Home   |   About   |   Terms   |   Contact    
RiyaButu
A platform for writers

লুকানো চিঠির রহস্য


ত্রিপুরার বাংলা গোয়েন্দা গল্প


All Bengali Stories    30    31    32    33    34    35    (36)     37      

-হরপ্রসাদ সরকার, ধলেশ্বর - ১৩, আগরতলা, ত্রিপুরা ( পশ্চিম )

লুকানো চিঠির রহস্য
( ত্রিপুরার বাংলা গোয়েন্দা গল্প )
রাজবংশী সিরিজের চতুর্থ গোয়েন্দা গল্প
- হরপ্রসাদ সরকার, ধলেশ্বর-১৩, আগরতলা
০৫-১২-২০১৮ ইং

সমগ্র পর্বগুলি: সমগ্র পর্বগুলি

◕ লুকানো চিঠির রহস্য
পর্ব ৯

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ আমাদের এই ওয়েবসাইট ( RiyaButu.com )-এ প্রকাশিত গল্পগুলির মধ্যে থেকে কিছু গল্প নিয়ে এবছরই প্রকাশিত হবে আমাদের 'রিয়াবুটু'র গল্প'।
--------------------------

রাজবংশীর কথা শুনে ঘরটা হঠাৎ যেন কেঁপে উঠল। সদানন্দও জীবনে কোনও দিন এত অবাক হয়নি। আর চন্দ্রবালা দেবী, তিনি তো আকাশ ভেঙ্গে পড়লেন! সত্যিই তো উনার ব্যক্তিত্ব, খুনির ব্যক্তিত্বের সাথে সম্পূর্ণ মিলে গেছে। তবে?

ঘরের সবার চোখ চন্দ্রবালার উপর গিয়ে পড়ল। এক চরম অস্বস্তিতে চন্দ্রবালা হাবার মত শুধু চেয়ে রইলেন রাজবংশীর দিকে। অসীম খামোশি ছেয়ে গেল ঘরটা জুড়ে। এমন পরিস্থিতিতে রাজবংশীই নীরবতা ভাঙ্গল। বলল, "আমার কথা শুনে কেউ আবার চন্দ্রবালা দেবীকে খুনি ভাববেন না যেন; তিনি খুনি নন। এই ব্যাপারে আমি একশ শতাংশ নিশ্চিত। এর পিছনে কারণও আছে, খুনের সময় তিনি এখানে সত্যি ছিলেন না, স্কুলে ছিলেন। এর প্রমাণ আমার কাছে আছে। আমি আর সাধুদা বাইকে এখানে আসার সময় পথে কাবেরী ঘোষকে ফোন করি। কাবেরী আর চন্দ্রবালা দেবী একই স্কুলে শিক্ষকতা করেন। কাবেরীকে যখন সব কথা জিজ্ঞেস করলাম, কাবেরী কিন্তু চন্দ্রবালা দেবীর কথাই সমর্থন করল। সে আমাকে বলল, ঐ দিন ওরা দু'জন পাশাপাশি ক্লাসেই পড়াচ্ছিল। হঠাৎ হেডমাস্টার মশাই পিওনকে দিয়ে চন্দ্রবালা দেবীকে ডেকে পাঠান আর স্কুলের গাড়ি করে বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। উনি যে স্কুলের গাড়ি করে সেদিন বাড়িতে এসেছিলেন, পুলিশও সে কথা জানে। এত কিছুর পরেও এখানে একটা প্রশ্ন থেকে যায়, এমনও তো হতে পারে, স্কুলে যাবার আগে চন্দ্রবালা দেবীই বাহাদুরকে খুন করে ফেলে রেখে গিয়েছিলেন! এই প্রশ্নটাই আমাকে খুব ভাবাচ্ছিল, কারণ পরিপার্শ্বিক অবস্থা উনার দিকেই ইশারা করছিল। কিন্তু না, তেমনটাও ঘটেনি, সেই দিক থেকেও এবার আমি নিশ্চিন্ত। এর কারণ পোষ্ট-মর্টাম রিপোর্ট। পোষ্ট-মর্টাম রিপোর্টটি খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল; হত্যার সময়টি নিয়ে। পোষ্ট মর্টাম রিপোর্ট অনুযায়ী বাহাদুরকে খুন করা হয়েছে দুপুর ১২-৩০ থেকে ১-৩০ এর মধ্যে। আর ঐ সময় কাবেরী, চন্দ্রবালার পাশাপাশিই ছিল। ফলে চন্দ্রবালা দেবীকে আমি সন্দেহের বাইরে নিয়ে গেলাম। আমি ক্ষমা চাইছি চন্দ্রবালা দেবী, খুনির যে ব্যক্তিত্ব আমার চোখে ধরা পড়েছে, তার সাথে আপনার ব্যক্তিত্ব একেবারে মিলে যাওয়ায় আমি এই কাজ করতে বাধ্য হয়েছি। তদন্তের স্বার্থে, সত্যকে খুঁজে বের করতে মাঝে-মাঝে আমাদের কিছু তিক্ত সিদ্ধান্ত নিতেই হয়, এ ব্যাপারে আমি নিরুপায় থাকি। আমি রাখ-ঢাক না রেখে সব খুলাখুলি বলেছি, আশাকরি আপনি আমায় ভুল বুঝবেন না।

চন্দ্রবালা দেবী একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মৃদু হেসে অতি বিনয়ের সাথে বললেন, "না-না, মিস্টার রাজবংশী, আপনি এ কী বলছেন! আমি বিন্দু মাত্র খারাপ ভাবিনি, তবে হতবাক অবশ্যই হয়েছিলাম। তাছাড়া আপনি আপনার মত করে কাজ করবেন, এটাই তো স্বাভাবিক, এ জন্যই তো আপনাকে এখানে ডেকে আনা। কাছের-দুরের আমি এত কিছু বুঝি না, বাহাদুরের খুনিকে চাই, ব্যাস। আপনি যখন নিশ্চিত যে, কাছের খুব পরিচিত কেউ বাহাদুরকে খুন করেছে, তখন সেই খুনির পরিচয় পেয়ে আমরা হয়তো আকাশ থেকে পড়ব, হয়তো বিশ্বাসই করতে চাইব না। মনে হচ্ছে, বাহাদুরও হয়তো কল্পনা করতে পারেনি যে, এই লোকটি তার উপর এমন আঘাত হানবে। না-না, আপনি নির্দ্বিধায় আপনার মত করে এগিয়ে যান। পাহাড়-পর্বত কিছুই আমি বুঝি না, যত টাকা খরচ হয় হবে, সব আমি দেবো, কিন্তু বাহাদুরের খুনিকে আমি চাই-ই- চাই। এটাই এখন আমার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য, আর কিছু নাই।"

হাফ ছেড়ে রাজবংশী বলল, "অশেষ ধন্যবাদ আপনাকে, চন্দ্রবালা দেবী। আপনি এত খোলা মনের পজিটিভ মানুষ, তা আমি সত্যি আগে বুঝতে পারিনি।"

"সবটাই আমার স্বামীর কাছ থেকে পাওয়া, ওর কাছ থেকেই শেখা। ও আরও বেশী ওপেন-মাইন্ডের লোক ছিল, খুব পজিটিভ-মাইণ্ডেড। ওর সাথে আপনি কথা বললে বুঝতে পারতেন, ও কি রকমের মানুষ ছিল? ওর সাথে প্রথম কথা বলার পর থেকে আমার জীবন জুড়ে শুধু সে-ই-সে পড়ে ছিল, আমি আর আমার কোনও দিনই ছিলাম না।" এক দীর্ঘশ্বাস ফেললেন চন্দ্রবালা দেবী।

রাজবংশী একটু চুপ থেকে আবার বলতে শুরু করল, "এবার আমারা তদন্তের পরের ধাপে যাচ্ছি, পরিবারের গণ্ডি পেড়িয়ে বন্ধু-বান্ধবদের মাঝে। অর্থাৎ, বাহাদুরের পরিবারের বৃত্ত ছেড়ে তার বন্ধুবান্ধবদের বৃত্তে। প্রশ্ন হল, বাহাদুরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু-বান্ধবদের আমরা কী ভাবে খুঁজে বের করব? আমি ঠিক করেছি এ কাজটি আমরা করব কয়েকটি ধাপে -
এক, উনার স্ত্রী ও পরিবারের লোকজনদের সাথে কথা বলে।
দুই, উনার মোবাইল ফোন ও ডাইরি থেকে বন্ধু বান্ধবদের নাম বের করে। দুর্ভাগ্যবশত এই দুটিই খুনিরা নিয়ে গেছে, হয়তো এই ভয়েই নিয়ে গেছে।
তিন, এক বন্ধু থেকে অন্য বন্ধুর কথা জিজ্ঞেস করে।
চার, উনার ফেসবুক ও টুইটার একাউন্ট থেকে।
খুনি নিশ্চিত ভাবে এই লোকগুলির মধ্যেই আছে। এদের মধ্যে থেকেই সেই লোকটিকে খুঁজে বের করতে হবে, যে উচ্চশিক্ষিত, সাহিত্যিক ধাঁচের, মার্জিত রুচির এবং রাজকীয় সখ ধারণ করে আছেন।"

নিজের কথা শেষ করে হঠাৎ রাজবংশী চন্দ্রবালাকে প্রশ্ন করল, "আচ্ছা, চন্দ্রবালা দেবী, আপনার স্বামীর লেখা এই খাতাটি যতটুকু আমি পড়েছি তাতে বহুবার বিচিত্র ভাবে 'ফুল' শব্দটি ব্যবহার করতে দেখেছি। যেমন: ফুলে দেখলাম, ফুলে শুনলাম, ফুলে বললাম। এই ফুলটি কী?"

দুঃখের মাঝেও হেসে ফেললেন চন্দ্রবালা। বললেন, "ও আদর করে নিজের মোবাইল ফোনটিকে, মোবাইল ফুল বলত। লেখার সময় মোবাইল শব্দটি বাদ দিয়ে শুধু ফুল লিখত। তার খাতা পড়লে এমন অনেক কিছুই আপনার খটকা লাগবে। এবার নিশ্চয় বুঝতে পারছেন, কেমন ছিল আমার স্বামী?"

"সত্যিই খুব মজাদার লোক ছিলেন বুঝা যাচ্ছে। আমি কী এই খাতাটি কয়েকদিনের জন্য আমার কাছে রাখতে পারি, কাজ শেষে ফিরিয়ে দেবো?"

চন্দ্রবালা অতি আগ্রহে বললেন, "নিশ্চয়ই, নিশ্চয়ই, আমার কোনও আপত্তি নেই।"

এমন সময় মিঠুন একটু রহস্যময় ভাবে বলল, "রাজুদা, একটু বাইরে আসবে, তোমার সাথে আমার একটা কথা আছে।"

সদানন্দ পিছন-পিছন যাচ্ছিল, রাজবংশী হাত তুলে থামিয়ে দিল। বলল, "সাধুদা, কিছু মনে করো না।"

সদানন্দ বুঝে গেল রাজবংশী কী বলতে চাইছে। সে আর এগিয়ে গেল না। বাড়ির ভিতরেই ফুল বাগানের এক কোনায় চলে গেল রাজবংশী আর মিঠুন। তাদের কথাবার্তা কিছুই কানে আসছে না, শুধু তাদের অঙ্গ-ভঙ্গি দেখা যাচ্ছে। হঠাৎ রাজবংশীর এক চীৎকার ভেসে এল, "ও মাই গড! বলিস কী?" আর কিছুই শোনা গেল না। বেশ কিছুক্ষণ পরে ওরা দুজন আবার ঘরে ফিরে এল। এবার রাজবংশীর চেহারা, চোখ-মুখ সব পাল্টানো। মুখমণ্ডল বেশ লাল, থম-থমে। চেহারায় গভীর চিন্তার ছাপ। সে চন্দ্রবালাকে প্রশ্ন করল, "আপনার স্বামী কাদের সাথে বেশী চলা ফেরা করতেন, সে সম্পর্কে আপনি কী আমাদের কিছু বলতে পারেন?"

"দেখুন, ওর কোনও বন্ধুই কোনদিন আমাদের বাড়িতে আসেনি। আমরা একা থাকি বলে, বলতে পারেন, ঘরেতে বৌ একা থাকে বলে সে কোনও দিনই চায় নি তার কোনও বন্ধু এই বাড়িতে আসুক। তাই আজ পর্যন্ত তো এই বাড়িতে তার কোনও বন্ধুর দেখা আমি পাই নি। অথচ লোকটি ছিল খুব বন্ধু-বাজ। হ্যাঁ, মাঝে-মাঝে যারা আসত তাদের সাথে সে গেইটের বাইরে দাঁড়িয়েই কথা বলে সেখান থেকেই বিদায় করত।"

"কোনও পার্টি, কিংবা অনুষ্ঠানে কখনও নিয়ে যাননি?"

"না, সে পার্টি-সার্টি একদম পছন্দ করত না। পূজা-পার্বণে কেউ নিমন্ত্রণ করলে, একাই যেত; আমাকে নিয়ে যেত না। আসলে আমাকে নিয়ে সে ছিল খুব চাপা। এই একটি ব্যাপারেই দেখলাম, সে তার মনের সব দরজা বন্ধ করে রেখেছিল। সব সময় ভাবত, তার সুন্দরী বৌয়ের দিকে অন্যরা খারাপ নজর দেবে। আসলে আমাকে খুব ভালবাসত তো, তাই নিজের বুকে করেই সব সময় রাখতে চাইত, আমাকে কোথাও বেশী বেরও করত না। বলত, আমি নাকি খুব সুন্দরী, লোকে আমার দিকে কু-নজর দেবে। নিজের বুকের পাখিটার মত সব সময় আমাকে আকরে ধরে থাকত। হায়রে, আজ বুকের সেই পাখিটাই তো নেই; আমাকে ছেড়ে উড়ে গেছে। আমাকে কে আর এমন চোখে-চোখে রাখবে?" গলা ধরে এল চন্দ্রবালার। তিনি আর কিছুই বলতে পারলেন না। কিছুক্ষণ পরে ধীরে বললেন, "হ্যাঁ, তবে ওর মুখে বহুবার কিছু নাম শুনেছি। যেমন অশান্তি, বলা, বল্টু, শেওলা, দক্ষিণা, সাবি, চেলা ইত্যাদি। এই লোকদের আমি কোনোদিনই দেখিনি, তাদের আসল নাম-ধাম সম্পর্কেও কিছু জানিনা। আমি জানি, নাম গুলি সবই ছদ্মনাম। আসলে ওর একটি স্বভাব ছিল, সবাইকে কিছু না-কিছু ছদ্ম নামে ডাকার। সেই কলেজ জীবন থেকেই এটা আমি লক্ষ্য করে আসছি। আমাকে আদর করে ডাকত 'চুষ্টি'। এমন নাম বাপের-জন্মেও শুনিনি। তবে এ কথা ঠিক, সে যখন আমাকে ঐ নামে ডাকত, আমার খুব ভাল লাগত, খুবই ভাল লাগত। আজ সে নেই, তবে তার দেওয়া নামগুলি রয়ে গেছে।"

চন্দ্রবালার কথা শেষ হতেই রাজবংশী হঠাৎ বলে উঠল, "ওকে চন্দ্রবালা দেবী, আমরা কিছুক্ষণের জন্য বাইরে যাচ্ছি। আমার বাইকটি এখানেই থাকল, ঘণ্টা দু'য়েক পরে এসে নিয়ে যাব। আপনার স্বামীর এই খাতাটা আমি সাথে রাখলাম। চল মিঠুন, তোর গাড়িতে কী যাওয়া যাবে?" রাজবংশীকে খুব ব্যস্ত মনে হল।

মিঠুন মাথা নেড়ে বলল, "নিশ্চয়, নিশ্চয়। চলো, কোথায় যাবে?" একে-একে ঘর থেকে বের হয়ে গেল রাজবংশী, মিঠুন, সদানন্দ। রাজবংশীর এই ব্যস্ততা সদানন্দের চোখে অতি পরিচিত ঠেকল। সে খুব বুঝতে পারল, রাজবংশী সবার অলক্ষ্যে এই মাত্র খুনির উদ্দেশ্যে কিছু-না কিছু একটা ফাঁদ পেতে দিল আর সেই উদ্দেশ্যই নিজের বাইকটি এখানে রেখে যাওয়া। কিন্তু কার জন্য? খুনি কী আশে-পাশেই আছে?

Next Part

সমগ্র পর্বগুলি: সমগ্র পর্বগুলি

রাজবংশী সিরিজের অন্য গোয়েন্দা গল্প:
মাণিক্য   
সর্দার বাড়ির গুপ্তধন রহস্য   
প্রেমিকার অন্তর্ধান রহস্য   
গোয়েন্দা গল্পের সম্পূর্ণ তালিকা

All Bengali Stories    30    31    32    33    34    35    (36)     37   


## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers. The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation. Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##


◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717