Home   |   About   |   Terms   |   Contact    
RiyaButu
A platform for writers

একা, বড়ো একা


বাংলা উপন্যাস


All Bengali Stories    47    48    49    50    51    52    53    54    (55)    

শ্যামল বৈদ্য, আগরতলা, ত্রিপুরা

একা, বড়ো একা
বাংলা উপন্যাস
- শ্যামল বৈদ্য, আগরতলা, ত্রিপুরা

পর্ব ৩
১৪-১১-২০১৯ ইং


আগের পর্ব গুলি: পর্ব ১    পর্ব ২   


-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ আমাদের এই ওয়েবসাইট ( RiyaButu.com )-এ প্রকাশিত গল্পগুলির মধ্যে থেকে কিছু গল্প নিয়ে এবছরই প্রকাশিত হবে আমাদের 'রিয়াবুটু'র গল্প'।
--------------------------



◕ একা, বড়ো একা
পর্ব ৩
--

পর্ব ৩

বাড়ি ফেরার পথে ক্লাব ঘরের সামনে এসে থমকে দাঁড়ালেন তিনি। এই কমবয়েসি ছেলেগুলি সারাদিন বসে বসে তাস বা ক্যারম খেলছে কেন? এদের তো ফুটবল বা ক্রিকেট খেলা উচিত। তা না করে এরা সবাই মিলে বুড়োদের খেলাকে দখল করে নিচ্ছে। বারীনবাবুর মনে হল, এখানে একটা এন্ট্রি পাওয়া গেলে মন্দ হয় না। সারাদিন আর কোথাও যাবার প্রয়োজন হবে না। তিনি চুপ করে ক্যারম-বোর্ডের পাশে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে খেলা দেখতে লাগলেন। মাঝে মাঝে ভাল স্ট্রোক দেখে হাততালি দিয়ে উৎসাহ দিলেন। কিন্তু ওই ছেলেরা তাঁর উপস্থিতিকে উপেক্ষা করছে, তারা তাঁর উৎসাহে তেমন সাড়া দিচ্ছে না বরং অবাক হয়ে বুড়োটাকে দেখছে। তাদের কাছে হয়তো কিছুটা বেমানানও লাগছে। শিং ভেঙে এ ভাবে বাছুর হয়ে যাওয়া মানুষটাকে তারা ক্রমাগত উপেক্ষা করছে। বুড়োটা যত তাড়াতাড়ি বিদেয় হয় ততই মঙ্গল। ওই ছেলেরা যে খিস্তিগুলো প্রকাশ্যে সারাদিন দিয়ে থাকে তা এখন আর দিতে পারছে না। খেলতে খেলতে পাড়ার মেয়েদের দেখলে ওরা যেমন উল্লাস করে নিজেদের মধ্যে কথা বলে তাও করতে পারছে না।

তারা কেউ বুড়ো লোকটার কাছে একবার জানতেও চাইল না তিনি খেলতে চান কি না? তাদের এই সাম্রাজ্যে তাদেরই একচেটিয়া অধিকার এবং প্রভুত্ব তা তারা বারবার আচরণে মনে করিয়ে দিচ্ছিল। অথচ আজ থেকে চল্লিশ-পঁয়তাল্লিশ বছর আগে এই ক্লাব বারীনবাবুদের দখলে ছিল। তারা যদি এই জমিটা কোনওদিন না ছাড়তেন তা হলে এই ছেলেগুলি এই ক্লাবঘর হাতে পেত না। এখনও যদি তারা পুরানো প্রজন্মের লোকেরা সকাল বিকাল এই ঘরে বসে আড্ডা মারেন, তাস বা ক্যারম খেলতে থাকেন ওরা এমনিতেই পালিয়ে যাবে। আসলে এই ছেলেগুলি তাকে চিনতে পারেনি। অবশ্য চেনার কথাও নয়, তিনিও তো চিনতে পারেননি ওদের কাউকেই। দীর্ঘদিন বাড়ির বাইরে বাইরে কাজ করার ফলে তৈরি হয়েছে প্রাজন্মিক ব্যবধান। সেটা ঘুচাতে গেলে প্রয়োজন আবার তাদের সঙ্গে মেশার। কিন্তু এটাও যে অসম্ভব। তিনি চাইলেও ওরা তো এমনি এমনি জায়গা তাঁকে দিচ্ছে না। তাদের ভাবনার মধ্যে বুড়োটা মানে বারীন দত্ত একটা উটকো ঝামেলা। তবুও তিনি দমলেন না, ওরা আজ গুরুত্ব দিক বা না দিক, কালও দিক বা না দিক একদিন ওঁকে তারা কাছে ডেকে নেবে। সেদিন থেকে সময় কাটানোর জন্য তাঁকে কারও বাড়ির দরজায় গিয়ে দাঁড়াতে হবে না। বেহায়ার মতো নিজেকে অন্যের গ্রহণযোগ্য করে তোলার চেষ্টা করতে হবে না। ব্যবধান যেহেতু দু'তিন প্রজন্মের তা কাটানো একটু সময়সাধ্য হবে। তবে ক্লাবঘরে স্থায়ী ভাবে সময় কাটানোর একটা জায়গা পেয়ে গেলে মন্দ হত না। এই যে ভিখিরির মতো প্রতিদিন এ-ওর বাড়িতে গিয়ে উঁকি মেরে দেখা, এটা সত্যি লজ্জার। এ ছাড়া তিনিই বা করবেন কী? এখন জীবনে শুধু অনন্ত অবসর। মানুষ অবসর পেতে লড়াই করে, অথচ তিনি বর্ণময় দায়িত্বশীল জীবন কাটিয়েও আজ অপাঙক্তেয়। যত দিন দাড়ি না পড়বে ততদিন বয়ে বেড়াতে হবে এই জীবনকে।

সন্ধ্যার পর ঘরের ভেতর সময়টা যেন থমকে দাঁড়িয়ে থাকে। কী করবেন বারীনবাবু তা বুঝে উঠতে পারেন না। স্ত্রীকে হারানোর পর থেকে প্রতিদিন মর্মে মর্মে অনুভব করছেন আজ তিনি কত অসহায়। সামনে বড় করে নলীনির একখানা তৈলচিত্র বাঁধিয়ে রেখেছেন। সন্ধ্যা হলে এই চিত্রখানা একদম জীবন্ত হয়ে ওঠে। বারীনবাবু একা-একাই বলে উঠলেন, কত সুন্দরী ছিল নলীনি। স্ত্রী'র সঙ্গে কাটানো প্রতিটি মুহূর্তে তাঁর কাছে সোনার ফ্রেমে বাঁধানো আছে। প্রথমদিন নলীনকে বিয়ে করে যখন ঘরে নিয়ে এসেছিলেন, সেদিন থেকে ওর চলে যাওয়া অবধি সব কথা তাঁর মনে আছে। মনে হয়, এই তো কয়েকদিন আগের কথা। আসলে একটা জীবন যেন যথেষ্ট নয় জীবনকে উপভোগ করার জন্য। সুখ দুঃখ মিলিয়ে অন্তত আরও একটা জীবনের সময়কাল দরকার একে উপভোগ করার জন্য। কিছুতেই আশ মেটে না মানুষের। এই বয়সে এটা তাঁর একটা রোজকার কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, বসে বসে নিজের হারানো জীবনের কথা ভাবা। ভাবছেন যদি তার স্ত্রী জীবিত থাকতেন তাঁকে নিয়ে আবার সুখের সময়ে ফিরে যেতে পারতেন। না তা আর হয় না, সময় বড়ো নিষ্ঠুর। সে তার ছাপ জীবনের ওপর নির্ধারিত নিয়মে ফেলে চলে গেছে। আজ তাঁর করুণ অবস্থা দেখে ওপার থেকে নলীনি নিশ্চয় মুখ টিপে টিপে হাসছে। বেঁচে থাকতে তো বুঝলে না মশাই স্ত্রী কেমন ধন! কোনও ব্যাটা এটা বুঝতে পারে না। বউ মরে গেলে ঘরে-বাইরে যখন একঘরে হয় তখন সবাই বোঝে। দত্তবাবু স্ত্রী'র সামনে বসে বসে নানান পুরানো কথা ভাবতে লাগলেন। এই যে জীবন তিনি বয়ে নিয়ে যাচ্ছেন তা তো তাঁর ইচ্ছেতে থামবে না। তার জন্য ঈশ্বরের কৃপা চাই। সেই কৃপাদৃষ্টি না দিলে নলীনির সঙ্গে পুনর্মিলনের আর সম্ভাবনা নেই। তাই একা-একা বিড়বিড় করেন, তুমি আমাকে তোমার কাছে তুলে নিয়ে যাও নলীনি। তোমাকে ছাড়া এই জীবন আর এগোয় না। তুমিও ঈশ্বরকে বলো আমাকে যেন আজ রাতেই তোমার কাছে পাঠিয়ে দেন।

মাঝে মাঝে তিনি হাত জোড় করে স্ত্রী'র ছবির দিকে তাকিয়ে প্রণামও করেন। নলীনি এখন ঈশ্বর হয়ে গেছেন। তার স্ত্রী বেঁচে থাকতে তাঁকে কত ভক্তি শ্রদ্ধা করতেন। বেছে বেছে প্রতিটি তিথিতে গলায় শাড়ির আঁচল জড়িয়ে পায়ে হাত দিয়ে গড় হয়ে প্রণাম করতেন। অথচ আজ তাঁর মনে হয় তিনি নলীনির পা জড়িয়ে পড়ে থাকন। জীবদ্দশায় যা বুঝেননি আজ তা তিনি অনুভব করতে পারছেন যে ওই রমণীর চাইতে বড় ঈশ্বর তাঁর জীবনে আর কেউ আসেনি। প্রতিদিন প্রতিরাতে তিনি এই ছবিতে ফুল মালা ধূপধুনো দেখান, পুজো দেন। এ সব করতে তাঁর এখন বিন্দুমাত্র সংকোচ হয় না। একদিকে অনন্ত সময় যেমন ছোট হয়ে আসে অন্যদিকে পরলোকগতা স্ত্রী'র সঙ্গেও কিছুটা সময় অতিবাহিত হয়।

রাত দীর্ঘ হলে আচমকা টেলিফোনটা বেজে উঠল। কানে নিতেই ওপাশ বড় বউমা'র গলা ভেসে উঠল। বাবা, কী করেছেন এখন? খেয়েছেন?

নাগো। তবে খাব এখনই।

আপনার শরীর ভাল আছে তো বাবা?

আছে ভাল। তোমারা ভাল তো মা?

হ্যাঁ বাবা। আপনার ছেলে আগের চাকরিটা ছেড়ে দিয়ে নতুন কোম্পানিতে জয়েন করেছে। এতে তার লাভ হয়েছে। বলতে পারেন প্রমোশন হয়েছে।

তাই নাকি! খুব ভাল। এখন তা হলে কী পোস্ট গেল রাজু?

এখন তো এমডি হয়ে গেছে।

বাহ খুব ভাল। আর দাদুভাই কেমন আছে?

তার কথা বলে লাভ নেই বাবা। নতুন নতুন ভিডিও গেম আর কার্টুন ছাড়া কোনও কিছুতেই মন বসে না। পড়াশোনা তো এক্কেবারে গোল্লায়। আপনার ছেলে বলে, আপনি পাশে থাকলে ওদের মতো সেও একটু মানুষ হতে পারত।

একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন বারীনবাবু। ছেলেদের মানুষ করার কথা বলতেই তাঁর চোখের সামনে রাজীব ও রতনকে কী করে বড় করেছেন সে সব কথা ভেসে ওঠে। সামান্য কয়েকটা টাকা তখন ছিল বেতন। সংসারে নিত্য টানাটানি লেগে থাকত। কিন্তু তাঁর স্ত্রী তাঁকে কিছুতেই হারতে দিতেন না। সামান্য টাকায় সংসার চালিয়েও কেমন হাসি মুখে সংসার করা যায় তা নলীনিই তাঁকে শিখিয়েছেন। স্বামী-স্ত্রী মিলে ওই ছেলে দু'টির কোনও অপূরণ রাখেননি। ছেলেরাও হয়েছে দু'জন বাঘের বাচ্চা। ছেলেদের একজন ম্যানেজিং ডিরেক্টর হয়েছে তো আরেকজন রিসার্চ করছে ভাবা এটোমিক রিসার্চ সেন্টার। মাসের শেষে দু'জনেই বাবার কাছে বেশ কিছু টাকাও পাঠায়। নিষেধ করলেও ওরা শুনতে চায় না। কিন্তু ওদের তিনি কী করে বোঝাবেন টাকা তাঁর চাই না। তাঁর চাই অন্তত একজন মানুষ যার সঙ্গে বাকি জীবনটা হেসে খেলে কেটে যাবে।

Next Part

আগের পর্ব গুলি: পর্ব ১    পর্ব ২   


অন্যান্য গোয়েন্দা গল্প ও উপন্যাস:
নয়নবুধী   
কান্না ভেজা ডাকবাংলোর রাত    
মাণিক্য   
সর্দার বাড়ির গুপ্তধন রহস্য   
প্রেমিকার অন্তর্ধান রহস্য   
লুকানো চিঠির রহস্য   



All Bengali Stories    47    48    49    50    51    52    53    54    (55)    


## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers. The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation. Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##


◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717