Home   |   About   |   Terms   |   Contact    
RiyaButu
A platform for writers

একা, বড়ো একা


বাংলা উপন্যাস


All Bengali Stories    47    48    49    50    51    52    53    54    (55)    

শ্যামল বৈদ্য, আগরতলা, ত্রিপুরা

একা, বড়ো একা
বাংলা উপন্যাস
- শ্যামল বৈদ্য, আগরতলা, ত্রিপুরা

পর্ব ৪
২১-১১-২০১৯ ইং


আগের পর্ব গুলি: পর্ব ১    পর্ব ২    পর্ব ৩   


-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ আমাদের এই ওয়েবসাইট ( RiyaButu.com )-এ প্রকাশিত গল্পগুলির মধ্যে থেকে কিছু গল্প নিয়ে এবছরই প্রকাশিত হবে আমাদের 'রিয়াবুটু'র গল্প'।
--------------------------



◕ একা, বড়ো একা
পর্ব ৪
--

বড় বউমা বললেন, কী হল বাবা, আপনি কথা বলছেন না কেন? মন খারাপ নাকি?

নাগো না, মন খারাপ হবার তো কারণ নেই। এই একা-একা সময় কাটে না। মানুষের দোরে দোরে আর কত যাই বলো, সবাই আমাকে নিয়ে বিরক্ত। রিটায়ার লোক দেখলে অনেক মানুষ দরজাই খুলতে চায় না।

তা আপনাকে কে বলেছে অন্যের দরজায় কড়া নাড়তে! নিজের নাতি, ছেলে, ছেলের বউ সবই তো আছে। আপনি ব্যাঙ্গালুরু চলে আসুন দেখি। আমি আপনার ছেলেকে বলছি টিকিট কনফার্ম করে আপনার কাছে পাঠিয়ে দেবে। এ বার আর কোনও কথা শুনব না।

ঠিক আছে এত ব্যস্ত হয়ো না বউমা। রাজুকে বললে সে আবার পাগলামি শুরু করবে। দেখি শরীর ভাল থাকলে আসব।

বাবা কাজের মেয়েটা আছে তো? সে রান্নাবান্না করছে ঠিক মতো?

হ্যাঁ সে আসে। মাঝে মাঝে আবার আসেও না।

আচ্ছা তা হলে আজ রাখছি, আপনার ছেলে সম্ভবত এসে গেছে।

বারীনবাবু ঘড়ির দিকে তাকালেন। এত রাত করে ফিরে কেন রাজু? এমডি হলে এত রাত করে বাড়ি ফিরতে হয় নাকি? ঘড়ি দেখে তার ভুল ভাঙল, আসলে রাত তো বেশি হয়নি। মাত্র আটটা বাজে, কাজের মেয়েটাও এখনও আসেনি। যদি সত্যি না আসে তা হলেও অসুবিধে নেই। চিড়া ভিজিয়ে সামান্য দুধ কলা মেখে রাতটা কাটিয়ে দেওয়া যাবে। আটটা বাজছে দেখে তার মনে বিরক্তি যেন কিছুটা বেড়ে গেল। যদি এখন রাত এগারোটা হত তা হলে তাঁর জীবনের আরও তিন ঘণ্টা সময় এগিয়ে যেত। তা ছাড়া রাজীবের এত রাতে ফেরা নিয়ে তিনি অন্তত দু-চারদিন দুর্ভাবনায় থাকতে পারতেন। এতে তার ভাল সময় কেটে যেত।

তিনি গালে হাত দিয়ে আবার ভাবনায় ডুবে গেলেন। অন্যরা টিভি দেখে সারাদিন, সিনেমা হলে বা বাজারে গিয়েও আড্ডা মেরে সময় কাটায়। কিন্তু তিনি এ সব থেকে সারাজীবন দূরে থেকে গেলেন। কলেজে ক্লাশ নিয়ে বাড়িতে ফিরতেন আর বাড়ি থেকে বের হতেন না। সারাদিন ঘরে বসে বই পড়া আর স্ত্রী-পুত্র-সংসার ছাড়া কিছুই ভালবাসতেন না। নিজেকে এই সমাজ থেকে, বহির্জগৎ থেকে ক্রমাগত দূরে সরিয়ে ফেলেছিলেন। এই যে খোলসের ভিতর নিজেকে ঢুকিয়ে রাখা তাতে বেশ শান্তি অনুভব করতেন। বাইরের কোনও বদ অভ্যাস বা সঙ্গ তাকে জড়াতে পারেনি কোনওদিন। কারণ, কলেজের প্রায় প্রতিটি শিক্ষকের নামে কত যে কথা সত্যি-মিথ্যের রঙিন ফানুস হয়ে আকাশে বাতাসে ঘুরে বেড়াত। চারদিকে শিক্ষক সমাজ নিয়ে এত গুঞ্জন শুনে শুনে শিউরে উঠতেন তিনি। তার নামেও যদি এমন কিছু কথা বাতাসে ছড়িয়ে যায় তা হলে নলীনি কী মনে করবেন? সন্তান দু'টিও বড় হচ্ছে, তারাও এখন জীবনের মানে বুঝতে পারছে। তা ছাড়া যে সব কথা বাতাসে ঘুরে বেড়ায় তার সবটা গুজবও নয়। তখন তিনি নিজেকে সরিয়ে ফেললেন আরও দূরে। এমনকী অন্য শিক্ষকরা যখন প্রাইভেট পড়িয়ে দু'পয়সা বাড়তি রোজগার করত তখনও তিনি প্রাইভেট পড়াতেন না। বাড়িতে মেয়েছেলেরা এলে নলীনি আবার কী ভাববে সেই ভয়ে কুঁকড়ে উঠতেন।

কলিংবেল বাজতেই উঠে দাঁড়ালেন বারীনবাবু। আজ বেশ রাত করে এল মেয়েটা। চারদিকের কাজ শেষ করে এখানে আসে মিনতি। এসেই সে শুরু করে তার সব কর্মদক্ষতা। চোখের নিমেষে রান্নাবান্না শেষ করে আবার ফিরেও যায়। কী যে রান্না করে সেই জানে! সে খাবার মতো হোক বা না হোক তাতে তার কিছু আসে যায় না। সে তার নির্ধারিত সময়ের আগে কাজ শেষ করে চলে যায়। আজকাল মেয়েটার আচরণ কেমন যেন ঠেকে তাঁর কাছে। কেমন একটা গায়ে পড়া স্বভাব হয়েছে মেয়েটার। আগে তো এমন ছিল না। গত কিছুদিন ধরে মিনতি খুব জ্বালাতন করছে বারীনবাবুকে। বয়েস হয়েছে তাঁর, তাই বলে জীবন যৌবন সব হারিয়ে গেছে তা তো নয়। এই মেয়ে কেন এমন আচরণ করে কে জানে? দরজা খুলতেই প্রায় ছুটে ঘরে এসে ঢুকল মিনতি। ওর ভাব দেখে মনে হচ্ছে কেউ ওকে পেছন থেকে তাড়া করছে।

আজ এত দেরি করলি কেন?

তাতে তোমার কী?

আমি ন'টার সময় খাই তুই জানিস না?

আমি তো ন'টার সময়ই এসেছি।

তার মানে তুই এলেই আমার খাওয়া হয়ে যায়! রান্না করতে সময় লাগবে না?

হি হি হি-করে হেসে উঠল মেয়েটা। তোমার আবার রান্না! খাও তো সেই সেদ্ধ ভাত --দশ মিনিট দাঁড়াও রেডি হয়ে যাবে।

দত্তবাবু আর কথা বাড়ালেন না। এই মেয়ের মুখে কোনও আগল নেই, যখন যা আসে তাই বলে দেবে। কখন কী বলে বসবে আর লজ্জায় তাঁর মাথা কাটা যাবে। তিনি বিছানায় ফিরে এসে টেবিলল্যাম্পটা জ্বাললেন। উপনিষদের পাতা উলটে উলটে দেখতে লাগলেন। এমন সময় আবার ফিরে এল মিনতি। এসেই বিছানার পাশে মাটিতে পা ছড়িয়ে বসল।

ইস আজ বড্ড গরম। ফ্যানটা ছেড়ে বসতে পারো না।

বারীনবাবু দেখলেন সত্যিই তিনি সুইচ-অন করতে ভুলে গেছেন। আজকাল কিছুই তাঁর খেয়াল থাকে না। অথচ তাঁরও বেশ গরম লাগছে। তিনি ভাবতে লাগলেন, তাঁর অনুভূতিগুলি কি ধীরে ধীরে মরে যাচ্ছে? আরও কিছুদিন পর এই সুখ বা দুঃখও হয়তো তিনি অনুভব করতে পারবেন না। এই ভাবে একটা দিন হয়তো আসবে তিনি পুরো অচল হয়ে পড়বেন। তার পর একদিন কেউ আর তাঁকে দেখার মতো থাকবে না। তিনি নিঃশব্দে বিছানায় তাঁর শেষ সময়টা কাটাবেন। জীবনের প্রতি তাঁর মোহ ক্রমশ এত কমে যাচ্ছে কেন তিনি বুঝতে পারছেন না। বাঁচতে কার না ইচ্ছে হয়, তিনি যে ঠিক এখনই মরে যেতে চান তাও নয়। তবু তাঁর পারিপার্শ্বিকতা, তাঁর অবস্থান ক্রমশ তাঁকে মৃত্যুর ট্র্যাক ধরে ছুটতে অনুপ্রাণিত করছে।

মিনতি উঠে গিয়ে টিভি ছেড়ে দিয়ে আবার বসে পড়ল। মিনতির স্বাভাবিক যে চাহিদা আছে সেটাও তার কাছে শেখার মতো। এই ফ্যান ছেড়ে দেওয়া, টিভির সামনে বসা এ সব একাকীত্বের বড় সঙ্গী। অথচ ঘরে এত বড় টিভি থাকলেও টিভি ছেড়ে দেওয়ার কথা তাঁর মনে থাকে না। সারাদিন ঘুরে ঘুরে বা পড়ে পড়ে সময় না কাটিয়ে টিভি দেখা যায়। সুন্দর সুন্দর মানুষ ও তাদের নানারকমের কাহিনি নির্ঘাৎ তাঁকে কিছুটা আনন্দ দেবে। বুড়োরা মর্নিং-ওয়াকে গেলে নানান সিরিয়াল, মারপিট বা অন্য প্রোগ্রামের কথা বলে, শুনতে তাঁরও ভাল লাগে। কেউ কেউ তো এমন সব ছবি লুকিয়ে লুকিয়ে দেখার কথা বলে শুনতে লজ্জায় মুখ রাঙা হয়ে যায়। তাও শুনতে হয়, কারণ, বৃদ্ধ হলে যৌবনকে উপেক্ষা করার যে প্রবণতা তাঁর মধ্যে রয়েছে, তা যে মস্ত একটা ভুল, এই বুড়োদের সঙ্গে না চললে বুঝতে পারতেন না। এত কিছু বুঝেও বাড়িতে এসে কোনও প্রোগ্রাম দেখার কথা তিনি বেমালুম ভুলে যান। তা হলে কি তিনি একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ নন? তার সব অনুভূতি কি হারিয়ে গেছে?

তুমি তো সেদ্ধ খাবে দাদু? আমার ওসব সেদ্ধ-ফেদ্দ খেয়ে অভ্যেস নেই। আমি কী খাব? আমার জন্য কী এনেছ বলো?

তুই খাবি মানে?

ওমা! আমি না খেয়ে থাকব নাকি বুড়ো?

থাকবি মানে! তুই খাবি খা, কিন্তু এখানে থাকবি কেন তুই?

তুমি পুরুষ মানুষ বুঝবে নাগো। মেয়ে মানুষ সুন্দর হলে হাজার রকমের জ্বালা। আমি এখন থেকে এখানেই থাকব। রাতে থেকে সকালে আবার চলে যাব।

চমকে উঠলেন বারীনবাবু!

Next Part

আগের পর্ব গুলি: পর্ব ১    পর্ব ২    পর্ব ৩   


অন্যান্য গোয়েন্দা গল্প ও উপন্যাস:
নয়নবুধী   
কান্না ভেজা ডাকবাংলোর রাত    
মাণিক্য   
সর্দার বাড়ির গুপ্তধন রহস্য   
প্রেমিকার অন্তর্ধান রহস্য   
লুকানো চিঠির রহস্য   



All Bengali Stories    47    48    49    50    51    52    53    54    (55)    


## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers. The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation. Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##


◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717