Home   |   About   |   Terms   |   Contact    
RiyaButu
A platform for writers

লুকানো চিঠির রহস্য


ত্রিপুরার বাংলা গোয়েন্দা গল্প


All Bengali Stories    30    31    32    33    34    35    (36)     37      

-হরপ্রসাদ সরকার, ধলেশ্বর - ১৩, আগরতলা, ত্রিপুরা ( পশ্চিম )

লুকানো চিঠির রহস্য
( ত্রিপুরার বাংলা গোয়েন্দা গল্প )
রাজবংশী সিরিজের চতুর্থ গোয়েন্দা গল্প
- হরপ্রসাদ সরকার, ধলেশ্বর-১৩, আগরতলা
৩১-১০-২০১৮ ইং

সমগ্র পর্বগুলি: সমগ্র পর্বগুলি

◕ লুকানো চিঠির রহস্য
৪ র্থ পর্ব

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ আমাদের এই ওয়েবসাইট ( RiyaButu.com )-এ প্রকাশিত গল্পগুলির মধ্যে থেকে কিছু গল্প নিয়ে এবছরই প্রকাশিত হবে আমাদের 'রিয়াবুটু'র গল্প'।
--------------------------

ঐ ঘটনার কিছুকাল পরের ঘটনা। আগরতলা শহর তোলপাড়, একের পর এক খুন। আজ এই প্রান্তে খুন, তো কাল ঐ প্রান্তে। পুলিশ খুব নাজেহাল, অনেক চেষ্টা করেও খুন আটকানো যাচ্ছে না। হঠাৎ যেন এক চরম অরাজকতা নেমে এল আগরতলা শহরে। এমন অবস্থায়, সেদিন সকাল ৮ টা; আগরতলা শহরের ধলেশ্বর এলাকার ১৩ নম্বর রোডের রাজবংশীর বৈঠকখানা। সদানন্দ আর রাজবংশী বসে প্রাতরাশ করছে। সামনের টেবিলে রাখা খবরের কাগজ। হঠাৎ করে কাগজটিতে চোখ আটকে গেল রাজবংশীর। হাত বাড়িয়ে ঝট-পট কাগজটি নিয়ে ভ্রু কুচকে উঠল তার। ঊর্ধ্বশ্বাসে খবরটি পড়তে লাগল, দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,"আবার খুন! এ কী শুরু হল আমাদের আগরতলা শহরে! একের পর-এক খুন! এই নিয়ে গত সাত দিনে চারটি খুন! গতকাল সন্ধ্যা রাতে খুন হল রামনগরের চার নম্বর রাস্তার মোড়ের এক চা-স্টলের মালিক। রাত এগারটা নাগাদ কেউ তাকে ছুরি মেরে খুন করে। সাত দিনে চারটি খুন! এ যে দেখছি খুব বিপদজনক অবস্থা।"

সদানন্দ স্তম্ভিত স্বরে বলল, "ভাবা যায়, সাত দিনে চারটি খুন! এ যেন মগের মুলুক পেয়ে বসেছে। যেমন খুশি, যখন খুশি ইচ্ছা মত যাকে-তাকে উড়িয়ে দাও, সরিয়ে দাও পৃথিবী থেকে! অবাক কাণ্ড! মানুষের প্রাণের বুঝি কোন দাম নেই? অথচ পুলিশ কোনও প্রতিকার করতে পারছে না। এ অবস্থায় আমাদের দুজনের কী এভাবে হাত গুটিয়ে বসে থাকা মানায়?"

সদানন্দের কথা শুনে রাজবংশীর চোয়াল শক্ত হয়ে এল, মুখ লাল হয়ে গেল, "ঠিক বলেছ সাধুদা। আমাদের এভাবে হাত গুটিয়ে বসে থাকা মানায় না। মানুষ কী কচু গাছ, যে, যখন খুশি তখন ফেচ করে কেটে ফেলে দিয়ে চলে যাবে? না, মোটেই না। এই অপরাধ আর হতে দেওয়া যায় না, আর হাত গুটিয়ে থাকা যায় না। পরিস্থিতি দিন-কে-দিন খারাপ হয়ে যাচ্ছে, জটিল থেকে জটিলতর। অপরাধীদের এখানে, এখুনিই থামিয়ে দিতে হবে। আমরা থামিয়ে দেব। বেলা থাকতেই আমাদের পথ খুঁজে নিতে হবে। এখুনি কাজ শুরু করতে হবে। এখুনি-! এখুনি-!" এই বলে সে ঝট করে সোফা ছেড়ে উঠে গেল আর গত সাত দিনের সংবাদপত্রগুলি বের করে এনে ছড়িয়ে দিল টেবিলে। খুঁটিয়ে পড়তে লাগল সকল খুনের বিবরণ। পড়তে-পড়তে বলল, "তোমার ডাইরিটা একটু দাও তো সাধুদা!" সদানন্দের কাছ থেকে ডাইরি চেয়ে নিয়ে তাতে লিখতে লাগল খুনের দিন, ক্ষণ।

১ ম খুন: বলাকা সাহা, বয়স ৫৪ বছর। কলেজের অধ্যাপিকা। বাড়ি ভট্টপুকুর।

২ য় খুন: শান্তনু আঢ্য, বয়স ৪৫ বছর। ব্যবসায়ী। আগরতলার হকার্স কর্নারে উনার এক দোকান আছে। বাড়ি ধলেশ্বর কল্যাণী।

৩ য় খুন: বাহাদুর প্রসাদ, নেপালের লোক। আগরতলায় বেড়াতে এসেছিলেন। বয়স ৩৭ । খুন হয়েছে অভয়নগরে।

৪র্থ খুন: সজল বৈদ্য। খুব গরীব। পথের পাশের চা-স্টল দিয়ে কোনও রকমে সংসার চালায়। বয়স ২৮ । বাড়ি রামনগরের ৪ নম্বর।

পত্রিকাগুলি ভাজ করতে-করতে রাজবংশী বলল, "লক্ষ্য করেছ সাধুদা, সবাই কিন্তু ভিন্ন পেশার মানুষ। সবার বাড়ি ভিন্ন-ভিন্ন জায়গায় আর সবার বয়সই আলাদা। তাছাড়া গরীব-ধনী সবাই মারা পড়ছে। এর মানে কী? এক গরিব চা-স্টলের মালিকের কাছে কী আহামরি খাজানা থাকতে পারে?"

সদানন্দ সম্মতি জানিয়ে বলল, "তাই তো দেখছি। তোর কী মনে হয়ে, খুন গুলি বিচ্ছিন্ন ঘটনা, না কি এক সূত্রে গাথা-মালা।"

"হুম, তুমি প্রশ্নটা ঠিক করেছ, কিন্তু আমার কাছে উত্তর নেই। হতে পারে সব গুলি বিচ্ছিন্ন ঘটনা, আবার হতে পারে কোনও উন্মাদ পাগলের কাজ, এক সূত্রে গাথা-মালা। এখুনি এ সব বলা খুব মুশকিল। চল একটা কাজ করি, দু'জনে মিলে স্পটগুলি ঘুরে আসি, মৃতকদের পরিবারের লোকজনদের সাথে কথা বলি," এ বলেই হঠাৎ সে চীৎকার করে উঠল, "আরে! দাঁড়াও! দাঁড়াও!"

ধপ করে সোফায় বসে পড়ল রাজবংশী আর ডাইরিতে নিজের লেখাগুলির দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে রইল, যেন কিছু খুঁজছে। কিছুক্ষণ ডাইরির দিকে তেমনি তাকিয়ে থেকে আনমনেই বলে উঠল,"বাহ-বাহ, আরে বাহ, মিল একটা তো খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে সাধুদা। আরে হ্যাঁ, সত্যিই তো, মিল তো একটা পাওয়া যাচ্ছে।"

সদানন্দ অতি উৎসাহে প্রায় লাফিয়ে উঠল, "পেয়েছিস, কী? কেমন?"

"খুন হওয়া ব্যক্তিদের বয়স। তাদের বয়সগুলিকে পর-পর সাজালে একটা মিল পাওয়া যাচ্ছে। এই দেখ, খুন হওয়া ব্যক্তিদের বয়সটা নিম্নক্রম, অর্থাৎ বৃদ্ধ থেকে যুবকের দিকে।"

রাজবংশীর কথা শুনে হুর-মুরিয়ে ডাইরির উপর ঝুঁকে পড়ল সদানন্দ। ব্যাঘ্র ভাবে দেখতে লাগল লেখাগুলি, "আরে হ্যাঁ। নিশ্চয়ই-নিশ্চয়ই। ঠিক, একদম ঠিক। খুন হওয়া ব্যক্তিদের বয়স নিম্নমুখী।"

রাজবংশী বেশ ভাবুক সুরে বলল, "এই নিম্নক্রমের মানে কী? মানে তো একটা নিশ্চয়ই থাকবে, আর যদি মানে থাকেই তবে সেটা কী? ইতিহাস বলে, খুনিরা নিজেরাই নিজেদের অজান্তে খুনের সব প্রমাণ প্রকাশিত করে রাখে। শুধু বিচার-বুদ্ধি আর তর্কের দিয়ে তা দেখে নিতে হয়। খুন হয়ে যাওয়া লোকগুলির বয়স, খুনিদের দিকে ইশারা করছে না তো?"

রাজবংশীর কথা শেষ হতেই ওর মোবাইল ফোনটিতে মহান গায়ক মহম্মদ রফি'র একটি হিন্দি গান বেজে উঠল,"আয়ে হ্যাঁয় দূর সে, মিলনে হুজুর সে ..," ফোনের দিকে তাকিয়ে রাজবংশী চাপা গলায় বলে উঠল, "আই জী সাহেব! সকাল-সকাল! ওরে বাবা!"

"হ্যালো, গুড মর্নিং স্যার, রাজবংশী বলছি ... হ্যাঁ স্যার, দেখেছি। আমি আর সাধুদা এ নিয়েই এই মাত্র কথা বলছিলাম ... হ্যাঁ, অবশ্যই স্যার, আজ থেকেই কাজে নেমে পড়ছি। আশা করি খুব তাড়াতাড়িই আমরা আসল অপরাধীদের ধরতে পারব ... ওকে স্যার। ধন্যবাদ, রাখছি। জয় হিন্দ।"

বেশ খুশি মনে ফোনটি রেখে সদানন্দকে কিছু বলতে যাচ্ছিল ঠিক এমন সময় ঘরের দরজার কলিং বেলটি বেজে উঠল। বন্ধ দরজার দিকে চেয়ে রাজবংশী হাঁক দিল, "ভবচরণ, দেখত কে এসেছে? দরজা খুলে দে।"

রান্নাঘর থেকে ভবচরণ দ্রুত পায়ে এসে দরজা খুলে দিল। কিন্তু দরজা খুলতেই কী যেন তাকে আবেশিত করে দিল। কিছু একটা দেখে সে স্থির দৃষ্টিতে পাথরের মত দাঁড়িয়ে রইল শুধু, দরজার পাশে। এ যে এক স্বর্গের অপ্সরা, অপরূপ সুন্দরী এক নারী, তার গা চুইয়ে মায়াবী রূপ গলে-গলে পড়ছে। ভবচরণের মুখে আর কোনও রা এল না। ভবচরণের এই অবস্থা দেখে এগিয়ে এল রাজবংশী। রাজবংশীকে আসতে দেখেই সেই সুন্দরী অতি বিনয়ের সাথে হাত জোর করে বলল, "নমস্কার, আমি মিস্টার রাজবংশীর সাথে দেখা করতে চাই। উনি কী আছেন? উনার সাথে দেখা করা যাবে?"

রাজবংশী অতি বিনয়ের সাথে প্রতি-নমস্কার জানিয়ে বলল, "নমস্কার, আমিই অনুব্রত রাজবংশী। আসুন, ভিতরে আসুন।"

রাজবংশীর পিছু-পিছু ঘরে প্রবেশ করল সেই রমণী। সেই রমণীর পিছু-পিছু ঘরে প্রবেশ করল এক ঝাঁক রূপ-রৌদ্র আর চাঁদের আলো। রাজবংশীর সাদা-মাটা গোয়েন্দা-ঘরটি রূপের আলোয় ঝলমল করে উঠল। যেন এক রূপকথার পরি তেপান্তরের মাঠ পেরিয়ে নেমে এল রাজবংশীর ঘরে। অতি সম্মানের সাথে সেই রমণীকে আসন দেওয়া হল। শুরু হল আলাপচারিতা। ভদ্রমহিলা বললেন, "আমার নাম চন্দ্রবালা। আমার স্বামীর নাম বাহাদুর প্রসাদ।"

বাহাদুরের নাম শুনেই মেরুদণ্ড সোজা হয়ে গেল রাজবংশীর, "বাহাদুর প্রসাদ? মানে! আপনি কী সেই -?"

ভদ্রমহিলা রাজবংশীর মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বললেন, "হ্যাঁ, আপনি ঠিক ধরছেন। আমি সেই বাহাদুর প্রসাদের স্ত্রী, যিনি গত শুক্রবার খুন হয়েছেন।"

"ও! আপনার স্বামীর জন্য আমরা খুব দুঃখিত, মিসেস -"

"আমার নাম চন্দ্রবালা।"

"ও হ্যাঁ, নামটি আপনি একটু আগেই বলেছিলেন, আমিই মিস করে গেছি। ওকে, বলুন চন্দ্রবালা দেবী, কী সাহায্য করতে পারি?"

কোন ভণিতা না করে চন্দ্রবালা সরাসরি বললেন, "আমার স্বামীর খুনিদের ধরতে আমি আপনার সাহায্য চাই মিস্টার রাজবংশী। এই নিন আপনার অগ্রিম পারিশ্রমিক," বলে তিনি বিশাল অঙ্কের এক চেক রাজবংশীর দিকে বাড়িয়ে দিলেন।

রাজবংশী মৃদু হাসল। বলল, "দেখুন, আপনি আমার উপর খুব ভরসা করে আমাকে এক বিশাল কাজের দায়িত্ব দিচ্ছেন, তার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। তবে কী জানেন, আমি কখনোই অগ্রিম পারিশ্রমিক নিই না। যদি আমার কাজে আমি সফল হই, যদি অপরাধীদের ধরে দিতে পারি, তখন না হয় আপনার খুশি মত আমাকে একটা পারিশ্রমিক দিয়ে দেবেন। আপাতত এই টাকাটা আপনার কাছেই রাখুন। তবে নিশ্চিন্ত থাকুন, আমি আপনার কাজ অবশ্যই করব। বলতে পারেন, খুনিদের খুঁজে বের করবই।"

কোনও জোরাজুরি করলেন না চন্দ্রবালা। নিজের অনিচ্ছা স্বত্বেও চেকটি আবার নিজের ব্যাগের ভিতরে রেখে দিলেন। এই অল্প সময়ের মধ্যেই তার বেশ-ভূষা, কথাবার্তা আর আদব-কায়দায় বুঝা গেল, খুব উচ্চ বংশের মেয়ে তিনি, বেশ সম্ভ্রান্ত পরিবারের সদস্যা। কথাবার্তায় যেমন একটা পরিপাটি ভাব, তেমনি সাজ-সজ্জায়ও পরিপাটি স্টাইল। চুলগুলি একদম রাজকীয় ভাবে আঁচড়ানো। লাল চুড়িদার, সাদা উর্ণা, হাতে নেল পালিশ, ঠোটে লিপস্টিক, কানে দুল, হাতে চুড়ি, সব কিছু একদম টিপ-টপ, ফিট-ফাট, একেবারে নিখুঁত। উনাকে দেখে কে বলবে যে, দু'দিন আগে উনার স্বামী খুন হয়েছেন! উনার স্বামী যে মারা গেছে, সেই শোক কী উনার নেই? তবে কী উনার স্বামী মারা যাওয়াতে উনি দুখী নন? আবার যদি স্বামীর প্রতি টানই না থাকে, তবে কেন রাজবংশীর কাছে ছুটে এসেছেন, কেন এত টাকা পারিশ্রমিক হিসেবে অগ্রিম দিতে চাইছেন? এই অপরূপ রূপের পিছনে কোনও অপরাধী লুকিয়ে নেই তো? নিজের অপরাধকে ঢাকার এটা কোনও চক্রান্ত নয়তো?

Next Part

সমগ্র পর্বগুলি: সমগ্র পর্বগুলি

রাজবংশী সিরিজের অন্য গোয়েন্দা গল্প:
মাণিক্য   
সর্দার বাড়ির গুপ্তধন রহস্য   
প্রেমিকার অন্তর্ধান রহস্য   
গোয়েন্দা গল্পের সম্পূর্ণ তালিকা

All Bengali Stories    30    31    32    33    34    35    (36)     37   


## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers. The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation. Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##


◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717