Home   |   About   |   Terms   |   Contact    
RiyaButu
A platform for writers

নয়নবুধী


ত্রিপুরার ইতিহাসের পটভূমিতে রচিত একটি উপন্যাস


All Bengali Stories    44    (45)    46    47    48    49    50    51    52   

হরপ্রসাদ সরকার, ধলেশ্বর-১৩, আগরতলা

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ আমাদের এই ওয়েবসাইট ( RiyaButu.com )-এ প্রকাশিত গল্পগুলির মধ্যে থেকে কিছু গল্প নিয়ে এবছরই প্রকাশিত হবে আমাদের 'রিয়াবুটু'র গল্প'।
--------------------------


নয়নবুধী
( এক পাঁজালীর প্রেমিকা )
পর্ব ১৭
ত্রিপুরার ইতিহাসের পটভূমিতে রচিত একটি উপন্যাস
হরপ্রসাদ সরকার, ধলেশ্বর, আগরতলা
( এই উপন্যাসের সকল স্বত্ব সরকারি রেজিস্ট্রিকৃত ভাবে লেখক দ্বারা সংরক্ষিত )


নয়নবুধী: সমস্ত পর্বগুলি: All Parts

◕ নয়নবুধী
পর্ব ১৭
গভীর রাতে গভীর জঙ্গলের মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলল তিন জন; হারানবাসী, ইন্দ্র আর তকিরায়। এই গভীর বনে হারানবাসী আজ সব ভরসা, তাই হারানবাসীকে সামনে রেখে পিছু-পিছু চলল ইন্দ্র আর তকিরায়; সাথে তুলারাম পাড়ার কুকুরগুলি।

আকাশে ছিটে-ফাটা মেঘের কুলে শুয়ে আছে এক ফালি চাঁদ। ঘুম নেই তার চোখেও। সে দেখতে চায়, এই গভীর জঙ্গলে কী পরিণতি হবে এই তিন অরণ্যযাত্রীর? হিংস্র পশুদের পেটে যাবে, না কি কুল পাবে জীবনের? পথ মাঝেই পথ না ফুরিয়ে যায়! কিন্তু একদল কুকুর সাথে থাকায় রক্ষা। অনেক কিছুই তো সামনে পড়ল, কুকুরগুলির একতায় আর আক্রমণে পালিয়ে যেতে বাধ্য হল। তিনটি মনুষ্য প্রাণকে আটটি কুকুর পাহারা দিয়ে নিয়ে যেতে লাগল। কিন্তু কতক্ষণ?

কারোর মুখে কোনও কথা নেই। সবাই কী যেন ভাবছে! এ কী হয়ে গেল? অপরাধ না করেও নিজের ভিটে-মাটি চোখের পলকে ছেড়ে চোরের মত রাতের আঁধারে পালিয়ে যেতে হচ্ছে। মেনে নেওয়া যায় না, মেনে নেওয়া যাচ্ছে না, তবু তেমনটাই করতে হচ্ছে । এ দুঃখ কী কম? রাগ, অপমান, লজ্জা আর ঘৃণা মনকে চেপে ধরতে লাগল। চাঁদের আলোয় আর এমন নীরবতায় মনের ভাষাগুলি চোখের জলে আরও বেশী চিক-চিক করছে, আরও বেশী ঝিলিক মারছে। ঠিক এমনই সময় আচানক ইন্দ্র এক নারী কণ্ঠের উচ্চ হাসির শব্দ শুনতে পেয়ে থমকে দাঁড়িয়ে পড়ল। তার মনে হল নয়নবুধী এই নিঝুম রাতে এই গভীর জঙ্গলে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এ কথা মনে হতেই তার রোম-রোম খাড়া হয়ে গেল। তন-মন কেঁপে উঠল। "নয়না! এখানে! এই গভীর রাতে? কেন?"

সেই আঁধার ভেদ করে আশে-পাসে যতটুকু তার নজর যায় ততটুকু সে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে দেখতে লাগল, কিন্তু কোথাও কিছু দেখা গেল না। ইন্দ্রকে থমকে দাঁড়িয়ে পড়তে দেখে তকিরায় জিজ্ঞেস করল, "কী রে? এমন ভাবে থমকে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লি যে?"

আমতা-আমতা করে ভয়ার্ত স্বরে ইন্দ্র বলল, "না, মানে, যেন কোন নারীর হাসির শব্দ শুনতে পেলাম। মনে হল কোনও নারী যেন আমাদের চোখে-চোখে রাখছে আর আমাদের দেখে জোরে-জোরে হাসছে। হাসির শব্দটি ঠিক যেন নয়নার মত!"

ইন্দ্রের কথা শুনে কয়েক কদম পিছন ফিরে এল হারানবাসী। ডান হাত তুলে উত্তরের দিকটা দেখিয়ে ধীর কণ্ঠে ফিসফিস করে বলল, "ও দিকে একটি বনোপথ আছে। আগে এক সময় ঐ পথে রাজধানী রাঙামাটিতে যাওয়া যেত। ঐ পথের পাশেই ছিল একটি শ্মশান আর তার পাশে ছিল একটি তান্ত্রিক মন্দির। শুনেছি এখানে এক সময় অনেক কুমারী মেয়ের বলি হয়েছে, অনেক নরবলি। আজ এই শ্মশান আর মন্দির উভয়ই পরিত্যক্ত, শুধুই জঙ্গল। তবে অনেকের সাথেই এখানে এমন ঘটনা ঘটেছে। তাই আর এক মুহূর্তও এখানে দাঁড়িয়ে থাকা ঠিক হবে না। চল, দ্রুত চল।" তাগদা দিল হারানবাসী। সবাই দ্রুত পা চালাল।

দ্রুত চলতে থাকলেও কিছুদূর যাবার পর ইন্দ্রের মনে আবার নয়নবুধী ফিরে এল। বারে-বারে নয়নবুধীর কথাই মনে পড়তে লাগল তার। সে ভাবতে লাগল, "ভালই হয়েছে নয়নাটার বিয়ে হয়ে গেছে, না হলে সেও কুকিদের হাতে সেই রাতে শেষ হয়ে যেত। হয়তো তার কাটা মাথাটাকে ওদের দলপতির ঘরের সামনে ঝুলিয়ে রাখত সম্মান বোধের জন্য। ভালই হয়েছে সে এখানে নেই। তবে রাঙামাটিতে কেমন আছে কে জানে? না জানি এখন তাকে দেখতে কেমন? না জানি কত সুন্দর? কত দিন তাকে দেখিনি, দেখলে কী এখন চিনতে পারবো? সেও কী আমাকে চিনতে পারবে? রাজকর্মচারীর বৌ বলে কথা!" একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল ইন্দ্র, মনে-মনে বলল, "তুলারাম পাড়ার এই করুন কাহিনীর কথা নয়না কী জানতে পেরেছে? কীভাবে জানবে? কে দেবে তাকে এই সংবাদ? কেউ তো বেঁচে নেই। না, সে নিশ্চয়ই এখনো এই খবর পায়নি। তার মা-বাবা, সকল আত্মীয়স্বজন, সকল গ্রামবাসী, এমনকি প্রিয় বন্ধু চম্পক পর্যন্ত এক রাতেই কুকিদের হাতে যে শেষ হয়ে গেছে এ খবর এখনো সে জানে না। সে জানে না, শুধু আমরা তিন জনই বেঁচে আছি, আর আমরাও চিরদিনের জন্য স্বপ্নের, সাধের তুলারাম পাড়া ছেড়ে উদ্দেশ্যহীন, অনিশ্চিত, অকুল পথে পা বাড়িয়েছি, বাঁচার উদ্দেশ্য। স্বপ্নের তুলারাম পাড়া চিরদিনের জন্য আবার স্বপ্ন হয়ে গেল, স্মৃতি হয়ে গেল, এক রাতেই চোখের সামনে থেকে হারিয়ে গেল। হায়রে, কোনওদিন আবার সাধের তুলারাম পাড়াকে দেখতে পারব কিনা কে জানে! ফিরে গেলেও কী আর দেখব? সবই তো স্মৃতির আর্তনাদের নীচে সব চাপা পড়ে গেছে। যে সোনার তুলারাম পাড়া হারিয়ে এসেছি তা আর কোনওদিন ফিরে পাওয়া যাবে না। তাই বুঝি লোকে বলে, রাত এত কালো! কিন্তু নয়না যদি হঠাৎ কোনওদিন তুলারাম পাড়াতে ফিরে আসে? তাহলে কী হবে? সেও তো এখন নিজের গ্রামকে চিনতে পারবে না। পরিত্যক্ত এক ধ্বংসস্তূপে বসে খুঁজে বেড়াবে স্মৃতিগুলিকে আর মিলাতে থাকবে একে-একে। হায়রে, সব শেষ, সব শেষ!" এ সব ভাবতে-ভাবতে ভারাক্রান্ত হৃদয়ে এগিয়ে চলল ইন্দ্র।

চলতে-চলতে পথের মাঝেই এক নতুন ভোর হল। আজকের এই ভোর অনেক নতুন, অনেক অপরিচিত, যা তুলারাম পাড়া থেকে অনেক-অনেক আলাদা, অনেক-অনেক দুর। ভোরের আলোতে বুঝা গেল ওরা অতি গভীর জঙ্গলের এক পাহাড়ি পথ ধরে এগিয়ে চলছে। ক্ষুধা, তৃষ্ণায় শরীর অবসন্ন। কুকুরগুলি এখনো ওদের ছেড়ে যায়নি, শুকনো চেহারা নিয়ে জিভ বের করে ফ্যল-ফ্যল করে তাকিয়ে আছে ওদের মুখের দিকে।

একটু দুরে একটি পাহাড়ি ঝর্ণা দেখা গেল। ঝর্ণার শীতল জল পান করে বড় একটি পাথরের উপরে গা এলিয়ে দিল ওরা। কুকুরগুলি সেই পাথরকে ঘিরে বসে পড়ল, শুয়ে পড়ল। গভীর সবুজের আবরণ চিড়ে সূর্যের সোনালী দু'একটি আলো তখন বনের ভূমিকে স্পর্শ করছে। শুয়ে-শুয়ে খুব ক্লান্ত স্বরে তকিরায় বলল, "হারান রে, তুই তো ভাই সাধু মানুষ, আমরা সাধারণ। পেটের খিদে আর সহ্য হচ্ছে না রে ভাই। ঐ কুকুরগুলির দিকে চেয়ে দেখ, সেই থেকে আমাদের পাহারা দিয়ে নিয়ে আসছে। ওদেরকেও তো কিছু খেতে দিতে হবে ভাই।"

হারানবাসী তকিরার মনের কথা বুঝে হেসে উঠল। বলল, "আমি মাছ-মাংস খাই না, তা বলে তোদের খেতে তো বাধা দেব না রে ভাই। আমি সাধু, তাই সাধারণ। শাসনে থাকি তবে পাষাণ নই। আমিও বিশ্বাস করি, প্রাণ বাঁচলে প্রাণেশ্বর। তাই নিজেদের মতন করে তোরা তোদের খাবার ব্যবস্থা কর। এখানে অনেক বনো মোরগ আর খরগোস পাওয়া যায়, সহজেই পাওয়া যায়। যা দেখ।

Next Part

গোয়েন্দা গল্প:
মাণিক্য   
সর্দার বাড়ির গুপ্তধন রহস্য   
প্রেমিকার অন্তর্ধান রহস্য   
লুকানো চিঠির রহস্য   
কান্না ভেজা ডাকবাংলোর রাত    


All Bengali Stories    44    (45)    46    47    48    49    50    51    52   


## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers. The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation. Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##


◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717