Home   |   About   |   Terms   |   Contact    
RiyaButu
A platform for writers

নয়নবুধী


ত্রিপুরার ইতিহাসের পটভূমিতে রচিত একটি উপন্যাস


All Bengali Stories    44    (45)    46    47    48    49    50    51    52   

হরপ্রসাদ সরকার, ধলেশ্বর-১৩, আগরতলা

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ আমাদের এই ওয়েবসাইট ( RiyaButu.com )-এ প্রকাশিত গল্পগুলির মধ্যে থেকে কিছু গল্প নিয়ে এবছরই প্রকাশিত হবে আমাদের 'রিয়াবুটু'র গল্প'।
--------------------------


নয়নবুধী
( এক পাঁজালীর প্রেমিকা )
পর্ব ১৬
ত্রিপুরার ইতিহাসের পটভূমিতে রচিত একটি উপন্যাস
হরপ্রসাদ সরকার, ধলেশ্বর, আগরতলা
( এই উপন্যাসের সকল স্বত্ব সরকারি রেজিস্ট্রিকৃত ভাবে লেখক দ্বারা সংরক্ষিত )


নয়নবুধী: সমস্ত পর্বগুলি: All Parts

◕ নয়নবুধী
পর্ব ১৬

প্রাণ হাতে নিয়ে গাছ থেকে নেমে এল তকিরায়। ইন্দ্রকে নড়াচড়া করতে দেখে আচমকা তার আত্মবিশ্বাস আর সাহস গগনচুম্বী হয়ে গেল। দস্যু কি দানব, এই মুহূর্তে সব কিছু তার কাছে তুচ্ছেরও-তুচ্ছ, পায়ের তলের ঘাস মনে হল। বুকের ভীতর কেউ যেন বীর দর্পে চীৎকার করছে - 'লড়তে হয় তো আজ পাহাড়ের সাথেও লড়ে যাব, কিন্তু পথের কোনও বাধা আজ মানব না। যে কোনও ভাবেই হোক ইন্দ্রকে বাঁচাতেই হবে, আজ ইন্দ্রের কাছে যেতেই হবে।'

গাছ থেকে নেমতেই, পায়ের কাছে পড়ে থাকা একটি রক্তভেজা তরোয়াল উঠিয়ে নিল তকিরায় আর মহাকালের মত হুংকার দিয়ে উঠল, "ইন্দ্র! ভয় নেই! আমি আসছি! আমি আসছি!"

উদ্ধত তরোয়াল হাতে ঝড়ের মত ইন্দ্রের দিকে ছুটতে লাগল তকিরায়। তার গর্জনে শিয়াল, শকুন প্রাণের ভয়ে এদিক-ওদিক পালিয়ে গিয়ে একে-একে পথ ছেড়ে দিতে লাগল। গ্রামের কুকুরগুলি তকিরায়কে দেখে অতি আনন্দে লেজ নাড়তে-নাড়তে বাহাদুর সিপাহীর মত তকিরার সাথে-সাথে ছুটল।

আরও কয়েকটি কাশি দিয়ে চোখ মেলল ইন্দ্র। বুকে এখনো অনেক ব্যথা, অনেক যন্ত্রণা। বুকে হাত দিয়ে ধীরে-ধীরে উঠে বসল সে। তকিরায় দৌড়ে গিয়ে তাকে গাঢ় আলিঙ্গনে জড়িয়ে ধরল আর অত্যন্ত আবেগে পাগলের মত চীৎকার করে কাঁদতে লাগল। অতি অল্প সময়ের মধ্যেই সে নিজেকে সংযত করে এক মুহূর্ত সময়ও নষ্ট না করে ইন্দ্রকে কাঁধে তুলে দ্রুত জঙ্গলের দিকে পালাতে লাগল। সে ইন্দ্রকে সাথে নিয়ে নটুকৃষ্ণের ধারে নিরাপদ এক ঘন ঝোপের আড়ালে চলে গেল। লুকিয়ে-লুকিয়ে নটুকৃষ্ণের জল এনে ইন্দ্রের সেবা-শুশ্রূষা করতে লাগল। সন্ধ্যা হতে-হতে ইন্দ্র প্রায় সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে গেল। কিন্তু খাবার কোথায়? তখনো টিলার উপর থেকে মৃতদেহ ভাগাভাগি নিয়ে শিয়াল-শকুনের ঝগড়ার শব্দ ভেসে আসছে।

ঠিক মাঝরাত। ওরা আচমকা দুরের জঙ্গলে একটি জ্বলন্ত মশাল দেখতে পেল। মশাল হাতে কেউ এদিকেই আসছে। ধক-ধক করে উঠল ওদের বুক, ঘোর আতঙ্ক ছেয়ে গেল মনে। এত রাতে এমন গভীর জঙ্গলে ওটা কিসের মশাল? কে আসছে? এটা নিজেদের কোনও দৃষ্টিভ্রম নয়তো? নাকি দস্যুরা আবার ফিরে আসছে? তার মানে আবার আক্রমণ? লুকিয়ে থাকা দুটি হৃদপিণ্ডের গতি আচানক বেড়ে গেল। শক্ত হাতে তরোয়াল হাতে নিয়ে নিল দু'জন আর চুপ-চাপ বসে রইল সেই মশালের পানে চেয়ে। এখন ওরা কী করবে? কোথায় পালাবে? কিছুই মাথায় আসছে না। মরণ যখন এভাবেই আজ পিছু নিয়েছে তখন বুঝি প্রাণ থাকতে আর ছাড়া পাওয়া যাবে না।

মশাল যতই ধীরে-ধীরে এগিয়ে আসতে লাগল ততই জীবন-মরণের রুদ্ধশ্বাস পরিস্থিতি তৈরি হতে লাগল। হঠাৎ টিলার উপর থেকে গ্রামের কয়েকটি কুকুর দ্রুত লেজ নাড়তে-নাড়তে ঊর্ধ্বশ্বাসে জঙ্গলের অভিমুখে দৌড়াতে লাগল, সেই মশালের পানে। মুহূর্তে ইন্দ্র আর তকিরার বিষণ্ণ চেহারায় হাসি ফুটে উঠল। একটি দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে এল বুক চিড়ে, "আরে হারান পাগলা! এত দিন পরে! এত রাতে! তবে বুঝি এত দিন পরে আবার ঘরে ফিরল!"

হারানবাসী, তুলারাম পাড়ার এক মধ্য বয়স্ক পৃথক মস্তিষ্কের মানুষ। ডর-ভয় নামক কোনও জিনিস তার বুকের পাঁজরে নেই। লোকে তাকে 'পাগলা' বলে ডাকলেও এই চারণকবির তন-মন হরি-প্রেমে ভরা। সে সত্যিই একান্ত হরিভক্ত। সে বলে-
"ঘুরে হারান বনে-বনে
সদা গুনগুনে হরি মুখে-মনে-
হরি-হারান দুই দেহ
একে অপর রাখে প্রাণে।।"
এই কারণেই হয়তো সে হরি ভরসায় মনের সাধে, মনের সুখে বনে-জঙ্গলে দিন-রাত ঘুরে বেড়ায়। বহু দুর-দুর এলাকা, এক জনপদ থেকে আরেক জনপদে তার অবাধ যাতায়াত। ছ'মাস এখানে তো ছ'মাস ওখানে। আজ প্রায় তিন বছর পর সে গ্রামে ফিরছে। কখন সে কোথায় যায় কেউ জানে না। কেউ তাকে বেঁধেও রাখতে পারে না। জীবন সম্পর্কে তার দর্শনও একেবারে আলাদা। সে বলে-
"প্রাণের প্রমাণ ভগবান
ভগবানের প্রমাণ প্রাণ-
এক ফুলে দুই কলি
শূন্যে পূর্ণ জ্ঞান।।
অঙ্গে ধরেছি হরি
নিজ কল্প বিসর্জরি
এ ভুবন য'ক্ষণ চোখের আগে
বাঁচন-মরণ সবি তারি।।"
কেউ-কেউ হারানবাসীর এ কথা বুঝে, কেউ বুঝে না। তবে ভাল-মন্দ সবাই তাকে আদর করে, ভালবাসে, সম্মান করে। আজ তুলারাম পাড়ার এমন একটি কঠিন সময়ে হারানবাসীকে কাছে পেয়ে তকিরায় আর ইন্দ্র দু'জনেই খুব খুশি হল, আনন্দিত হল। ওরা অধীর আগ্রহে ওর অপেক্ষা করতে লাগল।

কাঁধে একটি ঝুলি নিয়ে আপন মনে নটুকৃষ্ণের ধার দিয়ে মশাল হাতে হারানবাসী ধীরে-ধীরে তুলারাম পাড়ার টিলার দিকে এগিয়ে আসতে লাগল। আরও কাছে আসতেই তকিরায় অতি গোপনে পিছন থেকে হঠাৎ তার মুখ চেপে ধরল আর ইন্দ্র এক ধাক্কায় তার হাতের মশাল নটুকৃষ্ণের জলে ফেলে দিল। দু'জনে টেনে-হেঁচড়ে দ্রুত হারানবাসীকে ঝোপের আড়ালে গিয়ে গেল আর সকল কথা খুলে বলল। ওরা এ ও বলল যে, কিছু দস্যু মারা গেলেও বাকী দস্যুরা এখনো আশেপাশে কোথাও লুকিয়ে থাকতে পারে, আর এই ভয়েই ওরা এমন ভাবে হারানবাসীকে এখানে তুলে এনেছে।

নিজের গ্রামের এই করুন পরিণতি দেখে মনে-মনে খুব দুঃখ পেল হারানবাসী। তার দু'চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়তে লাগল। সে দু'হাত উপরে তুলে অনুযোগের স্বরে বলল, "হা হরি! হরি রে, এ তোর কেমন লীলা? এত নরবলি? এত নরবলি? আর কত বলি চাস তুই? এই কারণেই বুঝি জোর করে, ঘাড় ধরে আমাকে এখানে আনলি? এত সব ঘটনাই যখন ঘটালি, তখন তুই-ই বল আমরা এখন কী করব? তুই-ই এবার আমাদের পথ দেখা।" এই বলে চোখ বন্ধ করে হারানবাসী পাথরের মত নীরব বসে রইল। আচমকা সে জেগে উঠল, "না! না! আর নয়, আর এখানে নয়! আর এখানে থাকা যাবে না। এই গ্রাম মরে গেছে। তুলারাম পাড়া মরে গেছে। এখন এখানে শুধু মৃতদের বাস। আমি যেন পরিষ্কার শুনতে পাচ্ছি মৃত শিশুদের কান্না। ওদের অতৃপ্ত আত্মা যেন চীৎকার করে বলছে, 'মাগো, জল দাও! বাবা গো, ভাত দাও! মাগো, জল দাও! বাবা গো, ভাত দাও!' না, না, তোরা আর কোনও ভাবেই এখানে থাকতে পারবি না। আমি আর তোদের এখানে রাখতে পারি না। আমাদের তুলারাম পাড়া এখন শ্মশানভূমি হয়ে গেছে, আর শ্মশানভূমি হয়েই থাকবে যতদিন না পর্যন্ত আবার এক সুন্দর সুযোগ আসে। চল, চল, আজি চল, এখুনি আমার সাথে চল। আমি তোদের পশ্চিমে ক্রোশ দশেক দূরে আরেকটি সুন্দর এবং শক্তিশালী জনপদে নিয়ে যাব। পশ্চিমের চাপিয়া পাড়া পার হয়ে তকমাছড়া নামে একটি স্থান আছে, আমরা সেখানেই যাব। ওখানের মানুষগুলি আমাদের মতই সহজ, সরল, সুন্দর আর উদার। আমি দীর্ঘকাল সেখানে থেকেছি। ওরা আমাকে খুব ভাল চেনে, আমিও তাদের খুব ভাল চিনি, জানি। চল, আর দেরী করা যাবে না, অনেক পথের ব্যাপার, এখুনি যাত্রা শুরু করতে হবে।"

হারানবাসীর কথা শেষ হতে তকিরায় ফিস-ফিস করে বলল, "তোর ঐ ঝুলিতে কিছু খাবার হবে রে হারান? এত পথ চলতে হবে, পেটে তো কিছুই নেই!"

কথা শুনে নিজের ঝুলি খুলে দিল হারানবাসী। তাতে জুমের চালের মুড়ি আর কিছু জংলী মরিচ ছিল। ঝোপের আড়ালে আবছা আলোয় তাই-ই পেট ভরে খেল ইন্দ্র আর তকিরায়। তারপর অতি গোপনে নটুকৃষ্ণের জল পান করে ধীর পায়ে জঙ্গলের ভিতর ডুকে গেল একে-একে, আর পশ্চিম অভিমুখে হাঁটতে লাগল। গ্রামের সাত-আটটি কুকুর, ওরাও নীরবে তাদের পিছু-পিছু চলতে লাগল। যেন ওরা অনুভব করতে পারছে তুলারাম পাড়াকে চিরদিনের জন্য ছেড়ে চলে যাবার দুঃখ-বেদনা। হারানবাসী, ইন্দ্র আর তকিরায়ের চোখ অশ্রুতে চিক-চিক করছে। আজ পিছনে পড়ে রইল রক্তমাখা অতি সাধের জন্মভূমি, তুলারাম পাড়া; সামনে দশ ক্রোশ পায়ে হাটার দুর্গম পথ, ক্ষুধা, তৃষ্ণা আর চরম অনিশ্চয়তা। তবু হারানবাসী সাথে থাকায় মনে হচ্ছে আকাশের চাঁদটা যেন এই আধারেও বুকের মাঝে জ্বলজ্বল করছে। এই সময়ে এই ভরসা কী কম?
Next Part

গোয়েন্দা গল্প:
মাণিক্য   
সর্দার বাড়ির গুপ্তধন রহস্য   
প্রেমিকার অন্তর্ধান রহস্য   
লুকানো চিঠির রহস্য   
কান্না ভেজা ডাকবাংলোর রাত    


All Bengali Stories    44    (45)    46    47    48    49    50    51    52   


## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers. The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation. Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##


◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717