All Bengali Stories
100
101
102
103
104
105
106
(107)
108
109
-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ আমাদের এই ওয়েবসাইট ( RiyaButu.com )-এ প্রকাশিত গল্পগুলির মধ্যে থেকে কিছু গল্প নিয়ে এবছরই প্রকাশিত হবে আমাদের 'রিয়াবুটু'র গল্প'।
--------------------------
◕
রাজকুমারী
লেখিকা – সংঘমিত্রা রায়, Masjid Road [ Near chanter bazer], karimganj bazer, karimganj, Assam
27 th June, 2021
##
রাজকুমারী
লেখিকা – সংঘমিত্রা রায়, Masjid Road [ Near chanter bazer], karimganj bazer, karimganj, Assam
পর্ব ২
আগের পর্বগুলিঃ পর্ব ১
# পর্ব ২
রাজকুমারীকে নিয়ে নানা কথা হয় ছোট থেকেই কিন্তু বিশু কারো কথাই শুনে না আবার ঝগড়াও করে না। সে মেয়েকে নিয়ে নানা স্বপ্ন দেখে।
রাজকুমারীর এক বছরের ছোট একটা ভাই হয়েছে। তার নাম রাখা হয়েছে বরুণ। দু’জনে প্রায় একসঙ্গে বড় হতে থাকে। কিন্তু বরুণ খুব শান্ত শিষ্ট আর রাজকুমারী খুব দুরন্ত; চঞ্চল হয়েছে। রানী, শশীবালা
তাকে সামলাতেই পারে না। একটু সুযোগ পেলেই ভাইকে নিয়ে পালিয়ে যায় কোথা থেকে কোথা, ওর মন যা চায় তাই করে!
রাজকুমারীর গায়ের রং শ্যামলা, মাথায় কুঁকড়ানো চুল, হাল্কা-পাতলা শরীর। তবে চেহারাটা খুব মায়াবী। হাসলে গালে টুপ পরে, চোখ দুটো বেশ বুদ্ধিদীপ্ত আর ছোট থেকেই ওকে বেশ মেধাবী মনে হত। যখন
থেকে কথা বলতে শিখেছে কোন কিছু দেখলে বা শুনলে চট করে মুখস্থ করে ফেলত। বিশু নিজে ক্লাস নাইন পর্যন্ত পড়েছে; পড়াশোনায় খারাপ ছিল না, কিন্তু সংসারের অভাব আর ওর বাবাকে সাহায্য করার কেউ
নেই তাই তার লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায়। তার বোনেরাও কোনমতে নাম লিখা শিখেছে, তার স্ত্রী রানীও তাই! তখন সংসারে বনমালীর কথাই শেষ। বিশুর তখন থেকেই ইচ্ছে, তার যদি মেয়ে হয় তাহলে তাকে অনেক
লেখাপড়া শেখাবে। কেউ বাধা দিলে তার কথা শুনবে না।
রাজকুমারী চটপট সবকিছু বুঝে ফেলে দেখে বিশুর উৎসাহ বেড়ে গেল। সে ঠিক করল মেয়েকে অনেক লেখাপড়া শেখাবে। বিশু তাকে বর্ণ পরিচয়, ছড়ার বই, স্লেট এনে দেয়। কে পরাবে রাজকুমারীকে, সে
নিজেই সন্ধ্যার পর মেয়েকে পড়তে বসায়। রাজকুমারী যতই চঞ্চল হোক না কেন পড়তে বসলে একেবারে শান্ত হয়ে যায় আর খুব তাড়াতাড়ি শিখে ফেলে।
রাজকুমারীর ছয় বছর হলে বিশু তাকে স্কুলে ভর্তি করে দেয়। কিন্তু সে বাড়ীতেই ক্লাস ওয়ানের পুরো বই শেষ করে ফেলেছে। বিশু একটা পুরানো বই এনে ওকে পড়িয়েছে। রানী নিজে লেখাপড়া জানে না,
কিন্তু সে বুঝে মেয়েদেরও লেখাপড়ার দরকার আছে। সে যদি পড়তে জানত তাহলে রাজকুমারী এবং বরুণকেও বিশুর মতো পড়াতে পারত, নিজেও বই পড়তে পারত। কিন্তু সে শুধু সংসারের কাজ ছাড়া আর
কিছুই জানে না। শুধু ঘর –সংসার ছাড়াও যে বাইরে একটা জগত আছে, তা রানী বুঝে। তাই সেও চায় তার ছেলে –মেয়ে দুটো অনেক লেখাপড়া শিখে বাবা – মায়ের নাম উজ্জ্বল করুক।
রাজকুমারীর স্কুলে যাওয়ার পর দিদিমণিরা দেখলেন সে পড়াশোনায় খুব ভালো, খুব বুদ্ধিমতী। নিজের ক্লাসের পড়ার সঙ্গে-সঙ্গে উপরের ক্লাসের পড়ার দিকেও সে খেয়াল রাখে। গ্রামের প্রাইমারী স্কুল, সব
ক্লাসই একটা বড় ঘরে বসে। মাঝখানে কোন পার্টিশন নেই। তাই এক ক্লাসে বসে অন্যদিকে নজর রাখা যায়। রাজকুমারী এমনিতে খুব দুরন্ত এক জায়গায় বেশী সময় বসে না, কিন্তু শুধু লেখাপড়ার ব্যাপার হলে
সে শান্ত হয়ে শুনে ও বুঝে। তাই বলে সারাদিন বই নিয়ে বসে থাকার মেয়ে সে নয়। নিজের পড়া সে চটপট শিখে উঠে যায়।
স্কুলের দিদিমণিরা তার উপর খুব খুশী। বলতে গেলে তার মতো মেধাবী ছাত্রী ইশানপুরের প্রাইমারী স্কুলে আর নেই আগেও ছিল না। মেয়েরা তো দূরের কথা, ছেলেরাও কেউ এতো ভালো ছিল না। সে অনায়াসেই
উঁচু ক্লাসের পড়া, অঙ্ক করে ফেলতে পারে। এমন ছাত্রী পেয়ে দিদিমণিরা খুব খুশী। কিন্তু বরুণ ততটা ভালো নয়, মাঝারী গোছের ছাত্র। তবে সে খুব শান্তশিষ্ট, দিদিকে খুব ভালোবাসে। দিদির পিছু-পিছু
ঘুরে সারাদিন, দুটিতে খুব মিল।
ইশানপুরের প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষিকারা কেউই স্থানীয় নয়। এই স্কুলে শিক্ষক কেউ নেই সবাই শিক্ষিকা। প্রধান শিক্ষিকা প্রতিমা চক্রবর্তীর বাড়ি বর্ধমানে। বিশ বছর ধরে এখানে শিক্ষকতা করে আসছেন।
রাজকুমারী প্রতি পরীক্ষাতে পুরো নম্বর পায়। ওর হাতের লেখা যেমনি সুন্দর তেমনি কোন ভুল হয়না। এই কারণে ইশানপুরের অনেকেই তাকে হিংসা করে। অনেক অবস্থাপন্ন ঘরের ছেলে-মেয়েরা প্রাইভেট টিউটর
রেখেও ভালো নম্বর পায় না, সেই জায়গায় রাজকুমারী নিজে-নিজে পড়ে পুরো নম্বর পায়। স্কুলের দিদিমণিরা যা পড়ান তাতেই সে সবকিছু বুঝে যায়। এখন আর বিশুকে পড়ানোর দরকার পরে না।
রাজকুমারী নিজে পড়ে সেই সঙ্গে ভাইকেও পড়ায়।
রাজকুমারী যখন ক্লাস থ্রিতে পড়ে তখন প্রতিমা দেবী একদিন স্কুলে ডেকে পাঠালেন বিশুকে। বিশু মনে-মনে ভয় পেল। রানী বলল, "কুমারী ইস্কুলে কিছু নষ্ট করছে, হের লাইগা দিদিমণি তোমারে ডাকছে।
সারাদিন গেরামের মাইনসের নালিশ শুনতে-শুনতে আমার প্রাণ যায়। কবে যে এই মাইয়া শান্ত হইব ভগবানই জানেন!"
"সত্যি মাইয়া একখান তোর বিশু! পুলাডা কত শান্ত আর মাইয়াডা যেন দস্যি। শুধু গাছে উঠে, যেন হে বান্দর; আর ডানা থাকলে উইড়া বেড়াইত। কোনদিন দেখবি পইড়া হাত পা ভাঙ্গব। তুই তো ওর কোন
দোষ দেখছ না বিশু। আদর দিয়া-দিয়া ওরে মাথায় তুলছস, পরে তোরাই ভুগবি। আমার কি, আমি আর কতদিন বাচুম," শশীবালা বললেন।
"না না মা, তুমি কুমারীর উপর রাগ কইরো না। দেখবা একদিন হে লেখাপড়া শিইখা আমাগোর নাম উজ্জ্বল করব। হেই-দিন তোমার সব রাগ জল হইয়া যাইব। বাচ্চা মানুষ একটু দুষ্টামি তো করবই। এখন
ইস্কুলে গিয়া দেখি দিদিমণি কিসের লাইগা ডাকল!"
বিশু ভয়ে-ভয়ে যখন স্কুলে ঢুকল তখন স্কুল ছুটি হয়ে গেছে। দিদিমণিরা বসে গল্প করছিলেন একটু পরেই বেরিয়ে যাবেন। বিশুকে দেখে প্রতিমা দেবী বললেন, "এসো বিশু!"
“কিসের লাইগা ডাকছেন দিদিমণি ? রাজকুমারী কিছু করছে? মাইয়াডা বড় চঞ্চল!”
“চঞ্চল ছেলে-মেয়েদের মাথা খুব ভালো থাকে বিশু। রাজকুমারী চঞ্চল তাই ও পড়াশোনায় খুব ভালো। বড় হলে দেখবে একেবারে শান্ত হয়ে যাবে। যাক এসব কথা, আমি তোমাকে ডেকেছি তুমি আবার বলরামের
মতো অল্প বয়সে মেয়েটার লেখাপড়া ছাড়িয়ে বিয়ে দিয়ে দিও না যেন। ও মেয়েটা পড়াশোনায় খুব ভালো ছিল। রামুর মেয়েটা অল্প বয়সে বাচ্চা জন্ম দিতে গিয়ে মারা গেল। ইশানপুরের লোকেদের আজকের দিনেও
একটাই চিন্তা, মেয়েদের তাড়াতাড়ি বিয়ে দেওয়া। আজ পর্যন্ত কোনও মেয়ে মাধ্যমিক পাশ করেনি। যাদের বিয়ে হয়নি তাদের বাড়ীতে বসিয়ে ঘরের কাজ শেখাচ্ছে সংসার করার জন্য। কি আজব মানুষগুলো! তুমি
আবার তাদের দলে পরো না যেন। রাজকুমারীর মতো ছাত্রী কমই পাওয়া যায়। তোমরা যদি ওর পাশে থাকো তাহলে মেয়েটা অনেকদূর অগোতে পারবে। এই কথাগুলো বলার জন্যই তোমাকে ডেকেছিলাম।"
“না না দিদিমণি, আমি বাইচা থাকতে ওর লেখাপড়া বন্ধ করুম না। রক্ত বেইচা হইলেও পুলা-মাইয়ারে পড়ামু। আপনেরা আশীর্বাদ রাইখেন!"
"আমরা সবসময় ওর পাশে আছি। কিন্তু প্রাইমারী স্কুল থেকে বেরুনোর পর তোমাকেই সবকিছু খেয়াল রাখতে হবে," গীতা দিদিমণি বললেন।
"দিদিমণি আমি হগল সময় রাজকুমারীর খেয়াল রাখুম।"
বিশু খুশী মনে বাড়ী ফেরে। মাঝে-মাঝে বাপ মেয়েতে গল্প হয়। রাজকুমারী বাবার গলা জড়িয়ে ধরে বলে, "বাবা আমি লেখাপড়া শিখে যখন চাকরী করুম তখন তোমারে কোনও কাম করতে দিমু না। তুমি
আর মা শুধু আরাম করবা, কষ্ট করতে হইব না।"
বিশু হেসে বলল, "না রে মা, বইসা থাকুম না। তয় তোরা ভাই-বোন যখন চাকরী করবি আমি দুধের ব্যবসা অনেক বড় করুম!"
"তাই কইরো বাবা।"
রাজকুমারী বড় হতে থাকে। প্রাইমারী স্কুলে বৃত্তি পরীক্ষায় সে জেলার মধ্যে তৃতীয় হয়েছে। বিশু, বাড়ির সবাই, স্কুলের দিদিমণিরা খুব খুশী। রাজকুমারী অন্য স্কুলে চলে গেল। স্কুলটা ওদের বাড়ি থেকে বেশ দূরে।
গ্রামে একটা স্কুল আছে, কিন্তু বিশুর ইচ্ছে রাজকুমারীকে ওই স্কুলেই পাঠাবে। ওটা হাইয়ার সেকেন্ডারি স্কুল, ক্লাস সিক্স থেকে টুয়েলভ অবধি। ওর সঙ্গের কোনও মেয়ে এত দুর যাবে না। ওর সঙ্গী ছেলেরা
আর বরুণ এখনও ছোট ক্লাসে রয়েছে।
নিন্দুকেরা নানা কথা বলতে থাকে, শশীবালাও বাধা দেন। গ্রামের মহিলারা বলতে থাকে, "বিশুর খুব দেমাক হইছে মাইয়ারে লইয়া।পড়ায় ভালো দেইখা বড় ইস্কুলে পাঠাইব।"
"পাঠাক বড় ইস্কুলে, তাইলেই তো দেমাক ভাঙ্গব। বড় ইস্কুলে আরও কত জায়গা থাইকা ছাত্র আইব তখন আর কুমারী এক নম্বর হইতে পারব না।"
"তখন বিশু লেখাপড়া বন্ধ কইরা মাইয়ার বিয়া দিব।"
"হেইডাই ঠিক হইব। বান্দর মাইয়া খাঁচায় ঢুকব।"
Near Part
All Bengali Stories
100
101
102
103
104
105
106
(107)
108
109
## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers.
The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation.
Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##
◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717