Home   |   About   |   Terms   |   Contact    
RiyaButu
A platform for writers

লুকানো চিঠির রহস্য


ত্রিপুরার বাংলা গোয়েন্দা গল্প


All Bengali Stories    30    31    32    33    34    35    (36)     37      

-হরপ্রসাদ সরকার, ধলেশ্বর - ১৩, আগরতলা, ত্রিপুরা ( পশ্চিম )

লুকানো চিঠির রহস্য
( ত্রিপুরার বাংলা গোয়েন্দা গল্প )
রাজবংশী সিরিজের চতুর্থ গোয়েন্দা গল্প
- হরপ্রসাদ সরকার, ধলেশ্বর-১৩, আগরতলা
২১-১১-২০১৮ ইং

সমগ্র পর্বগুলি: সমগ্র পর্বগুলি

◕ লুকানো চিঠির রহস্য
পর্ব ৭

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ আমাদের এই ওয়েবসাইট ( RiyaButu.com )-এ প্রকাশিত গল্পগুলির মধ্যে থেকে কিছু গল্প নিয়ে এবছরই প্রকাশিত হবে আমাদের 'রিয়াবুটু'র গল্প'।
--------------------------

কিছুক্ষণের মধ্যেই সবাই অভয়নগর গিয়ে পৌঁছল। চন্দ্রবালার বাড়িতে অনেক আত্মীয়-পরিজন উপস্থিত। চন্দ্রবালার পিছু-পিছু অপরিচিত দু'জনকে হঠাৎ বাড়ির ভিতর দেখে সবাই কেমন যেন চুপ করে গেল। চন্দ্রবালা অতি ভদ্রতার সাথে বললেন, "আসুন মিস্টার রাজবংশী,আসুন। বাবা, এই দেখ, ইনি হলেন ত্রিপুরার প্রসিদ্ধ গোয়েন্দা, মিস্টার অনুব্রত রাজবংশী, যার কথা আমরা সকালে আলোচনা করেছিলাম। আর উনি হলেন মিস্টার সদানন্দ, উনার সহকারি। আমরা মিস্টার রাজবংশীর হাতেই বাহাদুরের খুনের কেসটি তুলে দিচ্ছি। মিস্টার রাজবংশী, ইনি হলেন আমার বাবা, মিস্টার গোপালকৃষ্ণ।"

রাজবংশী আর সদানন্দ উভয়ই বিনীত ভাবে হাত জোর করে বলল, "নমস্কার স্যার।"

দেখলেই বুঝা যায়, গোপালকৃষ্ণ বেশ উচ্চবংশীয় আদব-কায়দার লোক। বয়স সত্তরের উপর হবে, কিন্তু যৌবনে নিশ্চয়ই খুব তরো-তাজা ছিলেন। তবে আজ খুব মন-মরা। তিনি অতি ধীরে বললেন, "নমস্কার। আসুন, ভিতরে আসুন। বুঝতেই তো পারছেন, মন মানসিকতা ভাল নেই। হঠাৎ এমন একটা অঘটন ঘটে গেল, হাসি-মুখে আপনাদের যে বরণ করে নেব, সেই ক্ষমতাও আমার নেই। তাই-"

"হ্যাঁ, সত্যিই খুব দুঃখজনক ঘটনা।"

"দেখুন, পুলিশের কাজ তো পুলিশ করবেই, তবু আমরা চাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব খুনিদের খুঁজে বের করে পুলিশের হাতে তুলে দিতে। আমি কোনও ভাবেই মেনে নিতে পারছি না, বিশ্বাসই করতে পারছি না, বাহাদুরের মত এমন একটা তাজা প্রাণ আজ আর নেই।"

কাঁপা স্বরে চীৎকার করে উঠল চন্দবালা, "আহ্ বাবা! কেন বারে-বারে ফিরে-ফিরে সে কথায় আসছ?" যেন একটি বিদীর্ণ বিদরি হৃদয়, শূন্য রাজপ্রাসাদে, কাঁচের ঝাড়বাতির মত প্রচণ্ড শব্দে মেঝেতে আছড়ে পড়ল। চন্দ্রবালার হৃদয়ের এই ভাঙ্গা বিরহবিধূর অবস্থাটি শুধু তার নিজের ঘরেই আরও সুস্পষ্ট হয়ে এখন ধরা দিল। ঘরটি হঠাৎ নিস্তব্দ হয়ে গেল। বেশ কিছুক্ষন ঘরের কেউ কোনও কথাই কইল না, শুধু মাথা নুইয়ে নীরবে মাটির দিকে তাকিয়ে রইলেন চন্দ্রবালা। অনেকক্ষণ পরে মাথা তুলে ছলছল চোখে অতি বিদার কণ্ঠে বললেন, "বলুন মিস্টার রাজবংশী, আপনি কী জানতে চান?" ঠিক বুঝা গেল, বাহাদুরের স্মৃতিগুলি ভেসে বেড়াচ্ছে তার মনে। শুধু আভিজাত্যের প্রদর্শনে মনের শোক বাইরের অশ্রু হয়ে ঝড়ে পড়েনি এতকাল, কিন্তু গোপনে-গোপনে চন্দ্রবালা খুব কাঁদছেন বাহাদুরের জন্য।

মেয়ের এই অবস্থাটা চন্দ্রবালার বাবা আর সইতে পারলেন না। তিনি চেয়ার ছেড়ে উঠে বাইরে চলে গেলেন। যেতে-যেতে বলে গেলেন, "আমি পাশের রুমে আছি মা। তোমরা বসে কথা বলো, দরকার হলে ডাকবে।" উনার কথার কেউ আর প্রত্তোত্তর করল না। ঘরে এবার রাজবংশী, সদানন্দ আর চন্দ্রবালা। বাবা উঠে চলে যেতেই রাজবংশীকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে চন্দ্রবালা নিজেই বলতে লাগলেন, "এটা আমাদের নিজের বাড়ি নয়, ভাড়া বাড়ি। বেশ বড় বাড়ি। বড় বাড়িই ওর পছন্দ ছিল। বলত, 'বড় বাড়িতে বেশ মন-প্রাণ খুলে শ্বাস নেওয়া যায়।' বাড়ির মালিক এখানে থাকেন না। দিল্লীতে কোথাও তার ছেলে-মেয়েদের সাথেই থাকেন। ত্রিপুরাতে আসার পর থেকে বাহাদুর এই বাড়িতেই আছে। বিয়ের পরে আমিও এই বাড়িতেই এসে উঠি। এখানেই শুরু হয়েছিল আমাদের সুখের সংসার। আজ সেদিনের প্রতিটি স্মৃতি আমার মনে ঘুরে ঘুরে আসছে।" আবার ভাবুক হয়ে গেলেন চন্দ্রবালা, চোখের কোনা জলে চিক-চিক করতে লাগল। কিছুক্ষণ সময় নিয়ে তিনি আবার বলতে লাগলেন, "ভাড়া বাড়ি হলেও, বাহাদুর এই বাড়িটিকে খুব সুন্দর করে সাজিয়ে-গুছিয়ে নিয়েছিল, বাড়িতে প্রচুর ফুলের গাছ লাগিয়ে ছিল ও। ফুল খুব ভালবাসত। বাইরে এই যে এত টগর, গোলাপ, জুই, চাপা, পাতাবাহার ইত্যাদির দেখছেন, সব কিন্তু ওর হাতেই লাগনো। কোথাও এক টুকরো ফুলের ডাল পেলেই হল, হাতে করে নিয়ে আসত আর এখানে-সেখানে গুঁজে দিত। অবাক কাণ্ড, সে গুঁজে দিলেই গাছ হয়ে যায়। কখনো-কখনো ভাবতাম, সে কোনও মরা ডালকে ছুঁয়ে দিলে সেটিও হয়তো জ্যন্ত হয়ে যাবে। সম্ভবত এটাই এক শিল্পীর হাত; যেখানেই হাত দেয় সেখানেই শিল্প হয়ে যায়। সব সময় সে ফুল, গাছ, লতা, পাতা আর প্রকৃতি নিয়ে থাকত বলেই হয়তো ওর মনটা এত খোলামেলা ছিল, এত প্রাণবন্ত ছিল, এত শিল্প ছিল ওর ভিতর। আজ সব শেষ, কিছুই বাকী রইল না, আজ যদি সে আমাকে সেই শিল্পটি শিখিয়ে দিত, যা দিয়ে আমি তাকে ক্ষনিকে জন্য বাঁচিয়ে তুলতে পারতাম, কিছুক্ষন তাকে জরিয়ে ধরে খুব কাঁদতে পারতাম-" গলা ধরে এল চন্দ্রবালার, আর কিছু বলতে পারলেন না তিনি। শুধু উর্ণাতে মুখ ঢেকে ফুঁপিয়ে-ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলেন।

অনেক্ষন পরে নিজেই নীরবতা ভাঙ্গলেন, "সরি, আমি খুব ইমোশনাল হয়ে পড়েছিলাম, শুধু আমার কথাই বলে যাচ্ছিলাম। এবার বলুন মিস্টার রাজবংশী, আপনি কী জানতে চান?"

রাজবংশী গলা ঝারা দিয়ে বলল, "আসার সময় লক্ষ্য করলাম বাইরের লোহার গেইটে এবং বারান্দার গ্রীলে, এই বড়-বড় তালা ঝুলছে।"

"হ্যাঁ, এগুলি রাতে এবং দিনে সব সময়ই ব্যবহার করা হয়, প্রতিদিনই ব্যবহার করা হয়। আমরা দু'জনে যখন কাজে বের হয়ে যাই তখন বাড়ি তো খালিই থাকে, তাই ভাল করে ওগুলিকে লাগিয়ে যাই। রাতের বেলাতেও লোহার গেইট আর বারান্দার গ্রীল তালা-বন্ধই থাকে। কারণও আছে, বাহাদুর সব সময় একটু বেশী রাত পর্যন্ত কাজ করত, ফলে আমিও জেগে থাকতাম। তাই ঘুম থেকে উঠতে আমাদের বেশ দেরী হয়ে যেত। বাড়িতে তো অনেক ফুল গাছ, তাই ফুল চোরের খুব উৎপাত। শক্ত করে তালা দিয়ে না রাখলে সকালবেলায় ফুল-চোরের উৎপাত সহ্যই করা যায় না। আধা রাত থাকতেই হাতে টর্চ-লাইট নিয়ে চলে আসে। ওরা ফুল-চোর, না আসল চোর; বোঝাই যায় না। একবার এমনই এক কাণ্ড ঘটেছিল, ফুল-চোর ভেবে এগিয়ে গিয়ে আসল চোরের হাতে পড়ে গিয়েছিল বাহাদুর। সে এক আরেক কাণ্ড। যাক, তারপর থেকে আমরা তালাগুলি ভাল করে বন্ধ করতে কখনো ভুলি না।"

"অবাক কাণ্ড, ফুল-চোরের এত উৎপাত! মানুষকে এত হয়রানি করে চুরি করা ফুলে ঠাকুর এতই সন্তুষ্ট হন? সে যাক, আচ্ছা, আপনি এই মাত্র বললেন, আপনার স্বামী অনেক রাত পর্যন্ত জেগে কাজ করতেন; কী কাজ করতেন? অফিসের কাজ? অফিসে কী খুব চাপ ছিল?"

"না, মোটেই না। অফিসের চাপ যাতে না থাকে তার জন্যই তো সে এত পড়াশুনা করেও অতি সাধারণ কেরানীর চাকরি করত। অবশ্যই পয়সার জন্য সে চাকরী করত না। আজও আমার মাথায় একটা কথা আসেনি, এত বড় এক বনেদী জমিদার পরিবারের ছেলে হয়ে, এত বিশাল ধন-সম্পদের মালিক হওয়া সত্বেও কেন সে এখানে এসে সামান্য এক কেরানীর চাকরি করত?"

"অবাক কাণ্ড! আপনাকে এ সম্পর্কে কখনোই কিছু বলেননি?"

"না, এই ব্যাপারে ও আমাকে কোনও দিনই 'টু' শব্দও কিছু বলেনি।"

"আপনি প্রশ্ন করেন নি?"

"হ্যাঁ, করেছি, বহুবার করেছি! প্রতিবারই সে এক রহস্যময় হাসি হেসে আমার কথা উড়িয়ে দিত। কখনো এ নিয়ে খুব চাপা-চাপি করলে, ও কিন্তু বিরক্ত হত না, বরং খুব হাসত। বলত, 'গোপন অভিযানে আছি। সিক্রেট মিশন।' এ কথা শুনার পর থেকে আমিও তাকে আর বেশী ঘাটাই নি। কী জানি বাবা, যদি সত্যিই কোন মিশন হয়ে থাকে!"

"ওরে বাবা! গুপ্তচর বৃত্তি! তার মানে এমন নয়তো, এক গুপ্তচর আরেক গুপ্তচরকে এসে মেরে ফেলল?" ভউ- ভউ করে কথাগুলি বলে গেল সদানন্দ।

ঘরের চারটি চোখ বেশ বিশ্ময়ে ঘুরে তাকাল সদানন্দের দিকে। নীরবে রাজবংশীর চোখ ধমকে উঠল, "সাধুদা! বোকার মত এ সব কী বলছ?"

খুব উৎসাহি সাধুদা ধুপ করে নেতিয়ে পড়ল। রাজবংশী চন্দ্রবালাকে প্রশ্ন করল, "আপনার স্বামী তো কবিতা, গল্প লিখতেন; মানে সাহিত্য চর্চা করতেন। আপনি কী তার লেখা নিয়মিত পড়তেন? উনার কী কোনও বই প্রকাশ হয়েছিল?

"মজার ব্যাপার কী জানেন মিস্টার, আমি বাহাদুরের কবিতা শুনেই ওর প্রেমে পড়ি; এ কথা ঠিক। ওর গিটার শুনে আমার মনে ঝংকার হয়েছিল, আর ওর কবিতা শুনে মনে-মনে ওকে আমার জীবনের অলঙ্কার করে নিয়েছিলাম। কিন্তু আমি কবিতা বা গল্প পড়তে সত্যিই ভালবাসি না। তবে বাহাদুরকে কখনও লেখা-লেখি করতে বাধাও দেইনি। ওটা ছিল তার নিজস্ব জগত। সেই জগতে আমি কখনোই খুব বেশী ঘুরাঘুরি করিনি। এখানে একটা কথা আছে, যখন সে তার জগত নিয়ে থাকত তখন মনে হতো সে এক অন্য গ্রহের মানুষ; মান-অভিমান, দুঃখ-কষ্ট, খুদা-তৃষ্ণা কিছুই তাকে তখন আঘাত করত না, স্পর্ষ করত না। সে তখন মেতে থাকত শিল্পের আনন্দে, সৃষ্টির আনন্দে। তার সেই আনন্দটাকে আমি কোনওদিনই নস্ট করতে চাইনি, বরং সে যখন সৃষ্টির আনন্দে মেতে থাকত, প্রাণ খুলে খুশীর সাগরে ভাসত; আমি দূর থেকে তাকে দেখতাম, প্রাণ ভরে তাকে দেখতাম আর আরও ভালবাসতাম।" চন্দ্রবালার বুক চিরে একটি দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে এল। সে নিজের মনেই আবার কিছুক্ষন হারিয়ে গেল বাহাদুরের স্মৃতিগুলিকে নিয়ে। সামান্য সময় পরে নিজেই বলল, " তবে মাঝে-মাঝে সে আমাকে তার কিছু-কিছু রচনা দেখাত, পড়ে শুনাত; খুব ভালই লাগত। ব্যাস, ঐ টুকুই। হ্যাঁ,যদিও ওর লেখা নিয়ে কোন বই প্রকাশিত হয়নি, তবে বেশ কয়েকটি বই খুব শিঘ্রই প্রকাশিত হবার কথা ছিল। সব কিছু তৈরিই ছিল, তবে সেটি আর হয়ে উঠল না।"

"সেই পাণ্ডুলিপি নিয়ে এই হত্যা নয়তো?" বেশ মিন-মিন করে প্রশ্ন করল সদানন্দ।

বেশ উৎসাহ নিয়ে চন্দ্রবালা সদানন্দর দিকে ফিরে তাকালেন আর বললেন, " হ্যাঁ, পাণ্ডুলিপির চুরির ঘটনা হলেও হয়ে থাকতে পারে! কারণ ঐ বইটিতে ত্রিপুরার উপরেই কিছু একটা গুরুত্বপূর্ণ লেখা ছিল। তা আমি জানতান, বাহাদুরই আমাকে বলেছিল।"

এ কথা শুনে নেতিয়ে পড়া সদানন্দ আবার তাজা হয়ে উঠল। রাজবংশী চন্দ্রবালাকে প্রশ্ন করল, "আপনার স্বামীর সেই পাণ্ডুলিপিটি কী আছে? দেখতে পারবেন? না-কি সেটিও খোয়া গেছে?"

"একটু দাঁড়ান, দেখছি," এই বলে উঠে গেল চন্দ্রবালা দেবী।

Next Part

সমগ্র পর্বগুলি: সমগ্র পর্বগুলি

রাজবংশী সিরিজের অন্য গোয়েন্দা গল্প:
মাণিক্য   
সর্দার বাড়ির গুপ্তধন রহস্য   
প্রেমিকার অন্তর্ধান রহস্য   
গোয়েন্দা গল্পের সম্পূর্ণ তালিকা

All Bengali Stories    30    31    32    33    34    35    (36)     37   


## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers. The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation. Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##


◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717