Home   |   About   |   Terms   |   Library   |   Contact    
A platform for writers

ভুল

বাংলা গল্প

All Bengali Stories    98    99    100    101    102    103    104    (105)     106    107   

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ আমাদের এই ওয়েবসাইট ( RiyaButu.com )-এ প্রকাশিত গল্পগুলির মধ্যে থেকে কিছু গল্প নিয়ে এবছরই প্রকাশিত হবে আমাদের 'রিয়াবুটু'র গল্প'।
--------------------------



ভুল ( পর্ব ২ )

লেখক - দীপ্তেশ মাজী, বাবা- শ্রী শশধর মাজী, চেতলা রোড, আলিপুর, কলকাতা


24 th June, 2021

## ভুল
পর্ব ২
আগের পর্ব

বই বন্ধ করে আমি উঠে পড়লাম। দেখি, অন্ধকার বেশ হয়েছে। মাথার উপর খুব শূন্য আকাশ বিরাজ করছে। দূরে কোথাও শকুন শাবকের চেল্লানোর স্বর পেলাম। ধূসর বালুরাশিতে তখন আমি একা। একটা কাকপক্ষীও নেই। ঘড়িটাও আনি নি। ফোন ছিল চার্জ-এ। অগত্যা ফেরাটাই হাতে আছে। সবে পা বাড়াতে যাব হঠাৎ আমি থমকে গেলাম। দূরে, ওটা কি ভাসছে! একটু এগিয়ে গেলাম। হ্যাঁ, ঠিক ঐখানে, যেখানে সমুদ্রের নীল আভা মিশেছে কালো জলের সাথে, সেখানেই একটা মূর্তি! মনে হচ্ছে দাঁড়িয়ে আছে। না না, ওটা আমার দিকেই তাকিয়ে আছে! রাস্তার সোজাসুজি জায়গায় আসতেই আমি তাকে হারিয়ে ফেললাম। এখান থেকে আন্দাজ বিশ পা গেলেই পাওয়া যেত। মূর্তিটা বোধ হয়ে একটি ছেলের; বাহাদুরকে গিয়ে বাকিটা বললাম।

ও বলল, "সাব-জী, ইতনে দের আপ কেয়া কর রহে থে! গরম পানী তো ঠাণ্ডা হো গয়া!" বাহাদুর চা-কে গরম পানি বলে। ওকে আবার চা বসাতে বললাম।

চা খেয়ে আমি আবার বই নিয়ে বসলাম। বাহাদুরকে বললাম, "দেরি করো না। বাজারে গিয়ে ভালো কিছু এনো। মুর্গা-টুর্গা পেলে নিয়ে এসো।" বাহাদুর চলে যাবার পর আমার মাথায় কেবল ঐ এক জিনিস ঘুরতে লাগল।

ড্রাইভার পরেশ একটু আগে এসেছিল। ওর শ্বশুরবাড়ি নাকি কাছেই। বলল, একটু ঘুরে আসবে। কাল ভোরেই চলে আসবে।

শীতের সময় বদ্ধ ঘরের যেরকম অবস্থা হয়, এখানেও সেইরকম অবস্থা। শুধু লাইট হাউসে একটা হ্যালোজেন গোছের আলো রয়েছে। তা না হলে পুরো এলাকাটা অন্ধকারাচ্ছন্ন। বাহাদুর সেই কথন গেছে। আসার নাম নেই। আমি, একটা মোমবাতি জ্বেলে ঘরের বাইরে এলাম। জনপ্রাণী নেই কোথাও। বুঝলাম, জায়গাটা সত্যিই অনুন্নত। আলোর অভাবে এত সুন্দর জায়গাটা বিচ্ছিন্নতার বশবর্তী হয়েছে। সাথে এটাও বোধ হল, যতদিন না জায়গা উন্নত হচ্ছে, ততদিন হোটেল ব্যবসা কার্যত অসম্ভব। রাতে, ন"টার মধ্যে খাওয়া সেরে নিলাম। বাহাদুর বাসন পত্র মেজে ধুয়ে ছোট ফোন নিয়ে বাইরে গেল। তারপর নেপালি ভাষায় কি সব বিড়বিড় করতে লাগল। বুঝতে পারলাম না। ভাবছি, এবার ওর কাছে নেপালি ভাষাটাও রপ্ত করব। আমিও একটু পায়চারি করতে বের হলাম।

পনেরো মিনিটের মধ্যে সমুদ্রের কাছে চলে আসলাম। জ্যোৎস্নায় চতুর্দিক রঙিন হয়ে উঠেছে, একটা চাকচিক্যময় উপত্যকা মনে হচ্ছে। সমুদ্রের জলরাশির ভাঁজ চিকচিক করছে। প্রতিটা বালির কণা এখন ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র আলোকবিন্দুতে উপনীত হয়েছে। দেখলাম, জলের ভাঁজে একটা দেহ। আমি তখুনি চমকে উঠলাম। কি সর্বনাশ! কেউ কি ডুবে যাচ্ছে! আমি দৌড়ে গিয়ে তাকে তুলে আনতে গেলাম। জলে নামতেই শরীরে একটা হিমেল হাওয়া বয়ে গেল। আমি তাকে তুলে আনলাম। পরনে একটা লাল জামা। প্যান্টটা ভিজে গেছে। বালির ওপর রাখতেই আমি চমকে উঠলাম। এতক্ষণ খেয়াল করিনি। এটা তো রসিদ!

আঠারো উনিশ বছরের ছেলেটা কেমন মুষড়ে পড়েছে। বোধয় জল খেয়ে ফেলেছে। মনে-মনে নিজেকে দোষারোপ করলাম। আমারই ভুল। ওকে যদি সঙ্গে-সঙ্গে তুলে আনতাম তাহলে এটা হত না।

"স্যর, আমি ঠি-ক-ই আ-আ-ছি," মনে হল কথাগুলো যেন রসিদ বলছে না। কেউ যেন ওর হয়ে বলে দিচ্ছে। ধরা ধরা গলা। এরপর রসিদ চোখ মেলল।

আমি যতটুকু দেখছি, সবটাই চাঁদের আলোয়। রসিদকে একটা কাঠের ওপর বসালাম। তবু যেন ওর শরীরটা স্থির নয়, কেমন জানি নেতিয়ে পড়ছে। টলছে খালি। আমি বললাম, "রসিদ, এখন তোমার কেমন লাগছে! তুমি...তুমি কিভাবে এলে এখানে? তোমরা কি হেনরি আইল্যান্ডে ঘুরতে এসেছিলে?"

রসিদ স্নিগ্ধ দৃষ্টিতে চেয়ে রইল। যে দৃষ্টির দিকে আমি নিতান্তই ক্ষুদ্র কণা মাত্র। আবার বললাম, "রসিদ, এই রসিদ, কেমন বোধ হচ্ছে!"

রসিদ মুখের ওপর হাত চালিয়ে বলল, "স্যর, সেদিনের ঐ ঘটনাটা আপনার মনে আছে!"

আমি একটু চিন্তা করলাম, কিন্তু কি বলব ভেবে পেলাম না। আশ্চর্য হলাম ঠিকই কিন্তু বুঝতে দিলাম না। এমনিতেই আমরা অন্ধকারের গা ঘেঁষে বসে আছি। কাউকে ঠিকমত চিনতে পর্যন্ত পারছি না। অনেকটা পুরনো দিনের টিভি চ্যানেলের মত। শুধুই অপরিষ্কার ছবি। আওয়াজ ভেসে আসছে খালি।

রসিদ বলল, "আমি খুব ভালবাসতাম আপনাকে স্যর। আপনার পড়ানো আমার খুব ভালো লাগত। আপনিই কেবল বাংলা আর ইংরাজির মধ্যে কোনও ভেদাভেদ করতেন না। বাকিরা, এমন কি, অন্যান্য ছাত্র-ছাত্রীরাও সে ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। ওরাও মাঝে-মাঝে খোঁটা দিত।"

রসিদ কি বলছে আমি সত্যি বুঝতে পারছিলাম না। ওর কথায় আমার আবার স্কুলের কথা মনে পড়ে গেল। ক্লাসের মধ্যে রসিদ ছিল ইংরেজিতে বেশ কাঁচা। শুনেছিলাম, ও খুব গরীব ঘর থেকে এসেছে। কোন এক মাষ্টার মশাইয়ের দাক্ষিণ্যে ওর উদয় হয়। তবে, আজ আমার যদি সংসার থাকত, রসিদের মতই হয়তো আমার সন্তানের বয়স হত। তখন হয়তো ও ‘সুবিমল স্যর’ বলে আর ডাকত না। সম্বোধন করত ‘বাবা" বলে। তাছাড়া ক্লাসের ছেলে-মেয়েদের কাছে শিক্ষক-শিক্ষিকারাও তো বন্ধু এবং অভিভাবকের মতই।

আমি বললাম, "রসিদ, অনেক রাত হয়েছে। এবার শোবে চল। কাল সকালে সব শুনবো।"

রসিদ কেমন যেন গুঙরে উঠল। মনে হল, মনের কঠিন-তম পেশী থেকে গোঙানি বেরিয়ে এল এবং তারা চাইছে রসিদ যেন এরকম আর দ্বিতীয়বার না শোনে। শুনলেই বিপদ।

রসিদ বলল, "আপনার মনে পড়ে সেদিনটার কথা?"

আমি বললাম, "তুমি কোনদিনের কথা বলছ রসিদ..."

রসিদ একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল, "পাঁচ তিন কুড়ি দশ।"

আমি বললাম, "এসব পাঁচ, ছয় তুমি কি বলছ? আমার তো কিছুই বোধগম্য হচ্ছে না! বাদ দাও, তুমি এখন শোবে চল। আমার তো ঘুম পাচ্ছে।" তারপর যেন একটা দমকা হাওয়ায় সমস্তটাই বদলে গেল। সাথে বদলালও, রসিদের ছেলেমানুষি গলার স্বর। ধরা-ধরা গলা, যেন কয়েক শতাব্দী ধরে অবরুদ্ধ থাকার পর প্রতিশোধের হিংসা চরিতার্থ করতে উদ্ধত হয়েছে সে, "তুই কি সব ভুলে গেলি মাষ্টার! আমার গায়ের হাজারো অশুভ শক্তির জন্ম হয়েছে কেবল তোরই জন্য। আমি তোকে ছাড়ব না। তুই ভুল করেছিলিস। মাষ্টার, ভুল করেছিলিস তুই।" ঠিক তখনই মনে হল পেছন দিয়ে বিশাল পরিসরে এক জলরাশি ধেয়ে এল আমার ওপর। তারপর আর কিছুই মনে নেই।

সকালে উঠে দেখলাম, জানলা দিয়ে এক ফালি রোদ এসেছে। সারা গায়ে অসম্ভব যন্ত্রণা। মনে হল একটু রোদ লাগলে ব্যথার হয়তো উপশম হবে। উঠতে গিয়েও পারলাম না। আবার, কাল রাতের ভয়াবহ ঘটনার কথা মনে পড়ে গেল। বললাম, "রসিদ, তুমি কোথায়?"

বাহাদুর কাছেই ছিল। এসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিল। বলল, "সাব-জী, সব ঠিক হে। আপ চিন্তা মাত কিজিয়ে।"

আমি বললাম, "তুমি আমাকে যেতে বারণ করেছিলে বাহাদুর, কিন্তু আমি তবুও গেলাম। তাই আমার এই পরিণতি।"

বাহাদুর ক্ষীণ দৃষ্টিতে জানলার দিকে তাকাল। আমার মনে হল, বাহাদুর যেন আছে, আবার নেই। জানলার রোদে বাহাদুরকে বেশ অপরিষ্কার লাগছে। বাহাদুর যেন কিছুটা আপন মনেই বলল, "সাব-জী, আপনে ভুল কিয়া। আপকো মানা কিয়া থা। হামনে শুনা থা কি সমুন্দর পে বুরি আৎমা রেহেতি হে। অওর ইহা তো শামসান হে। আপনে ভুল কর দিয়া, সাব-জী।"

গায়ের জড়তা ছাড়তেই আমি উঠে বসি। দ্বিতীয় চমকটা পেলাম পরেশের অশ্রু-বর্ষিত ডাক শুনে। পরেশ আমায় ধরাধরি করে গাড়িতে তুলল। বলল, "আপনি যে এখনো ঠিক আছেন আপনার ভাগ্যি ভালো। জয় মা কালি।" এই বলে ও গাড়ি ছুটিয়ে দিল। আমি ওকে থামতে বললাম, "পরেশ, কি করছো! বাহাদুর কই! তাছাড়া রসিদকে তো দেখছি না!"

পরেশ বেশ কিছুটা চলে আসল। একটা ধাবায় গাড়ি দাঁড় করাল। স্টিয়ারিং ধরা অবস্থায় বলল, "স্যর আমাদের বাহাদুর আর বেঁচে নেই। সমুদ্রের ধারে এক অজানা চোরাবালির গর্ভে ওর তাজা প্রাণটা রয়ে গেছে।"

কথাটা শুনেই আমার বুকটা ছাৎ করে উঠল। এরপর আমরা বাড়ি চলে আসি। পরেশকে রসিদের কথা জিজ্ঞাসা করায় ও কিছু বলতে পারেনি। এই গল্পটা শোনা যায় আমারই এক শিক্ষক বন্ধু, আশুতোষের মুখে। সে বলে, "কেন, রসিদের খবর তুই জানতিস না! ও তো তোর স্কুল ছাড়ার মাসেই গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যায়। তবে, ও নাকি তোকে খুঁজতে কয়েকবার এসেছিল। তুই তখন অন্য কোথাও কাজে ছিলিস। সবাই বলতো সাসপেন্ড করা ছেলেরা নাকি ওর উপর লুকিয়ে অত্যাচার চালাত। ওকে গরীব, ছোটলোক বলে খেপাত। তারপরই নাকি ও দুর্ঘটনায় মারা যায়। তবে ও কি কারণে তোর সাথে দেখা করতে চেয়ে ছিল, সেটা অজানা আজও। আর তারিখটা ছিল ৫. ৩. ২০১০।"

ফোন রেখে মনে-মনে বললাম, “নিজের ভুলেই আজ নিজে সাজা পেলাম। সেদিন যদি রসিদের কথা শুনে ওকে কাঠগড়ায় না দাঁড় করাতাম, তাহলে ও বেঁচে যেত। ছেলেগুলো হয়তো সত্যিই ওর উপর অকথ্য অত্যাচার চালিয়ে ছিল। হয়তো তাই, রসিদ সুইসাইড করেছে।"

ড্রয়িং রুমের পাশে যেতেই আমি আর নিজেকে সামলাতে পারলাম না। হাউমাউ করে কেঁদে উঠলাম। নিজ মনেই বললাম, “বাহাদুরের কি দোষ ছিল ভগবান! এখন আমি বুঝতে পারছি, বাহাদুর মরে গিয়েও আমাকে বাঁচিয়ে দিয়ে গেছে। আমারই ভুলের খেসারত ও দিল। আর এখন আমাকে বাঁচিয়ে দিয়ে, পরপর এক সাথে দু দুটো ভুলের বোঝা চাপিয়ে গেল।"
( সমাপ্ত )


Next Bangla Story

All Bengali Stories    98    99    100    101    102    103    104    (105)     106    107   


## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers. The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation. Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##


◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717