Home   |   About   |   Terms   |   Library   |   Contact    
A platform for writers

ডাকবাক্স

Bengali Novel

All Bengali Stories    82    83    84    85    86    87    88    (89)     90    91    92   

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ আমাদের এই ওয়েবসাইট ( RiyaButu.com )-এ প্রকাশিত গল্পগুলির মধ্যে থেকে কিছু গল্প নিয়ে এবছরই প্রকাশিত হবে আমাদের 'রিয়াবুটু'র গল্প'।
--------------------------



ডাকবাক্স ( পর্ব ৮ )

লেখক - রাজকুমার মাহাতো, মহেশতলা, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা, কলিকাতা

অন্য পর্বগুলিঃ পর্ব ১    পর্ব ২    পর্ব ৩    পর্ব ৪    পর্ব ৫    পর্ব ৬    পর্ব ৭    পর্ব ৮    পর্ব ৯   

◕ পর্ব ৮

পরদিন আবার বুকভরা আশা নিয়ে সবার আগে কলেজে আসে অনু। তবে আজ সে সাধারণ হয়েই আসে প্রতিদিনের মত। সেই এলোমেলো চুলটা না আঁচড়েই একটা কালো কেশ-বন্ধনী দিয়ে বাধা। আর সেই চেনা হলুদ চুড়িদার। সে সোজা চলে যায় ইউনিয়ন রুমে। অরিন্দম তার জন্য অপেক্ষা করছে অলরেডি। অনু অরিন্দমের সামনের চেয়ারে গিয়ে বসে একেবারে কোন লজ্জা ভয় হীন হয়ে। অরিন্দম অনুর দিকে তাকিয়ে বলে, "জানিস আমাকেও যে কেউ ভালবাসতে পারে ভাবিনি কোনোদিন। তাই আগের দিন তোকে অনেক কিছু বলে দিয়েছি। ক্ষমা করবি তো?"

"এসব কি বলছ অরিদা? এরকম ভাবে বোলো না। নিজেকে বড় অপরাধী মনে হয়।"

"একটা কথা বলব তোকে?"

"বলো।"

"আর একবার ভেবে দেখবি কি? যদি তোর মতে কোনও পরিবর্তন আসে..."

"আমার মতে এত সহজে কোনও পরিবর্তন আসবে না অরিদা। অত ঠুনকো নয় গো আমার ভালবাসা। আমার মন বলেছে তোমায় ভালবাসতে। আর আমার মন কোনোদিন মিথ্যে বলে না। আর একটা কথা, আমার ভালবাসা তোমার 'হ্যাঁ' বা 'না' বলার উপরও নির্ভর করে না। আমার মন যা বলেছে আমি তাই শুনেছি, তোমার মন যা বলবে তুমি তাই শুনবে," বেহায়ার মত কথাগুলো বলে চলে অনু। হয়ত ভালবাসা মানুষকে এভাবেই বেহায়া করে তোলে।

"বাবাহ, কত বড়-বড় কথা বলছিস আজ তুই অনু! তোর কথাগুলো আজ অনেক সম্পূর্ণ লাগছে। কিন্তু আমি এক জায়গায় থাকতে পারি না। কোথায়-কোথায় দৌড়াবি তুই আমার সঙ্গে?"

"যেখানে-যেখানে তুমি নিয়ে যাবে অরিদা। কথা দিলাম, যেখানে নিয়ে যাবে সেখানে দু'চোখ বুজে তোমার সাথে চলে যাব।"

"আমার ভালবাসায় অনেক ভাগ। শুধুই তোকে আমার সম্পূর্ণটা দিয়ে আমি কোনোদিন ভালবাসতে পারব না। আমি ওই সব মানুষগুলোকে কোনোদিন ছাড়তে পারব না রে। ওই জঙ্গল আমাকে হাতছানি দিয়ে ডাকে। তাদের সাথে তুই নিজেকে কিভাবে অ্যাডজাস্ট করবি বল? আমার এই বিভক্ত ভালবাসা তোকে দুঃখ ছাড়া কোনোদিন কিছু দেবে না অনু।"

মুচকি হাসে অনু। অরিন্দম বলে, "হাসলি যে?"

অনু অরিন্দমের দিকে তাকিয়ে বলে, "অরিদা এতদিন তোমায় দেখছি। তোমার তুমিকে আমি ভালভাবে চিনে গেছি। সে নিয়ে তুমি ভেবো না। তোমার ভালবাসা ওদেরকে দিয়ে যতটুকুনি বাঁচবে সেইটুকুনি আমায় দিও, আমি তাতেই অ্যাডজাস্ট করে নেব। বিশ্বাস কর, কোনোদিন কোনও অভিযোগ থাকবে না আমার তোমার সময় নিয়ে।"

"পারবি? কষ্ট হবে তোর..."

"না অরিদা, কোনও কষ্ট হবে না। আমিও তোমার মত ওই জঙ্গল, নদী আর সেখানকার ওই মানুষগুলোকে আপন করে নেব। তোমাকে ওদের থেকে কোনোদিন কেড়ে নেব না। তোমার জীবনে আমার আগে ওদের স্থান হবে, কথা দিলাম।"

অরিন্দম চুপ করে অনুর দিকে তাকিয়ে থাকল। অনু কিছুক্ষণ পর বলল, "কি দেখছো অরিদা?"

"থ্যাঙ্ক ইউ অনু।"

এইভাবে শুরু হল তাদের পথচলা। একে অপরকে আরও ভাল ভাবে চিনতে লাগল দু'জন। অরিন্দম মাঝে-মাঝে চলে যেত তার ভালবাসার ওই জঙ্গলের মানুষগুলোর কাছে। তাদের সাথে পাঁচ-ছয় দিন কাটিয়ে আসত। তাদের দলের সব মেম্বারদের সাথে আলাপ হল অনুর। সময়ে বন্দি হল অরিন্দম অনুর ভালবাসা।

প্রায় দু-তিন বছর কেটে গেল। অনুর কলেজ জীবন শেষের পথে। অরিন্দমের জীবনে এখন ওই মানুষগুলোর ভালোবাসা ভাগ হয়ে গেছে। তার অনেকটাই অংশ এখন অনুর কাছে। ইউনিয়ন রুমটা পড়েই আছে। তাতে নতুন ছেলে-মেয়ের আগমন হয়েছে। তবে এদের ভুলে নি ইউনিয়ন রুমটা। এখনও মাঝে-মাঝে অরিন্দম-অনুরা যায় তাদের এই ইউনিয়ন রুমে। কিছুটা সময় কাটিয়ে আসে সেখানের ভাঙা চোরা বেঞ্চগুলোতে। অরিন্দম এখন একটু অন্য কিছু করারও চেষ্টা করছে, তবে তাদেরকে না ভুলে। মানুষের মাঝে থাকাটা যে তার পেশা নয়, নেশা। এর মধ্যে অরিন্দম অনুকে নিজের বাড়িতে নিয়ে গেছে অনেকবার, অনুও নিজের বাড়িতে সব বলে দিয়েছে। কোনও বাড়ি থেকেই কোনও আপত্তি নেই। জগদীশ বাবুও এখন অরিন্দমের মধ্যে অনেক পরিবর্তন দেখতে পেয়ে খুব খুশি। খালি তার একটাই আক্ষেপ, নিজের ছেলেকে পুলিশ কিংবা উকিল বানাতে পারলেন না। তবুও অরিন্দমের এই লেখক হওয়ার নতুন ইচ্ছেয় নিজেকে সামিল করে দিয়েছেন তিনি। অন্তত ছেলে দু'মাসে একবার পাঁচ-ছয় দিনের জন্য বাড়িতে তো থাকে। তা না হলে ওনার যে একটা বড় ছেলেও আছে সেটাই উনি ভুলে গেছিলেন।

মেয়ের ইচ্ছেতে কোনও ব্যাঘাত ঘটাতে পারেন নি বংশী বাবুও। আগাগোড়াই অনুকে বেঁধে রাখেন নি তিনি। কারণ তার বিশ্বাস ছিল অনু সেরকম কোনও কাজ করবে না যাতে তার বাবা মায়ের মাথাটা হেঁট হয়ে যায়। তবে অরিন্দমের ব্যাপারে প্রমীলা দেবী একটু চিন্তিত ছিলেন, কিন্তু অনু ওনাকেও বুঝিয়ে নিয়েছে। মায়ের মন তো, মেয়ের সাথে কিছু অঘটন ঘটার আভাস হয়ত আগে থেকেই পেয়ে যায়। তাছাড়া অরিন্দমের মত একজন ভবঘুরে স্বভাবের ছেলে ঠিক কতটা সংসার করতে পারবে সেটা নিয়েও চিন্তা ছিল ওনার। কিন্তু একমাত্র মেয়ের খুশির কাছে মাথা নত করতে বাধ্য হয়েছেন তিনিও।

একটু-একটু করে গড়ে ওঠা অনুর ভালবাসা পূর্ণ রূপ পেতে চলেছিল। কারণ তাদের বিয়ের কথা-বার্তা পাকা করার জন্য বংশী বাবু ও প্রমীলা দেবীর ডাক পরেছিল অরিন্দমের বাড়িতে। এ যেন এক গভীর রাতের স্বপ্ন পূরণের দিন ছিল অনু আর অরিন্দমের কাছে।

সময়টা ছিল শীতের মাঝা-মাঝি। অরিন্দমদের বাড়িতে নিমন্ত্রিত হয়ে গেছেন অনুর বাবা-মা। নিচে বসে তারা কথা বলছেন। ওপরে অরিন্দমের ঘরে ইউনিয়ন রুমের সব সদস্যরা। অদিতি হঠাৎ বলে উঠল, "হ্যাঁ রে, তোরা হানিমুনে কোথায় যাবি? ও অরিদা কোথায় যাবে বলো না।"

অরিন্দম অনুর দিকে তাকিয়ে বলল, "ওকেই জিজ্ঞেস কর! ও কোথায় যেতে চায়? অনু কোথায় যাবি বল।"

অনুর মুখটা উজ্জ্বল হয়ে উঠলো। অরিন্দমের দিকে তাকিয়ে বলল, "অরিদা আমাকে সেখানে নিয়ে যেও যেখানে সূর্য সব থেকে আগে তার লাল আভা ছড়ায়। যেখানে ঘড়ির কাঁটার অপেক্ষা হয় না ভোর হওয়ার। যেখানে পাখির ডাকে আমাদের ঘুম ভাঙবে আর আকাশে চাঁদের এগোনো দেখে আমরা বুঝব ঠিক কতটা রাত আমরা এক সঙ্গে আছি। যেখানে আমি বন্দি থাকব না। পাখির মত উড়তে পারব। সেখানে আমাকে নিয়ে যেও অরিদা। আমি সেখানেই তোমার ভালোবাসার মানুষগুলোর সাথে তোমাকে নিয়ে আলাদা হতে চাই।"

সবাই 'হা' করে অনুর কথাগুলো শুনল, অরিন্দমও শুনল। কিন্তু কিছু বলতে পারল না।

"কি অরিদা যাবে তো আমায় নিয়ে?"

"যাব।"

অদিতি পাশ থেকে বলল, "কি রোমান্টিক সিন!!" সবাই হেসে উঠলো।

নিচে ঠাকুর মশাই পাঁজি দেখে আগামী সোমবার ঠিক করলেন আশীর্বাদের, আর তার ছয় দিন পর বিয়ে। যদিও এসব পাঁজি-টাজি জগদীশ বাবু মানেন না, তাও মাঝে-মাঝে সমাজে থাকতে গেলে না-চাইতেও অনেক কিছু মানতে হয়। জগদীশ বাবু বললেন, "যাক এবার পাঁঠাটা মানুষ হবে। দেখো গীতা বিয়ের পর এক মাসের মধ্যে ও এসব সমাজ সেবা-টেবা ছেড়ে দেবে। অনু পারবে আমার ছেলেটাকে মানুষ বানাতে।"

খবর গেল ওপরের রুমে। অনু অরিন্দমের থেকে অদিতির আনন্দটা বেশি হল। তাদের ভালবাসা আর কয়েক দিনের ব্যবধানে একটা পরিণতি পেতে চলেছিল।
Next Part

অন্য পর্বগুলিঃ পর্ব ১    পর্ব ২    পর্ব ৩    পর্ব ৪    পর্ব ৫    পর্ব ৬    পর্ব ৭    পর্ব ৮    পর্ব ৯   


All Bengali Stories    82    83    84    85    86    87    88    (89)     90    91    92   


## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers. The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation. Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##


◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717