Home   |   About   |   Terms   |   Contact    
RiyaButu
A platform for writers

নয়নবুধী


ত্রিপুরার ইতিহাসের পটভূমিতে রচিত একটি উপন্যাস


All Bengali Stories    44    (45)    46    47    48    49    50    51    52   

হরপ্রসাদ সরকার, ধলেশ্বর-১৩, আগরতলা

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ আমাদের এই ওয়েবসাইট ( RiyaButu.com )-এ প্রকাশিত গল্পগুলির মধ্যে থেকে কিছু গল্প নিয়ে এবছরই প্রকাশিত হবে আমাদের 'রিয়াবুটু'র গল্প'।
--------------------------


নয়নবুধী
( এক পাঁজালীর প্রেমিকা )
পর্ব ১২
ত্রিপুরার ইতিহাসের পটভূমিতে রচিত একটি উপন্যাস
হরপ্রসাদ সরকার, ধলেশ্বর, আগরতলা
( এই উপন্যাসের সকল স্বত্ব সরকারি রেজিস্ট্রিকৃত ভাবে লেখক দ্বারা সংরক্ষিত )


নয়নবুধী: সমস্ত পর্বগুলি: All Parts

◕ নয়নবুধী
পর্ব ১২

যুদ্ধ যে শুরু হয়ে গেছে এ খবর এখনো পৌঁছায়নি তুলারাম পাড়ায়। তুলারাম পাড়ার বৃদ্ধ-বৃদ্ধা আর রমণীরা নিশিদিন নয়নবুধীকে নিয়ে গল্প করে, "নয়না এখানে থাকলে কি করত? ওখানে এখন কী করছে? না জানি ওখানে কত সুখ, কত সুযোগ সুবিধা! এত দিনে নয়না নিশ্চয়ই রাজামশাইয়ের সাথে দেখা করে ফেলেছে। সে কী আর তুলারাম পাড়ায় ফিরে আসবে? এখানে এসে কী তার আর ভালো লাগবে? সে কী আমাদের চিনতে পারবে? আমরাও কী আর তাকে চিনতে পারব? বাহ:, কী ভাগ্যই না নয়নার! ভগবান তার ভাগ্যটিকে একেবারে সোনায় মুড়ে দিয়েছেন!"

নয়নবুধী তুলারাম পাড়াতে নেই, কিন্তু এখানে পড়ে আছে তার সকল স্মৃতি। লোক মুখে গল্প হতে-হতে ক্রমে নয়নবুধী হয়ে যেতে লাগল লোক-গাথার ঘটনা।

ওদিকে, সারাদিন বনে-বনে ঘুরে বেড়ায় চম্পক আর ইন্দ্র। কখনো অন্যদের সাথে জুম চাষও করে। তবে নয়নাহীন তুলারাম পাড়া তাদের কাছে খুব খালি-খালি লাগে। ছেলেবেলার বহু স্মৃতি ঘুরে-ঘুরে তাদের মনে পরে। ওরা খুব গল্প করে নয়নবুধীকে নিয়ে। দিন যায়, রাত যায়। ক্রমে চম্পক আর ইন্দ্রের মধ্যে শুরু হয় জীবনের নতুন প্রতিযোগিতা। কে কত বাঁশ কাটতে পারে, কত মজবুত টং ঘর বানাতে পারে? কত জোরে বর্শা ছুড়তে পারে? কত দ্রুত গাছে চড়তে পারে? ইত্যাদি-ইত্যাদি। কখনো নটুকৃষ্ণের কালো জলে সারাদিন সাঁতার কাটে। কখনো পাখির মত উড়ে বেড়ায় গাছ থেকে গাছে। এ যেন নিজেকে ভুলাতে নিজের শক্তির আশ্রয় নেওয়া। ক্রমে এই দুই জোয়ানের শরীরের গড়ন পাথরের মত কঠিন আর ইস্পাতের মত শক্ত হয়ে উঠল। যেন কোনও মণিকার অতি যত্নে ধীরে-ধীরে গড়ে তুলছেন এমন দেহাবলি। নয়নবুধী যেমন চাঁপাফুলের মত সুন্দর হয়ে উঠেছিল, এই দুই যুবকও ক্রমে বনের হিংস্র চিতাবাঘের মত ক্ষিপ্ত আর সাহসী হয়ে উঠল। ওরা ভয় পায়না আধার, বন-জঙ্গল, ঝড়-বিজলী-বাদল। গহীন রাতের হাজার জোনাকির চাঁদের গায়ে, ওরা টাক্কাল হাতে বীর দর্পে ঘুরে বেড়ায় বন থেকে বনে, পাহাড় থেকে পাহাড়ে; যেন দেবরাজের দুই বজ্রাগ্নি।

নয়নবুধীর উপর এই দুই জুড়ির অভিমানও জমেছে খুব, "রাজধানীর জামাই পেয়ে, অহংকারে বাল্যবন্ধুদের দেওয়া শেষ উপহারটুকু, সেই বনফুলের তোড়াটি পর্যন্ত গ্রহণ করেনি নয়নবুধী। এত অভিমান? এতই দেমাক? নয়না আগে কখনো এমন ছিল না?" রাগে নিজেদের মধ্যেই বহুক্ষণ বক-বক করে যায় দু'জন, এক সময় আপনিই নিজেদের রাগ পড়ে যায়। বাল্য-সখী, প্রাণের বান্ধবী সেই নয়নবুধীর জন্য খুব টান অনুভব করে ওরা। আগে তো এমন টান কোনও দিন, কখনোই অনুভব করেনি। এখন কেন এমন হচ্ছে? দূরে গেলেই বুঝি কাছের মানুষ মনে পড়ে বেশী! এটাই বুঝি বিরহের আসল চেহারা; বিরহ সুখ!

বনফুলের সেই তোড়াটি এখনো দুই বন্ধু অতি যত্ন করে সাজিয়ে রেখেছে বটুকৃষ্ণের ঢালে। ওর ফুলগুলি শুকিয়ে গাছে, পাতাও শুকিয়ে গেছে; কিন্তু ওর মাঝের স্মৃতিগুলি যেন দিনে-দিনে আরো সবুজ, আরো তাজা, আরো গভীর, আরো মধুর হচ্ছে। একদিন বটুকৃষ্ণের তলায় বসে ইন্দ্র চম্পককে বলল, "এ আমার কী হল রে চম্পক?"

"কেন? তোর আবার কী হল?"

"এই যে, নয়নাকে কোনও ভাবেই ভুলতে পারছি না!"

"আমিও কী আর নয়নাকে ভুলতে পারছি? আমারও তো তোর মতই অবস্থা। আমিও তো তোর মত নয়নার কথা ভাবি।"

"অ্যাঁ, তবে তুইও কী আমার মত নয়নাকে ভালবেসে ফেলেছিস?"

ইন্দ্রের কথা শুনে হা- হা করে হেসে উঠল চম্পক। তারপর হাতের কঞ্চিটি তলোয়ারের মত উঁচিয়ে ধরে দীপ্ত কণ্ঠে বলল,"ধুর বোকা, ভালোবাসা কী আমার হাতের তলোয়ার, যে, আমি এটা নিয়ে খেলা করব? না-কি ভালবাসা আমার প্রাণের অভিলাষা, যে, আমি দিন-রাত ওটা নিয়ে ভাবব? প্রেম আমার খেলার বস্তু নয়? আমার খেলার বস্তু হল এই তরোয়াল, এই ভালা, এই টাক্কাল, এই দা, এই তীর-ধনুক। বুকে আমারও একটা মন আছে, তবে তাতে দৈহিক প্রেমের অভিলাষা নেই, তাতে সদাই বিরাজ করছে আমার দেশ, আমার ত্রিপুরা। ঐ বুড়ো জ্যোতিষ বাবাকে কী বলেছে জানিস? উনি বলেছেন, একদিন আমি এ রাজ্যের সেনাপতি হব। বাবাও সব সময় এ-কথা বলেন, আমি একদিন এ রাজ্যের সেনাপতি হবো, বীর রায়-কাছাগ আর বীর রায়-কছমের মত। ওনাদের মত আমারও কাঁধে থাকবে এ রাজ্যের সকল সুরক্ষার ভার। আমার একহাতে থাকবে দেশের সুরক্ষা, আরেক হাতে থাকবে শত্রুর প্রাণ। রণক্ষেত্রে আমিই হব শত্রু পক্ষের সবচেয়ে বড় বাধা। আমাকে সেই রকম বীর, প্ররাক্রমী যোদ্ধা হতে হবে। এই স্বপ্ন আমিও দেখি যে, খুব পরাক্রমের সাথে যুদ্ধ করে শত্রু পক্ষকে হারিয়ে দিয়ে, অনেক বড়-বড় যুদ্ধ জিতেছি। কিভাবে যে এ স্বপ্ন সফল হবে, তা আমি জানিনা বন্ধু! কিন্তু মনে প্রাণে বিশ্বাস করি, আমার এ স্বপ্ন একদিন সফল হবেই। আমি একদিন ত্রিপুরার একজন বীর সেনাপতি নিশ্চয়ই হব; আমাকে হতেই হবে। বাবার স্বপ্ন কখনো মিথ্যা হবে না, বুড়ো জ্যোতিষের কথা কখনো মিথ্যা হয় না," অতি প্রাণোচ্ছল ভাষায় কথাগুলি বলতে-বলতে চম্পকের দেহ-মন আর চেহারায় এক দীপ্ত ভাল চলে এল, একটা শিহরন ধরে এল পরিবেশে। ইন্দ্রের চোখে-চোখ রেখে চম্পক বলল, "তাহলে বুঝ, এই যদি আমার স্বপ্ন , তবে আমি প্রেম নিয়ে বসে থাকব কোন মনে, কোন বনে? দেশের প্রেমের উপরে নিজের প্রেম আমি কোনও কালেই রাখতে পারব না। আমি সেই ধাঁচের নই। তাহলে নয়নার প্রেম আমি রাখব কোথায়? মনের মাঝে সেই জায়গাটা কই? নাই, মনে সেই জায়গা নাই। দু'নাও এ পাউ রেখে চলা যায় না। আমি বিশ্বাস করি আমি বীর। আর বীরের প্রেম সবার জন্য, দেশমাতার জন্য, দেশবাসীর জন্য। আমি সবার, সবাই আমার।"

বাল্যবন্ধু হলেও চম্পকের ভিতর যে এত বড় একটা স্বপ্ন সূর্যের মত জ্বল-জ্বল করছে, তা কখনোই বুঝতে পারেনি ইন্দ্র। সে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইল চম্পকের দিকে। এটা ঠিক যে শৈশব থেকেই চম্পক অনেক আলাদা, তার চিন্তা-ভাবনা, চাল-চলন সব কিছুই স্বতন্ত্র, কিন্তু এর পিছনে যে এত বড় একটা কারণ, এত বড় একটা লক্ষ্য; তা কখনো টেরই পাওয়া যায়নি। জীবনের লক্ষ্যে সে যে কতদূর এগিয়ে গেছে তা অনুমান করাই কঠিন। অনুমান করতে পারেনি ইন্দ্র; হয়তো অনুমান করতে পারেনি নয়নাও। চম্পকের কথা শুনে আজ অবাক চোখে শুধু পাথরের মত বসে রইল ইন্দ্র। চম্পকও নিজের চোখের সামনে নিজের স্বপ্নকে দেখতে পেয়ে বিভোর হয়ে তাকিয়ে রইল সেই দিকে। হঠাৎ একটি ডাহুক তাদের মাঝখান দিয়ে উড়ে গেলে, দু'জনেরই চেতনা ফিরে এল। সম্বিত ফিরে পেয়ে চম্পক হেসে বলল,"ভাই, হয়তো একটু বেশীই বলে ফেলেছি। কিন্তু যা বলেছি সব ঠিক। এই কারণেই আমি নয়নাকে কখনোই প্রেমিকার চোখে দেখিনি, আর কখনো দেখতেও চাই না। কিন্তু দেখছি তুই খুব কাহিল। তোর অবস্থা খারাপ। তুই কী নয়নাকে ভালবেসে ফেলেছিস?"

অতি গভীর একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ইন্দ্র মাথা নাড়ল,"মনে তো হচ্ছে তাই-ই। কিন্তু আমি অবাক হচ্ছি তোকে দেখে। তুই কী আমাদের সেই চম্পক কুমার, যার কাঁধে, বুকে যাতাযাতি করে আমি এতকাল খেলা করেছি? তোর কথা শুনে এখন ভাবছি, আমার জীবনের উদ্দেশ্য কী? আমি জীবনে কী করব? তুই তো তোর জীবনের লক্ষ্য পেয়ে গেছিস, কিন্তু আমি কবে জীবনের লক্ষ্য খুঁজে পাব? কিভাবে পাব?"

"পাবি, তুইও পাবি। জীবন জীবনের উদ্দেশ্য একদিন ঠিক খুঁজে নেয়। উদ্দেশ্যহীন বলে, জীবন কখনো উদ্দেশ্য খুঁজতে ব্যর্থ হয় না। আমি নিশ্চিত, একদিন তুইও তোর জীবনের লক্ষ্য, জীবনের উদ্দেশ্য খুঁজে পাবি। হয়তো নয়নাই তোর জীবনের লক্ষ্য, তোর জীবনের উদ্দেশ্য!"
Next Page

গোয়েন্দা গল্প:
মাণিক্য   
সর্দার বাড়ির গুপ্তধন রহস্য   
প্রেমিকার অন্তর্ধান রহস্য   
লুকানো চিঠির রহস্য   
কান্না ভেজা ডাকবাংলোর রাত    


All Bengali Stories    44    (45)    46    47    48    49    50    51    52   


## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers. The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation. Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##


◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717