Home   |   About   |   Terms   |   Contact    
RiyaButu
A platform for writers

একা, বড়ো একা


বাংলা উপন্যাস


All Bengali Stories    47    48    49    50    51    52    53    54    (55)    

শ্যামল বৈদ্য, আগরতলা, ত্রিপুরা

একা, বড়ো একা
বাংলা উপন্যাস
- শ্যামল বৈদ্য, আগরতলা, ত্রিপুরা

পর্ব ৫
২৮-১১-২০১৯ ইং


আগের পর্ব গুলি: পর্ব ১    পর্ব ২    পর্ব ৩    পর্ব ৪   


-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ আমাদের এই ওয়েবসাইট ( RiyaButu.com )-এ প্রকাশিত গল্পগুলির মধ্যে থেকে কিছু গল্প নিয়ে এবছরই প্রকাশিত হবে আমাদের 'রিয়াবুটু'র গল্প'।
--------------------------



◕ একা, বড়ো একা
পর্ব ৫
--

চমকে উঠলেন বারীনবাবু! এই মেয়ে এ সব বলছেটা কী? এই মিনতিও তার সৌন্দর্য সম্বন্ধে সচেতন! তা থাকা অবশ্য মন্দ নয়। দেখতে শুনতে সত্যি মিনতি তত খারাপ নয়, চলনসই। বয়সও মেয়েটার খুব বেশি নয়। তাও এটা ভাবতে অবাক লাগে, এই মেয়েও নিজেকে বাঁচিয়ে এই সমাজে চলতে হয়। তবে এটা ঠিক যে মিনতি সম্বন্ধে বাজারে একটা গুঞ্জন আছে। তাঁর বাড়িতে দীর্ঘদিন কাজ করে বলে একটা বিশ্বাস জন্মে গেছে ওর ওপর নইলে ওকে এতদিনে তাড়িয়ে দিতেন।

রঞ্জনের মা, তাপসদা সবাই বারবার ডেকে বলেছেন, বারীনদা, ওই যে মেয়েটা আপনার কাজ করে সে কিন্তু তেমন ভাল নয়। ওর অতীত রেকর্ড ভীষণ খারাপ। আপনি একা থাকেন একটু সাবধানে থাকবেন।

কিন্তু বারীনবাবু ওদের কথায় সাবধান হওয়ার মতো কিছু দেখলেন না। এতদিন ধরে কাজ করে মেয়েটা কিন্তু তার চোখে তো তেমন খারাপ কিছু পড়েনি। এই বয়েসে মেয়েরা একটু আধটু চঞ্চল তো হবেই। তার ওপর বিয়ে করে ওর বরটাও পালিয়ে গেছে অনেকদিন। মেয়েটা নিজেকে ঠিক রাখবেই বা কী করে? এখন তাকে ছেড়ে দিলে একটু সময় কথা বলার মতো শেষ সম্বলটাও তিনি হারাবেন। কিন্তু আজ তার কথা শুনে তিনি অবাক না হয়ে পারলেন না।

এখানে তুই একা-একা থাকবি কী করে?

আমি একা থাকছি কোথায়? তুমি তো আছো।

তোর বাড়িতে কী হয়েছে? বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে নাকি?

ওমা তুমি দেখছি সব ভুলে যাও গো দাদু। ওটা তো আমার দিদির বাড়ি, পাতানো দিদি, প্রতি মাসে দু'হাজার টাকা দিয়ে থাকি। দিদির অবশ্য কোনও আপত্তি নেই। কারণ দিদির কাজকর্ম তো আমাকেই করতে হয়। তার ওপর মাসের শেষে দুই হাজার টাকাও দিদি পায়। তাও চলছিল, কিন্তু এখন হয়েছে আরেক সমস্যা।

কী সমস্যা?

না এটা বলা যাবে না।

কথাটা বলে আরক্ত মুখ হাঁটুতে লুকিয়ে লজ্জায় ঠোঁট কামড়ে হাসে মিনতি। এটা তার কাছে লজ্জা না আনন্দের সেটা বুঝতে পারলেন না বারীনবাবু। আড়ালে নিজের বিয়ের কথা শুনে মেয়েরা যেমন লজ্জা পায় সেরকম প্রতিক্রিয়া দিল মিনতি।

না বললে হবে কেন? আমার ঘরে থাকবি আমাকে আগে না বললে কী করে হবে? আমার তো তোর কাকুদের জানাতে হবে। আমার ছেলেরা পারমিশন না দিলে তোর মতো একটা কমবয়েসি মেয়েকে জায়গা দিই কী করে? কথন কোন ঝামেলায় জাড়াবি শেষে আমাকে। না না ওসব হবে না, আমার এখানে জায়গা নেই।

মিনতি একটু সময় চিন্তা করল তার পর ঠোঁট উলটে বলল, শোনো না, ওই যে ক্লাবের জগুদা ভীষণ খারাপ মানুষ। রাতে বাড়ি ফিরতে গেলেই জ্বালাতন করে।

অবাক হয়ে তাকালেন বারীনবাবু মিনতির দিকে। তার আচরণে মনে হচ্ছে বিরক্ত হওয়ার চাইতে সে খুশিই হচ্ছে। যতখানি রেগে ওঠার কথা ততটা রাগ তার চেহারায় নেই। টিভির দিকে তাকিয়ে সে বরং হাসছে।

তিনি তাও প্রশ্ন করেন, জ্বালাতন করে তোকে- মানে?

ওমা তুমি কী গো! প্রতিদিন হাত টানাটানি করে, গো-ডাউনের পিছনে নিয়ে যেতে চায়। সে কারণেই সন্ধ্যার পর আমি আর ওপথে যাই না। মানুষের ঘরে কাজ করি রাত-বিরেতে ফিরতে হয়। সে রোজ আমাকে ধরার জন্য ঘাপটি মেরে বসে থাকে। আমি কি মুরগি নাকি?

সেকী! তার পর?

তার পর আবার কী? কোনওমতে পালিয়ে আসতে পেরেছি-হ্যাঁ পালিয়েছি।

তার কথা দত্তবাবুকে ভরসা দিতে পারল না। তিনি বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, তা তুই একটা চিৎকার করলেও তো পারতিস। লোকজন জমিয়ে দিতি, দেখতি ঠিক হয়ে যেত। এটা কি মগের মুল্লুক না কি?

চিৎকার করব! কী যে বলো দাদু, ওই জজ্ঞুদার গায়ে হাতির মতো জোর। তার ওপর মাল টেনে পাগলা হয়ে থাকে। গলা চিপে ধরে বলে, একটা কথা যদি বলিস মিনতি তা হলে তোকে জানে শেষ করে দেব। আমি অবশ্য পালিয়ে গিয়ে দিদিকে সব বলেছি।

তোর বরকে বলিসনি?

বর! ধুর বুড়ো! তুমিও যে কী পাগল না! আমার বর তো আমার বাচ্চা হয় না বলে আবার বিয়ে করে পালিয়েছে। শালা আর আমার কাছে আসবে কেন?

তা তোর দিদি কী বলল?

দিদি বলল, বুড়োর কাজটা ছেড়ে দে। এত রাত করে ফিরিস বলেই তো মাতালটা জ্বালায় তোকে। সোমত্ত মেয়ে একা-একা রাতে ঘুরলে মাতালরা তাকিয়ে থাকবে-- ওরাও সুযোগ খুঁজবে। দিদি বললেই কি ছেড়ে দিতে পারি? তা কী করে ছেড়ে দিই বলো? তুমি বুড়োমানুষ একা থাকো। তা ছাড়া বিপদে পাড়লে আমাকে সাহায্যও করো, তোমাকে ছেড়ে দেওয়া ঠিক হবে বলো? তাই ভাবলাম কাজ শেষ করে তোমার কাছেই রাতে থেকে যাব।

কিন্তু আমার সঙ্গে পরামর্শ না করে এখানে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলি?

কেন? তুমি তো আমাকে অনেকদিনই বলেছ, আজ শরীরটা ভাল নেই রে মিনতি রাতটা এখানে থেকে যাবি? রাত জেগে জেগে তোমার মাথাও টিপে দিয়েছি আমি।

তা বলেছি বটে। শরীর খারাপ হলে কেউ পাশে না থাকলে ভরসা থাকে?

ও বিপদে পড়লে মিনতি আর মিনতির বিপদে তুমি কেউ না? ঠিক আছে তা হলে কাল থেকে আমি আর আসব না। শালা বুড়ো, মাথায় টাক পড়ে গেছে তাও শয়তানি গেল না তোমার। আমি চললাম আর আসব না।

বারীনবাবু বাধা দিয়ে বললেন, এই না না, কাজ ছাড়বি কেন? ভাবছি কেউ যদি আবার কিছু বলে, আমি তো একা-একা থাকি।

খিক খিক করে হাসতে উথলে উঠে মিনতি। তুমি একা থাকলেই কী গো? তুমি তো বুড়োমানুষ, তুমি কী আর জগুদার মতো আমার হাত ধরে টানবে নাকি? আর যদি করো তো করবে--এ আর এমন কী।

বারীনবাবু ধমক দিয়ে মিনতিকে কিচেনে পাঠিয়ে দিলেন। তবে মেয়েটার এ সব বেসামাল কথাবার্তা শুনতে শুনতে তিনিও কেমন রোমাঞ্চিত হতে লাগলেন। কখন এই মেয়ের রহস্য গল্পের অভ্যন্তরে নিজেকে নিয়ে ঢুকে গেছেন তিনি খেয়ালই করেননি। এই মেয়েটা যেন তাঁর সামনে একটা রহস্যময় ফাঁদ। ওখানে ধরা দিলে বিপদ হতে পারে জেনেও ধরা দিতেই যেন মন চায়। স্বামী পরিত্যক্তা একটি মেয়ে তার জীবনের না পাওয়া জায়গাগুলি ভরাট করার জন্য সত্যি-মিথ্যে নানান গল্প করে আনন্দ পায়। হোক না সত্যি বা মিথ্যে তাতে দত্তবাবুর তো কোনও ক্ষতি নেই। তবে এটা ঠিক যে যখনই মিনতি ঘরে আসে তখন থেকে তাঁর ডিপ্রেশনে ভুগতে হয় না। দারুণ ভাবে সময়টা কেটে যায়। এমনকী কী করে যে রাত হয়, তাঁর ঘুমও চলে আসে খেয়ালও থাকে না। যেদিন মিনতি কাজে আসে না তখন তাঁর সময় কাটে না। তাই কোনও কোনওদিন রাতের দিকে এই সময় রাজেশের সঙ্গে বসে হয়তো দাবা খেলেন। তাই মিনতির সমস্ত দুরন্তপনা, বাতুলতা সত্ত্বেও তিনি যেন ওকে কাছেই পেতে চান। এই সামান্য মেয়েটাও যে এত প্রাণবন্ত হতে পারে, সব কিছু ভুলিয়ে তাঁকে সুস্থ রাখতে পারে তা তিনি উপলব্ধি করতে পারেন।

টিভিতে কমেডি চলেছে। এই অনুষ্ঠানটা বারীনবাবু খুব একটা দেখেন না। মানুষকে হাসানোর জন্য এইরকম ভাঁড়ামি করতে হবে কেন তিনি বুঝতে পারেন না। আজ মিনতি ফিরে ফিরে এসে এই প্রোগ্রামটা দেখছে আর হেসে হেসে মাটিতে গড়িয়ে পড়ছে দেখে তিনিও দেখতে লাগলেন-দেখতে দেখতে তিনিও হাসলেন। আসলে প্রোগ্রাম ভাল কী খারাপ এটা বোধ হয় বিবেচ্য কোনও বিষয়ই নয়, যদি মানুষের মন ভাল থাকে পৃথিবীর সব কিছু ভাল লাগে, উপভোগ্য মনে হয়।

মিনতি ডাকল, ও দাদু খেতে এসো।

অনেকদিন পর কেউ তাকে খেতে ডাকল শুনে তার মনটা খুশিতে ভরে উঠল। অনেকদিন কারও সঙ্গে গল্প করে তিনি খেতে পারেননি। আজ মিনতি থেকে গেল বলে একসঙ্গে খাবেন। তিনি দেরি না করে সোজা টেবিলে গিয়ে বসলেন। মিনতি থালা সাজিয়ে সামনে রাখল। জল এগিয়ে দিয়ে সামনে এসে বসল কর্ত্রীর মতো।

তিনি বললেন, তুইও নিয়ে নে, আজ একসঙ্গে দ'জন বসে খাই।

ভুরু-কুচকে তাকাল মিনতি। কী ব্যাপার আজ আমার অনেক খাতির করছ দেখি? আমি তোমার সঙ্গে টেবিলে বসে খাব!

হ্যাঁ।

না না, আমি নিচে মেঝেতে বসে খাব।

কিছু হবে না,-নে তো দেখি একসঙ্গে বসে খাই।

এ বার মিনতি তার খাবার থালা নিয়ে বারীনবাবুর পাশে এসে বসল। সে চোখ পিটপিট করে বারীনবাবুর দিকে তাকিয়ে হাসতে লাগল।

কী রে কিছু বলবি?

আজ তুমি আমাকে খুব খাতির যত্ন করছ, তাই খুব ভাল লাগছে। আসলে কেউ তো আদর করে কখনও কথা বলে না। সব্বাই সারাদিন ধুরছাই করে। বিয়ের পর ক'টা দিন বরটা আদর করেছিল। প্রতিদিন লাল লাল চুড়ি, আলতা, কুমকুম এনে দিত। যেদিন সে চলে গেল তার পর থেকে কেউ শালা আর কাছে ডাকল না। অনেকদিন পর তুমি আবার কাছে ডেকে খাওয়ালে গো। আমার আজ খুব ভাল লাগছে দাদু। যদি তুমি জওয়ান হতে তা হলে তোমাকে জোর করে ইয়ে করে ফেলতাম। তোমার চেহারাটাও কত্ত সুন্দর! তুমি সত্যি খুব ভাল, একদম হেব্বি মাল মাইরি।

Next Part

আগের পর্ব গুলি: পর্ব ১    পর্ব ২    পর্ব ৩    পর্ব ৪   


অন্যান্য গোয়েন্দা গল্প ও উপন্যাস:
নয়নবুধী   
কান্না ভেজা ডাকবাংলোর রাত    
মাণিক্য   
সর্দার বাড়ির গুপ্তধন রহস্য   
প্রেমিকার অন্তর্ধান রহস্য   
লুকানো চিঠির রহস্য   



All Bengali Stories    47    48    49    50    51    52    53    54    (55)    


## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers. The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation. Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##


◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717