একা, বড়ো একা
বাংলা উপন্যাস
"কৃতজ্ঞতা জানাই বন্ধু টাফি মুখার্জীকে"
- শ্যামল বৈদ্য, আগরতলা, ত্রিপুরা
পর্ব ১
৩১-১০-২০১৯ ইং
RiyaButu.com কর্তৃক বিভিন্ন Online প্রতিযোগিতাঃ
■ স্বরচিত গল্প লেখার প্রতিযোগিতা ...
Details..
■ প্রবন্ধ প্রতিযোগিতা ...
Details..
■ Hindi Story writing competition...
Details..
■ RiyaButu.com হল লেখক / লেখিকাদের গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ প্রকাশ করার একটি মঞ্চ। ঘরে বসেই নির্দ্বিধায় আমাদের কাছে লেখা পাঠাতে পারেন সারা-বছর ...
Details..
◕ একা, বড়ো একা
পর্ব ১
--
এই তুমি যাবে না?
দাঁড়াও।
ছোট্ট উত্তর দিল রাজেশ। ল্যাপটপে সারাক্ষণ মুখ গুঁজে কেন যে পড়ে থাকে সেটা বুঝতে পারে না অদিতি। ফেসবুকে নতুন নতুন মেয়েকে রিকোয়েস্ট পাঠাবে আর তারা রেসপন্স করলে আনন্দে ধেই ধেই করে নাচবে।
একেবারে বে-আক্কেলে পুরুষ মানুষ যাকে বলে। ধরা ছোঁয়ার বাইরে যে সব মানুষ তাদের নিয়ে এত ভাবার কী আছে? সেই কখন থেকে বাজারে যেতে তাড়া দিচ্ছে, অথচ তার কোনও গরজ নেই। দেরি করলেই তো সেই
যন্ত্রণা এসে হাজির হবে। কথাটা খোলাসা করে রাজেশকে বলাও মুশকিল। এমন জ্ঞান দেবে যে অদিতি চুপসে যেতে বাধ্য হবে। জ্ঞানেশ্বর কোথাকার! কী যে করে বসে বসে কে জানে?
এই শুনছ?
বলো?
তুমি যাবে তো যাও না হলে আমিই বেরিয়ে যাচ্ছি।
এ বার লাফিয়ে উঠল রাজেশ। অ্যাঁ! তুমি কোথায় যাবে? দাও দাও আমি যাচ্ছি।
যাচ্ছি যাচ্ছি করে লেট করছ। তার পর উঁনি চলে এলে আর যেতেই পারবে না। এমন আড্ডা বসাবে দু'জন মিলে আর কাজটা করা হবে না। প্রতিদিন এই করে
করে কাজগুলি হচ্ছে না। আসলে তুমি ইচ্ছে করেই লেট করো।
অদিতি চা'র কাপটা সেন্টার টেবিলে রেখে বাজারের থলেটা এগিয়ে দিল। রাজেশ পাজামার উপর ফতুয়া গলিয়ে আয়নায় নিজেকে একবার দেখে নিল। জুলফি জোড়ায় সাদা রঙের সাইনিং ক্রমশ বাড়ছে। অনেকেই রঙ করছে বটে কিন্তু সে
এখনও এ পথে হাঁটবে কি না তাই নিয়ে ভাবছে। অদিতির চেহারা শরীর ও চুলে বার্ধক্যের কোনও ছাপ নেই। মেয়েদের এই একটা সুবিধে ওরা সহজে বুড়ো হতে চায় না।
ওদিকে তাকালে বোঝা যায়
অদিতি এখন আর কচি খুকি নয়। অবশ্য এটা ঠিক অদিতির বয়েস রাজেশের চাইতে অনেক কম।
অদিতি বিরক্ত হয়ে বলল, কী দেখছ হাবার মতো? গোবর গণেশ কোথাকার-মাথায় একটু বুদ্ধি যদি তোমার থাকত। বাবা যে কেন এমন লোকের সঙ্গে আমাকে ঝুলিয়ে দিলেন। ভীষণ বিরক্তিকর লোক তুমি, তাড়াতাড়ি করো।
কী আমি বিরক্তিকর!
তা নয়তো কী? এমন ঝুলঝুল করে কেউ নিজের বউয়ের দিকে তাকায়?
লে হালুয়া, নিজের বউকে একটু দেখতে পারব না। তোমাকে নিয়ে একটু ভাবতে পারব না? সারাটা দিন তুমি তো পালিয়ে পালিয়ে বেড়াও। তোমাকে পাই তো সেই সকাল আর রাতে, তাও একটু দেখতে পারব না।
এখন থেকে মনে হচ্ছে সকালেও আমাদের আর দেখা হবে না।
ফাজলামি করো না, এখন চুপ করে বেরিয়ে যাও। খালি বাঁদরামো করার ফন্দি ফিকির খুঁজে বেড়ায়। ছেলেটা বড় হচ্ছে এই খেয়াল আছে মশাই? সেদিন আমাকে বলে, মা মা, গার্লফ্রেন্ড কী গো?
তুমি কী বললে?
কী বলব, বললাম মেয়ে বন্ধু।
তার পর?
আবার বলে, আমাকে একটা মেয়ে বন্ধু এনে দাও না।
এই রে!
আমি বললাম, তোমার স্কুলে যারা মেয়ে আছে তাদের বন্ধু করে নাও।
তখন কী বলল?
কত কৌতূহল তোমার ছেলের, বলে, আচ্ছা মেয়েরা আমাদের মত পোশাক পরে না কেন মা? ওরা আমাদের চাইতে আলাদা?
সর্বনাশ হয়েছে। তার মানে তোমার ছেলে একনম্বরের প্রেমিক হবে দেখবে।
একদম বাপের মতো।
মানে!
আর মানে বুঝতে হবে না, যাও যাও। উনি এলে সব ক্যাঁচাল হয়ে যাবে।
কী হবে? উনি তো বসে একটু গল্প করেন। বড়জোর এক কাপ চা আর তোমার সেই ব্রিটানিয়ার দুটো বিস্কুট-।
যা বোঝো না তা নিয়ে কথা বলবে না। ছেলেটার পড়াশোনা লাটে ওঠেছে। সে কী শিখছে বলো তার বাপের কাছ থেকে? ঘুম থেকে ওঠে কাজকম্ম ছেড়ে আড্ডা মারা।
যাই বলো অদিতি মেসোমশাইর উপর তুমি ক্রমশ বিরক্ত হচ্ছ অকারণে। আগে স্বার্থ ছিল তাই খুব পিছন ঘুরেছ, ডেকে ডেকে খাইয়েছ। সে অভ্যাস থেকেই তো তিনি আসেন আমাদের আপন ভাবেন বলে।
এত আপন ভেবে কাজ নেই। তাঁর যত আপনাপন মুখে মুখে স্বার্থের বেলায় ষোলো আনা। নিজেরটা ছাড়া কিছুই বুঝেন না।
আচ্ছা তিনি কী করে বুঝবেন বলো তোমার মনে কী পরিকল্পনা চলছে? যদি তুমি তাঁকে বলতে তা হলে হয়তো তিনি ভেবে দেখতেন।
আর কী ভাববেন? তিনি তো বলেই দিয়েছেন এই বাড়ি তিনি সেল করবেন না। যদি ছেলেরা আর না ফেরে তবে রামকৃষ্ণ আশ্রমকে দান করে দেবেন।
এতে তোমার রাগ হওয়ার কী হল? দেখলে তো লোকটার চিন্তাভাবনা কত মহান।
প্লিজ আমার ভাল্লাগছে না, এবার তুনি এসো। অনেক কাজ বাকি পড়ে আছে। কুট্টুসকে স্কুল থেকে আনতে যেতে হবে, তোমার জন্য রান্না করতে হবে- কত কাজ পড়ে আছে। যাও যাও- যা বোঝো না তা নিয়ে কথা বলো না।
ওকে বাবা যাচ্ছি।
রাজেশ দরজা খুলে বেরিয়ে গেল। স্কুটারের শব্দ পেয়ে অদিতিও নিশ্চিন্ত হল। যাক বাবা আজকে বুড়োটাকে একটা শিক্ষা দেওয়া যাবে। অদিতির খেয়ে বনের মোষ তাড়াতে দেবে না।
যদি আমার গান না গাও তবে দূরে সরে যাও। আমারা তোমার ঘানি
টানব আর তুমি তেল দেবে অন্যের নাকে, সেটা আবার হয় নাকি! যাক আজ থেকে সকালবেলাটা অন্তত নিজের মত করে কাটাতে পারবে। রাজেশ সকালে বাড়িতে
থাকলেই যত সমস্যা হয় অদিতির। বাড়িমালিক বুড়োটা আচমকা এসে হাজির হবেন। তিনি এলেন মানেই তো গোটা ঘরটা তাঁর দখলে ছলে যায়। তিনি যে খুব বিরক্ত করেন তা যদিও নয়।
কিন্তু তাঁর আসা মানে কুট্টুসের পড়া বন্ধ। এইটুকু বাচ্চা খেলার সঙ্গীর জন্য এমনিতেই মুখিয়ে থাকে। সেখানে মাঝে মাঝে 'দাদুভাই-দাদুভাই' ডাক শুনতে
পেলে তো আর কথাই নেই। পড়াশোনা ছেড়ে লাফিয়ে উঠবে। তাদের একঘেয়ে আড্ডা শুরু হলে অফিস যে যেতে হয় সে কথাটাও ভুলে যায় রাজেশ।
সত্যি কথাটা বলতে গেলে অদিতিও মাঝে মাঝে রান্না ভুলে তাদের সঙ্গে গল্পে মজে যায়। আজ
ক'দিন ধরে তার মনে হচ্ছে লোকটাকে অতিরিক্ত প্রশ্রয় দিয়ে ফেলেছে। নিজেদের প্রতিটি সকাল যেন এই বুড়োর কল্যাণে তাদের উৎসর্গ করতে হয়। বুড়োকে দেখলে মনে হয় সারাক্ষণ গল্প করা ছাড়া মানুষের কোনও কাজ থাকে না।
এত বড় বাড়ি, চারটি পরিবার ভাড়াটিয়া তাও ওনার যত ভাব রাজেশের সঙ্গে। অন্য কারও ঘরে তিনি কখনও যান না। বাড়িতে একা-একা থাকেন বলে এতদিন
অদিতিরও একটা প্রশ্রয় ছিল। কিন্তু ইদানীং ব্যাপারটা আর ভাল ঠেকছে না। তিনি যেন একটু একটু করে হেলে পড়ছেন তাদের ওপর। তার অসুখ করলে তাদেরকে দেখতে হয়।
ভাল-মন্দ কিছু ঘরে হলে অদিতি নিজের হাতে দোতালায় গিয়ে দিয়ে আসে। কিন্তু তা বলে একজন বৃদ্ধের দায়িত্ব নেওয়া তার পক্ষে সম্ভব নয়। নিজের ছেলেরা, ছেলেদের
বউরা হাত-পা ঝেড়ে খোলা ঘুরছে আর দায়িত্ব নিতে হবে কিনা তাকে? তাও আবার বিনা স্বার্থে, সেটি হচ্ছে না বাবু।
রাজেশকে এ সব বোঝানো যায় না। এই মানুষটা হল একটা হদ্দ বোকা। যখন আশা ছিল যে উনি হয়তো বাড়িটা বিক্রি করে দেবেন তখন অন্য ব্যাপার ছিল। কিন্তু
পরে বুঝতে পারা গেল বুড়ো এ পথে হাঁটবেন না। ছেলেরা অনেক চেষ্টা করেও তাদের সঙ্গে ওকে নিয়ে যেতে পারেনি। বিশেষ করে বুড়িটা মারা যাবার পর তো
ভয়ানক ভেঙে পড়েছিলেন তিনি। তখন সবাই ধরে নিয়েছিল তিনি এ বাড়িতে আর একটি রাতও টিকতে পারবেন না। কারণ মানুষটা তার স্ত্রীকে অসম্ভব ভালবাসতেন।
কিন্তু দিন গড়িয়ে রাত এল আবার রাত গড়িয়ে দিন তবুও বুড়ো আর কোথাও গেলেন না। এই বাড়ির মায়া ছাড়া তার পক্ষে অসম্ভব, বাঞ্ছারামের মতো তিনিও আগলে
রেখেছেন তার ইটের বাগান। প্রথমদিকে চার ভাড়াটিয়ার মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হত কে কার চাইতে বেশি আদর করবে একা-একা পড়ে থাকা বাড়িমালিককে। কিন্তু বুড়ো মজে রইলেন সেই রাজেশের ওপর।
তবে এটা মানতেই হবে বুড়ো জানেন অনেক। সাহিত্য-রাজনীতি-সমাজ সব কিছুর ওপর তার বিশাল দখল। প্রায় ত্রিশ বছরের অধ্যাপনা জীবনে ইতি টেনেছেন বছর
দশেক হল। এখন কোনও কিছুতেই নিজেকে বেশি জড়ান না। বাচ্চারা এখনও আসে পড়তে, কিন্তু তিনি নিয়মিত পড়াতে রাজি হন না। ঘরে একা থাকেন বলেই কিনা কে
জানে সারাদিন অনবরত কথা বলতে ভালবাসেন। একা ঘরে চুপচাপ থেকে যা জমে তা কাউকে পেলে এক সাথে উগরে দিয়ে হালকা হয়ে যান। কথা বলার জন্য সারাদিন
তিনি প্রায় ছটফট করতে থাকেন। এটা মাঝে মাঝে মানা যায়, কিন্তু প্রতিদিন নিজের ঘর-সংসার ফেলে রাজেশ আড্ডা দেবে তা অদিতি মানতে পারবে না। এখন থেকে
একটু একটু করে এড়িয়ে যেতে হবে না হয় এই সমস্যা ক্রমশ ঘাড়ে চেপে বসবে। আর দু-চার মাস চেষ্টা করে যদি দেখা যায় কোনও সুবিধে হচ্ছে না তা হলে বাড়ি ছেড়ে অন্য কোথাও ভাড়া চলে যেতে হবে।
Next Part
অন্যান্য গোয়েন্দা গল্প ও উপন্যাস:
নয়নবুধী
কান্না ভেজা ডাকবাংলোর রাত
মাণিক্য
সর্দার বাড়ির গুপ্তধন রহস্য
প্রেমিকার অন্তর্ধান রহস্য
লুকানো চিঠির রহস্য
All Bengali Stories
47
48
49
50
51
52
53
54
(55)
RiyaButu.com কর্তৃক বিভিন্ন Online প্রতিযোগিতাঃ
■ স্বরচিত গল্প লেখার প্রতিযোগিতা ...
Details..
■ প্রবন্ধ প্রতিযোগিতা ...
Details..
■ Hindi Story writing competition...
Details..
■ RiyaButu.com হল লেখক / লেখিকাদের গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ প্রকাশ করার একটি মঞ্চ। ঘরে বসেই নির্দ্বিধায় আমাদের কাছে লেখা পাঠাতে পারেন সারা-বছর ...
Details..
◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 7005246126