Home   |   About   |   Terms   |   Library   |   Contact    
A platform for writers

ডাকবাক্স

Bengali Novel

All Bengali Stories    82    83    84    85    86    87    88    (89)     90   

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ আমাদের এই ওয়েবসাইট ( RiyaButu.com )-এ প্রকাশিত গল্পগুলির মধ্যে থেকে কিছু গল্প নিয়ে এবছরই প্রকাশিত হবে আমাদের 'রিয়াবুটু'র গল্প'।
--------------------------



ডাকবাক্স ( পর্ব ২ )

লেখক - রাজকুমার মাহাতো, মহেশতলা, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা, কলিকাতা

অন্য পর্বগুলিঃ পর্ব ১    পর্ব ২    পর্ব ৩    পর্ব ৪    পর্ব ৫    পর্ব ৬   

◕ বছর পঞ্চাশের একটি মহিলা দরজা খুলল। পরনে লাল পাড় শাড়ি চওড়া করে সিঁদুর পড়া, "আরে অনু? আয় মা আয়। ভেতরে আয়। কতদিন পড়ে এলি বল দেখি?"

অনু পায়ে একটা প্রণাম করে ভেতরে ঢুকল, "ভালো আছো কাকিমা?"

একগাল হাসি নিয়ে গীতা দেবী বললেন, "না ভালো থাকলেও তোকে দেখে মনটা একেবারে ভালো হয়ে গেল মা। বাকী সবাই কেমন আছে মা? তুই ভালো আছিস তো?"

"হ্যাঁ আমি ভালো আছি। মা-বাবাও ভালো আছে।"

অনু ডাইনিং-এ এসে সোফার উপর বসল। দামি সোফাটার উপরের আস্তরণটা সবেমাত্র পাল্টানো হয়েছে। চকচক করছে বাড়ির প্রতিটা কোন। রজনীগন্ধা আর নাম না জানা কোন ফুলের গন্ধে ঘরটা পুরো মেতে আছে। সামনের আরামকেদারায় বসে জগদীশ বাবু। মাথা ভর্তি সাদা চুল। মোচা পাকানো একখানা কাঁচাপাকা গোঁফ। গম্ভীর স্বরে জিজ্ঞেস করলো, "ভালো আছো অনু?"

অনু উঠে গিয়ে পায়ে নমস্কার করে বলল, "ভালো আছি কাকু। আপনি কেমন আছেন?"

"আমি ভালো আছি। বোসো।"

অনু আবার সোফায় গিয়ে বসলো। আরামকেদারার পাশের পিতল রঙের গ্রামোফোনটা একেবারে চকচক করছে। তার উপরের দেওয়ালে টাঙানো একটা বড় বাঁধান ছবি। সেই ছবিতে, আরামকেদারায় পুলিস অফিসারের বেশে বসে জগদীশ বাবু, পাশে বসে গীতা দেবী আর দু'পাশে দাঁড়িয়ে দুই ছেলে অরিন্দম ও সুরিন্দম। জগদীশ বাবু এই শহরের নামকরা একজন পুলিস অফিসার। সবাই তাকে একডাকে চেনে। একসময় খুব দাপট ছিল তার। পুরো শহরটা বিপদমুক্ত করে রেখেছিলেন তিনি।

"তোরা গল্প কর, আমি একটু সরবত করে নিয়ে আসি," বলে গীতা দেবী চলে গেলেন।

অনু চারিদিকে তাকিয়ে দেখতে লাগল। আগেও সে এ বাড়িতে এসেছে কিন্তু এত সাজানো গোছানোর ব্যাপারটা ঠিক বুঝতে পারল না। অনুর কৌতূহল দেখে জগদীশ বাবু নিজেই বললেন, "কি ভাবছো? এত জাঁকজমক কেন? তাই তো?"

অনু হকচকিয়ে গেল, "না মানে..."

একটু হেসে জগদীশ বাবু বললেন, "কাল সুরিন্দম আসছে নিজের পড়াশোনা শেষ করে, তাই এত আয়োজন। তোমারও নিমন্ত্রণ রইল। এসো অবশ্যই।"

"ওহ তাই ভাবছি! এ তো খুব আনন্দের খবর কাকু; শুনে খুব ভালো লাগলো।"

গীতা দেবী এক গ্লাস সরবত সামনের টেবিলে রেখে বললেন, "নে মা, সরবতটুকু খেয়ে নে।"

গ্লাসটা হাতে নিল অনু, "আপনারা খাবেন না?"

"না মা, এই মাত্র খেয়ে উঠলাম। তুই খেয়ে বেরিয়েছিস তো?"

"হ্যাঁ কাকিমা খেয়ে বেরিয়েছি।"

সরবতের গ্লাসটায় একটা ছোট্ট চুমুক দিয়ে ভয়ে-ভয়ে বলল অনু, "কাকু একটা কথা ছিল।"

গম্ভীর স্বরে উত্তর এল, "বলো।"

অনু আরও একবার এমনি ঢোক গিলে বলল, "অরিদা আমায় একখানা চিঠি......"

"থামো অনু। আমি ওই নামে কাউকে চিনি না।" গর্জে উঠলো জগদীশ বাবু। অনুর হাত থেকে ছলকে কিছুটা সরবত দামি সোফাটার সদ্য পাল্টানো কভারটার উপর পড়ল। উঠে দাঁড়ালেন গীতা দেবী। অনুর হাত থেকে সরবতের গ্লাসটা নিয়ে টেবিলে রেখে তার মাথায় হাত বোলাতে-বোলাতে বললেন, "আঃ! ওত জোড়ে কেউ কথা বলে? মেয়েটা পুরো ভয় পেয়ে গেছে।"

অনুর দুচোখ দিয়ে তখন অলরেডি জল পরছে। একটু নরম হয়ে জগদীশ বাবু বললেন, " সরি অনু। তবে জেনে রাখো, আমার একটা ছেলে মারা গেছে অনেকদিন আগে। ও যেদিন ওই জঙ্গলের জন্য আমাদের ছেড়েছিল সেদিন থেকে ও আমার কাছে মৃত। এখন আমার একটাই ছেলে সুরিন্দম।" কথাটা বলে গটগট করতে-করতে উপরে চলে গেলেন জগদীশ বাবু। অনু কিছুক্ষণের জন্য পুরো স্তব্ধ হয়ে গেল। কোনও কিছু মাথায় এল না তার। সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো সে। রাগে ক্ষোভে তার মাথাটা ব্যথা করতে শুরু করল। কি করে একটা জীবন্ত ছেলেকে তার বাবা মৃত ভাবতে পাড়ে? "কাকিমা আমি আসছি।" মুখটা নিচু করে ঘর থেকে বেড়িয়ে যেতে গেল অনু। পেছন থেকে গীতা দেবী অনুর হাতটা ধরলেন, "হ্যাঁরে মা। কেমন আছে রে আমার অরিটা?" বলেই কেঁদে ফেললেন তিনি। অনু মুখটা তুলল। সামনে একটা অসহায় মা। অনু গীতা দেবীর চোখ দুটো মুছে বলল, "হ্যাঁ কাকিমা অরিদা ভালই আছে। মানুষের মধ্যেই আছে তোমার ছেলে; হারিয়ে যায়নি কোন দামি সোনার মোড়কে। হারিয়ে যায়নি আমার অরিদা। যেমন ছিল তেমনই আছে," বলে ঘর থেকে বেড়িয়ে গেল অনু। হনহন করে এগিয়ে গেল সামনের দিকে। পেছনে দাঁড়িয়ে চোখের জল মুছতে লাগল গীতা দেবী। আর উপর থেকে জগদীশ বাবু লুকিয়ে সব শুনে নিজেকে পাথর প্রমাণিত করার চেষ্টায় আবার লেগে পড়ল।

দুপুরের সূর্য তখন একেবারে মাথার উপর। পিচ রাস্তার কালো পিচগুলো গরম জলের মত উষ্ণ; গলে গেছে মনে হচ্ছে। অনু চোখ মুছে বাড়ির দরজায় দু'বার টোকা দিতেই প্রমিলা দেবী দরজাটা খুললেন, "ইসস রোদে ঘুরে-ঘুরে মেয়েটার অবস্থা দেখো।"

"ও কিছু না মা।"

"কালো মেয়েকে কেউ বিয়ে করেনা অনু।"

"আমাকে যে বিয়ে করবে সে ঠিক একদিন এসে তোমাদের কাছ থেকে আমাকে নিয়ে যাবে; চিন্তা কোরো না," মুচকি হেসে বলল অনু। কিন্তু প্রমিলা দেবীর মুখে কোন হাসি নেই। মুখটা অনুর দিকে ঘুরিয়ে বললেন, "চিঠিটা অরিন্দম এর ছিল অনু?"

"হ্যাঁ মা, অরিদারই ছিল।"

"মুখপোড়া নিজে বিয়ে করবে না। তোকেও বিয়ে করতে দেবে না। বয়সটা কি কম হল তোর? মেয়েরা এমনিই কুড়িতে বুড়ি।"

অনু মুখটা নিচু করে বলল, "ওকে ভালবাসি মা। ওকে ছাড়া অন্য কাউকে ভাবতেও পারি না আমি। কষ্ট হয় খুব জানো।" অনুর চোখ থেকে টপটপ করে জল পরছে তখন।

"কিন্তু ওই ভবঘুরে মানুষ তোকে নিয়ে কি সংসার করবে বল? ও তো নিজের মা-বাবার দায়িত্ব নেয়নি; তোর কি করে নেবে?"

অনুর কথাটা খুব গায়ে লাগল। চোখের জলটা মুছে বলল, "মা বাবার দায়িত্ব নেয়নি ঠিকই, কারণ ওনাদের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য সুরিন্দম আছে। কিন্তু মা, ও সেই সব মানুষের দায়িত্ব নিয়েছে যাদের দায়িত্ব কেউ নেয় নি, কেউ নেয় না।"

"ওর সাথে ওই জঙ্গলে-জঙ্গলে ঘুরতে পারবি তুই? ওর মত বন্য হয়ে বাঁচবি সারাজীবন?"

"হ্যাঁ মা। ও আমাকে যেদিন যেখানে নিয়ে যাবে কোন কথা না বলে ওর সাথে-সাথে চলে যাব আমি।" চোখ মুছতে-মুছতে নিজের ঘরে চলে গেল অনু। মাথায় হাত দিয়ে বসে পরলেন প্রমিলা দেবী।

এতক্ষণ মা-মেয়ের মাঝখানে কোনও কথা বলেননি বংশী বাবু। নিজের রেডিওটার চ্যানেল ঠিক করতেই ব্যস্ত ছিলেন। একজন নামকরা শিক্ষক হিসেবে পুরো এলাকায় প্রসিদ্ধ তিনি। যদিও এখন রিটায়ারের পরে বাড়িতে কয়েকটা টিউশন করে চলে যায় তাদের। ধীরে ধীরে অনুর ঘরের কাছে গিয়ে বংশী বাবু বললেন, "অনু...আসব মা?"

ভিতর থেকে একটা আওয়াজ এলো " হুম.."

দরজাটা ঠেলে ভিতরে ঢুকলেন তিনি। অনু তখন বিছানায় বসে। চোখদুটো লাল হয়ে গেছে তার। বংশী বাবু পাশে বসলেন অনুর। পরম স্নেহে মাথায় হাত বোলাতে-বোলাতে বললেন, "মা। অরিন্দম রুখবে না তোর জন্য। আসবে না ও কোনদিন তোর কাছে। ও যে ভবঘুরে। ও যে ওই সব জঙ্গল মানুষের মাঝে থাকতে ভালবাসে। সে এই মেকি শহরের স্বার্থপর মানুষদের সাথে কোনদিন নিজেকে খাপ খাওয়াতে পারবেনা মা।" মুখটা ফেরাল অনু বাবার দিকে, "আমি কি দোষ করেছি বাবা? ও কেন আমাকে সঙ্গে নিয়ে যায় না? আমিও ওর সাথে ওর মত হতে চাই বাবা। ওর ভালবাসার মানুষগুলোকে আমিও আপন করে নিতে চাই। ও আমাকে একবার সুযোগটাও দেয় না। কেন বাবা? আমি পারব না, বল? তুমি বলো, আমি পারবনা?" হাউহাউ করে কেঁদে বাবাকে জড়িয়ে ধরল অনু।
Next Part

অন্য পর্বগুলিঃ পর্ব ১    পর্ব ২    পর্ব ৩    পর্ব ৪    পর্ব ৫    পর্ব ৬   


All Bengali Stories    82    83    84    85    86    87    88    (89)     90   


## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers. The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation. Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##


◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717