Home   |   About   |   Terms   |   Library   |   Contact    
A platform for writers

সে তবে কে?

বাংলা গোয়েন্দা গল্প
লেখক- শান্তনু দাস, হাওড়া, কোলকাতা

All Bengali Stories    49    50    51    52    53    54    55    (56)     57   

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ আমাদের এই ওয়েবসাইট ( RiyaButu.com )-এ প্রকাশিত গল্পগুলির মধ্যে থেকে কিছু গল্প নিয়ে এবছরই প্রকাশিত হবে আমাদের 'রিয়াবুটু'র গল্প'।
--------------------------



সে তবে কে?
বাংলা গোয়েন্দা গল্প
লেখক- শান্তনু দাস, হাওড়া, কোলকাতা

পর্ব ৭

বাকী পর্ব গুলি: পর্ব ১    পর্ব ২    পর্ব ৩    পর্ব ৪    পর্ব ৫    পর্ব ৬    পর্ব ৭    পর্ব ৮    পর্ব ৯   

◕ সে তবে কে?
পর্ব ৭
"তাতে কি হয়েছে? তোমার যা ভাল লাগবে তাই করবে ইন্দ্রজিৎ।"

"আমি এখানে থাকলেও আপনাদের উপর হামলা হবে, না থাকলেও হবে মাসীমা। তাই আজকের দিনটা থেকে কাল সকালে যাবো।"

পরের দিন সকালেই কথা হচ্ছিল অলীকের মায়ের সঙ্গে। ইন্দ্রদাকে ঐ একদিনেই আপন মনে হয়েছিল ওনার। বেশ সাবলীল ভাবেই কথা বলছিলেন ইন্দ্রদার সাথে। সারাটা দিন আর উল্লেখ করার মত তেমন কিছু ঘটে নি। রাত এগারোটা পর্যন্ত দোতলার ঘরে জেগে ছিলাম, তারপর ঘুমিয়ে গেছি। আকাশে চাঁদের আলো থাকা সত্ত্বেও খাবলা-খাবলা অন্ধকারে ছেয়ে গেছে অলীকদের ফ্ল্যাটের সামনেটা। অন্ধকারে ছেয়ে গেছে ঘাসের লন, নিস্তব্ধ ফোয়ারা। গাছগুলো অন্ধকারে ভুতের মত দাঁড়িয়ে আছে। তবে ভোরের আলো ফুটতে আর বেশি দেরি নেই। একতলার ঘরে একটা দরজা খুলে গেল। সাদা কাপড়ের ঘোমটা দেওয়া অলীকের মা দরজা দিয়ে বেরিয়ে এলেন। অন্ধকারের মধ্যে চারপাশটা চোখ বুলিয়ে নিলেন। কিছুক্ষণ পর সমীরণ বাবুর ঘরের দরজাটা খুলে গেল অদ্ভুত ক্যাচ শব্দ করে। ভেতর থেকে কালো চাদরে আপাদমস্তক আবৃত হয়ে বেরিয়ে এল কেউ একজন। চারপাশে সন্দিগ্ধ দৃষ্টিতে তাকাল সে। এবার খুলে গেল তৃতীয় ঘরের দরজাটাও। দরজার কাছে পর্দাটা দিয়ে উঁকি মারছে প্রমিলা। চোখদুটো ভয়ে তার গোল গোল হয়ে গিয়েছে। বাইরে ভোরের আলো তখনও ঠিকভাবে ফোটেনি। তবে চাঁদের আলো আবছা হয়ে গেছে। চারপাশে পিন পরা নিস্তব্ধতা। হঠাৎ একটা আর্ত চিৎকার! "বাঁচাও, বাঁচাও কে আছো ... বাঁচাও আমাকে।"

আমার ঘুম ভেঙ্গে গেছে। ইন্দ্রদা অবশ্য তার আগেই বিছানা ছেড়ে উঠে পড়েছে।

"সীমন্তিনী দেবীর গলা না?"

"হ্যাঁ, তাই তো মনে হচ্ছে। তাড়াতাড়ি চল, কিছু একটা হয়েছে মনে হচ্ছে।"

সিঁড়ি দিয়ে নিমেষের মধ্যে নিচে একতলায় নেমে এলাম আমি ও ইন্দ্রদা। দেখলাম একতলার তিনটে রুমেরই দরজা খোলা। আমার ত্বকের ভেতর দিয়ে একটা অস্বস্তিকর কনকনে শিহরন বয়ে গেল। দেখলাম সমীরণ বাবু ঘরের ভেতর থেকে ছুটতে-ছুটতে এসে বলছেন, "কি হয়েছে ইন্দ্রজিৎ বাবু, আমার স্ত্রী কোথায়?"

"ওনার চিৎকার শুনেই তো আমরা নিচে নেমে এলাম।"

দরজা দিয়ে বাইরে এসে দেখলাম এক ভয়ানক দৃশ্য। একটা আরামকেদারায় অলীকের বয়স্কা মা পড়ে আছেন, চোখদুটো বন্ধ, মাথাটা একদিকে হেলানো। তার পাশে মাটিতে দু'জন দুদিকে পড়ে আছে। একদিকে চাকরানী প্রমিলা, চোখ দুটো যেন তার ঠেলে বেরিয়ে আসছে, মুখ দিয়ে জিভ বেরিয়ে পড়েছে। আর এক পাশে সীমন্তিনী সেন, মুখের উপর একটা সাদা রুমাল। সমীরণ বাবু ভয়ে থরথর করে কাঁপতে-কাঁপতে আমাকে ধরে ফেলেছে। দেখলাম সীমন্তিনী দেবী এবং অলীকের মায়ের তখনও পালস চলছে। কিন্তু প্রমিলা যে মারা গেছে সেটা বুঝতে এতটুকুও দেরি হল না। ঘড়িতে তখন চারটে বেজেছে। আকাশে আস্তে-আস্তে ভোরের আলো স্পষ্ট হচ্ছে। সকাল ছটা নাগাদ অলীকের মায়ের জ্ঞান ফিরল। সীমন্তিনী দেবী তখনও সেন্সলেস অবস্থায় বিছানায়। অলীকের বৃদ্ধা মা বিছানাতে উঠে বসলেন। পাশে গোল হয়ে দাঁড়িয়ে আছি আমি, ইন্দ্রদা, তমলুক থানার ওসি, একজন ফ্যামিলি ডক্টর। অলীকের মা বলতে শুরু করলেন, "আমি বুড়ি মানুষ বাবা, রাতে ভাল ঘুম হয় না। ভোর ভোরই আমি উঠে পড়ি। তারপর বাইরের ঐ আরামকেদারায় বসে ভোরের সূর্য ওঠা দেখি।"

সমীরণ বাবু বললেন, "হ্যাঁ ইন্দ্রজিৎ বাবু, মায়ের ওটা দীর্ঘদিনের অভ্যেস। এত করে বলি অত সকাল সকাল উঠে তুমি কি করবে? অলীকের কথা যদিও বা শুনতো, আমাকে তো পাত্তাই দেয় না। প্রায় সাড়ে তিনটে নাগাদ মা উঠে পড়ে। তারপর টেবিলের উপর রাখা এক গ্লাস জল খেয়ে বাইরে ঐ আরামকেদারায় গিয়ে বসে থাকে সকাল না হওয়া পর্যন্ত।"

অলীকের মা একটু খুকখুক করে কেশে আবার বলতে শুরু করলেন, "প্রত্যেকদিনের মতই আমি ঐ আরামকেদারাটায় বসে আছি সামনের দিকে তাকিয়ে, এমন সময় মনে হল পেছনে কেউ আসছে। দেখি কালো চাদরে ঢাকা অবস্থায় কেউ একজন আমার দিকে এগিয়ে আসছে। পেছন দিকে অন্ধকারে ঐ অবস্থায় ওরকম একজন মানুষকে দেখে আমি ভয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলি।"

তমলুক থানার ওসি বললেন, "আমাকে তো এবার উঠতে হবে ইন্দ্রজিৎ বাবু। প্রমিলার ডেডবডিটা পোস্টমর্টেমের ব্যবস্থা করতে হবে। আপনি এদিকটা সামলে নিয়ে কাইন্ডলি আমাকে একটু জানিয়ে দেবেন ফোনে।"

"অল রাইট, তবে মনে হয় শ্বাসরোধ করেই খুন করা হয়েছে কারণ গলায় একটা কালো দাগ স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।"

আরো অনেকক্ষণ পর সীমন্তিনী সেনের জ্ঞান ফিরল। সমীরণ বাবু বেশ ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। এখনো সঠিক কি ঘটেছিল জানা যায়নি। এখানে সীমন্তিনী দেবীর বক্তব্য শুনবো বলে আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে আছি।

"মা কোথায়? মা ভাল আছে তো?"

"প্লিজ কুল ইওরসেলফ মিসেস সেন। আপনার মা পাশের ঘরে আসেন, সুস্থই আছেন। আচ্ছা এবার বলুন তো ঠিক কি হয়েছিল?"

"সে এক ভয়ংকর দৃশ্য, ভাবলেও আমার গা শিউরে উঠছে। আমি ঘুমোচ্ছিলাম। চাদরমুড়ি দেওয়া কেউ একজন বারান্দায় পায়চারি করছিল। একটা আওয়াজে আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়। জানলার দিকে তাকিয়ে দেখি অন্ধকারে কেউ একজন আমার দিকে তাকিয়ে আছে। পাশে সমীরণকে ডাকার চেষ্টা করিনি, কারণ তাতে সময় নষ্ট হত অনেক। কিন্তু পরে বুঝলাম, কি ভুলটাই না করেছি। বাইরে বারান্দায় এলাম, দরজা খুললাম। প্রথমেই চোখ পড়ল আরামকেদারার দিকে। মায়ের দেহটা চেয়ারের একপাশে এলিয়ে আছে। পাশে সেই চাদরমুড়ি দেওয়া লোকটা ততক্ষণে একটা সরু নাইলন দড়ি দিয়ে প্রমিলার গলা চেপে ধরেছে। আমাকে দেখেই ছুটে পালিয়ে গেল। দেখেছেন তো আমাদের বাড়ির চারপাশে কোনো পাঁচিল বা বেড়া নেই, তাই পালানোটা খুব সহজ। আমি প্রমিলার নাকের কাছে হাত নিয়ে গিয়ে দেখলাম নিঃশ্বাস চলছে না। আরামকেদারাটার দিকে এগিয়ে যেতেই বুঝলাম সেই চাদরমুড়ি দেওয়া মানুষটা তখনও পালায় নি। পেছন থেকে আমার নাকে রুমাল চেপে ধরল। আমি জ্ঞান হারালাম।" একটানা এতগুলো কথা বলে উনি দুবার বেশ জোরে জোরে দম নিলেন।

ইন্দ্রদা বলল, "এই দুরবস্থার জন্য আমিই দায়ী ভেবে নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে। কাল রাতে হীরা আমাকে একটা চিঠি দিয়েছিল। হুমকি চিঠিতে লেখা ছিল, এখান থেকে চলে না গেলে কিছু একটা ঘটাবে, এই দেখুন।" ইন্দ্রদা লেখাটা বের করে সবাইকে দেখাল। তারপর ইন্দ্রদা বলল, "সমীরণ বাবু আজ এখনই আমরা চলে যাচ্ছি। তবে একটা কথা বলে রাখি, খুনিকে আমরা ধরবোই। আপনারা একটু সাবধানে থাকবেন। আমি তমলুক থানার ওসির সঙ্গে কথা বলে আপনাদের সিকিউরিটির ব্যবস্থা করছি। আপনার মায়ের সঙ্গে একটু পারসোনালি কথা বলতে চাই।"

শুধু আমি আর ইন্দ্রদা অলীকের মায়ের কাছে এলাম। "আমরা আসছি মাসীমা। আপনার ভালোর জন্যই বলছি, উইলটা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তৈরি করে নেওয়ায় ভালো।"

"ঠিকই তো বাবা। আমি আজ আছি, কাল নেই। আজই দেখি উকিল বাবুকে ফোন করবো। কাল সকালের মধ্যে সব ব্যবস্থা করেই আমার শান্তি।"

আমরা ফিরে যাবার জন্য তৈরি হলাম। সিমেন্টের রাস্তা দিয়ে বেরিয়ে আসার সময় ইন্দ্রদা এক জায়গায় থমকে দাঁড়াল। দেখলাম ঝাউগাছগুলোর একটার নিচে মাঝারি সাইজের একটা শিশি পড়ে রয়েছে। আমি ঝুঁকে হাত দিয়ে তুলতে যেতেই ইন্দ্রদা আমাকে বাধা দিল। পকেট থেকে রুমাল বের করে ইন্দ্রদা শিশিটা রুমালে মুড়ে পকেটে ঢুকিয়ে নিল। কোলকাতায় এসে ইন্দ্রদাকে দেখলাম বেশ খুশি খুশি দেখাচ্ছে। মনে হয় সবকিছু জানতে পেরে গেছে। দুপুরে কালীচরণ সমাদ্দারের ফোন এল। "হ্যালো ইন্দ্রজিৎ সান্যাল বলছি।"

"শুনলাম কোলকাতায় ফিরে এসেছেন। কোনো তথ্য পাওয়া গেল?"

"হ্যাঁ। আপনার সাথে কথা ছিল। বিকেলে আপনাদের বাড়ি যাবো, রজকের সাথে একটু দরকার আছে।"

"আসুন না। হ্যাঁ শুনুন ভালো খবর, হীরা ধরা পড়েছে, লকআপে রেখেছি।"

"জানতাম।"

"আপনি জানতেন?"

"মানে বলতে চাইছি কতদিন আর এইভাবে পালিয়ে বেড়াবে।"

"শুনুন ইন্দ্রজিৎ বাবু, প্রথমে কিছু বলছিল না। দু ঘা লাগাতেই বলে ফেলল যে রিভলবারটা ওরই। খুন করতেই হীরা হোস্টেলে গিয়েছিল। কিন্তু হীরা বলছে যে, সে খুন করে নি।"

"হুম। আপনি একটা কাজ করুন, সুমিলির মোবাইলে একটা কল করে বলুন, বিকেলে থানায় দেখা করতে। ওর সাথে জরুরী কথা আছে।"

ফোনটা রেখে ইন্দ্রদা আমাকে বলল, "দুপুরে ঘুমিয়ে নে, আজ রাত জাগার প্ল্যান আছে।"
Next Part


বাকী পর্ব গুলি: পর্ব ১    পর্ব ২    পর্ব ৩    পর্ব ৪    পর্ব ৫    পর্ব ৬    পর্ব ৭    পর্ব ৮    পর্ব ৯   

অন্যান্য গোয়েন্দা গল্প ও উপন্যাস:
নয়নবুধী   
কান্না ভেজা ডাকবাংলোর রাত    
মাণিক্য   
সর্দার বাড়ির গুপ্তধন রহস্য   
প্রেমিকার অন্তর্ধান রহস্য   
লুকানো চিঠির রহস্য   
একা বড়ো একা   



All Bengali Stories    50    51    52    53    54    55    (56)     57   


## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers. The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation. Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##


◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717