Home   |   About   |   Terms   |   Contact    
RiyaButu
A platform for writers

নয়নবুধী


ত্রিপুরার ইতিহাসের একটি উপন্যাস


All Bengali Stories    44    (45)    46    47    48    49    50    51    52   

হরপ্রসাদ সরকার, ধলেশ্বর-১৩, আগরতলা

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ আমাদের এই ওয়েবসাইট ( RiyaButu.com )-এ প্রকাশিত গল্পগুলির মধ্যে থেকে কিছু গল্প নিয়ে এবছরই প্রকাশিত হবে আমাদের 'রিয়াবুটু'র গল্প'।
--------------------------


নয়নবুধী
( এক পাঁজালীর প্রেমিকা )
পর্ব ১০
ত্রিপুরার ইতিহাসের পটভূমিতে রচিত একটি উপন্যাস
লেখক - হরপ্রসাদ সরকার, ধলেশ্বর, আগরতলা
( এই উপন্যাসের সকল স্বত্ব সরকারি রেজিস্ট্রিকৃত ভাবে লেখক দ্বারা সংরক্ষিত )


নয়নবুধী: সমস্ত পর্বগুলি: All Parts

◕ নয়নবুধী
পর্ব ১০

হীরামনের কথায় নয়নবুধী অতি বিস্মিত হল। সে অবাক চোখে তাকিয়ে প্রশ্ন করল, "অমরমাণিক্যই শেষ উপায়? কেন? কীভাবে?"

হীরামন সহজ-সরল ভাবে জবাব দিতে লাগল, "দেখো, অমরমাণিক্য হলেন স্বর্গীয় মহারাজ বিজয়মাণিক্যের ছোট ভাই। তিনিও মহারাজ বিজয়মাণিক্যের মত খুব পরাক্রমী, বীর, বুদ্ধিমান আর প্রজাবৎসল। মহারাজ বিজয়মাণিক্য মারা যাবার পর, মহারাজ উদয়মাণিক্য, রাজনৈতিক কুট-চালে নিজে ত্রিপুরার রাজা হয়ে অমরমাণিক্যকে রাজ্য থেকে বিতাড়িত করেন। কিন্তু অমরমাণিক্যও সব কিছু সহ্য করে চুপ-চাপ বসে থাকার পাত্র নন। বিতাড়িত হয়েই তিনি ধীরে-ধীরে নিজের গুটি সাজাতে শুরু করে দিলেন। তিনি বনে-জঙ্গলে, পাহাড়ে-পর্বতে ঘুরে-ঘুরে ক্রমাগত নিজের সৈন্যবল বাড়িয়ে যাচ্ছেন। উনার দরজা সব সময় ত্রিপুরাবাসীদের জন্য উন্মুক্ত। যতটুকু খবর আছে, এখন পর্যন্ত উনি প্রচুর সৈন্য জমা করতে সক্ষম হয়েছেন। এ খবর মহারাজ উদয়মাণিক্যেরও জানা। তিনি এটাও খুব ভাল জানেন যে, অমরমাণিক্য একদিন ফিরে আসবেনই। আর সেদিন এক ভয়ানক সংঘাত নিশ্চিত। এই কারণে আগে থেকেই অমরমাণিক্যের শক্তি হ্রাসের উদ্দেশ্য, মহারাজ উদয়মাণিক্য প্রজাদের উপর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছেন। কেউ অমরমাণিক্যের দলে যোগ দিলে তার পরিবার-পরিজনদের উপর নেমে আসছে দুর্বিষহ রাজ-অত্যাচার। শিশু-সন্ত কাউকেই ছাড়া হচ্ছে না। এত সব উপেক্ষা করেও রাজ্যের প্রচুর লোক দলে-দলে অমরমাণিক্যের দলে যোগ দিচ্ছে। মহারাজ উদয়মাণিক্যও একের পর এক গোপন ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছেন অমরমাণিক্যকে হত্যার জন্য। কিন্তু সব কিছু বিফল। অমরমাণিক্যের সঙ্গী-সাথীরা উনার প্রতি এতই নিবেদিত প্রাণ যে, ওরা উদয়মাণিক্যের সকল পরিকল্পনা, সকল চক্রান্ত নিজেদের প্রাণের বিনিময়ে একের-পর এক ব্যর্থ করে দিতেও পিছু পা হচ্ছে না। উল্টোভাবে এটাও নিশ্চিত যে, অমরমাণিক্যও শান্ত বসে নেই। উনিও মহারাজ উদয়মাণিক্যকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিতে কোনও-না কোনও পরিকল্পনা অবশ্যই করে রেখেছেন। হয়তো দেখবে, একদিন কোনও এক বিষ পাত্রে ফেস করে মহারাজ শেষ। কারণ, সাধারণ প্রজাদের অন্তরে মহারাজ উদয়মাণিক্যের প্রতি প্রচণ্ড ক্ষোভ আর অসন্তোষ জমা হয়ে আছে। ঘটনা কিন্তু এখানেই শেষ নয়। পার্শ্ববর্তী রাজ্যগুলির সাথে আমাদের অহরহ যুদ্ধ চলছে। কিন্তু প্রতিবারেই আমরা গো-হারা হারছি। আমাদের প্রচুর সৈন্য বৃথা মারা পড়ছে। কেন জানো? কারণ, একের-পর এক ভুল সিদ্ধান্ত এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে দেরী করা। যথা সময়ে যথাযথা সিদ্ধান্ত হচ্ছেই না। এত সব বিশৃঙ্খল পরিবেশের মধ্যে আবার যুদ্ধ বাঁধতে চলেছে; এবার পার্বত্য চট্টগ্রাম রণাঙ্গনে সেজে উঠেছে। তুমি হয়তো জানো না, তোমাকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়েই আমাদের প্রত্যেককে সেনা ছাউনিতে যোগ দিতে হবে; রাজার আদেশ। এই যুদ্ধের পরিণতি কী হবে, তাও আমরা জানি। পরাজয় সুনিশ্চিত। এমন ঘোর বর্ষার দিনে চট্টগ্রামের মত পাহাড়ি পথে শত্রুকে আক্রমণ করা অত্যন্ত বিপজ্জনক আর মূর্খের কাজ। কিন্তু কে কাকে বুঝাবে? মহারাজ কোনও কথাই শুনতে নারাজ। তাই এই পরাজিত যুদ্ধে আমাদের যেতেই হবে, যুদ্ধ করতেই হবে। সত্যি কথা, আমরা এই যুদ্ধ করতে চাই না। আমরা হারতে চাই না। আমরা এই যুদ্ধটাকে এড়াতে চাই। কিন্তু কীভাবে? যুদ্ধে না গিয়ে আমাদের উপায় নেই। রাজার রাজ্যে থেকে, রাজার আদেশ অমান্য করলে কালকেই আমাদের ফাঁসিতে ঝুলানো হবে। তোমাকে আরও একটা কথা বলি শোনো, এখানে উপস্থিত আমাদের সকলের ইচ্ছা, এই যুদ্ধ থেকে বাঁচতে, মরণের হাত থেকে বাঁচতে অমরমাণিক্যের শরণে চলে যাওয়া। হ্যাঁ, আমরা ভাবছি আমরা অমরমাণিক্যের সেনাদলে যোগ দেব। কিন্তু আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না। কেন জানো? কারণ আমাদের পরিবার-পরিজনদের কথা ভেবে। আজকে যদি আমরা এখান থেকে সোজা অমরমাণিক্যের কাছে চলে যাই, তাহলে কালকেই আমাদের পরিবারের সকলকে সবার সামনে ফাঁসিতে ঝুলানো হবে। শিশু, বৃদ্ধ, নারী কাউকেই রেহাই দেওয়া হবে না। এ আমরা সইতে পারব না। তাই চরম দ্বিধায় আছি। একের-পর এক হিসাব করে যাচ্ছি, কিন্তু কোনও কিছুই মিলাতে পারছি না। এ শুধু আমার একার কথা নয়, এখানের সকলের একই অবস্থা। তাহলে বুঝতেই পারছ, কী আমাদের মনের অবস্থা?"

হীরামনের কথা শুনে নয়নবুধীর এত সুন্দর চেহারায় নেমে এল আকাশের মেঘের মত কালো ছায়া। বুকে জ্বলতে লাগল চিন্তা। নিজের আসন্ন জীবনকে ঘোর অন্ধকারাচ্ছন্ন মনে হল তার। সেই অন্ধকার ভেদ করে নিজের সুন্দর ভবিষ্যতের কোনও আলোই তার চোখে আর এসে পড়ল না। খুব বিষণ্ণ, চিন্তিত দেখাতে লাগল তাকে। অত্যন্ত নিরাশ ভাবে সে প্রশ্ন করল, "তাহলে উপায়? অমরমাণিক্যকে কোথায় পাওয়া যাবে? কোথায় থাকেন তিনি?"

মাথা নাড়িয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে হীরামন বলল, "জানি না! শুনেছি উনি সুরক্ষার নিমিত্তে নিয়মিত স্থান বদল করেন। তবে আমাদের কাছে যতটুকু খবর আছে, উনি ক্রমশ তোমাদের তুলারাম পাড়ার দিকেই যাচ্ছেন। ওদিকটাতেই তিনি ক্রমাগত নিজের প্রভাব বিস্তার করে যাচ্ছেন।"

হীরামনের কথা শেষ হলে, নয়নবুধী সজল নয়নে দুটি হাত জোড় করে নিজের স্বামীর প্রতি মনের সকল বিশ্বাস, সকল ভরসা উজাড় করে দিয়ে বলল, "তাহলে আমার জন্য কী আদেশ রইল?"

হীরামন নিজেও এ প্রশ্নের কোনও উত্তর খুঁজে পেল না। সে নয়নবুধীর দুটি হাত ধরে, ছল-ছল চোখে বৃষ্টি-ভেজা দিগন্তের দিকে তাকিয়ে একটা গভীর দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে কাঁপা স্বরে বলল, "তোমায় কী আদেশ দেব, তা আমি নিজেও জানি না। তবে তুমি ত্রিপুরার এক বীর সিপাহীর বৌ, এ কথা চিরকাল মনে রাখবে। এক বীর সিপাহীর বৌয়ের মতই চিরকাল থাকবে। কোনও অবস্থাতেই হার মানবে না। পরিস্থিতি যত কঠিনই হোক না কেন, জীবনের অন্তিম শ্বাস পর্যন্ত যুদ্ধ করে যাবে। আরেকটি কথা মনে রেখো, মহারাজের কাছে কখনোই নিজেকে বিলিয়ে দিও না, কখনোই না, কোনও পরিস্থিতিতেই না। নিজের সম্মান দেওয়ার আগে, নিজের প্রাণ দেওয়া বীরত্বের জানবে। মনে করো, এটাই আমার আদেশ, এটাই আমার ইচ্ছা, তোমার আছে এটাই আমার চাওয়া।" কথাগুলি বলতে-বলতে জলে ভরে এল হীরামনের চোখ, গলা ধরে এল তার। অঝরে কাঁদতে লাগল নয়নবুধীও। এক কঠিন জ্বালার মালা বুঝি সে বরণ করে নিয়েছে সারা জীবনের জন্য। মিলন-বেলা শুরুর আগেই যেন চির-বিরহ এসে আঘাত করতে লাগল তার বুকে! এ কেমন অশুভ ঝংকার? বুকের কান্নাগুলি যেন চীৎকার করে কাঁদতে চাইছে। কিন্তু পথ না পেয়ে, পথ হারিয়ে একে-একে বিজলীর মত ঝরে পড়ছে নয়নবুধীর হৃদয়ে। নিজের সকল স্বপ্নগুলি একে-একে চোখের সামনে ভেঙ্গে যেতে লাগল নয়নবুধীর। সে সজল নয়নে হাত জোড় করে গভীর অনুরাগে তাকিয়ে রইল হীরামনের দিকে। হীরামনও অনুরাগ ভরা স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল নয়নবুধীর চোখে।

Next Part

গোয়েন্দা গল্প:
মাণিক্য   
সর্দার বাড়ির গুপ্তধন রহস্য   
প্রেমিকার অন্তর্ধান রহস্য   
লুকানো চিঠির রহস্য   
কান্না ভেজা ডাকবাংলোর রাত    


All Bengali Stories    44    (45)    46    47    48    49    50    51    52   


## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers. The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation. Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##


◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717