Home   |   About   |   Terms   |   Library   |   Contact    
A platform for writers

সে তবে কে?

বাংলা গোয়েন্দা গল্প
লেখক- শান্তনু দাস, হাওড়া, কোলকাতা

All Bengali Stories    49    50    51    52    53    54    55    (56)     57   

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ আমাদের এই ওয়েবসাইট ( RiyaButu.com )-এ প্রকাশিত গল্পগুলির মধ্যে থেকে কিছু গল্প নিয়ে এবছরই প্রকাশিত হবে আমাদের 'রিয়াবুটু'র গল্প'।
--------------------------



সে তবে কে?
বাংলা গোয়েন্দা গল্প
লেখক- শান্তনু দাস, হাওড়া, কোলকাতা

পর্ব ৫

বাকী পর্ব গুলি: পর্ব ১    পর্ব ২    পর্ব ৩    পর্ব ৪    পর্ব ৫    পর্ব ৬    পর্ব ৭    পর্ব ৮    পর্ব ৯   

◕ সে তবে কে?
পর্ব ৫
সরু পালিশ করা সিমেন্টের রাস্তা চলে গেছে বিশাল ফ্ল্যাটের হলুদ দরজা পর্যন্ত। আমরা এগিয়ে চললাম। দু'ধারে গোল ছাতার মত সমান মাপের ঝাউগাছগুলো সমান দূরত্ব নিয়ে একে অপরের দিকে চেয়ে আছে। ডানপাশে অর্ধবৃত্তাকারে সবুজ কার্পেটের মত নরম স্নিগ্ধ ঘাস পাতা। মাঝখানে সুদৃশ্য ফোয়ারা, ফোয়ারার পাশে শ্বেতপাথরের আয়তকার ব্লকগুলো থেকে রোদ্দুর ঠিকরে বেরিয়ে আসছে। কলিংবেল বাজাতেই একজন চাকরানী দরজা খুলে দিল। ডাইনিংটা বিশাল। ড্রয়িংরুমের জানলায় ঝুলছে অপূর্ব সব পর্দা। সূর্যের আলো রঙ্গিন হয়ে আছড়ে পড়ছে ঘরের মেঝেতে। বাড়িতে লোকজন বলতে অলীকের দাদা, বৌদি, অলীকের মা ও এক চাকরানী। দুঃখী পরিবারটি আমাদের আপ্যায়নের একটু ত্রুটি মাত্র করলো না। আমাদের জন্য একটা দোতলার ঘর ঠিক ছিল। অলীক হোস্টেল থেকে এলে ঐ ঘরেই থাকতো। অলীকের দাদা বৌদি, মা, চাকরানী একতলাতেই থাকে। একতলার তিনটে রুম আর দোতলার দুটো। দোতলার একটা রুম আমাদের জন্য খোলা হল আর অন্যটা তালাবন্ধ ছিল। স্নানের আগে ইন্দ্রদা অলীকের মায়ের ঘরে গেল। বয়স ষাটের কাছাকাছি, পরনে সাদা থান, শিথিল চামড়ায় অসংখ্য কুঞ্চন, বলিরেখা সুস্পষ্ট, কাঁচাপাকা ভ্রু চোখের ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়েছে।

ইন্দ্রদা বলল। "কিছু মনে করবেন না মাসীমা, আপনাকে একটু বিরক্ত করতে এলাম।"

অলীকের মা অবাক হয়ে ইন্দ্রদার দিকে চেয়ে আছে। হয়তো ওনাকে ইন্দ্রজিৎ সান্যাল মাসীমা বলবে ভাবতে পারেন নি।

"অলীকের সাথে আপনার শেষ কবে কথা হয়?"

"যেদিন অলীক পৃথিবী ছেড়ে চলে গেল সেদিনই সন্ধ্যায় অলীক ফোন করেছিল।"

"ওর কথায় সন্দেহজনক কিছু আভাস পান কি?"

"না, বাবা। ও বলেছিল পরদিন সকালেই চলে আসবে। কিন্তু ..."

"মনকে শক্ত করুন মাসীমা। জানি, এসময় আপনি একদম কথা বলার মত পরিস্থিতিতে নেই তবু অলীকের খুনিকে ধরতে আপনাদের কিছু প্রশ্ন আমাকে করতেই হবে।"

"সবই বুঝি বাবা, তবু মন মানতে চায় না। আমার সোনার টুকরো ছেলে ছিল অলীক।"

"আচ্ছা, অলীকের বাবা কতদিন হল মারা গেছেন?"

"পাঁচ বছর প্রায়।"

"আচ্ছা, কিছু মনে করবেন না। আপনার অবর্তমানে সম্পত্তির কিরকম ভাগাভাগি হবে সেটা যদি একটু বলেন, অবশ্য এটা বলা না বলাটা আপনার ব্যক্তিগত ব্যাপার।"

উনি কিছুক্ষণ থামলেন। তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবার বলতে শুরু করলেন, "সম্পত্তির ব্যাপারে অলীকের বাবা কিছু ঠিক করে দিয়ে যান নি। তবে আমি ঠিক করেছিলাম আমার সম্পত্তির পঞ্চাশ শতাংশ এখানে অনাথ আশ্রমে দান করবো। চল্লিশ শতাংশ পাবে অলীক। আর বাকি দশ শতাংশ আমার বড় ছেলে সমীরণের জন্য। ঐ মাতাল সমীরণটাকে আমি ইচ্ছে করেই আমার সম্পত্তির বৃহত্তর অংশ থেকে বঞ্চিত করেছি।"

"আচ্ছা উইল তৈরি হয়ে গেছে?"

"না, তবে অলীক না থাকলেও আমার সম্পত্তির ওইটুকু ভাগ ছাড়া সমীরণ কিছু পাবেনা।"

"আপনার শরীর বুঝে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব উইলটা তৈরি করে নেওয়াই ভালো মাসীমা।"

আমরা এবার অলীকের বৌদির ঘরে এলাম। ঘরে ঢুকতেই মিষ্টি ল্যাভেন্ডারের গন্ধে মনটা ভরে গেল। অলীকের বৌদি দু'হাত দিয়ে ভর করে বিছানা থেকে নিজেকে টেনে নিয়ে গিয়ে তুলল সোফার ওপর। দাঁতে দাঁত চেপে মনের কষ্টটা লুকানোর চেষ্টা করছিলেন তিনি। মেদহীন শরীর, মসৃণ চুলে কোনো পাক নেই, পরনে সুতির ছাপা একটা শ্যাওলা কালারের শাড়ি, চকচকে টানা-টানা চোখদুটো যেন বহুদিনের রাত্রি জাগরণের কারণে ঢুলুঢুলু। সমীরণ বাবু ছিলেন না। এসে থেকেই ওনাকে ঘরে দেখিনি। আমরা একটা সোফায় উপবেশন করে কথোপকথন শুরু করলাম।

"আপনার নামটা?"

"মিসেস সীমন্তিনী সেন।"

"আপনার বাবার বাড়ি কোলকাতায়, তাই না?"

"হ্যাঁ, কিন্তু ..."

"অলীকের বন্ধুরা সেদিন বিকেলের সেই ঘটনা সব আমাকে বলেছে।"

"কিন্তু কেন, কেন খুন করলো হীরা আমাদের অলীককে? শত্রুতা কি এমন পর্যায় পর্যন্ত যেতে পারে?"

"হীরা খুন করেনি।"

"মানে?"

"ইয়েস ইটস ট্রু। আচ্ছা আপনি সুমিলিকে চিনতেন?"

"না। সেদিনই বিকেলে প্রথম দেখেছিলাম।"

"সুমিলি অলীককে ভালোবাসতো এ ব্যাপারে আপনি কিছু জানেন?"

"হোয়াট রাবিশ? অলীককে ওর কথা অনেক বলতে শুনেছি, তবে অলীক সুমিলিকে ভালবাসবে এটা ভাবা আমার পক্ষে কঠিন।"

"সুমিলি নিজের অজান্তেই আমাদের কাছে সেটা স্বীকার করেছে।"

"কিন্তু সেরকম কিছু হলে অলীক আমাকে নিশ্চয় বলতো। আমার কাছে ও কোনোকিছুই লুকোয় না বলে আমার ধারনা।"

"আর সুমিত?"

"হ্যাঁ ওর কথাও প্রায় বলতো অলীক, একবার আমাদের বাড়িতেও এসেছিল অলীকের জন্মদিনে।"

"সুমিলি আসে নি?"

"না, ইন্দ্রজিৎ বাবু। তবে সুমিতকে আমার ওদের তুলনায় একটু ম্যাচিওর মনে হত। একটু হলেও ওদের থেকে আইসোলেটেড থাকতো, সবই অলীকের কাছে শোনা।"

"অলীক কোনোদিন ওর বন্ধুদের বাড়ি যায় নি?"

"জানি না, হয়তো গেছে। তবে সুমিতের বাড়ি যায় নি কারণ সুমিতের বাবা সৌমেন চক্রবর্তী এসব পছন্দ করতেন না।"

"সৌমেন চক্রবর্তী? মানে হোস্টেল সুপার? ও মাই গড। এটা তো আগে জানতাম না।"

"হ্যাঁ সুমিতের তো স্কটিশে অ্যাডমিশনটা ওর বাবার জন্যেই হয়েছে। নাহলে মেরিটের ভিত্তিতে ওর চান্স পাবার কথা নয়।"

বিদ্যুতের মত মাথায় একটা জিনিস খেলে গেল। এইজন্যই সুমিত চক্রবর্তীর মুখটা খুব চেনা-চেনা লেগেছিল ছবিতে। সুমিত প্রায় অনেকটা দেখতে ওর বাবা সৌমেন বাবুর মত। তাহলে সুমিলির ব্রেসলেটে এস সি লেখা মানেটা কি সুমিত চক্রবর্তী? সুমিতই কি সুমিলিকে ব্রেসলেটটা গিফট হিসেবে দিয়েছিল? কিন্তু এর সাথে খুনের কি যোগাযোগ থাকতে পারে? কারোর মুখ দেখে তার মনের ভেতরটা পড়ার অদ্ভুত ক্ষমতা ছিল ইন্দ্রদার। আমি বিড়বিড় করছি দেখে ও থাকতে না পেরে বলে উঠল, "এস সি মানে সিডিউল কাস্ট তো হতে পারে সৌম্য, তাতেও যদি সন্দেহ থাকে তবে স্কটিশ চার্চ ও ভাবতে পারিস। আপাতত ব্রেসলেটের রহস্যটা মন থেকে খুলে রাখ।"

কথাবার্তার অপ্রাসঙ্গিকতায় অলীকের বৌদি হকচকিয়ে গেলেন। "আপনারা ঠিক কি নিয়ে কথা বলছেন বলুন তো?"

ইন্দ্রদাই ব্যাপারটাকে সামাল দিল, "আরে না না। ও কিছু না। মিসেস সীমন্তিনী সেন, আপনার স্বামী সমীরণ বাবুকে তো দেখছি না?"

"ওকে কি আপনি পাবেন? সারাটা দিন জুয়া খেলছে কোথাও হয়তো। কোনোদিন দুপুরে খেতে আসে, আবার কোনোদিন আসে না। রাতে এসে আবার মদ খায়।"

"আচ্ছা গতবছর আপনি অলীকের হোস্টেলে নিউ ইয়ারে একটা গ্রিটিংস কার্ড পাঠিয়েছিলেন, তাই না?"

"হ্যাঁ অলীকও প্রতি বছর পাঠাতো, আরচিস থেকে কিনে, আমাকে খুব ভালোবাসতো জানেন ইন্দ্রজিৎ বাবু।"

"সুমিলিও ওকে কার্ড পাঠিয়েছিল, তাতে যা কিছু লেখা ছিল সেটা দেখে বুঝতে অসুবিধে হয় না যে সুমিলি অলীককে ভালোবাসতো। এ ব্যাপারে আপনি কিছু জানতেন?"

"নাথিং, নট অ্যাট অল। অলীকের তরফ থেকে সেরকম কিছু ছিল কিনা সে ব্যাপারে আপনি এত নিশ্চিত কি করে হচ্ছেন ইন্দ্রজিৎ বাবু?"

"হুম, আচ্ছা সীমন্তিনী দেবী, কোলকাতায় আপনার বাবার বাড়ির ফোন নম্বরটা একটু দিন।"

"হ্যাঁ এখনই লিখে দিচ্ছি।"

"আপনার বাবার নামটা পাশে লিখে দেবেন প্লিজ।"

সীমন্তিনী সেনের সাথে আর কোনো কথা হয়নি। অলীকের বাড়ির সব মানুষজনদের মধ্যে আলাদা হলেন সমীরণ বাবু, বিকেলে ওনার সাথে আলাপ হতেই টের পেলাম।
Next Part


বাকী পর্ব গুলি: পর্ব ১    পর্ব ২    পর্ব ৩    পর্ব ৪    পর্ব ৫    পর্ব ৬    পর্ব ৭    পর্ব ৮    পর্ব ৯   

অন্যান্য গোয়েন্দা গল্প ও উপন্যাস:
নয়নবুধী   
কান্না ভেজা ডাকবাংলোর রাত    
মাণিক্য   
সর্দার বাড়ির গুপ্তধন রহস্য   
প্রেমিকার অন্তর্ধান রহস্য   
লুকানো চিঠির রহস্য   
একা বড়ো একা   



All Bengali Stories    50    51    52    53    54    55    (56)     57   


## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers. The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation. Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##


◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717