Home   |   About   |   Terms   |   Library   |   Contact    
A platform for writers

সে তবে কে? ( বাংলা গোয়েন্দা গল্প )

লেখক- শান্তনু দাস, হাওড়া, কোলকাতা

All Bengali Stories    49    50    51    52    53    54    55    (56)     57   

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ আমাদের এই ওয়েবসাইট ( RiyaButu.com )-এ প্রকাশিত গল্পগুলির মধ্যে থেকে কিছু গল্প নিয়ে এবছরই প্রকাশিত হবে আমাদের 'রিয়াবুটু'র গল্প'।
--------------------------



সে তবে কে?
বাংলা গোয়েন্দা গল্প
লেখক- শান্তনু দাস, হাওড়া, কোলকাতা

পর্ব 8

বাকী পর্ব গুলি: পর্ব ১    পর্ব ২    পর্ব ৩    পর্ব ৪    পর্ব ৫    পর্ব ৬    পর্ব ৭    পর্ব ৮    পর্ব ৯   

◕ সে তবে কে?
পর্ব 8
আমাদের কথাবার্তার ফাঁকে সুচিত্রাদেবী দু'বার ধোঁয়া ওঠা কফির কাপ দিয়ে গেছে। দুপুরে বিশাল একটা ভুঁড়িভোজের পর হালকা ঘুম দরকার ছিল। সেটা অবশ্য দমিয়ে রাখতে হয়েছিল বাড়িতে ছিলাম না বলে। বিকেলে কালীচরণ বাবুর প্ল্যানই ছিল সুমিলির বাড়ি যাওয়া। ফোন করে জানিয়ে দিয়েছিল রজক। রজক অবশ্য আমাদের সাথে আসে নি। ইনস্পেক্টর সমাদ্দার কলিংবেল টিপতেই এক সুবেশী অল্পবয়স্কা তরুণী দরজা খুলে দিল আর সে-ই যে সুমিলি বুঝতে অসুবিধে হল না। কোমর অব্দি এক ঢাল চুল, আঙ্গুলের স্পর্শে বেরিয়ে আসা চুলে ঢাকা কান, পাকা গমের মত গায়ের রং, নাক আর ঠোট যেন কেউ যত্ন করে এঁকে দিয়েছে, পরনে কুসুম কালারের সালোয়ার, হাতে ব্রেসলেট। আমরা ঘরে ঢুকলাম। আমি আর ইনস্পেক্টর একটা সোফায় আর ইন্দ্রদা অন্য একটা সোফায় উপবেশন করল, সামনে চেয়ারে বসল সুমিলি। কালীচরণ বাবুই প্রথম শুরু করলেন ...

"তোমার বাবা-মা ..."

"ওনারা আমার মামার বাড়ি গেছেন।"

"তুমি তাহলে একাই আছো?"

"হ্যাঁ।"

"কদিন থেকে?"

"পাঁচ দিন হল। কিন্তু আপনারা এসব প্রশ্ন আমাকে ..."

"আমরা অলীক সেনের খুনের তদন্ত করছি। আমার পাশে ইনি প্রখ্যাত ডিটেকটিভ ইন্দ্রজিৎ সান্যাল আর সৌমাভ, ওনার সহকর্মী।"

"আপনার পুরো নাম?" ... ইন্দ্রদা প্রশ্ন করলো।

"সুমিলি দত্ত।"

"অলীকের মৃত্যুর খবরটা আপনি কখন শুনলেন মিস সুমিলি?"

"কাল সকালের নিউজপেপারে। দেখেই আমি চমকে যাই। যা ভেবেছিলাম তাই হল। রাতে এত করে বারণ করা সত্ত্বেও অলীক একাই থেকে গেল হোস্টেলে।"

"আমরা রজকের কাছে শুনেছি সব।"

ইন্দ্রদা কথা বলার ফাঁকে-ফাঁকে সারা ঘরটা চোখ বুলিয়ে নিচ্ছে। জানলার পর্দাগুলো এসির হাওয়াতে কেঁপে-কেঁপে উঠছে। পর্দার ফাঁকে পড়ন্ত বিকেলের লালিমা। কালীচরণ বাবু দেখলাম কিছু একটা ভাবতে-ভাবতে আঙ্গুল মটকাচ্ছে। এবার ইনস্পেক্টর প্রশ্ন করলেন, "অলীক যেই রাতে খুন হয়, সেইসময় তুমি কোথায় ছিলে?"

"কেন? আমার ঘরে।"

"তুমি তখন জেগেছিলে, তাই না?"

"হোয়াট? কি বলছেন আপনি ইনস্পেক্টর?"

"খুনের ঠিক আগে থানায় একটা ফোন এসেছিল, আর সেই ফোনটা করেছিল একটা মেয়ে।"

"হোয়াট ডু ইউ মিন?" এসির হাওয়ার মধ্যে থেকেও সুমিলির কপালে টিপটিপ ঘাম জমে গেছে।

"আর সেই মহিলার গলা যে তোমার, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।"

"আর ইউ ম্যাড? আপনারা কি ভাবছেন আমিই অলীককে খুন করেছি।"

"তা তো উনি বলেননি, মিস সুমিলি। এমনও তো হতে পারে খুনটা আপনি করেননি, কিন্তু করিয়েছেন।" ইন্দ্রদা মুখ খুলল।

"হোয়াট ননসেন্স! ... আমি?"

"মে বি সুমিলি ... ইটস নট ইম্পসিবল।"

"হাউ ইস ইট পসিবল? আমি কেন? আপনারা আমাকে কিসের ভিত্তিতেই বা সন্দেহ করছেন?"

"আপনার ফেবারিট টপিক ফ্লুয়িড মেকানিক্স তাই না?"

সুমিলি অবাক দৃষ্টিতে তাকালো।

"অলীকের বিছানা থেকে একটা ফ্লুয়িড মেকানিক্সের বই পাওয়া গেছে, সেকেন্ড ইয়ার। অলীকের তো থার্ড ইয়ার তাই না মিস সুমিলি?"

"হ্যাঁ, বইটা আমার। অলীক নিয়েছিল আমার কাছ থেকে; আমাদের দুজনেরই খুব পছন্দের।"

"অলীককে কে খুন করতে পারে বলে আপনার মনে হয়?"

"আমি জানি না, আমি কিছু জানি না। আমি খুন করিনি ইন্দ্রজিৎ বাবু। আই লাভড হিম, রিয়েলি লাভড হিম। ও জানতো না আমি ওকে কতটা ..."

সুমিলি কেঁদে ফেলল। ওর কানের লতি, নাকের দু'পাশ লাল হয়ে গেছে।

"রিল্যাক্স, জাস্ট রিল্যাক্স মিস সুমিলি। আমরা আর আপনাকে বিরক্ত করবো না। তবে আপনি আমাদের কাছে কিছু লুকোচ্ছেন। সব খুলে বললে হয়তো ভাল করতেন।"

সুমিলি দু'হাতে মুখ ঢেকে মাথা নিচু করে বলল, "আমি কিছু জানি না, কিছু না।" চোখ দিয়ে ওর টপ-টপ করে জল পড়ছে।

"মিস সুমিলি আপনার ব্রেসলেটে এস সি লেখাটার অর্থটা ঠিক বুঝলাম না। এস ডি হলেও সুমিলি দত্ত ধরে নেওয়া যেত। চলুন, ইনস্পেক্টর সমাদ্দার, তবে আপনি ডিসাইড করুন আমাদের সব খুলে বলবেন কিনা, মিস সুমিলি?"

অলীকের বাড়িতে

"আমি তো যা জানি সব খুলে বলেছি স্যার, তবে আমাকে আবার থানায় ডেকেছেন কেন?" শবর কাঁদো-কাঁদো গলায় বলল। পরদিন ইন্দ্রদা আর আমি থানায় ইনস্পেক্টর সমাদ্দারের সঙ্গে আলোচনা করছিলাম। শবরকে ডেকে পাঠানো হয়েছিল।

ইন্দ্রদা বলল, "বোসো শবর, এবার ঠিক করে বলো সেদিন রাতে কি হয়েছিল।"

"আমি তো ..."

"তুমি সত্যি বলছো না।"

"আমি আর কিছু জানি না।"

"হাজতবাস করলে তোমার বাড়ির লোকেদের কি হবে, সেই ধারনা আছে?"

কালীচরণ বাবু বলে উঠলেন, "ভালই-ভালই সব কিছু বলে দে, নাহলে তোর কপালে অসীম দুঃখ আছে।"

শবরের কালো মুখটা আরো বিবর্ণ হতে থাকে। ও ফুঁপিয়ে কেঁদে বলে ওঠে, "আমাকে মেরে ফেলবে। আমি বাঁচতে চাই, আমার পরিবারের জন্য বাঁচতে চাই। আমি রাতে অলীকের পাশের ঘরে ঘুমুচ্ছিলাম। ঘুম যখন ভাঙলো তখন পাশের ঘর থেকে অলীকের গলার স্বর শোনা যাচ্ছিল। মনে হল অলীক এত রাতে আবার কার সাথে কথা বলছে? আমি বারান্দার আলোটা জ্বেলে বাইরে এলাম। দেখলাম অলীকের ঘরের দরজাটা খোলা, ভেতরে লাইট জ্বলছে। দরজার চৌকাঠের ঠিক বাইরে হীরা অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে। আমার কিছুটা গোলমাল ঠেকল।"

"এক মিনিট, তুমি হীরাকে চিনতে?"

"হ্যাঁ, মাঝে-মাঝে অলীকের কাছে আসতো।"

"আচ্ছা, বলো তারপর।"

"তারপর আমি অলীকের দরজার সামনে গিয়ে উঁকি মেরে দেখতে লাগলাম। সেই কালো কোট টুপি পরা লোকটার হাতে বন্দুক। আমি কি করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না। দেখলাম আমার চোখের সামনে লোকটা অলীকের বুকে গুলি করে দরজা দিয়ে বেরিয়ে আসছে। আমি চিৎকার করার আগেই আমার মুখ চেপে ধরল।"

"লোকটার হাতে গ্লাভস ছিল?"

"হ্যাঁ, ছিল স্যার। তারপর আমাকে হঠাৎ জোরে মেঝেতে ঠেলে ফেলে দিল। আমি মাটি থেকে উঠে চিৎকার করার আগেই লোকটা বন্দুকটা ঐ অজ্ঞান হওয়া হীরার হাতে গুঁজে দিয়ে পালিয়ে গেল।"

"তারপর তুমি 'খুন খুন' বলে চিৎকার করতে-করতে বাইরে বেরিয়ে এলে।"

"হ্যাঁ, বিশ্বাস করুন। এর বেশি আমি কিছু জানি না।"

"তবে মিথ্যে বলছিলে কেন?"

"ভয়ে, ঐ লোকটা যদি আবার আমাকে খুন করে বসে।"

" লোকটার মুখ দেখেছিলে?"

"না অন্ধকারে তেমন ... তবে গোঁফ দাড়ি ছিল আর একটা কালো চশমা পড়েছিল।"

"তোমার কথাগুলো সত্যি হলে ভালো, আর যদি পরে প্রমাণিত হয় যে, তুমি তোমার কথাগুলো না বলে অন্যের শেখানো বুলি আওরাচ্ছো তাহলে এবার তোমাকে ডেকে পাঠানো হবে না, সোজা বাড়ি থেকে তুলে এনে লকআপে ঢোকানো হবে। তুমি এখন যেতে পারো।"

শবর ধীর পদক্ষেপে চলে যেতেই ইনস্পেক্টর ইন্দ্রদাকে বলল, "ইন্দ্রজিৎ বাবু, হীরা তাহলে সত্যিই বলছে?"

"সত্যি বললেও হীরা সেই রাতে অলীকের কাছে কেন গিয়েছিল? কেনই বা হীরাকে অজ্ঞান করলো খুনি? নাকি হীরারই সব এ কারসাজি? খুনটা অন্য কাউকে দিয়ে করিয়ে নিজেকে অজ্ঞান করতে বলা ... নাকি শবর এখনও কিছু লুকোচ্ছে? আচ্ছা ইনস্পেক্টর, সেই রাতে আপনাকে যে ফোন করেছিল সেই মেয়েটা কি সুমিলিই?"

"আই অ্যাম কনফিডেণ্টলি সিওর অ্যাবাউট ইট।"

"আপনি একবার হীরার মোবাইল নম্বরে ফোন করে ওকে থানায় ডাকবেন আর জিজ্ঞেস করবেন, কেন ও অলীককে শাসাতো? আমার মনে হচ্ছে রিভলবারটা হীরারই।"

"তার মানে হীরাই?"

"খুন করতে সে রাতে হীরা ওখানে উপস্থিত হলেও খুন যে হীরা করেনি প্রথম দিনই ওকে অজ্ঞান অবস্থায় দেখে বুঝেছিলাম। তৃতীয় কোনো ব্যক্তি হীরাকে ফলো করছিল। খুনটা হীরা করতে পারবে কিনা সে ব্যাপারে যথেষ্ট সন্দেহ ছিল তার, তাই নিজের হাতেই গুলি করে প্ল্যান মাফিক হীরার ডান হাতে রিভলবারটা গুঁজে দিয়ে সে চলে যায়, যাতে হীরা ফেঁসে যায়। লক্ষ্য করেছেন নিশ্চয় হীরা সব কাজ বাঁ হাতে করে। তাহলে গুলি চালাতে হলে ওকে ঐ হাতেই চালাতে হবে। কিন্তু ওর ডান হাতে রিভলবার পাওয়া যায়। মানেটা হচ্ছে, খুনি ঐ কালো কোট টুপি পরা লোকটাই। হীরাকে অজ্ঞান করে রিভলবার নিয়ে অলীককে খুন করে আবার রিভলবারটা হীরার ডান হাতে গুঁজে দিয়ে পালিয়ে যায়।"

"কিন্তু কে হতে পারে ঐ ব্যক্তি?"

"আমরা কাল সকালে ভাবছি একবার তমলুক যাবো, অলীকের বাড়ি। অলীকের ফ্যামিলি মেম্বারদের সাথে কথা বলে যদি কিছু জানা যায়। আপনি এদিকে হীরাকে গ্রেফতার করুন।"

"কিন্তু কি অপরাধে? কোনো প্রমাণ তো নেই।"

"আপাতত লাইসেন্স বিহীন রিভলবার রাখার অপরাধে ও অলীককে মেনটালি টর্চার করার জন্য। আমি সিওর ঐ রিভলবারটি যদি হীরার হয় তাহলে ওটার লাইসেন্স হীরার কাছে পাবেন না।"

ইনস্পেক্টরকে বিদায় জানিয়ে আমরা একটা ট্যাক্সি বুক করে বাড়ি ফিরছিলাম। চাঁদের আলোতে ছেঁড়া-ছেঁড়া মেঘগুলো ভেসে যাচ্ছিল এদিক থেকে ওদিকে। স্টার থিয়েটারে নতুন শো এসেছে বলে হলের সামনেটা লোকে লোকারণ্য। শ্যামবাজারের পাঁচমাথার মোড়ের কাছে আসতেই বেশ জ্যামে পড়লাম। ইন্দ্রদা দেখলাম ওর মোবাইল থেকে একটা নম্বর ডায়াল করছে। এইসময় আবার কাকে ফোন করছে কে জানে? পরে বুঝলাম ফোনটা করেছে অলীকের বাড়িতে; অলীকের বৌদি ধরেছিলেন। উনি বললেন ওখানে থেকেই আমরা খুনের ব্যাপারে তদন্ত করতে পারি। ওনারা যেকোনো মূল্যেই অলীকের খুনি ধরা পড়ুক সেটা চান। পরের দিন সকালে বেরোতে একটু দেরি হলেও আমি আর ইন্দ্রদা একদম রাইট টাইমে তমলুক স্টেশন পৌঁছলাম। ওখান থেকে অলীকদের সুসজ্জিত ফ্ল্যাটের সামনে আসতে প্রায় আধ ঘণ্টা লেগে গেল।
Next Part


বাকী পর্ব গুলি: পর্ব ১    পর্ব ২    পর্ব ৩    পর্ব ৪    পর্ব ৫    পর্ব ৬    পর্ব ৭    পর্ব ৮    পর্ব ৯   

অন্যান্য গোয়েন্দা গল্প ও উপন্যাস:
নয়নবুধী   
কান্না ভেজা ডাকবাংলোর রাত    
মাণিক্য   
সর্দার বাড়ির গুপ্তধন রহস্য   
প্রেমিকার অন্তর্ধান রহস্য   
লুকানো চিঠির রহস্য   
একা বড়ো একা   



All Bengali Stories    50    51    52    53    54    55    (56)     57   


## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers. The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation. Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##


◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717