Home   |   About   |   Terms   |   Library   |   Contact    
A platform for writers

ডাকবাক্স

Bengali Novel

All Bengali Stories    82    83    84    85    86    87    88    (89)     90    91    92   

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ আমাদের এই ওয়েবসাইট ( RiyaButu.com )-এ প্রকাশিত গল্পগুলির মধ্যে থেকে কিছু গল্প নিয়ে এবছরই প্রকাশিত হবে আমাদের 'রিয়াবুটু'র গল্প'।
--------------------------



ডাকবাক্স ( পর্ব ৭ )

লেখক - রাজকুমার মাহাতো, মহেশতলা, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা, কলিকাতা

অন্য পর্বগুলিঃ পর্ব ১    পর্ব ২    পর্ব ৩    পর্ব ৪    পর্ব ৫    পর্ব ৬    পর্ব ৭    পর্ব ৮    পর্ব ৯   

◕ পর্ব ৭

সারারাত আবার ঘুম আসলো না অনুর। কেন ওকে অরিন্দম দেখা করতে বলল? কেনই আবার ইউনিয়ন রুমে, একা? হয়ত কিছু বলবে। ও যদি প্রোপোস করে বসে, কি বলবে সে? নানা রকম সাত-পাঁচ চিন্তা ঘিরে ধরতে লাগলো অনুকে। ভোরের প্রথম পাখির ডাকের সাথে বিছানা ছেড়ে উঠে পড়ল অনু। ছাদে উঠে বাইরের হাল্কা স্নিগ্ধ দূষণ-মুক্ত বাতাসে নিজেকে এলিয়ে দিল। এ যেন তার পরম পাওয়া। ছাদের বাহারি গাছগুলোকে পাগলের মত জিজ্ঞেস করতে থাকল, "অরিদা কি বলবে বলত? কিরে তোরা জানিস?"

অনুর প্রিয় বেগুনি রঙের শাড়িটা পড়ল আজ সে। চুলটা বিনুনি করে কপালে একটা ছোট্ট কালো টিপ। আগাগোড়াই বেশি সাজতে পছন্দ করে না অনু। কিন্তু আজ তার ইচ্ছে হল সাজতে। সকাল ন'টা বাজতে-না বাজতেই বেড়িয়ে গেল। ভয়ে-ভয়ে ঢোক গিলতে-গিলতে ঢুকল ইউনিয়ন রুমে। অরিন্দম তখন পেছন ঘুরে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে আছে। একটা বড় মত নিশ্বাস ফেলে, একটা গরম ঢোক গিলে অনু বলল, " অরিদা!"

অরিন্দম সামনের দিকে তাকিয়ে বলল, " আরে, এসে গেছিস? আয় বোস।"

অনু ব্যাগটা বুকে চেপে বসল অরিন্দমের সামনের চেয়ারে। শুরু করল অরি, "অনু, তোকে এখানে এভাবে ডাকার কোন খারাপ দিক ভাবিস নি তো?"

"না অরিদা ভাবিনি।"

"আমি আজ তোকে যেটা বলতে যাব সেটা হয়ত তুই কোনদিন ভাবিস নি।"

অনু কিছু বলল না, চুপ করে মাথাটা নিচু করে বসে থাকল। অরিন্দম আবার শুরু করলো, "আমাকে খারাপ ভাবিস না অনু। আমি ক'দিন থেকে তোকে লক্ষ্য করছি। বা অদিতির মুখে যা শুনেছি..."

অরিন্দমকে থামিয়ে দিল অনু, "অদিতি কি বলেছে তোমায় অরিদা? তুমি তো জানো ও ভুল-ভাল বকে।"

"না অনু, ও হয়ত ভুল বকতে পারে, কিন্তু আমার চোখ ভুল দেখতে পারে না।"

অনু মাথাটা নিচু করেই বসে থাকে। তার কাছে বলার মত আর কোন অজুহাত নেই। আবার অরিন্দম বলে, "আমি জানি আমাকে হয়ত তুই ভালোবা..."

অনু উঠে পড়ে । আর শুনতে পারছে না সে। তার বুকের ধুকধুকটা বেড়ে এবার ফেটে যাবে মনে হয়। অনু পালাতে গেল, কিন্তু অরিন্দম অনুর হাতটা ধরে বলল, " আজ পালাস না অনু। আজ পালালে কোনদিন আর ফিরতে পারবি না।"

চুপচাপ আবার বসে পড়ে অনু। মুখটা যেন এবার মাটিতেই মিলিয়ে দেবে সে, অথবা চেয়ারের তলায় ঢুকে কোন কোনে চুপটি করে বসে অরিন্দমের কথাগুলো শুনবে।

"এটা শুধু ভালোলাগা অনু, ভালবাসাতে অনেক সময় লাগে। একদিনে কাউকে ভাল লাগতে পারে কিন্তু ভালবাসা যায় না। ভালবাসা অনেক কঠিন, আর তার থেকে কঠিন সেই ভালবাসাটাকে পালন করা। আর আমার মত ছেলে তোর ভালবাসার যোগ্য নয়। আমি সারাজীবন ভবঘুরের মত থাকব অনু। আমার সাথে তুই কোথায়-কোথায় ঘুরবি? কত ঘুরবি? হাঁপিয়ে পরবি।"

অনু অরিন্দমের দিকে তাকায়। কিছু না বলে ভ্যাল-ভ্যাল করে খালি তাকিয়ে থাকে। তার বলতে ইচ্ছে করে, "ও অরিদা, দেখ আমার দিকে। আমি তোমার জন্য আমার প্রিয় শাড়িটা পড়ে এসেছি। ও অরিদা, একটিবার আমায় দেখো।"

"অনু," অরিন্দমের ডাকে ঘোর কাটে অনুর। চমকে ওঠে মেয়েটা।

"যা বলেছি শুনেছিস তো?" অরিন্দম প্রশ্ন করে।

"হ্যাঁ অরিদা সব শুনেছি। তবে আমারও তোমাকে কিছু বলার আছে। যদি অনুমতি দাও..."

অরিন্দম মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো। অনু বলতে শুরু করলো, "হ্যাঁ, তোমাকে আমি ভালবাসি। হ্যাঁ ভালবাসা এটা, ভালোলাগা নয়। কারণ এটা একদিনে হয়নি, একটু-একটু করে মনে জায়গা করে নিয়েছ তুমি। আমার ভালবাসাকে ভালোলাগা নাম দেওয়ার অধিকার আমি তোমাকে দিই নি অরিদা। তাই তোমার যা ভাল লাগে তুমি সেটাই করো, আমার যেটা ভালো লাগবে আমি করব।"

অনুর দিকে তাকায় অরিন্দম। তার চোখ দুটো লাল হয়ে গেছে। কান্না বেড়িয়ে আসতে চাইছে, কিন্তু অনু সেটাকে ঢোক গিলে গিলে ফেলছে।

"আমার কথার খারাপ মানে বের করিস না অনু। আমি কোনোদিনই কাউকে ভালবাসতে পারব না। কারণ আমি জঙ্গল আর সেখানের মানুষদের কোনদিন ভুলতে পারব না। যতবার ওরা আমায় ডাকবে ততবার আমি ওদের ডাকে সারা দিয়ে ছুটে যাব।"

অনু আর কোনও কথা না বলে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াল। ভাঙ্গা-ভাঙ্গা গলায় মুখে একটা মিথ্যে হাসি নিয়ে ঢোক গিলে বলে, "আসছি অরিদা।"

অরিন্দম অনুর দিকে তাকিয়ে বলে, "আমাকে ভুল বুঝিস না অনু।"

কিছু না বলে অনু ইউনিয়ন রুম থেকে বেড়িয়ে যায়। অরি বসে পড়ে চেয়ারে। কলেজের গেট পেড়িয়ে রাস্তায় এসে বাড়ির অভিমুখে রওনা দেয় অনু। তার বেগুনি শাড়ির আঁচলটা মাটীতে লুটিয়ে-লুটিয়ে বলেতে থাকে, "দেখো অরিদা আমি তোমার জন্য আমার পছন্দের শাড়িটা পড়ে এসেছি। একটিবার দেখো লক্ষ্মীটি।" কিন্তু দেখার কেউ থাকে না তাকে। তার ভালবাসাটাকে ভালোলাগার নাম নিয়ে ফিরে যেতে হয় চুপিসারে।

দু'দিন কলেজে আসে না অনু। তার প্রথম প্রেম অসম্পূর্ণ থেকে গেছে কিনা! নিজেকে ঘরে বন্দি করে রাখে। না বাবার আদর খেতে ছুটে তার কাছে যায়, না মায়ের সাথে ভালভাবে কথা বলে। কলেজে অনুকে না দেখে অরিন্দম জিজ্ঞেস করে রমাকে। রমা তাকে সবটা খুলে বলে। অরিন্দম বুঝতে পারে ব্যাপারটা। কলেজ শেষে বিকেলের দিকে রমাকে নিয়ে অরিন্দম যায় অনুদের বাড়ি। দরজায় দু'বার টোকা মারে রমা। দরজা খোলেন প্রমিলা দেবী, "আরে তুই, রমা? এই সময়? আয় ভেতরে আয়।"

রমা অরিন্দমকে দেখিয়ে বলে, "এটা অরিদা, আমাদের কলেজে পড়ে। ইউনিয়নের হেড। অনুর সাথে কিছু জরুরি কথা বলতে চায়।"

প্রমিলা দেবী বলে, "এসো বাবা, এসো। কি জানি মেয়েটার কি হয়েছে, না বাইরে বেরোচ্ছে, না কলেজে যাচ্ছে। আমাদের সাথেও ঠিক মত কথা বলছে না। দেখত মা, কি হয়েছে ওর। যদি তোদের কিছু বলে।"

ততক্ষণে বংশী বাবুও এসে গেছেন। পরিচয় করে পায়ে নমস্কার করল অরিন্দম, দু'জনের। বংশী বাবু বললেন, "থাক বাবা থাক। শুনেছি তুমি সমাজসেবা করো। মানুষের জন্য লড়ো।"

অরিন্দম মাথা নেড়ে বলে, "না কাকু। মানুষের মাঝে থেকে তাদের একজন হতে পছন্দ করি। এবার সেটাকে যদি লড়াই বলে, হ্যাঁ আমি লড়াই করি।"

"তোমাকে দেখে খুব ভালো লাগলো বাবা, তবে এই বুকের ভেতরে যে জিনিসটা আছে সেটা বড় বেয়াদব। কিছু সহজে মানতে চায় না। আর আমার মেয়ের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। ভালবাসার মানুষ খুব সহজে পাওয়া যায় না বাবা.."

আরও কিছু বলতে যাচ্ছিলেন হয়ত উনি । কিন্তু প্রমিলা দেবী রুখে বললেন, "বাবা এবার তোমরা যাও, ওর সাথে দেখা করে এসো। তা না-হলে এই লোকটা বকে-বকে তোমার মাথা খেয়ে নেবে।"

রমা আলতো করে অনুর ঘরের দরজাটা খুলে বলল, "আসতে পারি?"

অনু খাটে শুয়ে ছিল, উঠে বলে বলল, "আয়।"

রমার পেছনে-পেছনে অরিন্দম ঢুকল। কেঁদে-কেঁদে অনুর চোখটা ফুলে গেছে। অরিন্দমকে দেখে আর নিজেকে রুখতে পারল না অনু। বিছানা ছেড়ে নেমে দৌড়ে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরল। অরিন্দমও ছাড়ানোর চেষ্টা করল না। আরও চেপে, আরও চেপে জড়িয়ে ধরে অনু তাকে। অরিন্দমের ঘামে ভেজা জামাটার কিছু অংশ তখন অনুর চোখে, ঘাড়ে লেগে গেছে। পাশ থেকে বোকার মত 'হা' করে তাকিয়ে থাকে রমা। দৌড়ে বেড়িয়ে আসে রমা, পাছে অনুর মা-বাবা ঘরে না ঢুকে যায়। বাইরে থেকেই ধীরে-ধীরে বলতে থাকে, "ওরে ছাড়-ছাড়! কাকিমা কাকু দেখতে পেলে মেরে ফেলবে তোদের!"

রমার কথায় হুঁশ ফেরে অনুর; ছেড়ে দেয় অরিন্দমকে। অরিন্দম তখনও সেই একই ভাবে দাঁড়িয়ে। এই প্রথম শরীরী ছোঁয়া তাদের। ভিতরে যে একটা মন নামক জিনিস আছে আর সেটা যে কারোর ছোঁয়ায় এত জোরে-জোরে নিজের অস্তিত্বের প্রমাণ দেয়, সেটা আজ অরিন্দম প্রথম জানলো। আর অরিন্দমের শক্ত বাহুতে নিজেকে দিয়ে প্রথম নারী হওয়ার, প্রথম পুরুষত্বের ছোঁয়া পাওয়ার সাক্ষী হল অনু। একটা মিথ্যে অপরাধীর মত নিষ্পাপ চোখ দুটো দিয়ে অনু তাকায় অরিন্দমের দিকে। অরিন্দমও তাকায় অনুর দিকে। মন্ত্র ছাড়া শুভদৃষ্টি সম্পন্ন হয় দু'জনের। দু'জনে-দু'জনের চোখে এমন ভাবে হারিয়ে যায় যে, বাইরের জগৎ সম্বন্ধে কোন খেয়ালই থাকে না তাদের। রমা তখনও তাদের রক্ষী হয়ে রয়েছে দরজার সামনে। দু'জনে গিয়ে খাটে বসে। বাইরে থেকে চায়ের ট্রে হাতে ঘরে ঢোকে প্রমিলা দেবী, "নাও বাবা চা খাও।"

অরিন্দম উঠে দাঁড়িয়ে বলে, "ঠিক আছে কাকিমা, একদম ব্যস্ত হবেন না। আমি নিয়ে নিচ্ছি।"

"আচ্ছা, ওকে একটু বোঝাও তো বাবা। ভগবান জানে কি হয়েছে ওর!" বলে ঘর থেকে বেড়িয়ে গেলেন প্রমিলা দেবী। রমাও তার পিছনে বেড়িয়ে যায়। আর যাওয়ার সময় বলে যায়, "আমি ওদিকে সামলাচ্ছি, তোরা চালিয়ে যা।"

"কলেজে আসছিস না কেন?" প্রশ্ন করে অরিন্দম।

কোন কথা বলে না অনু। মুখটা নিচু করে বসে থাকে। অরিন্দম আবার শুরু করে, "কি হল উত্তর দে?"

অনু তাও চুপ। মাথাটা নিচের দিকে করে বসে থাকে। অরিন্দম চায়ের কাপটা হাতে তুলে একটা চুমুক দিয়ে বলে, "কাল কলেজে যাবি তো?"

এবার মুখটা তুলে অনু বলে, "হ্যাঁ।"

"আচ্ছা। তো এই ক'দিন যাসনি কেন তার উত্তরটা... পাব না তাই তো?"

"এমনি যাইনি। ভালো লাগছিল না।"

"তো কাল থেকে ভালো লাগবে?"

অনু আবার চুপ।

"ঠিক আছে কাল আগে গিয়ে একবার আবার আমার সাথে ইউনিয়ন রুমে দেখা করবি। আমি অপেক্ষা করব।"

অনু অরিন্দমের দিকে তাকায়। চোখে তার অনেক প্রশ্ন তখন। অরিন্দম অনুর দিকে তাকিয়ে বলে, "তোর চোখের প্রশ্নগুলোর উত্তর হয়ত কাল পেয়ে যাবি।"

এক চুমুকে চা-টা শেষ করে কয়েকটা নিমকি হাতে তুলে উঠে পড়ে অরিন্দম, "আজ আসছি। কাল দেখা হবে।"

অনুর মনে আবার প্রশ্নরা ভিড় করে। মনে-মনে খুব রাগ দেখায় অরিন্দমের উপর। কিন্তু তার মন জানে, তার আর বাচার কোন রাস্তা নেই। অরিন্দমের মনের পথের পথিক হয়ে উঠেছে সে। আর তার লক্ষ্য এখন অরিন্দম।
Next Part

অন্য পর্বগুলিঃ পর্ব ১    পর্ব ২    পর্ব ৩    পর্ব ৪    পর্ব ৫    পর্ব ৬    পর্ব ৭    পর্ব ৮    পর্ব ৯   


All Bengali Stories    82    83    84    85    86    87    88    (89)     90    91    92   


## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers. The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation. Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##


◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717