Home   |   About   |   Terms   |   Library   |   Contact    
A platform for writers

সোনালী প্রজাপতি ( পর্ব ২ )

বাংলা গল্প

All Bengali Stories    106    107    108    109    110    111    112    (113)     114    115   

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ আমাদের এই ওয়েবসাইট ( RiyaButu.com )-এ প্রকাশিত গল্পগুলির মধ্যে থেকে কিছু গল্প নিয়ে এবছরই প্রকাশিত হবে আমাদের 'রিয়াবুটু'র গল্প'।
--------------------------



সোনালী প্রজাপতি ( পর্ব ২ )
বাংলা গল্প
লেখিকা - ঐশিকা বসু, বাবা- স্বর্গীয় নির্মল বসু, তালপুকুর রোড, নৈহাটি, উত্তর ২৪ পরগণা


16 th July, 2021

## সোনালী প্রজাপতি
পর্ব ২

আগের পর্ব

পর্ব ২
# জানালার ধারে একটা ছোট্ট খাট। পরী সেই খাটে শুয়ে-শুয়ে ঘরের সিলিং দেখে আর জানালা দিয়ে দেখে এক টুকরো আকাশ। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত কিভাবে এই আকাশের রং পাল্টে যায়, কত দ্রুত মেঘগুলো সরে-সরে যায় - সবটাই সে ভালোভাবে দেখে চলে। বিভা মাঝে-মাঝেই তাকে জিগ্যেস করে, সে খাবারের স্বাদ বা গন্ধ পাচ্ছে কি না। পরী জানায়, সে পাচ্ছে। সবকিছুর স্বাদ আর গন্ধ পাচ্ছে। কিন্তু পাচ্ছে না শুধু রং দেখতে। খুব ধীরে-ধীরে সমস্ত রংগুলোই কেমন যেন বর্ণহীন হয়ে যাচ্ছে তার কাছে। তার মায়ের গোলাপি শাড়ি সে আর বুঝতে পারে না, ফ্যাকাসে মনে হয়। নিজের জামার দিকে তাকালে মনে হয় কালো। বিছানার খয়েরি রঙের চাদর তার ধোঁয়াটে লাগে। শুধু দূরের ঐ আকাশের রঙ সে চিনতে পারে। হয়তো ওটাও ধীরে-ধীরে একইভাবে বর্ণহীন হয়ে যাবে। বিছানায় শুয়ে-শুয়ে সে ভাবতে থাকে, বাবা কি তার জন্য সোনার পালঙ্ক নিয়ে আসবে? হয়ত সে আনছে। অনেক দূর থেকে বাবাকে আনতে হচ্ছে, তাই এখানে এসে পৌঁছোতে তার অনেক সময় লাগছে। সে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে-থাকতে হঠাৎ লক্ষ্য করে নীল আকাশে একটা সোনালী বিন্দু। খুবই ছোট একটা বিন্দু। পরী সেটাকে আরো ভালোভাবে দেখার চেষ্টা করে। ধীরে-ধীরে সেই বিন্দুটা বড়ো হচ্ছে। খানিকক্ষণ পর সে বুঝতে পারল, ওটা কোন বিন্দু নয়। একটা প্রজাপতি। সোনালী প্রজাপতি। প্রজাপতিটা ধীরে-ধীরে এগিয়ে আসতে-আসতে জানালার গরাদে বসল। তারপর ঘরে ঢুকে সারাটা ঘরময় ঘুরে বেড়াতে লাগল। সারাটা ঘরের কালো আর সাদার মাঝখানে ঐ একটা সোনালী পতঙ্গ পরীর খুব ভালো লাগল। উড়তে-উড়তে প্রজাপতিটা একবার তার মাথার কাছে বসল। পরী ওকে হাত দিয়ে ধরতে চাইল, কিন্তু পারল না। পরীর মনে হল ওটা অশরীরী, কিম্বা ওটা একটা স্বপ্ন। ওটা আগের মতই সারাটা ঘর আরো একবার ঘুরে জানালা দিয়ে উড়ে বেরিয়ে গেল। ওর চলে যাওয়ায় পরীর খুব কান্না পেল। ও আরো কিছুক্ষণ থাকতে পারত। ওর ঐ সোনালী ছোট্ট অবয়ব নীল আকাশে মিশে যাওয়ার সাথে-সাথে পরীর চোখে সমস্ত আকাশটাই কেমন ঘোলাটে মনে হতে লাগল। চোখের কোণে জল নিয়ে সে অন্যপাশ ফিরে শুল। কিন্তু কি আশ্চর্য ব্যাপার! তার খাটের পাশেই রাখা আছে আরো একটা খাট। তবে খাটটা কাঠের নয়, উজ্জ্বল সোনালী বর্ণের। তার ওপর সুন্দর পরিপাটি করে পাতা রয়েছে বিছানা। পরীর মনে হতে লাগল ঐ খাটে শুয়ে পড়তে পারলে তার জীবনের যত কষ্ট দূর হতে পারবে। সে আনন্দে চিৎকার করে উঠল, "মা, দেখো-দেখো, সোনার পালঙ্ক। কে নিয়ে এসেছে মা এই খাটটা?"

জ্বরের ঘোরে বিকার দেখা দিয়েছে বলে বিভা পাশের বাড়ির হাঁদার মা'কে ডাকল। সে বাড়ির সামনে এসে সব শুনে বলে, "দেখো পরীর মা, তোমায় সাফ জানিয়ে রাখছি। তোমার মেয়ের জ্বর, আর তার সাথে। শ্বাসকষ্ট। তুমি এমন সময় আর বাড়ির বাইরে বেরিও না। আর আমরাও তোমার বাড়ির কাছে আসব না। সময় খুব খারাপ। বলা যায় না, তোমার থেকেই না আমাদের রোগ ছড়ায়। তোমার মেয়ে ঠিক হলে আবার বাপু তোমার কাছে আসব।"

খবরটা চাউর হতে বেশি সময় লাগল না। সারাদিনের মধ্যে রটে গেল পরীর অসুখ হয়েছে। ওদের সাথে যাতে কেউ যোগাযোগ করতে না পারে বা বিভা যাতে কখনোও বাড়ির বাইরে বেরোতে না পারে, তার জন্য দু-একজন সোৎসাহে পাহারায় স্ব-নিযুক্ত হল।

এদিকে পরীর জ্বর বাড়তে থাকে, ঘোরের মধ্যে প্রলাপ বকতে থাকে। শীতে কাঁপতে থাকে সে। বিভা সব কাজ ফেলে পরীর মাথায় জলসেক করে। তাকে নিজের বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে। যাতে তার বুকের ওম পেয়ে মেয়েটা আরাম পায়। পরেরদিন সকালে জ্বরের ঘোরে কথা বলা থেমে গেল। পরী তখন শান্ত হয়ে ঘুমিয়ে রয়েছে। আর কোনও কষ্ট তার শরীরে আছে বলে মনে হয় না। বিভা মিহিরকে খবরটা জানাল। মিহির বলে, "পুলিশ আমাকে রাস্তায় আটকেছিল। আমি কোনরকমে পালিয়েছি। অন্য রাস্তা ধরে ঠিক বাড়ি যাবই আমি, তুমি দেখো।"

খুব শান্ত গলায় বিভা তাকে জানাল, তার আসা আর না-আসায় কিছু আসে যায় না। পরীকে সে আর দেখতে পাবে না। বিভার কথা শুনে মিহির কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে রইল। তারপর শূন্য রাস্তার মধ্যেই সে উবু হয়ে বসে কান্নায় ভেঙে পড়ল। এর খানিকক্ষণ বাদেই বিভার ফোনে একটা মেসেজ এল, পরীর করোনা রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে। খবরটা জানাজানি হতেই গোটা পাড়ার লোক এসে ভিড় করতে থাকে। হাঁদার মা, ভোঁদার কাকিমা সকলেই হাপুস নয়নে কাঁদতে থাকে। পরীর মৃত্যুতে গোটা পাড়া কাঁদছে, শুধু বিভার চোখেই জল নেই। সে স্থির হয়ে বসে রয়েছে। সকলে বলাবলি করতে লাগল, "এ কেমন মা গো? মেয়ের জন্য একটু কাঁদবেও না?" সবাই বিভার এই আচরণে ছি-ছি করতে থাকে। কিছুক্ষণ পর জনা কয়েক লোক মিলে একটা ছোট খাট নিয়ে এল। পরী যেখানে দেখেছিল একটা সোনার খাট রাখা আছে, ঠিক সেখানেই এই খাটটাকে রাখা হল। তার ওপর সুন্দর করে বিছানা করা হল। ফুল দিয়ে খাটটাকে সাজানো হল। তারপর কে একজন বিভাকে বলল, "নাও দিদি, এবার পরীকে এই খাটটায় শুইয়ে দাও।"

বিভা তখন পরীর খাটের ওপর বসে তার মাথাটাকে নিজের কোলে নিয়ে তার চুলে বিলি কেটে দিতে লাগল, আর ছড়া আবৃত্তি করতে শুরু করল। সকলে মিলে বিভার এই আচরণে অবাক হয়ে গেল। তারা আবার বলল, "এবার শ্মশানে যেতে হবে।"

বিভা কারুর দিকে ভ্রুক্ষেপ না করে পরীর মাথায় আদর করে যেতে লাগল। একসময় অধৈর্য হয়ে সকলেই তার ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। বেরিয়ে যাওয়ার বেশিরভাগই উপহাসের হাসি হাসছিল। কেউ-কেউ ব্যঙ্গ করছিল। তারা সবাই একে-একে বিভাকে ছেড়ে চলে গেল। বিভা তখনও পরীর মাথায় সযত্নে আঙুল বুলিয়ে চলেছে আর ছেলেবেলাকার ছড়া বলে চলেছে। যেন পরীকে খুব যত্ন নিয়ে সে ঘুম পাড়াচ্ছে। আর ঠিক সেই মুহূর্তে আরেকজন মানুষ তার মেয়েকে দেখার অসম্ভব কল্পনায় জনহীন, শব্দহীন বিপুল পথ হেঁটে পাড়ি দিচ্ছিল।
Next Bangla Story


All Bengali Stories    106    107    108    109    110    111    112    (113)     114    115   


## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers. The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation. Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##


◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717