Home   |   About   |   Terms   |   Library   |   Contact    
A platform for writers

যে দিন গেছে চলে

Bengali Story

All Bengali Stories    81    82    83    84    85    86    87    88    89    (90)    

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ আমাদের এই ওয়েবসাইট ( RiyaButu.com )-এ প্রকাশিত গল্পগুলির মধ্যে থেকে কিছু গল্প নিয়ে এবছরই প্রকাশিত হবে আমাদের 'রিয়াবুটু'র গল্প'।
--------------------------



যে দিন গেছে চলে ( পর্ব ২)

লেখিকা - শ্রীপর্ণা দে, দুর্গাচরণ মিত্র স্ট্রিট, কলকাতা- ৭০০০০৬
( লেখিকা পরিচিতি: প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে পড়াশোনা শেষ করে একটি কলেজে অধ্যাপনা করেছেন। লেখিকার বিভিন্ন লেখা দেশ, উনিশ কুড়ি, গৃহশোভা, কথাসাহিত্য, প্রসাদ, নন্দন, উদিতা এবং আরও অনেক লিটল ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়েছে। )

অন্য পর্বঃ পর্ব ১    পর্ব ২    পর্ব ৩

◕ পর্ব ২

সুজিতবাবুও হাল ছাড়লেন না। ছেলেকে চাপে রাখতে প্রায় প্রতিদিনই ইরাকে বাড়িতে আসতে বললেন। এই নিয়ে যে সমাজে নানা কথা উঠবে তা তিনি একবারও ভাবলেন না। সমাদৃতাও তার বাবার বিরুদ্ধে কোনও কথা উঠুক চায়নি। সে চায়নি তার বাবার দিকে বাইরের পাঁচটা লোক আঙুল তুলুক। সে বারবার বোঝাবার চেষ্টা করেছে। কিন্তু সুজিতবাবু বুঝতে চাননি। উল্টে সমাদৃতার সঙ্গেও ভুল বোঝাবুঝি মনোমালিন্য বেড়েছে। এরই মধ্যে সমাদৃতার বিয়ে, তার শারীরিক অনুপস্থিতি বাড়ির পরিবেশকে অনেকটাই বদলে দিয়েছে সকলের অজান্তে।

সমাদৃতা দু-চারদিনের জন্য বাবার বাড়ি গেলে অজন্তা অভিযোগ বলে, "ইরা প্রতিদিন আসছে এই বাড়িতে। সকাল- সন্ধ্যা নেই; তোর বাবা ঘণ্টার পর ঘণ্টা ওর সঙ্গে ফোনে কাটাচ্ছে। নিজের মেয়ে যেন নেই, পরের মেয়েকে নিয়ে আদিখ্যেতা করছে। নীল ওকে কোনদিন বিয়ে করবে না। আর আমাকে না জিজ্ঞাসা করে তোর বাবা কি আক্কেলে ওই মেয়েটাকে কথা দিলো! আমি বেঁচে থাকতে ওই মেয়ে এই বাড়িতে আসবে না। আমার ছেলে কি গলায় লেগেছে যে একটা দিদির বয়সের মেয়েকে গলায় ঝুলিয়ে দেব! আমার ছেলে ভালোবাসলে নয় অন্য কথা ছিল।"

সমাদৃতার শুনতে খারাপ লাগে মায়ের কথাগুলো। আজ ঠাকুমা বেঁচে থাকলে বোধ হয় বুঝতে পারতেন তাঁর ছেলেকে ঘিরে ধারণাগুলো কতখানি সত্যি ছিল! ঠাকুমা চিরকাল বিশ্বাস করতেন যে সমাদৃতার বিয়ে হয়ে গেলে সুজিতবাবু বড্ড একলা হয়ে যাবেন। সমাদৃতার চলে গেলে একটা বড় শূন্যতার সৃষ্টি হবে। সমাদৃতাও তা-ই ভাবত একসময়। কিন্তু সে আজ আর ওইভাবে ভাবে না। শূন্য জায়গা পূর্ণ করতে বেশি সময় লাগে না বোধ হয়। না-হলে সুজিতবাবু তার বিয়ের সঙ্গে সঙ্গেই ইরাকে অনায়াসে মেয়ের জায়গায় বসিয়ে দিতে পারতেন? সুজিতবাবুর হৃদয়ের শূন্যস্থান পূরণ হওয়ায় বিয়ের পরে মেয়ের জীবন নিয়ে ভাববার অবকাশই পেলেন না। সমাদৃতার এই বিষয়ে অবশ্য আজ কোনও ভালোলাগা-মন্দলাগা নেই। তার মনে কোনও অনুভূতি থাকলেও সেসব নিয়ে কে-ই বা মাথা ঘামাচ্ছে! সে আজকাল প্রয়োজন আর প্রিয়জনের হিসেব গুলিয়ে ফেলে। অজন্তার কথায় সে ভাবে, বাবা এত শিক্ষিত ব্যক্তি হয়ে কি করে অবুঝ হচ্ছে! যা হবার নয় তাকে বাবা আঁকড়ে ধরে প্রশ্রয় দিয়ে বাড়ির প্রিয়জনদের সঙ্গে কেন সংঘাত করছে?

সমাদৃতার কাছে নীলও বাবার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে। সে গলা উঁচিয়ে বলে, "বাবাকে বলে দিস, ইরাকে বিয়ে আমি করব না। যদি বিয়ে দেবার জন্য আমাকে জোর করে আমি বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে যাব। আর ওই, ওই মেয়েরও বাপু আত্মসম্মান বলে কোনও জিনিস নেই। লজ্জা বলেও কোনও বস্তু নেই। সারাদিন পরের বাড়িতে এসে পড়ে আছে। আমার বাবা যখন ডাকছে তখন এসে হাজির। তুইও তো কলেজে-ইউনিভার্সিটিতে পড়েছিস। স্যার-ম্যাডাম তো তোরও ছিল। রাতভোরে তাদের ডাকে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেছিস? আমাকে বল, কোন ভদ্র বাড়ির মেয়ে ভোরবেলায় স্যারের ডাকে হাওড়া স্টেশনে আসে? মা আমাকে বলেছে যে, বাবা এটা বাড়াবাড়ি করছে।"

সমাদৃতা, অজন্তা এবং নীলের কথা শুনে ভেঙে পড়ে। কয়েকটা দিনে পরিস্থিতির এতটা পরিবর্তন তার কাছে আশাতীত। প্রিয়জনের মধ্যে যাতে দূরত্ব না বাড়ে, বাবার শ্রদ্ধা ও সম্মানের আসন যেন চিরস্থায়ী থাকে তার জন্য সমাদৃতা একদিন চায়ের আড্ডায় বাবাকে বোঝাবার চেষ্টা করল। সুজিতবাবু অশ্রু-ভেজা গলায় বললেন, "আমি ছেলের ভালোর জন্যই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। সে যদি আমার কথার কোনও দাম না দেয়, তো কিছু বলার নেই। আমার এই সংসার ইরাই পারবে হ্যান্ডেল করতে। মেয়েটার সামনে মুখ নিচু করে বলতে হবে যে, আমার ছেলে তোকে বিয়ে করতে রাজি নয়। সে নিয়ে তোদের চিন্তা করতে হবে না।" সমাদৃতা ভাবল যে অশান্তির কালো মেঘটা বোধ হয় আকাশ থেকে সে সরিয়ে ফেলতে পেরেছে। সে স্বস্তির সঙ্গে শ্বশুরবাড়ি ফিরে এলো।

কয়েকটা বছর ঝড়ো হাওয়ার মতো হু-হু করে বয়ে গেল। নীল পড়াশোনা শেষ করে যখন একটা চাকরির প্রস্তাব পেল তখন সমাদৃতা পাঁচ মাসের সন্তানসম্ভবা। নীলের নেভির চাকরি হলো দেশের বাইরে। সাউথ আফ্রিকায় পোস্টিং। নীল দেশে এক বছরের আগে আসতে পারবে না ভেবে সমাদৃতা ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করতে লেক টাউন গেল। বাবার বাড়ি গিয়ে সে শুনল যে নীল এক সপ্তাহ পর কলকাতা ছাড়বে। এরই মধ্যে এক ঘটনা ঘটল। সমাদৃতার কথায় সুজিতবাবু মানসিকতা বদলালেও তা ছিল ক্ষণিকের জন্য। দিনরাত ইরার মিসড কল, ফোন সমাদৃতার কাছে সবকিছু পরিষ্কার করে দিলো। তার উপর অজন্তার মুখ থেকে সে শুনল, "আমি ইরাকে বলেছি যে আমার ছেলে তোকে বিয়ে করবে না। সেই কারণে তোর বাবা আমাকে অপমান করেছে। মেয়েটা নাকি খুব কষ্ট পেয়েছে আমার কথায়। আমি বলেছিলাম মেয়েটা যেন আমার বাড়িতে না আসে। তোর বাবা বলেছে, ইরা না ঢুকলে সেও এই বাড়িতে ঢুকবে না। ওই মেয়েটার কাছে তোর বাবা আমাকে ক্ষমা চাইতে বলে; এত বড় স্পর্ধা! তুই বল, একটা পরের মেয়ের জন্য ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ করে কি লাভ?"

সমাদৃতা অজন্তাকে বলল, "আমি শুনে কী করব? যে সময় তোমার সংসার ধরে রাখার কথা সে সময় তুমি অবহেলা করলে। আমার বিয়ের পর একটা বিরাট শূন্যস্থান তোমার পূরণ করা উচিত ছিল। তারপর ঠাকুমা মারা যাবার পর একটা গ্যাপ তৈরি হলো। তুমি তো পারতে সব ফেলে বাবার কাছে শ্রীরামপুরে কয়েকটা মাস থাকতে। একটা লোক সারাদিন খাটাখাটনি করে বাড়ি ফিরে কথা বলার লোক খোঁজে। বাবারও কাজের ফাঁকে একটু হলেও অবসর আছে। তুমি সেকথা ভেবেছ কখনো? যদি ভাবতে আজ সংসারের ছবিটা অন্যরকম হতো।"

অজন্তা সমাদৃতার মুখে তাঁর ত্রুটির কথা শুনে উদ্ধত ভঙ্গিতে বললেন, "শোন, আমি তোর জ্ঞান শুনতে চাই না। আমি একটাই কথা জানি, এই বিষয়ে তোর বাবার দোষ সবচেয়ে বেশি। আমার বাড়িতে থাকতে হলে মুখ বুজে থাকবি। আর না পোষালে বেরিয়ে যাবি। আমার বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য তোকে আমি এই বাড়িতে ডাকিনি। তোকে বিয়ে দিয়ে দিয়েছি। আমাদের কর্তব্য শেষ। আমাকে উপদেশ দিতে হলে এখানে আসবি না।"

মায়ের মুখ থেকে একথা শুনে সমাদৃতার দু'চোখ জলে ভরে এলো। যে বাড়িতে তার আদরে-আবদারে তেইশটা বছর কেটেছে সেই বাড়িরই প্রিয়জন তার বর্তমান জায়গাটা দেখিয়ে দিলো। সমাদৃতার মনে পড়ল তার প্রিয় উপন্যাস ‘শেষের কবিতা’-র কয়েকটি লাইন-
'ও বাড়ি থেকে আজ তুমি বেরিয়ে এসেছ মিতা।
আবার একদিন যদি ঢুকতে চাও, দেখবে ওখানে তোমাকে কুলোবে না।
পৃথিবীতে আজকের দিনের বাসায় কালকের দিনের জায়গা হয় না।'
সমাদৃতাও চুপ করে থাকতে পারল না। সে বলল, "আমার এত কথা বলার প্রয়োজনই ছিল না। তুমি বললে বলে বললাম। তোমার সংসারের ভালো তুমি বুঝবে।"

নীল তিক্ত গলায় অজন্তাকে বলল, "সারাজীবন ওই টাকা-টাকা করে যাও আর উল্টো-পাল্টা বকে যাও; কাজের কাজ তো কিছু করো না। দিদি, তুই এসব কথা বলিস না। জানিস তো, ভালো কথা শুনবে না। একদিন দেখো বাড়িঘর, টাকাপয়সা সব পড়ে থাকবে। তোমার পাশে মানুষ পাবে না।"

অজন্তা নীলের মুখে বড়-বড় কথা শুনে রক্তচক্ষু বার করে চিৎকার করে বললেন, "তোদের মত ছেলেমেয়ের জ্বালায় আমি মরে যাব। যাদের এত স্নেহ দিয়ে মানুষ করেছি আজ তারাই আমার মুখের উপর কথা বলছে। আমি সেই মা নই যে তোদের কথা সহ্য করব। তোদের খাইও না, পড়িও না। কারো চোখরাঙানি আমি সহ্য করব না। তোদের টাকার দরকার না থাকতে পারে, আমার টাকার দরকার। তোদের বাবার সঙ্গে আমি কটা বছর কাটিয়েছি? অর্ধেক জীবন একাই থাকলাম। টাকাপয়সা আমার একশোবার দরকার।"

সমাদৃতা চোখের জল নিয়ন্ত্রণে রেখে বলল, "দয়া করে চুপ করো। তোমাকে কেউ মারতে চাইছে না। তুমি নিজের ভুল কোনোদিনই দেখতে পারো না। ভুলগুলো কেউ চোখে আঙুল দিয়ে দেখালেই সমস্যা হয় তোমার। মানুষ মাত্রেই ভুল হয়। এই সহজ কথাটা সহজ করে মেনে নিতে পারছো না।" সেদিনের মতো তর্ক-বিতর্ক সমাপ্ত হল।

পরের দিন সন্ধ্যাবেলায় অশান্তি শুরু হলো আবার অন্য বিষয়কে কেন্দ্র করে। নীল বাবার পুরনো মোবাইল থেকে কয়েকটা মেসেজ সমাদৃতাকে দেখালো যেগুলো সবকটিই ইরার পাঠানো। মেসেজগুলোতে এমন কিছু কথা লেখা ছিল যা কোনও ছাত্রী সচরাচর স্যারকে লেখে না। সমাদৃতার রাগ হলো মেসেজগুলো দেখে। নীল সেগুলো অজন্তাকে দেখাতেই তিনি বললেন, "তোর বাবাকে বল। বাবা তো বাড়িতেই আছে। আমি চা দিতে যাচ্ছি। ওই তো মেয়েও আছে। বলুক গিয়ে বাবাকে।" সমাদৃতা আর স্থির থাকতে পারল না।
Next Part

অন্য পর্বঃ পর্ব ১    পর্ব ২    পর্ব ৩


All Bengali Stories    81    82    83    84    85    86    87    88    89    (90)    


## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers. The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation. Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##


◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717