Home   |   About   |   Terms   |   Library   |   Contact    
A platform for writers

গরল

বাংলা গোয়েন্দা গল্প

All Bengali Stories    100    101    102    103    104    105    106    107    (108)     109    110   

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ আমাদের এই ওয়েবসাইট ( RiyaButu.com )-এ প্রকাশিত গল্পগুলির মধ্যে থেকে কিছু গল্প নিয়ে এবছরই প্রকাশিত হবে আমাদের 'রিয়াবুটু'র গল্প'।
--------------------------



গরল
( গোয়েন্দা গল্প)
স্বরচিত গল্প প্রতিযোগিতার ( নগেন্দ্র সাহিত্য পুরস্কার , ২০২১) একটি নির্বাচিত গল্প
লেখিকা- সন্দীপা সরকার মুখার্জী, পিতার নাম- শ্রী সুকুমার সরকার, তালপুকুর, শ্রীরামপুর, হুগলী


30 th June, 2021

## গরল
( গোয়েন্দা গল্প)
লেখিকা- সন্দীপা সরকার মুখার্জী, পিতার নাম- শ্রী সুকুমার সরকার, তালপুকুর, শ্রীরামপুর, হুগলী
পর্ব ৩

অন্যান্য পর্বগুলিঃ পর্ব ১     পর্ব ২     পর্ব ৩    

গরল
পর্ব ৩
#
রাজন্যা ফোনটা রেখেই অরিজিতকে ফোন লাগাল, "বুঝলে অরিজিত, মেয়েটির নাম রিমা বিশ্বাস। বিনীতা-দেবীদের বাড়ি যেতে যে রেল-গেট পড়ে সেখানে থাকে। কখন যাবে বলো?"
"কাল যেতেই পারি। ওকে, কাল তবে সকাল দশটা নাগাদ চলে এসো।"

#
"আচ্ছা, রিমা বিশ্বাস বলে কেউ কি এখানে থাকেন?" অরিজিতের কথা শুনে একজন মাঝবয়সী লোক রেলের বস্তির রাস্তার ধারে কলে বালতি ভরতে-ভরতেই ঘুরে তাকিয়ে বেশ অবাকের সুরে মাথাটা চুলকে উত্তর দিলেন, "রিমা বিশ্বাস? কই এমন নামে তো কাউকে চিনি না। কি ব্যাপার বলুন তো?"

"না, তেমন কিছু না," বলে অরিজিত রাজন্যাকে ইশারা করতে সামনে এগিয়ে গেল দু'জনে। বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসা করেও রিমার খোঁজ না পেয়ে হতাশ হয়ে যখন বস্তি থেকে বেরিয়ে আসছে এমন সময় একজন মহিলা দাঁতে গুড়াকু মাজতে-মাজতে ওদের সামনে এসে দাঁড়িয়ে "রিমা বিশ্বাসকে খুঁজছেন? সে তো মাস-খানেক হল বস্তি ছেড়ে চলে গেছে।"

"আপনি চিনতেন ওকে?"

"বিলক্ষণ চিনতাম। ও এই বস্তিতে থাকত না, পাশের বস্তিতে থাকত। আমার বাপের বাড়ির পাশে। এই বস্তির কেউ ওকে চিনবে না। কি জানতে চান বলুন?"

"ও কি ছোট থেকেই ওই বস্তিতে থাকে? বাড়িতে কে-কে আছেন?"

"মেয়েটা ওর মায়ের সাথে পাঁচ-মাস হল বস্তিতে ঘর ভাড়া নিয়ে থাকছিল। কারো সাথে তেমন কথা বলত না। ছিপছিপে গড়ন, তবে মেয়েটি মাস-খানেক বস্তিতে থেকেই ওই যে বড় খেলোয়াড় আছে না, বিনীতা খাস্তগির, ওর বাড়িতে চলে গেছিল। রিমার মা খালি ওখানে থাকত।তবে ওদের চাল-চলন বেশ বড়লোকদের মত ছিল। রিমা মাঝে-মাঝে ওর মায়ের সাথে দেখা করতে আসত। মা- মেয়ে বস্তিতে থাকলেও জামাকাপড় বেশ দামি পরত। রিমা ওই মহিলাকে 'মা' বলে ডাকত বটে, তবে ওই মহিলাকে রিমার মা বলে মনে হত না। চুলগুলো কেমন যেন পরচুলার মত লাগতো। এই মাস-খানেক হল হঠাৎ করেই বস্তি ছেড়ে চলে গেল। কোথায় গেল তা বলতে পারব না। কিন্তু ওদের খোঁজ কেন নিচ্ছেন?"

"দরকার আছে ওদেরকে। অরিজিত কিছু বুঝতে পারছ?"

"হুম, ডাল মে কুছ কালা।"

"পুরো ডালটাই কালো। এক মুহূর্ত আর দেরি করা যাবে না। পাখিরা ফসকে গেছে। বেশী দূর ওড়ার আগেই খাঁচায় ভরতে হবে," কথাগুলো বলতে-বলতেই দু'জনে সজোরে পা চালিয়ে গাড়িতে বসলো। বস্তির সেই মহিলা ওদের কথার মাথামুণ্ডু কিছু বের করতে না পেরে অপলক দৃষ্টিতে ওদের গাড়ি অবধি যাওয়া দেখছে আর দাঁতে জোরে-জোরে আঙুল চালাচ্ছে।

"এখন কি করে ওদের খোঁজ পাব? না কোন ছবি, না ঠিকানা!"

"ছবি তো পেতেই পারি অরিজিত। সন্ধানী ক্লাবে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে গিয়েই বিনীতা-দেবীর সাথে রিমার আলাপ হয়েছিল। সেখানে নিশ্চয়ই ছবি থাকবে।"

"তোমার হঠাৎ ওই মেয়েটিকেই খুনি কেন মনে হচ্ছে?"

"গরিবের মেয়ে, ভাল খেলে দেখে উনি বাড়িতে ঠাঁই দিয়েছিলেন।"

"বস্তির মহিলার কথা অনুযায়ী ওদের পোশাকে গরিবিয়ানার ছাপ ছিল না। কিছু তো রহস্য আছেই। এই বিষটি হয়ত মেয়েটিই প্রয়োগ করেছে। এই বিষের ধর্ম অনুসারে প্রতিদিন প্রয়োগের ফলে ধীরে-ধীরে শরীরে উপসর্গ শুরু হবেই। মাস তিনেকের মধ্যে মৃত্যুর কোলে মানুষটি আপনিই ঢলে পড়বে। কোনও সাধারণ মানুষের ধরা সম্ভবই না। সকলে ভাববেন শারীরিক অবক্ষয়, তার থেকে চুল ওঠা, পক্ষাঘাত, শেষে হার্টফেল। কপালের জোরে ডাক্তারবাবুও এই সময় দেশে নেই। সব মিলিয়ে প্ল্যান সাকসেসফুল। আমার যদিও পুরোটাই অনুমান।"

"হুম, বুঝলাম। সব অনুমান যদি সত্যি ধরেও নেই তাহলে নেক্সট পদক্ষেপ রিমাকে খুঁজে বের করা।"

"অরিজিত, এখনি আমাদের সন্ধানী ক্লাবে যেতে হবে। রিমার ছবি জোগাড়ের সাথে রিমার যদি ডিটেলস কিছু পাওয়া যায় জানতে হবে। আর সময় নষ্ট করা ঠিক হবে না।"

#
"দেখি ভেতরে কেউ আছেন কিনা। সকালবেলা ক্লাবে কেউ থাকলে হয়," অরিজিতের কথা শেষ হতে না হতেই ক্যারাম খেলার শব্দ ওদের কানে আসছে, সাথে কিছু ছেলেদের কথাবার্তা।

"কপাল ভাল আছে অরিজিত। দেখি, কতদূর কি জানা যায়..."

ক্লাবের দরজার সামনে এসে অরিজিত বেশ গম্ভীর গলায় নিজের পরিচয় পত্র দেখিয়ে, "আমি লোকাল থানার ইনভেস্টিগেটিভ অফিসার অরিজিত ঘোষ আর ইনি হলেন প্রাইভেট ডিটেকটিভ রাজন্যা রায়।"

ক্লাবে উপস্থিত ছেলেরা খেলা থামিয়ে একে-অপরের দিকে মুখ চাওয়া চাইয়ি করতে লাগল। ওদের মধ্যে একটি ছেলে এগিয়ে এসে অরিজিতের দিকে তাকিয়ে বলল, "আমি এই ক্লাবের সেক্রেটারি, রতন পাল। কি হয়েছে? যদি খুলে বলেন একটু..."

"একটা বিশেষ দরকারে এসেছি। মাস চারেক আগে আপনাদের ক্লাবের পক্ষ থেকে একটা আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছিল। তাতে প্রধান অতিথি হিসেবে বিনীতা-দেবী এসেছিলেন। সেই প্রতিযোগিতাতে রিমা বিশ্বাস নামে একটি মেয়ে প্রাইজ পেয়েছিল। তার ছবি লাগবে। আশা করছি অনুষ্ঠানের ছবি আপনাদের কাছে আছে।"

"হাঁ, ছবি তো তোলা হয়েছিল সেদিন... দাঁড়ান অ্যালবামটা দেখাচ্ছি," কথাটা শেষ করেই রতন আলমারি থেকে একটা অ্যালবাম বের করে অরিজিতের হাতে দিল। অরিজিত আর রাজন্যার ফটোগুলো দেখতে-দেখতে প্রাইজ দেওয়ার ফটোটাতে গিয়ে চোখ আটকালো; বিনীতা-দেবী পুরস্কার তুলে দিচ্ছেন, তিনটি মেয়ের হাতে। সকলেই পেছন ফিরে, বিনীতা-দেবীর মুখটা দেখা যাচ্ছে, বাকিদের মুখ দেখা যাচ্ছে না। রাজন্যা রতনকে জিজ্ঞাসা করল, "এই ছবি ছাড়া ফ্রন্টে কোন ছবি নেই এই মেয়ে তিনটির?"

"যা আছে, এই আছে। তবে অনুষ্ঠানের সিডিটা দেখতে পারেন। সকাল থেকে পুরো অনুষ্ঠানটাই কভার করা হয়েছিল সেদিন।"

"তাহলে তো খুব ভাল হয়। কি বলো অরিজিত? আপনি সিডিটা আমাদের দিন।"

ছেলেটি আলমারি থেকে একটা সিডি বের করে রাজন্যার হাতে দিল। সেটা নিয়ে দু'জনেই ওখান থেকে বেরিয়ে সোজা অরিজিতের ফ্ল্যাটে গেল। রাজন্যা দু'গ্লাস সরবত বানিয়ে সাথে কিছু চিপস প্লেটে নিয়ে সোফায় এসে বসলো। ততক্ষণে অরিজিতের ল্যাপটপে সিডিটা সেট করা হয়ে গেছে। সরবতের গ্লাসে চুমুক দিতে-দিতে অনুষ্ঠানের খুঁটি-নাটি বেশ মনোযোগ দিয়ে দেখছে দু'জনে। ওয়েট লিফটিংয়ে দু-চার জনের পর রিমার টার্ন এলো। বেশ বলিষ্ঠ চেহারা। বাহুতে ট্যাটু করা। তবে সেটার আদ্যাক্ষর 'এস' লিখে চারপাশে ফুল কাটা নক্সা। রাজন্যা ওখানে সিডিটা স্টপ করতে বলে ভাল করে দেখতে লাগলো ক্লোজে এনে, "অরিজিত, ভাল করে দেখ রিমার বাহুতে 'এস' লেখা ট্যাটু। গরিবের মেয়ের হাতে ট্যাটু? এইসব বানাতে তো বেশ টাকা খরচা হয়!"

"হুম, ঠিক পয়েন্ট বের করেছ রাজন্যা। এই মেয়েটিকে খুঁজে বের করা জরুরী। কিন্তু এর কাছ অবধি যাব কি করে? না কোনও ক্লু, না ঠিকানা। কিচ্ছু তো নেই।"

"আচ্ছা অরিজিত, ধরে নিলাম এই মেয়েটিই খুনি। তাহলে আমাদের প্রথমত এটা ভাবতে হবে বিনীতা-দেবীর সাথে এর নিশ্চয়ই কোন পুরানো শত্রুতা আছে। না হলে একজন আশ্রয় দিলেন আর তাকেই খুন করে দিল! এটা তো ঠিক হজম হচ্ছে না। দ্বিতীয়ত, আমাদের একটু বিনীতা-দেবীর পাস্ট লাইফ ঘাঁটতে হবে। আমার মনে হচ্ছে ওইখানেই রহস্যের মূল বীজ পোঁতা আছে। তুমি যেভাবে হোক বিনীতা-দেবীর পাস্ট লাইফ বের করো। একটা পথ তোমাকে বলতে পারি, যদি কাজে আসে। আমি খুব ছোটবেলায় বাড়িতে বড়দের মুখে শুনতাম সকালবেলা বলে একটা দৈনিক পত্রিকাতে বিনীতা-দেবীর সম্বন্ধে ছাপা হত। সেই কাগজটা যদিও এখন নেই। এই কাগজের মালিকের খোঁজ পেলে অনেক অজানা তথ্য পেতে পারি বিনীতা-দেবীর সম্বন্ধে।"

"দেখছি কতদূর কি করা যায়। আমারও মনে হচ্ছে, শত্রুতা না থাকলে কেনই বা কেউ স্লো-পয়জনিং করে মারবে। তবে মেয়েটি পাকা মাথার খুনি। অবশ্যই বুদ্ধিমতী। না হলে এইভাবে খুনের ছক কষে। সব ক'টা ওষুধের শিশিতে বিষ মিশিয়ে রেখে মৃত্যুর ঠিক মাস-খানেক আগে বিয়ে বলে গায়েব হয়ে যাওয়া, যাতে ওর ওপর কোন সন্দেহ না আসে। খুন হবে, তবে খুনি জানা যাবে না। সত্যিই ভাবা যাচ্ছেনা।"

"ঠিক আছে অরিজিত, বাড়ি যাব। ড্রপ করে দাও। ওখান থেকে কিছু তথ্য পেলে কেসটা এগোনো যাবে।"

"এগোনো যাবে কি বলছো, এগোতেই হবে। স্যার মাথা খারাপ করে ছাড়ছেন। রোজ খালি হুমকি দিচ্ছেন কেসটা হাত বদল করার।"

"তোমার স্যার আস্ত একটা পাগল। ঠিক রহস্যের সমাধান হবে, ঘাবড়িওনা।এখন চলো। অনেক লেট হয়ে গেছে। বাড়ি যেতে হবে।"

বাড়ি এসে রাজন্যা দুপুরের খাবার খেয়েই ল্যাপটপে বসে পড়লো বিনীতা-দেবীর হিস্ট্রি ঘাঁটতে, সেরকম কিছুই নজরে এলো না, যার জেরে উনি খুন হতে পারেন। ভাল ছাড়া খারাপ কোন তথ্যই নেই। ওদিকে অরিজিত গোপনে যারা পুলিশ ডিপার্টমেন্টের হয়ে কাজ করেন তাদের দিয়ে খোঁজ লাগাতে লাগলো সকালবেলা পত্রিকার মালিকের। যিনি একটা সময়ে নিজের কাগজে বিনীতা-দেবীর সম্বন্ধে লিখতেন। অবশেষে শ্যামবাজারে খোঁজ মিলল সকালবেলা পত্রিকার মালিক দেবাংশু বসুর। খোঁজ পাওয়া মাত্রই রাজন্যা-অরিজিত সেখানে গিয়ে হাজির হল। বেল দিতে একজন লোক দরজা খুললেন। বয়স সত্তরের বেশী। ওদেরকে দেখে লোকটি প্রায় চমকিয়ে উঠলেন। পুলিশের বেশে অরিজিত। চমকানোরই কথা।

"আপনারা.....?"

"দেবাংশু-বাবু আছেন?"

"আমিই দেবাংশু।"

"কিছু প্রাইভেট কথা ছিল। তার জন্য বসে কথা বলতে হবে।"

"নিশ্চয়ই, ভেতরে আসুন।"

ভেতরে গিয়ে বসে অরিজিত দেবাংশু-বাবুকে প্রশ্ন করল, "আপনার ভবানীপুরে একটা বাড়ি ছিল না?"

"ছিল, তবে অনটনের জন্য বিক্রি করতে হয়েছিল। হঠাৎ করেই পত্রিকা অফিস বন্ধ হয়ে যেতে খুব অর্থ সংকটে পড়েছিলাম। তখনই বাড়িটা বিক্রি করতে হয়েছিল।"

"আপনি তো বিনীতা-দেবীর সম্বন্ধে আপনার কাগজে প্রতিনিয়ত লিখতেন। আমাদের যদি ওঁর জীবনী সম্বন্ধে কিছু বলেন। মানে ব্যক্তি হিসেবে ঠিক কেমন ছিলেন?"

"প্রথমে তো একজন ভাল স্পোর্টস-ওম্যান বলেই চিনতাম। কিন্তু পরে সেই ধারণাটা......যাকগে। আপনারা হঠাৎ ওঁর সম্বন্ধে আমার কাছে জানতে চাইছেন? আমি তো কবেই শেষ হয়ে গেছি। পত্রিকার ব্যবসা তো কবেই গুটিয়ে ফেলতে বাধ্য হয়েছি। আরও যেসব তাবড়-তাবড় পত্রিকা খালি ওঁরই গুণগান করে, আপনারা তাদের কাছে যান। ভালোর ইমেজটা বিনীতা ধরে রাখতে সক্ষম।"

"আপনার কাছে এসেছি কারণ আপনি যতটা ওঁর সম্বন্ধে খুঁটিনাটি লিখতেন আর কোন পত্রিকা সেরকম লিখতো না। আপনি দয়া করে যা জানেন বলুন।"

"কি ব্যাপার বলুন তো? আমি তো বললাম ওই মহিলা সম্বন্ধে কিছু জানিনা। এখন আসুন। আমার রোগীরা একটু বাদেই চলে আসবে। বুড়ো বয়সে এটা করেই খেতে হয়।"

"রোগীরা মানে? আপনি কি ডাক্তার? পত্রিকা অফিস থেকে ডাক্তার! আপনি কি আগে থেকেই প্র্যাকটিস করতেন?"

"না, পত্রিকা ব্যবসা লাটে ওঠার পর বলতে পারেন বাধ্য হয়েই ডাক্তারি পড়েছিলাম। সায়েন্স গ্র্যাজুয়েট ছিলাম বলে চান্স পেতে কষ্ট হয়নি। হোমিওপ্যাথি ডাক্তার হয়ে গেলাম। পেটের ভাতটা জুটে যায়।"

"আর একটা কথা, আপনি তো লাইসেন্স প্রাপ্ত সাংবাদিক ছিলেন। কি এমন ঘটেছিল যে এমন পপুলার কাগজ উঠে গেল। ভরাডুবিই বা কেন হল?"

"সব কপাল, এখন আপনারা আসুন। আমি যা জানতাম বলে দিয়েছি।"

ভদ্রলোকের নন-কোঅপারেশন মনোভাব দেখে রাজন্যা আর অরিজিত ওখান থেকে বাধ্য হল চলে আসতে। গাড়িতে উঠতেই রাজন্যা বলল, "ভদ্রলোক কিছু লুকাচ্ছেন। অনেককিছু জানেন, আমার আন্দাজ। পত্রিকাটা কেন উঠে গেছিল, কিছুতেই বললেন না; দেখলে...। অরিজিত যেভাবে হোক আমাদের জানতেই হবে। কিন্তু কিভাবে জানবো?"

"দাঁড়াও, আমার মামার একজন বন্ধু সাংবাদিকতা করতেন। এই ভদ্রলোকের কাগজ সম্বন্ধে যদি কিছু জানেন। মামাকে ফোনটা করি,"অরিজিত ফোন করে সব কথা ওর মামাকে জানিয়ে খোঁজ নিতে বলাতে ওদিক থেকে অরিজিতের মামা জানালেন রাতের দিকে জানাচ্ছেন। যদি ওই সাংবাদিক বন্ধু এবিষয়ে জানেন তবে ঠিক বলে দেবেন। মামার বলা কথাগুলো রাজন্যাকে অরিজিত জানাতে, "ধুর, কোনও কিনারাই করতে পারছিনা। লোকটা একটা কথাও বললেন না। তাহলে তো কেসটা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারতাম। কিচ্ছু ব্লু নেই অরিজিত। অন্ধকারে হাতড়াচ্ছি।"

"কি আর করব। কেসটা হয়ত হাতছাড়া হয়ে যাবে," খুব হতাশ হয়ে কথাটা বলল অরিজিত। রাতে অরিজিতের মামার ফোন এল। একে-একে সব ঘটনাগুলো শুনে অরিজিত আবার রাজন্যাকে জানালো। রাজন্যা সব শুনে অরিজিতকে বলল, "ওই জন্য দেবাংশু-বাবুর রাগ বিনীতা-দেবীর ওপর। তবে এই কথাগুলো এড়িয়ে গেলেন কেন? এটা জানতেই আমাকে আবার ওঁর বাড়ি যেতে হবে।"

"তুমি একা যাবে?"

"হ্যাঁ অরিজিত। দেখিই না আমার কথার চালে উনি কিছু বলেন কিনা।"

পরেরদিন রাজন্যা আবার গিয়ে হাজির দেবাংশু-বাবুর বাড়ি। দরজা খুলেই দেবাংশু-বাবু রাজন্যাকে দেখে খুব বিরক্তি প্রকাশ করলেন, "আপনি, আবার কেন এসেছেন? কাল তো বলে দিলাম যা বলার।"

"না, অনেক কিছুই বলেন নি। আপনার পত্রিকাতে আপনি বিনীতা-দেবীর সম্বন্ধে কিছু ছেপেছিলেন, তার খেসারত হিসেবে আপনার পত্রিকার লাইসেন্স বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল চিরকালের মত। আপনি যাতে সাংবাদিকতা না করতে পারেন তার ব্যবস্থাও করা হয়েছিল। সব আমি জানতে এসেছি। দেখুন এটা একটা মার্ডার কেস৷ পুলিশ ডিপার্টমেন্ট নাজেহাল। আমি তাদের হেল্প করছি। আপনারও একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে এগিয়ে আসা উচিৎ।"

"সচেতন নাগরিক!! পুলিশ সেদিন কোথায় ছিল, যেদিন এই বিনীতা মোটা টাকার বিনিময়ে একটা গরিব মেয়েকে ঠকিয়েছিল?"

"আমি তো সেগুলোই জানতে এসেছি। আপনি যা জানেন বলুন।"

"সব বললে আপনারা বিশ্বাস করবেন?"

"কেন করব না!"

"শুনুন তবে। আমার থেকে বয়সে ছোট হলেও বিনীতাকে খুব শ্রদ্ধা করতাম। ওর নিষ্ঠা সহকারে কোচিং চালানো, দান-ধ্যান করতেও শুনেছিলাম। সব মিলিয়ে ওর প্রতি একটা আলাদা শ্রদ্ধা ছিল আমার। ওকে নিয়ে লিখেই কাগজের খেলার পাতা ভরাতাম। আমার এক বন্ধুর মেয়েকে ওর কোচিংয়ে আমিই ঢুকিয়েছিলাম। মেয়েটা পাড়ার ক্লাবে ওয়েট লিফটিং করত। বিনা পয়সায় প্রশিক্ষণ পেত। সেখানে থাকলে ন্যাশনাল বা অলিম্পিকে চান্স পাওয়া যেত না বলেই বিনীতার সাথে কথা বলে ওর কোচিংয়ে ঢুকিয়েছিলাম। খরচা আমি চালাতাম। আমার বন্ধু অনিমেষ হঠাৎ করেই একটা অ্যাক্সিডেন্টে মারা যাওয়াতে ওদের আর্থিক অবস্থার অবনতি ঘটে। জমানো অর্থ শেষ হয়ে গেল বছর দুয়েকের মধ্যে। প্রাইভেট চাকরী। কতই বা মাইনে পেত! পেট চালাতে বন্ধু-পত্নী সেলাই করে উপার্জন করতে লাগলেন। তাতেই সংসার চলতো মা আর দুই মেয়ের। আমি হেল্প করতাম। অনিমেষ মারা যাওয়ার সময় আমার হাত ধরে বলে গিয়েছিল নীলা আর শীলা দুই মেয়েকে যেন আমি আগলে রাখি। নীলা বেঙ্গল চ্যাম্পিয়ন হল। ন্যাশনাল জিতল। কিন্তু টাকার লোভে অলিম্পিকের ফাইনাল সিলেকশনের দিন বিনীতা ওকে সরিয়ে দিল। নীলার বদলে অলিম্পিকে পাঠিয়েছিল এক মশলা কোম্পানির মালিকের মেয়ে সিমিকে। এর জন্য বিনীতা তিন কোটি নিয়েছিল। নীলা বাড়িতে এসে বলেছিল ওর সাথে কারচুপি হয়েছে। নীলা পরিষ্কার দেখেছিল সেই কোম্পানির মালিক একটা ব্রিফকেস নিয়ে বিনীতার চেম্বারে গিয়েছিল। নীলাকে বেশ কনফিডেন্টলি সিমি বলেছিল, ও সিলেক্ট হবেই। কিন্তু নীলার থেকে ওর পারফরম্যান্স খারাপ ছিল। নীলা বেস্ট ছিল। ফাইনাল তালিকা যখন তৈরি হল নীলার বদলে সিমি গেল অলিম্পিকে। যেহেতু আমি সাংবাদিক, সেহেতু আমার থেকে কোনও টাকা চায়নি বিনীতা। যদি ওর স্বরূপটা মিডিয়াতে ফাঁস করে দি। সেদিন মেয়েটার সব স্বপ্ন ভেঙ্গে গেছিল। খালি বলত 'কাকু, দেখো, খেলেই আমি সরকারি চাকরি জোটাব'। আর চাকরি! বাড়ি এসে রাতের বেলা গলায় দড়ি দিল৷ সেই শোকে বৌদিও একদিন পুকুরে ঝাঁপ দিয়ে মারা গেলেন। পড়ে থাকল বছর আটের ছোট্ট শীলা। সবকিছু আমার পত্রিকাতে লেখা শুরু করেছিলাম। কারচুপির সব কথা। ইনফ্লুয়েন্স খাটিয়ে প্রমাণের অভাবে বিনীতা হল ধোয়া তুলসীপাতা আর আমি হলাম মিথ্যেবাদী সাংবাদিক। লাইসেন্স বাতিল করিয়ে ছাড়ল আমার। কেসে জড়িয়ে বাড়ি বিক্রি করলাম। সর্বস্বান্ত করে ছাড়ল আমাকে।"

"শীলা এখন কোথায়?"

কথাটা শুনে বেশ আতঙ্কিত গলায়, "তা আমি জানব কি করে? সে কবেকার কথা... সে মেয়ে কোথায়, কার কাছে মানুষ হল তা জানিনা। এবার আসুন আপনি।"

"সত্যি শীলা কোথায় জানেন না? এটা কি বিশ্বাসযোগ্য? যাদেরকে সর্বদা গার্জেনের মত আগলে রাখতেন, তাদের পরিবারের অসহায় ছোট মেয়েটিকে আপনি একলা ছেড়ে দেবেন! এটা কেউ বিশ্বাস করবে না দেবাংশু-বাবু।"

"ওদের এক আত্মীয় ওকে নিয়ে গেছিলেন। তাঁরা নিঃসন্তান ছিলেন।"

"সেই ঠিকানাটাই আমাদের দিন।"

"আরে, বলছি তো জানিনা, জানিনা- জানিনা। আর কতবার বলব? এই, আপনি এবার আসুন। আর আসবেন না। আমি আর কোন প্রশ্নের উত্তর দেব না।"

"বেশ, ধরে নিলাম আপনি কিছু জানেন না। শীলা এখন কেমন হয়েছে দেখবেন? এই দেখুন শীলা। শীলাও দিদির মত ওয়েট লিফটিং করে।"

শীলার ছবিটা দেখে দেবাংশু-বাবু চমকে উঠে তোতলাতে লাগলেন, "এ-সব আ-মা-কে দেখানোর মানে?"

"শীলা খুন করেছে দেবাংশু-বাবু। যতই ওকে বাঁচানোর চেষ্টা করুন, ধরা পড়বেই। পুলিশ ওর খোঁজে মরিয়া হয়ে ঘুরছে।"

রাজন্যা লক্ষ্য করছে দেবাংশু-বাবুর মুখে চিন্তার ছাপ।

"কি ভিত্তিতে ওকে খুনি বলছেন?"

"ধরা পড়লেই সব প্রমাণ ওর বিরুদ্ধেই যাবে। তখনই জানবেন। এর সাথে পালিয়ে গা ঢাকা দেওয়ার শাস্তিও কিছু কম হবে না।"

"সেদিন কোথায় ছিলেন আপনাদের মত ডিটেকটিভ, তৎপর পুলিশরা, যেদিন বিনা অপরাধে একটা ব্রাইট ফিউচারের মেয়েকে, তার মাকে, আত্মহননের পথ বেছে নিতে হয়েছিল। আপনি এখন আসুন রাজন্যা-দেবী। আর কখনো আসবেন না। কারণ আমি কিছু জানিনা। বেকার আমার-আপনার দু'জনেরই সময় নষ্ট করবেন না।"

"আপনি বিরক্ত হবেন না প্লিজ। আচ্ছা আমার কিছু প্রয়োজন হলে আপনাকে ফোন তো করতে পারি? আপনার নম্বরটা পেলে ভাল হত।"

দেবাংশু-বাবু অনিচ্ছা স্বত্বেও রাজন্যাকে ফোন নম্বর দিলেন। রাজন্যাও তখনি ফোন করে নম্বরটা যাচাই করে নিল। ওখান থেকে বেরিয়েই রাজন্যা অরিজিতের সাথে থানায় গিয়ে দেখা করে সব জানাল, সাথে দেবাংশু-বাবুর নম্বরটা দিয়ে বলল, "এখনি দেবাংশু-বাবুর ফোন ট্যাপ করার ব্যবস্থা হোক। কারণ উনি ঠিক যোগাযোগ করবেন শীলার সাথে।"

অরিজিত আশার আলো দেখে বলল, "নম্বরটা এনে ভালই কাজ করেছ, এই না হলে ডিটেকটিভ সাহেবা।"

তিন-চারদিন কেটে গেল। দেবাংশু-বাবুর কাছে পেশেন্ট ছাড়া সন্দেহজনক ফোনই এলো না। পুলিশ ডিপার্টমেন্ট হন্যে হয়ে খুঁজছে শীলাকে। শহর চষে ফেলেও মেয়েটির খোঁজ পাওয়া গেল না। খুনি কিনা তা প্রমাণিত না হলে অন্য রাজ্যের থানাগুলোর সাথে যোগাযোগ করাও যাচ্ছে না। অফিসারদের নিয়ে মিটিং বসালেন অফিসার প্রণয় রায়। কেসটা সলভ করতে অরিজিত ব্যর্থ হয়েছেন জানিয়ে কেসটা তিনি নতুন অফিসার প্রিয়তোষকে দিতে চান জানাতে সকলে অবাক হয়ে এর তার মুখের দিকে চাইতে লাগলেন। অরিজিত লজ্জিত ভাবেই প্রনয়-বাবুর থেকে আজকের দিনটা চেয়ে নিল এবং বলল আজ রাতের মধ্যে যদি খুনিকে না ধরতে পারে প্রিয়তোষ-বাবুর হাতে কেসটা সে নিজে তুলে দেবে। এই কথা শুনে প্রণয়-বাবু বললেন, "এতদিনে পারলেন না, রাতারাতি কি করবেন যে, খুনি চলে আসবে? তাও আপনার কথা শুনে এই ক'ঘণ্টা সময় দিলাম। রাত বারোটা বেজে গেলেই কেসটা প্রিয়তোষকে হ্যান্ড-ওভার করা হবে।"

রাজন্যা অরিজিতের মুখে মিটিংয়ে হওয়া সব কথা শুনে ওর এক বান্ধবীকে কাজে লাগাল। দেবাংশু-বাবুকে ফোন করাল বান্ধবীকে দিয়ে। মেয়েটি আতঙ্কিত গলায় জানাল শীলার অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে একটু আগে। বলেই ফোনটা কেটে দিল। রাজন্যার দৃঢ় বিশ্বাস যদি শীলার সাথে যোগাযোগ থাকে ঠিক ফোন করবেন দেবাংশু-বাবু। খবরটা শুনে দেবাংশু-বাবু আতঙ্কিত গলায় ফোন করলেন একটা নম্বরে, "মামনি, তুমি কেমন আছ? তোমার অ্যাক্সিডেন্টের খবর পেলাম।"

"আমার অ্যাক্সিডেন্ট? কই নাতো, কে বলল?"

"মামনি ফোন রাখো। এটা পুলিশদের চাল মনে হচ্ছে। যা ভয় করছিলাম তাই হল। ওরা নিশ্চয়ই ফোন ট্যাপ করেছে। মামনি, তুমি সাবধানে থেকো..." বলেই ফোনটা কেটে দিলেন। অরিজিতরা দেখল লোকেশন হরিয়ানার একটি জায়গা। তার মানে, সন্দেহ ঠিক। শীলাই খুনি। প্রনয়-বাবুর কাছে রেকর্ড শোনানো হল। সঙ্গে-সঙ্গে হরিয়ানা পুলিশের সাথে কনট্যাক্ট করে লোকেশন জানিয়ে শীলার ফটো ফ্যাক্স করা হল। এদিকে দেবাংশু-বাবুর বাড়িও সিভিল ড্রেসে পুলিশ দিয়ে ঘিরে রাখা হল। হরিয়ানা পুলিশের তৎপরতায় ধরা পড়ল শীলা। ওকে তুলে দেওয়া হল পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের হাতে। দেবাংশু-বাবুকেও অ্যারেস্ট করা হল। ততক্ষণে প্রণয়-বাবু জেনে গেছেন রাজন্যার বুদ্ধির জোরেই ধরা পড়ল শীলা। জেরা রুমে প্রণয়-বাবু, অরিজিত, একজন লেডি অফিসারের সাথে রাজন্যাও থাকার পারমিশন পেল। জেরার মুখে পড়ে শীলা স্বীকার করল খুনটা ওই করেছে। এজন্য যা শাস্তি হওয়ার হোক, এতে ওর আফসোস নেই। প্রণয়-বাবু জেরা করছেন শীলাকে, থ্যালিয়াম কি করে পেলেন শীলা-দেবী। কোন মুখ খুলছে না দেখে রাজন্যা প্রনয়-বাবুর থেকে পারমিশন নিয়ে শুরু করল জেরা, "শীলা-দেবী, আপনি না বললেও আমি কিন্তু জানি কি করে আপনি পেয়েছেন এমন মারাত্মক বিষ। দেবাংশু-বাবু আপনাকে দিয়েছিলেন। একজন হোমিওপ্যাথি ডাক্তারের কাছে এটা জোগাড় করা জলভাত।"

"না, জ্যেঠুকে এর মধ্যে জড়াবেন না, যা করেছি সব আমি করেছি। উনি আমার কাছে দেবতা। উনি না থাকলে আজ কে দেখতো আমাকে? ওই বিনীতার জন্য আমার দিদি, মা শেষ হয়েছিলেন। বেশ করেছি, মেরেছি।"

"বস্তিতে সাথে কে ছিল? আপনার মা সেজে?"

"ও ভাড়া করা মহিলা নাটকের দলে কাজ করে। টাকা পেয়েছে কাজ করেছে। ও খুনের কথা কিছু জানে না।"

"বন্ধ শিশিতে বিষ মিশিয়ে সিল করাটাও কিন্তু দেবাংশু-বাবুর প্ল্যান ছিল। তাইতো?"

"সব আমার প্ল্যান।"

রাজন্যা মিথ্যের আশ্রয় নিয়ে বলল, "দেবাংশু-বাবু স্বীকার করে নিয়েছেন। আপনি না বললেও কিছু যায়- আসবে না।"

"জ্যেঠু স্বীকার করে নিলেন! আপনারা ওঁকে শাস্তি দেবেন না। যা করেছেন আমার পরিবারকে ভালবেসে," কথাটা বলেই শীলা মাথায় হাত দিয়ে টেবিলে মুখ গুঁজে কাঁদতে লাগল। রাজন্যা এরপর দেবাংশু-বাবুর কাছে গিয়ে বলল, "শীলা সব স্বীকার করে নিয়েছে।"

কথাটা শুনে দেবাংশু-বাবু চেঁচিয়ে উঠলেন, "না, ওর কিছু প্ল্যান না। সব আমার বুদ্ধি। ও জানবে কি করে গরম জলে ওষুধের সিল করা শিশির মুখ ডোবালে ঢাকনা টানলেই খুলে যায়। আবার ঢাকনাটা বসিয়ে দিলে শিশির মুখটা ঠাণ্ডা হলে সিল হয়ে যায়। ও ওষুধ কিনে আমার কাছে আসত, আমি থ্যালিয়াম পাউডার মিশিয়ে সিল করে দিতাম। সব দোষ আমার। তবে যা করেছি বেশ করেছি। মেয়েটাকে ছেড়ে যা শাস্তি আমাকে দিন।"

"শাস্তি দু'জনেই পাবেন। মানছি বিনীতা-দেবী অত্যন্ত ঘৃণ্য কাজ করেছিলেন। আপনারাও একই ভুল করে ফেললেন। মানুষ মারার ভুল। অর্থ-লোভেই বিনীতা-দেবী ক্রাইম করেছিলেন এবং তৈরি হল আরও দু'জন ক্রিমিনাল," কথাটা বলেই রাজন্যা প্রণয়-বাবু আর অরিজিতের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখছে কেস সলভের আনন্দে ভরপুর।

"কেস সলভ, আসি স্যার," বলে ওখান থেকে চলে আসার সময় শুনতে পাচ্ছে, প্রণয়-বাবু অরিজিতকে বলছেন, "ভাগ্য করে একখানি ইন্টেলিজেন্টকে পাশে পেয়েছেন।"

ওখান থেকে বেরিয়েই রাজন্যা বিনীতা-দেবীর বাড়ি ফোন করলো। কথামত খুনির নামটা আগে মলিনাকেই জানালো। অরিজিত রাতের দিকে রাজন্যাকে ফোন করে আদর-মাখা গলাতে ধন্যবাদ জানিয়ে দুটো সু-খবর দিল। প্রথমত, প্রণয়-বাবু ডিপার্টমেন্ট থেকে রাজন্যাকে পুরস্কৃত করবেন বলে ওপরআলায় জানিয়েছেন। দ্বিতীয়ত, মা সাজা নাটকের দলের সেই মহিলাও ধরা পড়েছে। পরশু কোর্টে তোলা হবে সবাইকে। সব শুনে রাজন্যা বলল "আর তুমি কি দেবে আমাকে?"

"নিজেকেই তো দিয়ে বসে আছি ম্যাডাম।তবে সারপ্রাইজ গিফট একটা দেব।" ফোনের দুইপ্রান্তে হাসির কলরবের সাথে চলতে থাকলো খুনসুটি মাখা প্রেমালাপ।।
( সমাপ্ত )


Next Bangla Story   

All Bengali Stories    100    101    102    103    104    105    106    107    (108)     109    110   


## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers. The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation. Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##


◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717