Home   |   About   |   Terms   |   Contact    
RiyaButu
A platform for writers

নয়নবুধী


ত্রিপুরার ইতিহাসের একটি উপন্যাস


All Bengali Stories    44    (45)    46    47    48    49    50    51    52   

হরপ্রসাদ সরকার, ধলেশ্বর-১৩, আগরতলা

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ আমাদের এই ওয়েবসাইট ( RiyaButu.com )-এ প্রকাশিত গল্পগুলির মধ্যে থেকে কিছু গল্প নিয়ে এবছরই প্রকাশিত হবে আমাদের 'রিয়াবুটু'র গল্প'।
--------------------------


নয়নবুধী
( এক পাঁজালীর প্রেমিকা )
পর্ব ৯
ত্রিপুরার ইতিহাসের পটভূমিতে রচিত একটি উপন্যাস
লেখক - হরপ্রসাদ সরকার, ধলেশ্বর, আগরতলা
( এই উপন্যাসের সকল স্বত্ব সরকারি রেজিস্ট্রিকৃত ভাবে লেখক দ্বারা সংরক্ষিত )


নয়নবুধী: সমস্ত পর্বগুলি: All Parts

◕ নয়নবুধী
পর্ব ৯

ঘোড়াগুলি পরিশ্রান্ত হয়ে গিয়েছিল। মুষলধারে বৃষ্টি পড়ছিল। একটি মরা নদীর পাশে, বড় একটি বট গাছের তলে সবাই দাঁড়াল। আকাশ ঘোর মেঘাচ্ছন্ন, তাই সন্ধ্যা কত দুর তা জানা গেল না।

দেখলেই বুঝা যায় বট গাছটি অতি প্রাচীন, কিন্তু এখনো পাতাগুলি এত ঘন যে, বৃষ্টির মুষলধারাকে সহজেই আটকে দিচ্ছে, যেন শিবের জটায় গঙ্গা ধারণ করছে।

জায়গাটা নয়নবুধীর পছন্দ হল না। কেমন যেন অন্ধকারাচ্ছন্ন, শ্রীহীন, অশুভ সূচক। জায়গাটাকে একটা ভূতের বাসা মনে হল নয়নবুধীর। নানান গাছের গুড়িতে নানান রকমের কাপড় জড়ানো, বটগাছটির শাখায়-শাখায় লাল, সাদা কাপড় পেঁচানো। ছোট-বড় মাটির প্রচুর হাড়ি-কলসি ভাঙা, আধ-ভাঙা অবস্থায় এখানে-ওখানে পড়ে আছে। পশু-পাখীর হাড়-গুড় চারিদিকে ছড়ানো-ছিটানো। পরিবেশটা বেশ ভয়ঙ্কর ঠেকল নয়নবুধীর কাছে, গা ছম-ছম করতে লাগল তার। নিশ্চয়ই কোনও ভূত-পেত্নী কিংবা শাঁকচুন্নির দল আশে-পাশে বসে আছে। অত্যন্ত ভীত চোখে সে বাকীদের দিকে তাকাল। কিন্তু ওদের চোখে সে কোনোরূপ উত্তেজনা, ভয় কিংবা আতঙ্কের ছাপ লক্ষ্য করল না, তবে গভীর চিন্তার ছাপ ঠিক লক্ষ্য করল।

কিছুক্ষণ পরে অগত্যা আর থাকতে না পেরে নয়নবুধী ওর বরকে জিজ্ঞাস করল, "আমার খুব ভয়-ভয় করছে। জায়গাটা যেন কেমন-কেমন লাগছে। চারিদিকে এত হাড়-গুড়, হাড়ি-পাতিল, গাছে-গাছে এত লাল-সাদা কাপড়, খুব ভয়ানক মনে হচ্ছে, যেন রাক্ষসের বাড়ি!"

নয়নবুধীর কথা শুনে দু'গাল হাসল হীরামন। বলল, "তুমি ঠিক ধরেছ নয়না। জায়গাটা সত্যি একটা ভয়ানক জায়গা, তবে ভূতের বাসা নয়, রাক্ষস-খোক্কস এখানে নেই। এটা একটা শ্মশান, আমক-শ্মশান।"

অবাক চোখে নয়নবুধী জিজ্ঞাস করল, "আমক-শ্মশান! এটা আবার কী? এ কী রকম শ্মশান?"

"এটা সাধারণ শ্মশান নয়। এই শ্মশানে মৃত মানুষকে পোড়ানো হয় না, বরং জঙ্গলের হিংস্র পশুদের জন্য ফেলে রাখা হয়। অন্য ভাবে বলতে গেলে, মৃতদেহগুলিকে জঙ্গলের পশু-পাখীদের আহার রূপে ফেলে রাখা হয়। বনের শিয়াল, কুকুর, বাঘ, ভাল্লুক আর হায়েনার দল মৃত শরীরের মাংস টেনে-হেঁচড়ে, ছিঁড়ে-ছিঁড়ে খায়। এই যে হাড়-গুড়গুলি দেখছ, এগুলি পশুপাখির হাড় নয়, মানুষের হাড্ডি।"

কথা শুনে নয়নবুধীর অবাক হবার পারাপার রইল না। সে প্রশ্ন করল, "এই গভীর বনের মাঝে এত মৃতদেহ আসে কোত্থেকে? কে এত মৃতদেহ ফেলে রাখা যায়?"

হীরামন এবার বেশ প্রাণখোলা হাসি হাসল। রহস্যের সুরে বলল, "কে এত মৃত দেহ এখানে ফেলে রেখে যায়? জানতে চাও। তবে শোনো, আমরাই এখানে এত মৃতদেহ ফেলে রেখে যাই।"

"তোমরা? এখানে? কেন?"

"মনে কর, যুদ্ধে অনেক শত্রুকে বন্ধী করা হল; রাজা কী তাদের বসে-বসে খাওয়াবেন? কিছু বন্দীকে দিয়ে অমানুষিক পরিশ্রম করানো হবে, কিন্তু বাকীদের? তাদের ঠিকানা হবে এই আমক-শ্মশান। তারপর ধর, রাজা যাদের প্রাণদণ্ড দিলেন, ফাঁসির আদেশ দিলেন, তাদেরকেও কখনো-কখনো এই আমক-শ্মশানে নিয়ে আসা হয়। ঐ দেখো, ঐ গাছগুলিতে কত-কত দড়ি ঝুলছে। এক-একটা দড়ি এক-একজনের জন্য ছিল। এই গভীর বনে এত চিতা জ্বালাবে কে? তাই এখানে এমনি তাদের ফেলে রাখা হয়। বাঘে-বান্দরে খেয়ে সব শেষ করে। তবে সবাইকে যে এখানে আনা হয় তেমটা নয়, রাজার আদেশ হলে তবেই এখানে নিয়ে আসা হয়।"

হীরামনের কথা শুনে গা শিহরে উঠল নয়নবুধীর। সে অতি বিস্ময়ে এমন অদ্ভুত, ভয়ানক আর রোমাঞ্চকর জায়গাটা দেখতে লাগল। এমন জায়গায় রোজ তো আর আসা যায় না, চোখেও পড়ে না।

তখনো মুষলধারে বৃষ্টি পড়ছিল। সিপাহিরা বিশ্রাম করছিল, কেউ বা তাদের ধনুক-বাণ, কেউ বা তাদের টাক্কাল, কুকরি, তলোয়ার ঠিক-ঠাক করছিল। এমন সময় কী একটা কথা মনে হতেই আতঙ্কে নয়নবুধীর মেরুদণ্ড সোজা হয়ে গেল। দ্রুত সে তার বরকে প্রশ্ন করল, "এতক্ষণ এখানে বসে থাকা কী ঠিক হবে? যদি কুকি দস্যুরা আমাদের আক্রমণ করে বসে? তখন?"

কুকি দস্যুদের কথা কানে যেতেই সিপাহীরা ঘাড় ঘুরিয়ে তেড়ছা চোখে নয়নবুধীর দিকে তাকাল। হীরামন খুব স্বাভাবিক ভাবে জবাব দিল, "ও তুমি এখনো সেই কথা ভাবছ? আরে না-না, এখানে কোনও ভয় নেই। সেই দস্যুর দল ভয়ে এই দিকে ফিরেও তাকাবে না। ওরা খুব ভাল জানে, এদিকে এলে প্রাণ নিয়ে আর ফিরে যেতে পারবে না।"

"মানে? কেন?"

"কারণ হলেন অমরমাণিক্য! এই অঞ্চল অমরমাণিক্যের, তিনিই এখানকার রাজা। আর উনার রাজত্বে দস্যুগিরীর কোনও স্থান নেই। সংবাদ পৌঁছানো মাত্রই হিসাব পরিষ্কার করে দেবেন।"

আকাশ থেকে পড়ল নয়নবুধী, "অমরমাণিক্য! তিনি এখানকার রাজা? তাহলে উদয়মাণিক্য? তিনিই তো ত্রিপুরার বর্তমান মহারাজ? উদয়মাণিক্যই যদি ত্রিপুরার মহারাজ হয়ে থাকেন, তাহলে অমরমাণিক্য কোথা থেকে?"

সুদূর আকাশ পানে চেয়ে ঠোট বেঁকিয়ে একটি দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল হীরামন। বেশ নিরাশার সুরে বলল, "গোমতীর তীরে সোনার রাঙামাটি, সেই আগের রাঙামাটি আর নেই। তাই তো তোমাকে রাজধানীতে নিয়ে যেতে আমার ভয় করছে। জানো তো, মহারাজ বিজয়মাণিক্য মারা যাবার পর, গত কয়েক বছরে রাজধানীতে কী-কী অঘটন ঘটেছে! বর্তমানে আমাদের যে মহারাজ, মহারাজ উদয়মাণিক্য, তিনি অত্যন্ত নারী-আসক্ত। উনার চোখে যে রমণীর রূপ একবার ঝিলিক মারবে, তাকে উনার চাই-ই-চাই। এই চাওয়ার মাঝে কোনও রকমের বাছ-বিচার, ন্যায়-নীতি, কিছুই নেই। শুধু আছে কামের তপ্ত লালসা। এই কারণে বর্তমানে রাজধানীতে ছেয়ে আছে চরম ভয়, অসন্তোষ আর বিশৃঙ্খলা। কিন্তু করার কিছু নেই। মহারাজকে বাধা দেবে কে? বিচার চাইতে যাব কার কাছে? মহারাজের কাছেই কী মহারাজের বিচার চাইতে যাব? নালিশ জানাতে যাব? এ কী সম্ভব? এ কী হয়? আর তুমি যদি সুন্দরী নারী হও, তবে, বিচার চাইতে গিয়ে তুমিই তো বিচার হয়ে যাবে; মহারাজের কাছে? তাহলে বুঝতে পারছ, কেমন অবস্থা চলছে?"

আকাশের কালো মেঘের চেয়েও কালো উৎকণ্ঠার মেঘ ছেয়ে গেল নয়নবুধীর কমল-মুখে, "তাহলে উপায়?"

"উপায় শুধু একটাই! অমরমাণিক্য! মহারাজ অমরমাণিক্য!"

Next Part

গোয়েন্দা গল্প:
মাণিক্য   
সর্দার বাড়ির গুপ্তধন রহস্য   
প্রেমিকার অন্তর্ধান রহস্য   
লুকানো চিঠির রহস্য   
কান্না ভেজা ডাকবাংলোর রাত    


All Bengali Stories    44    (45)    46    47    48    49    50    51    52   


## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers. The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation. Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##


◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717