩০-০১-২০১৯ ইং

সমগ্র পর্বগুলি: সমগ্র পর্বগুলি

◕ লুকানো চিঠির রহস্য
পর্ব ১৬

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ আমাদের এই ওয়েবসাইট ( RiyaButu.com )-এ প্রকাশিত গল্পগুলির মধ্যে থেকে কিছু গল্প নিয়ে এবছরই প্রকাশিত হবে আমাদের 'রিয়াবুটু'র গল্প'।
--------------------------

রাজবংশী একটি গভীর-শক্ত শ্বাস টেনে দৃঢ়ভাবে বলল,"প্লীজ লিসেন এভরি ওয়ান, একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা আপনাদের খুলে বলতে হচ্ছে। শাখা-সিঁদুর দিয়ে খুনিকে বরণ করার সময় এসে গেছে। আমার হিসাব অনুযায়ী, সোশাল মিডিয়ার কল্যাণে এতক্ষণে আমরা খুনির খুব কাছাকাছি পৌঁছে গেছি। খেলা যা চলছে তাতে মনে হচ্ছে, খুনি নিজেই বিল থেকে বের হয়ে এবার হামলা করবে। খুনি ধরতে ওটাই হবে আমাদের মোক্ষম সময়; যেন কোনও ভাবেই মিস না হয়। প্রথম টার্গেট, রামনগরের সুবল সেন। দ্বিতীয় টার্গেট, চন্দ্রবালা দেবী। তৃতীয় টার্গেট, অনিমেষ ভদ্র, আর নিশ্চিত টার্গেট, অনুব্রত রাজবংশী; মানে আমি।"

সবাই বেশ এক সাথে বলে উঠল, "মানে?"

"হ্যাঁ, আমিই সবার প্রথম। আমিও তা চাইছিলাম, এবার আমি নিশ্চিত, এটা হবেই। খুনিকে দ্রুত বের করে আনতে এই পথটা হঠাৎই যেন তৈরি হয়ে গেল; যখন শুনলাম এই কোম্পানির লোকেরা খুনির কাছ থেকে চিঠি পেয়েছে। তার মানে খুনি কোনও না কোনও ভাবে এই কোম্পানির কিছু লোকের সাথে জড়িয়ে আছে। আমি নিশ্চিত, খুনি সোশাল মিডিয়া এবং সামাজিক, দুই ভাবেই এই কোম্পানির লোকদের সাথে যুক্ত। খুনি ব্যক্তিগত ভাবে কোম্পানির কিছু লোককে চিনে এবং নিয়মিত তাদের সোশাল মিডিয়াতে ফলো করে। এ কথাটি বুঝতে পেরে আমিও পথটা আরও সুগম করে দিলাম। বলতে পারেন, ধনী হতে ধন ছড়িয়ে দিলাম। ক্ষতি নেই, আসুক, আমরাও তৈরি থাকব। মোট কথা, মশলা যেমনই হোক না কেন, আগুনটা কিন্তু থাকবে আমাদেরই হাতে। বাকীদের উপরও হামলা হবে, তবে আমার পরে, আমার আগে নয়। কারণ, সোশাল মিডিয়ার দৌলতে খুনি এতক্ষণে নিশ্চয়ই জেনে গেছে যে আমি তার পিছনে তার পদচিহ্ন লক্ষ্য করে চিতার মত ছুটছি। তাই আমাকে শেষ না করে, খুনি যদি পরবর্তী এলেম দেখাতে যায় তবে ওর ঠগবাসা-বগবাসা সব যাবে, একথা খুনি খুব ভালই জানে। তাই আমিই সবার আগে। পুলিশকেও এখন তার আসল ভূমিকায় আসতে হবে এবং এক কঠিন দায়িত্ব নিতে হবে। একটু ঢিলেমি, একটি প্রাণের সমান হবে।"

মিঠুন বেশ দৃঢ়তার সাথে মাথা নাড়ল, "ওকে, রাজুদা। সব কিছু তোমার প্ল্যান অনুসারেই হবে।"

ভদ্রবাবু ঠক-ঠক করে কাঁপতে লাগলেন। কাঁপ-কাঁপুনিতে উনার ঘাম ছুটে গেছে। বেশ কাঁদু-কাঁদু সুরে বললেন, "বংশীবদন বাউ, না-মানে বদনবংশী-বাবু, মারো হাত কাপু, মারো পাদু কাপু, হইলে আমি কী করবাম? আমাক খুব ডর, আমাক খুব ডর ...।" উনার মুখ থেকে সম্পূর্ণ কথা আর বের হল না।

এমন সুন্দর ম্যানেজারের মুখে এমন পথ-চোরা কথা শুনে চন্দ্রবালা খুব অবাক হয়ে রাজবংশীর দিকে টগবগিয়ে চেয়ে রইলেন। তা দেখে রাজবংশী হেসে ফেলল, "ও কিছু নয় ম্যাডাম, মহাদেবের মহা-আদেশ। আপনার মত আমরাও প্রথম-প্রথম খুব ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। আসলে ভদ্রবাবু ঘাবড়ে গেলে উনার মুখ থেকে এমন কিছু ক্রমাগতই বের হতে থাকে। আর এবার তো উনার প্রাণেরই সঙ্কট! মনে করেন যে, এবার উনার আধা-কথার-জঙ্গল থেকে আসল কথাটি আপনাকেই বুঝে নিতে হবে, বারবার।"

আরও কিছু আলাপ আলোচনার পর রাজবংশী, সদানন্দ আর মিঠুন 'মুনমে মাইক্রো-ফাইনাইন্স' কোম্পানি থেকে বেরিয়ে এল। চন্দ্রবালা কোম্পানির কাজ-কর্মে বুঝে নিতে কোম্পানিতেই রয়ে গেলেন। কোম্পানির বাইরে বড় রাস্তার পাশে পুলিশের গাড়িটি দাঁড়িয়ে আছে। ত্রয়ী সেদিকে হাটতে লাগল। মিঠুন গাড়িতে উঠতে যাবে এমন সময় একটি পাগল কোথা থেকে দৌড়ে এসে হুট করে মিঠুনের পা জড়িয়ে ধরে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল, "বাবু, এক কাপ চা খাওয়ান বাবু। বাবু, এক কাপ চা খাওয়ান বাবু।"

পুলিশের বাকী লোকরা ছুটে এসে সেই পাগলকে ছাড়াতে চাইল। কিন্তু পাগলটি কোনও ভাবেই মিঠুনের পা ছাড়ল না,"বাবু, শুধু এক কাপ চা, শুধু এক কাপ চা খাওয়ান বাবু। সকাল থেকে কিছুই খাই নি। সেই বাবু অফিসে এলে আগে আমাকে খাবার দিতেন, চা দিতেন। এখন আর কেউ দেয় না, কেউ দেয় না। সেই বাবু কোথায়, বাবু? শুধু এক কাপ চা খাওয়ান বাবু।"

রাজবংশীর মনে দয়া হল। সে বলল, "চল মিঠুন, চা খাব। এখন একটু চা হলে মন্দ হয় না। চল ভাই, তুমি চা খাবে। কোন দোকানে চা খাবে তুমি?"

এ কথা শুনে পাগলটি মিঠুনের পা ছেড়ে রাজবংশীর পা জড়িয়ে ধরল,"আপনি আমাকে ঠিক-ঠিক চা খাওয়াবেন তো বাবু? লোকটি কিন্তু আমাকে চড় মেরেছিল, লাথি মেরেছিল। আমাকে চড় মারবেন না তো বাবু? চা খাওয়াবেন তো?"

"আরে না-না, আমরা তোমাকে মারব কেন? চল, তোমাকে চা খাওয়াব।"

পথের উল্টো দিকে একটি চা-স্টলের অভিমুখে এগিয়ে গেল সবাই। দু'জন লোক গল্প করতে-করতে চা খাচ্ছিল, পুলিশকে এদিকে আসতে দেখে কথা বন্ধ করে এক পাশে সরে গেল। চা-স্টলে গেজে-গুজে বসল সবাই, পাগলটিকেও বসানো হল। চায়ের অর্ডার দেওয়া হল। চা খেতে-খেতে পাগলটি বিস্কুটও খেতে চাইল। একটা, দুইটা করে অনেকগুলি বিস্কুট খেল পাগলটি। খুব বুঝা গেল, সত্যিই সে ক্ষুধার্ত ছিল। তার পেট যখন ভরে এল তখন অবাক কাণ্ড ঘটল। পাগলটির গাল বেয়ে ঝর-ঝর করে অশ্রু গড়িয়ে পড়তে লাগল। উপস্থিত সবাই অবাক, দোকানদারটিও। সে প্রশ্ন করল, "কি রে চতুর, তুই কাঁদছিস কেন? কী হয়েছে তোর?"

একটু আনমনা হয়ে, বেশ আরাম করে রাজবংশী চা খাচ্ছিল। দোকানদারের প্রশ্নটি কানে যেতেই যেন ধাক্কা খেয়ে জেগে উঠল। খুব তেড়া চোখে একবার দোকানদারটির দিকে তাকাল, তারপর পাগলটির দিকে তাকাল। হঠাৎ সে তার মেরুদণ্ড সোজা করে বসল। তার ঠোঁটে ফুটে উঠল হাসি। নিজের চেয়ার ছেড়ে রাজবংশী পাগলটির সামনে দাঁড়াল। একগাল হেসে বলল, "ফতুর আলি, তুমি কেমন আছো? আরও কিছু খাবে?"

এ কথা শুনে পাগলটি যেমন খুব অবাক হল, তেমনি অবাক দোকানের সবাই। পাথরের মতন বসে টগবগিয়ে রাজবংশীর দিকে চেয়ে রইল পাগলটি। তার পিঠে অতি আদরে হাত রেখে রাজবংশী বলল, "ফতুর, তুমি কী ঐ অফিসের মালিককে চেনো?"

দোকানের সবাইকে খুব অবাক করে ধীরে-ধীরে মাথা নাড়ল ফতুর। খুব চাপা স্বরে বলল, "চিনি, বাহাদুর, তার বৌ।"

তার এই চাপা শব্দ রাজবংশী, সদানন্দ আর মিঠুনের কানে কোনও বজ্রপাতের চেয়ে কম মনে হল না। ঘরটি বিশাল ভূমিকম্পের ন্যায় কেঁপে উঠল এই তিনজনের কাছে। যে কথা চন্দ্রবালা দেবীও জানে না, সেই কথা এই পাগলটি জানে! তবে নিশ্চয়ই আরও অনেক কিছু সে জানে। রাজবংশী ধীরে নিজের চেয়ারে বসে চোখ বন্ধ করে ফতুরের কিছুক্ষণ আগের কথাগুলি মনে করতে লাগল। হঠাৎ রাজবংশী ছেবরা খেয়ে চোখ বড়-বড় করে ধর-মরিয়ে উঠল। তার গায়ের রোম কাটা-কাটা দিয়ে উঠল, শিউরে উঠল সে। তার মনে হল, যেন বাহাদুরে সেই খুনির ছুঁয়া এই মাত্র তার শরীরে এসে লাগল; তাও এই দোকানে। যেন খুব কাছ থেকে সে অনুভব করল বাহাদুরের খুনির উপস্থিতি। যেন খেয়া পারাপারে কিছুক্ষণ এক নৌকাতেই বসেছিল দু'জন। দোকানে চারিদিকে বড়-বড় চোখ করে তাকাতে লাগল সে। রাজবংশীর এই অবস্থা মিঠুন, সদানন্দ কারোরই চোখ এড়ালো না। মিঠুন প্রশ্ন করল, "কী হল রাজুদা? তুমি এমন করে উঠলে কেন? কী হল?"

কোনও উত্তর এল না। রাজবংশী অত্যন্ত গম্ভীর ভাবে ফতুরকে জিজ্ঞাস করল, "কে তোমাকে চড় মেরে ছিল ফতুর? তুমি কী তাকে চেনো?"

Next Part

সমগ্র পর্বগুলি: সমগ্র পর্বগুলি

রাজবংশী সিরিজের অন্য গোয়েন্দা গল্প:
মাণিক্য   
সর্দার বাড়ির গুপ্তধন রহস্য   
প্রেমিকার অন্তর্ধান রহস্য   
গোয়েন্দা গল্পের সম্পূর্ণ তালিকা

All Bengali Stories    33    34    35    (36)     37    38    39    40   


## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers. The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation. Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##


◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717