Home   |   About   |   Terms   |   Contact    
RiyaButu
A platform for writers

নয়নবুধী


ত্রিপুরার ইতিহাসের পটভূমিতে একটি উপন্যাস


All Bengali Stories    44    (45)    46    47    48    49    50    51    52   

হরপ্রসাদ সরকার, ধলেশ্বর-১৩, আগরতলা

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ আমাদের এই ওয়েবসাইট ( RiyaButu.com )-এ প্রকাশিত গল্পগুলির মধ্যে থেকে কিছু গল্প নিয়ে এবছরই প্রকাশিত হবে আমাদের 'রিয়াবুটু'র গল্প'।
--------------------------


নয়নবুধী
( এক পাঁজালীর প্রেমিকা )
পর্ব ৪
ত্রিপুরার ইতিহাসের পটভূমিতে রচিত একটি উপন্যাস
লেখক - হরপ্রসাদ সরকার, ধলেশ্বর, আগরতলা
( এই উপন্যাসের সকল স্বত্ব সরকারি রেজিস্ট্রিকৃত ভাবে লেখক দ্বারা সংরক্ষিত )


নয়নবুধী: সমস্ত পর্বগুলি: All Parts

◕ নয়নবুধী
পর্ব ৪

অখিরার প্রচণ্ড চীৎকারে দাবানলের মতন উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ল তুলারাম পাড়ায়। পুরুষরা ঊর্ধ্বশ্বাসে যে-যেখানে ছিল ঘরের দিকে ছুটে গেল আর তীর, ধনুক, দা, বল্লম, কাটারী, টাক্কাল, যা-কিছু হাতিয়ার হাতের কাছে পেল তা নিয়েই বেরিয়ে এল। মেয়েরা সন্তানদের সাথে নিয়ে জঙ্গলে পালাতে লাগল। কান্না, আর্তনাদ আর আতঙ্কে মুহূর্তে তুলারাম পাড়া ভয়ানক হয়ে উঠল।

নয়নবুধীর মা, ঊর্ধ্বশ্বাসে চীৎকার করতে-করতে নটুকৃষ্ণের দিকে ছুটে গেলেন আর নয়নবুধী, চম্পক ও ইন্দ্রের হাত ধরে জঙ্গলের দিকে দৌড়াতে লাগলেন। চারিদিকে আসন্ন মৃত্যুর প্রচণ্ড আর্তনাদ। মায়ের এমন আতঙ্কিত চেহারা এর আগে আর কখনো দেখেনি নয়নবুধী। সে অত্যন্ত ভীত; বন্ধুরাও। নয়নবুধী কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে কাঁদতে-কাঁদতে মায়ের সাথে দৌড়াতে লাগল। দৌড়াতে লাগল ইন্দ্রও, কিন্তু চম্পক দৌড় দিল না; জেদ ধরে দাঁড়িয়ে রইল ওখানেই। বলল, "আমি যাব না! আমি বীরের মত যুদ্ধ করব! বাবা বলেছে, আমি বীর, আমাকে সদা বীরের মত যুদ্ধ করতে হবে; দেশের বীর সেনাপতি রায়-কাছাগ ও রায়-কছমের মত!"

নয়নবুধীর মা দ্রুত দু'কদম ফিরে এসে খুব জোড়ে এক চড় কষালেন চম্পকের মুখে, "যুদ্ধটা আগে শিখ বাছা!" এই বলে তিনি টেনে-হেঁচড়ে তিনটি শিশুকে নিয়ে দৌড়াতে লাগলেন জঙ্গলের দিকে। এ জঙ্গল সাধারণ জঙ্গল নয়, অজগর আর বিষধর সাপে ভরা। বাঘ-ভাল্লুক, শিয়াল-কুকুরের আড্ডাখানা; জঙ্গলি হাতির দল তো আছেই। এ যেন একখানা মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচতে আরেকখানা মৃত্যুর দিকে ধেয়ে যাওয়া। তবু ভালো! কারণ, যেই মৃত্যুটা পিছন দিক থেকে ধেয়ে আসছে, সেই মৃত্যু অতি নিষ্ঠুর, অতি যন্ত্রণাদায়ক, অতি কষ্টের। তার হাত থেকে নিজের সন্তানদের বাঁচাতে, নিজের প্রাণ বাঁচাতে, জঙ্গলি পশুদেরকেও আজ তুচ্ছ বলে মনে হল নয়নবুধীর মা'র। ছুটতে-ছুটতে হঠাৎ দূরের মাটিতে কিছু একটা চোখে পড়ল তার। তা দেখেই তিনি দাঁড়িয়ে পড়লেন, এত আতঙ্কের মাঝেও চেহারায় অনেকটা প্রশান্তির ভাব ফুটে উঠল, যেন কিছুটা নিশ্চিন্ত হলেন। সবাইকে অবাক করে তিনি দৌড়ে গিয়ে কতক-পরিমাণ শুকনো বিষ্ঠা, যা ঐ মুহূর্তে উনার কাছে অমূল্য সম্পদের মত মনে হল, দ্রুত তুলে এনে নয়নবুধীর গায়ে মেখে দিলেন, তারপর বাকী শিশুদের গায়ে মেখে নিজের গায়েও মাখলেন। বাকী যা কিছু রইল, তা আঁচলে বেঁধে একটি নিশ্চিন্তের দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আবার আগের মত দৌড়াতে লাগলেন। ঐ বিষ্ঠার প্রচণ্ড উগ্র গন্ধ চারিদিকে ছড়িয়ে পড়তে লাগল, যেন গা থেকে বিষ-গোলা বের হচ্ছে। দৌড়াতে-দৌড়াতে জঙ্গলের এক নিরাপদ স্থানে এসে মা থামলেন। অতি দ্রুত আঁচলে বাঁধা সেই পশু-বিষ্ঠা চারিদিকে দুর-দুর পর্যন্ত ছড়িয়ে দিলেন। নয়নবুধী হাঁপাতে-হাঁপাতে বলল, "মা, ওটা কী?"

নিজের কাজ সারতে-সারতে মা বললেন,"চিতাবাঘের মল!"

খুব অবাক সবাই, "চিতাবাঘের মল! ওতে কী হবে কাকী?"

"চিতা বাঘের মলের গন্ধ পেলে সাপ-খোপ, শিয়াল-কুকুর, এমনকি হাতি পর্যন্ত পালিয়ে যায়। তোদের গায়ে এই গন্ধ মেখে আমি নিশ্চিন্ত হলাম। এ গন্ধে জন্তু-জানোয়াররা এখন আর এ-মুখোই হবে না। জঙ্গলে আত্মরক্ষার এটি একটি অতি প্রাচীন রহস্য; জঙ্গলের নিয়ম।"

এ কথা শুনে সবাই বেশ অবাক হল। এই সুগভীর-নির্জন বনে একাকী এক রূপসী নারীর মুখ তখন আগুনের মত লাল। অবুঝ শিশুরা জানে না, ওরা কী বিপদে আছে? কিন্তু মা জানেন, কোন অগ্নি-কুণ্ডের মাঝে ওরা! তিনটি অবুঝ শিশুকে সাথে নিয়ে নিজের প্রাণ রক্ষার সকল পরিকল্পনা, সকল দায়-দায়িত্ব এখন উনাকেই করতে হবে; একা। ওদের বাঁচাতে গড়ে তুলতে হবে এক অভেদ্য প্রতিরোধ। অতি দ্রুত নিজের কাজ শেষ করলেন তিনি; প্রচুর বনো-ওল আর বন-মরিচ জমা করলেন নিজের কাছে। তারপর শিশুদের হাত ধরে একটি ঘন ঝোপের ভিতরে ঢুকে গেলেন। অতি ধীরে বললেন, "কেউ কিন্তুক একটিও কথা বলবে না! কেউ যেন টের না পায় আমরা এখানে আছি!"

ওদিকে টিলার উপরে তখন চলছে আত্মরক্ষার সর্বশেষ প্রস্তুতি।

জনা-পঞ্চাশের একটি নিষ্ঠুর কুকি-দস্যুর দল রাজ-সৈন্যের তাড়া খেয়ে বেশ কয়েকদিন আগে পাশের গভীর জঙ্গলে আশ্রয় নিয়েছিল। তাদের নিষ্ঠুরতা এত চরম যে, ওরা যেখানে হামলা চালায় সেখানে মুরগী আর শূয়রদের পর্যন্ত জীবিত রাখে না। গাছের মগ-ডালে বসে সেই দস্যুদেরকেই তুলারাম পাড়ার অভিমুখে আসতে দেখেছিল অখিরা। তা দেখে তার ঘাম ছুটে যায়; হাত-পা অবশ হয়ে আসে। কোনও ভাবে গাছে থেকে নেমে, ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটে এই বিপদের কথা সবাইকে জানিয়েছিল সে।

কুকি-দস্যুদের কথা, বিয়ের অনুষ্ঠানে আসা বরযাত্রীক-সৈন্যরা বলে গেছে। তুলারাম পাড়াকে এই দস্যুদের হাত থেকে বাঁচাবার পরিকল্পনাও দিয়ে গেছে তারা। সেই পরিকল্পনা মত, তখন থেকেই বেশ কিছু যুবককে আশে-পাশের জঙ্গলে আর টিলায় পাহারার কাজে লাগিয়ে দেওয়া হয়। ওরা জঙ্গলের সবচেয়ে উঁচু গাছটির মগ-ডালে বসে চারিদিকে নজর রাখতে থাকে। সেই নজরদারিতে আজ ফল পাওয়া গেল। দেখা গেল দক্ষিণ দিক থেকে সেই দস্যু-দলটি প্রচুর হাতিয়ার সহ, হিংস্র-শিকারি কুকুরের মত অতি গোপনে, নিঃশব্দে তুলারাম পাড়ার দিকে এগিয়ে আসছে।

বরযাত্রীক রাজ-সৈন্যরা আত্মরক্ষার উপায়ও বলে গিয়েছিল তুলারাম পাড়ার বাসিন্দাদের। ওরা অনেক হাতিয়ার এবং রণবাদ্য রেখে গিয়েছিল এখানে। বিপদে এই রণবাদ্য বাজালে, যতদূর পর্যন্ত এর ধ্বনি যাবে, তত-দূর পর্যন্ত কোনও রাজ-সৈন্য থাকলে অবশ্যই সাড়া দেবে। পাশাপাশি দস্যুরাও বুঝতে পারবে এখানে রাজ-সৈন্য আছে, ফলে ওরা এই স্থান এড়িয়ে যেতে চাইবে। কারণ, দস্যুরা যতই শক্তিশালী হোক, রাজ-সৈন্যদের পথে পা বাড়াতে চায় না।

সেনাদের সেই পরামর্শ মত গগন-ভেদী রণবাদ্য বেজে উঠল এক সাথে। সে এক বিশাল আওয়াজ, হৃদয় কাঁপানো শব্দ। সেই বিকট আর ভয়ানক আওয়াজে চোখের পলকে আকাশ-বাতাস, বন, জঙ্গল কেঁপে উঠল। ঐ জনগোষ্ঠীর লোকরা এমন ভয়ানক রণ-ধ্বনি আগে কখনোই শোনেনি। এমন হৃদয় কাঁপানো রণ-ধ্বনিতে শত্রুরা ভয় পাবে কি, নিজেরাই খুব ভয় পেয়ে গেল; যেন যুদ্ধের আগে আরেক যুদ্ধ।

যারা জঙ্গলে লুকিয়ে ছিল, ওরা এই ভয়ঙ্কর শব্দ শুনে ভাবল, উপরে লড়াই শুরু হয়ে গেছে; আর রক্ষা নেই। জঙ্গলে-জঙ্গলে তখন নারী ও শিশুদের প্রচণ্ড চীৎকার, আর্তনাদ। নিজেদের প্রাণ রক্ষার্থে ওরা দ্রুত-আরও দ্রুত গভীর জঙ্গলের দিকে পালাতে লাগল। মুহূর্তেই সবকিছু নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেল। জঙ্গলের মাঝে নারী, শিশুদের এমন তীব্র আর্তনাদ শুনে পুরুষরা ভাবল, দস্যুরা বুঝি জঙ্গল পথে নারীদের উপর আক্রমণ করেছে এবং জোর করে তাদের গভীর জঙ্গলে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। মুহূর্তকাল দেরী না করে পুরুষরা ঝাঁপিয়ে পড়ল জঙ্গলে আর ছুটে যেতে লাগল নারীদের দিকে। বীর যোদ্ধাতে ভরা তুলারাম টিলা চোখের পলকে ফাঁকা হয়ে গেল। বাদ্যকরদের ছাড়া আর কেউ বাকী রইল না সেখানে। সে এক অবিশ্বাস্য কাণ্ড।

এমন সময় এক বাদ্যকর, আধমনী কৈলাস, যার নাম ধরণী কুমার, প্রাণান্তকর বাজনা বাজাতে-বাজাতে কোনও এক কারণে হঠাৎ পিছন ফিরে তাকাল। তাকিয়েই তার চক্ষু গোল! এ সব কী! সব ফাঁকা! সমগ্র টিলা খালি! শুধু ওরা ক'জন ছাড়া আর কেউ নেই। এখন দস্যুরা এলে?

অত্যন্ত ভয় পেয়ে 'হাউ' করে এক বিকট চীৎকার দিয়ে গুঁতি খেয়ে মাটিতে পড়ে গেল ধরণী, আর ধপাস করে উল্টে পড়েই বেহুঁশ। বাকিরাও টের পেয়ে থর-থর করে কাঁপতে লাগল ভয়ে। পরিস্থিতি এমন যে, ওরা না পারছে বাজনা বন্ধ করতে, না পারছে ছুটে পালাতে। মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়ে কাঁদতে-কাঁদতে চোখ-মুখ বন্ধ করে গায়ের জোরে বাজনাগুলিকে গরুর মত পেটাতে লাগল ওরা; তালে-বেতালে।

অনেকক্ষণ পরে গাছের আগা থেকে 'অখিরা' আবার নেমে এল। বাদ্যকরদের মাঝে দাঁড়িয়ে দুই হাত তুলে সবাইকে থামিয়ে দিয়ে বলল, "সাবাস বন্ধুরা! সাবাস! তোমাদের বাজনা খুব ভাল হয়েছে। এই বাজনাতে খুব কাজ হয়েছে। এই রণবাদ্যের ধ্বনি দস্যুদের কানে যেতেই ওরা চমকে উঠে দাঁড়িয়ে পড়ে, তারপর দ্রুত পিছন দিকে পালাতে থাকে। এখন আর ওদের দেখা যাচ্ছে না। মনে হচ্ছে এ যাত্রায় বিপদ টলল।"

কিন্তু ওরা জানত না, এই বিপদ আরও ভয়ঙ্কর হয়ে তুলারাম পাড়ার দিকে এগিয়ে আসছে আরও কয়েক বছর পর। তখন এতে খুলে গিয়েছিল কিছু নতুন দিগন্তও।

Next Part

গোয়েন্দা গল্প:
মাণিক্য   
সর্দার বাড়ির গুপ্তধন রহস্য   
প্রেমিকার অন্তর্ধান রহস্য   
লুকানো চিঠির রহস্য   
কান্না ভেজা ডাকবাংলোর রাত    


All Bengali Stories    44    (45)    46    47    48    49    50    51    52   


## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers. The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation. Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##


◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717