Home   |   About   |   Terms   |   Contact    
RiyaButu
A platform for writers

নয়নবুধী


ত্রিপুরার ইতিহাসের পটভূমিতে রচিত একটি উপন্যাস


All Bengali Stories    44    (45)    46    47    48    49    50    51    52   

হরপ্রসাদ সরকার, ধলেশ্বর-১৩, আগরতলা

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ আমাদের এই ওয়েবসাইট ( RiyaButu.com )-এ প্রকাশিত গল্পগুলির মধ্যে থেকে কিছু গল্প নিয়ে এবছরই প্রকাশিত হবে আমাদের 'রিয়াবুটু'র গল্প'।
--------------------------


নয়নবুধী
( এক পাঁজালীর প্রেমিকা )
পর্ব ১১
ত্রিপুরার ইতিহাসের পটভূমিতে রচিত একটি উপন্যাস
হরপ্রসাদ সরকার, ধলেশ্বর, আগরতলা
( এই উপন্যাসের সকল স্বত্ব সরকারি রেজিস্ট্রিকৃত ভাবে লেখক দ্বারা সংরক্ষিত )


নয়নবুধী: সমস্ত পর্বগুলি: All Parts

◕ নয়নবুধী
পর্ব ১১
আকাশে তখন বিজলীর ঝলকানি বন্ধ হয়ে গেছে; তবে মুষলধারে বৃষ্টি বন্ধ হয়নি। বটের তলাটি তখনো শুকনো; এত ঘন পাতায় ছাওয়া শতোর্ধ বটবৃক্ষটি। বটের তলে বসে আছে সবাই, উদাস দৃষ্টি সুদূরে। ঘোড়াগুলি পাসে দাঁড়িয়ে আছে। বৃষ্টি-ভেজা বনের দিকে তাকিয়ে নিরাশ স্বরে হীরামন বলল, "আজ এই অবসরে তোমাকে কিছু কথা বলে রাখতে চাই নয়না..."

"কী?"

"কিছুক্ষণ পরেই আমরা রাজধানীতে পৌঁছব। সেখানে তুমি খুব সাবধানে থাকবে। অতি প্রয়োজন ছাড়া কখনোই রাজপথে বের হবে না। তাছাড়াও আমাদের বাড়িতে যে ক'জন দাস-দাসী আছে, খুব প্রয়োজন ছাড়া তাদের সামনেও যাবে না।"

"কেন? এ কেমন কথা?"

"জানি তুমি খুব অবাক হচ্ছ, কিন্তু এটাই ঠিক। তার কারণ একটাই, তোমার রূপ।"

"আমার রূপ? মানে?"

দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে হীরামন বলল, "তোমার রূপের আলো, রঙের খবর, পাখির মত উড়ে রাজার কানে পৌঁছতে বিন্দুমাত্র সময় লাগবে না। রাজবাড়িতে এ খবর পৌঁছলেই বিপদ। তাই যত কম লোক তোমাকে চিনবে-জানবে ততই ভাল। তোমার সম্পর্কে তাদের অজ্ঞতাই তোমার প্রধান হাতিয়ার। একবার রাজার কানে তোমার খবর পৌঁছলে, কেউ আর তোমাকে বাঁচাতে পারবে না, কেউ না। তুমি জানো না, প্রচুর লোক আছে যারা রাজার কাছ থেকে উপহার পাবার লোভে খুঁজে-খুঁজে সুন্দরী রমণীদের কথা রাজার কানে তুলে দেয়। এদের সংখ্যা অনেক, এদের চেনাও খুব দায়। তাই, তোমার এত সুন্দর রূপকে ঢেকে রাখা ছাড়া আর কোনও উপায় নেই। আজ তোমার এই রূপই তোমার বড় শত্রু। এই শত্রুকে যত ধামা-চাপা দিয়ে রাখবে ততই মঙ্গল। কলঙ্ক লাগার চেয়ে চাঁদে অমাবস্যা থাকুক, সেই-ই ভাল।"

"তাহলে?"

"আজ কষ্ট হলেও আমার বলতে হচ্ছে যে, তুমি তোমার রূপকে ঢেকে রাখ। তাছাড়া এখন আর কোনও উপায় নেই। শহরের পরিবেশ তোমাদের সেই সুন্দর পাহাড়ি পরিবেশের মত এত সহজ-সরল নয়। এখানে সততা আছে, তবে নাইও। মনে রাখবে, নিজের নিরাপত্তা নিজের হাতে। নিজেই নিজেকে সদা নিরাপদে রাখতে হবে।"

নয়নবুধী ফ্যাল-ফ্যাল চোখে হীরামনের দিকে চেয়ে বলল, "আমি পাহাড়ি কন্যা, আজীবন বন-জঙ্গলের মাঝে ছিলাম। জীবনে এই প্রথম আমি তোমার সাথে তুলারাম পাড়া থেকে বের হয়েছি। আমিই-বা কী বুঝি জীবনের খেলা! কতটুকুই-বা চিনি মানুষ-জন! আমার জীবন আজ শুধু তোমাকে ঘিরে। তুমি যা বলবে তাই আমি মনে প্রাণে গ্রহণ করব, মেনে চলব। তুমিই আজ আমাকে পথ দেখাও।"

হীরামন কিছুক্ষণ চুপ করে রইল। তারপর ধীরে বলল, "জীবনই জীবনকে চিনিয়ে দেবে। আমি আর তোমাকে জীবন সম্পর্কে কী বলব, তবে এতটুকু বলতে পারি, ভাল-খারাপ সব কিছুরই কিছু-না কিছু লক্ষণ আছে। তোমাকে শুধু দুটি কথা বলতে চাই... আশা করি তাতেই কাজ হবে," এই বলে হীরামন একটি ছড়া বলতে লাগল-
"বিপদ নিশীথে ঘুম
খুব বড় অভিশাপ-
মিষ্টি-মিষ্টি কথা বলে
কাছে আসে কাল-সাপ।"

"মানে? কিছুই তো বুঝতে পারি নি?"

"মানে হল, বিপদের সময় কখনো ঘুমাতে নেই। যদি বুঝ যে বিপদ আসছে, ভয়-ভয় করছে; তখন সদা সজাগ থাকবে। তাই কথায় বলে, যে রাতে বিপদ আসতে পারে বলে মনে হয়, সেই রাতে কখনো ঘুমাতে নেই। কারণ, জাগ্রত মানুষ যত তাড়া-তাড়ি আত্মরক্ষা কিংবা আক্রমণে নামতে পারবে, সদ্য ঘুম ভাঙ্গা মানুষ কখনোই তা পারবে না। তাই লোকে বলে-"
"বিপদ নিশীথে ঘুম
খুব বড় অভিশাপ।"

"আর অপরটি?"

"অপরটির মানে হল, কেউ যদি কখনো খুব মিষ্টি-মিষ্টি কথা বলে কাছে আসতে চায়, তবে জানবে তার ঐ মিষ্টি কথার পিছনে নিশ্চয়ই কোনও মতলব আছে, কোনও ফাঁদ আছে। নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য এরা এরকম মিষ্টি কথা বলে কাছে আসতে চাইছে। এসব লোক থেকে সব সময় খুব সাবধান। সদা মনে রাখবে, যে কোনও বিষম পরিস্থিতিতে, যে কোনও বিপদে বুদ্ধি, ধৈর্য আর সাহসই তোমার একমাত্র হাতিয়ার, পরম বন্ধু; কখনো তাদের হাত ছেড়ো না।"

বৃষ্টি থেমে গেছে বহুক্ষণ আগে। তবে আকাশে তখনও ঘন মেষ। সন্ধ্যা হতে এখনো অনেক বাকি। বহুক্ষণ আগে বৃষ্টি থামলেও ওরা সেই স্থান ত্যাগ করে রাজধানীর দিকে যাত্রা শুরু করছে না কেন, প্রশ্নটা নয়নবুধীর মনে বার-বার ফিরে-ফিরে আসছে। সবাই নীরব, সবাই গম্ভীর। বহুক্ষণ পরে চারিদিকে অল্প-অল্প আধার ছড়িয়ে দিয়ে সন্ধ্যা নেমে আসতে লাগল। সন্ধ্যা প্রায় হয়-হয়। সন্ধ্যাকে ছুঁয়ে ওরা রাজধানীর দিকে যাত্রা শুরু করল। নয়নবুধী খুব বুঝতে পারল, রাতের আধার দিয়ে তার রূপ ঢেকে তাকে রাজধানীতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। বুঝি এতই সুন্দর সে? এতই বিপদ রূপের?

তখন প্রায় মধ্যরাত। ত্রিপুরার রাজধানী উদয়পুরে প্রবেশ করল ওরা। চারিদিক জন-মানব শূন্য। এটা যে রাজধানী, তা আর বলে দিতে হয়নি নয়নবুধীকে। কোথাও-কোনওদিকে বন-জঙ্গলের চিহ্নমাত্র নেই। জীবনের এই প্রথম এত বড়, এত প্রসস্থ রাস্তা দেখল সে। এটাই বোধ হয় রাজপথ! এই পথেই হয়তো মহারাজ রোজ আসা যাওয়া করেন। রাজপথের পাশেই দাঁড়িয়ে আছে সুন্দর-সুন্দর, খুব বড়-বড় অট্টালিকা। নয়নবুধী কোনওদিন রাজপ্রাসাদ দেখেনি, চিরদিন শুধু টং ঘর দেখে আসছিল; তাই প্রতিটি অট্টালিকাই তার রাজবাড়ি মনে হতে লাগল। প্রায় বাড়ি-ঘরের আঙিনায় প্রদীপ জ্বলছে, মশাল জ্বলছে।

একটি মস্ত-বড় ফটকের সামনে এসে দাঁড়াল ওরা। নয়নবুধীকে নিয়ে অতি দ্রুত হীরামন ভিতরে চলে গেল। বাড়ির ভিতরে মস্ত বড় একটি উঠান। উঠানের দু'পাশে সারিবদ্ধ ঘর। কোথাও কোনও আলো জ্বালানো নেই। শুধু বিশাল উঠানটির অপর প্রান্তে খুব ক্ষীণ ভাবে, নিভু-নিভু জ্বলছে একটি প্রদীপ। অস্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, সেই প্রদীপের পাসে বসে আছেন এক বৃদ্ধ, এক বৃদ্ধা। দুর থেকে সেই আবছা আলোতে দেখেও বৃদ্ধকে চিনতে কোনও অসুবিধা হয়নি নয়নবুধীর; শ্বশুর মশাই। ছেলে আর ছেলের বৌকে দেখে দ্রুত এগিয়ে এলেন ওরা। কোনও তাম-ঝাম না করেই, বিনাবাক্যে, অতি নীরবে চুপচাপে বৌকে নিয়ে ঘরে চলে গেলেন নয়নবুধীর শাশুড়ি। রাজধানীতে নিঝুম গভীর রাতে এভাবেই গোপনে বরন করা হল সুদূর তুলারাম পাড়ার এক অতি সুন্দরী পাহাড়ি কন্যা নয়নবুধীকে। হীরামন উঠানেই দাঁড়িয়ে রইল, ঘরে ঢুকল না। উঠান থেকেই নিজের সিপাহীদের সাথে ফিরে গেল সেনা ছাউনিতে। কারণ, পিতা তাকে এই সংবাদটি দিলেন যে, চট্টগ্রামে যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে আজ বিকেলেই।
Next Page

গোয়েন্দা গল্প:
মাণিক্য   
সর্দার বাড়ির গুপ্তধন রহস্য   
প্রেমিকার অন্তর্ধান রহস্য   
লুকানো চিঠির রহস্য   
কান্না ভেজা ডাকবাংলোর রাত    


All Bengali Stories    44    (45)    46    47    48    49    50    51    52   


## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers. The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation. Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##


◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717