Home   |   About   |   Terms   |   Library   |   Contact    
A platform for writers

আশা থাকলেও আলো পাওয়া যায় না

বাংলা গল্প

All Bengali Stories    106    107    108    109    110    111    112    113    114    (115)     116    117    118   

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ আমাদের এই ওয়েবসাইট ( RiyaButu.com )-এ প্রকাশিত গল্পগুলির মধ্যে থেকে কিছু গল্প নিয়ে এবছরই প্রকাশিত হবে আমাদের 'রিয়াবুটু'র গল্প'।
--------------------------



আশা থাকলেও আলো পাওয়া যায় না
বাংলা গল্প
স্বরচিত গল্প প্রতিযোগিতার ( নগেন্দ্র সাহিত্য পুরস্কার , ২০২১) একটি নির্বাচিত গল্প
লেখিকা- অনুশ্রী মাইতি, পিতা- হরিপদ মাইতি, পূর্ব মেদিনীপুর


21 th July, 2021

## আশা থাকলেও আলো পাওয়া যায় না
পর্ব ১
সুব্রত ছিল ব্রিলিয়ান্ট বয়, স্কুলের ভালো ছেলেদের মধ্যে একজন। সবসময় সে চেষ্টা করতো তার পড়াশুনার সমস্যাগুলো স্কুলের sir-দের কাছে মিটিয়ে নেওয়ার, কারণ তার তেমন কোন টিউশান ছিল না। কিন্তু সে স্বপ্ন দেখ তো সে বড়ো হয়ে বিজ্ঞান নিয়ে গবেষণা করবে, তাই সবসময় কিছু না কিছু সে ভাবতো, আলোচনা করতো। কারণ এটাই ছিল তার ভালোলাগার ও ভালোবাসার জগৎ, তার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য। তার বাড়ি ছিল জনঘনত্ব এলাকা থেকে কিছুটা দূরে, চাষের জমির পাশে, তাই সে যখনি সুযোগ পেত মাঠে গিয়ে সারি-সারি গাছের নিচে বসে ভাবত নিজের পছন্দের বিষয় নিয়ে, আর কখন যে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে যেত তার খেয়াল থাকত না। কিন্তু যখন তার দিদি তার মাথায় হাত বুলিয়ে বলত, "ভাই বাড়ি চল, সন্ধ্যা হয়ে গেছে, মুড়ি খেয়ে তোকে পড়তে বসতে হবে," এই শুনে তার হুস ফিরত। ও দিদির উপদেশ শুনতে-শুনতে বাড়ি ফিরত, দিদিকে বলতো, "জানিস দিদি অনেক কিছু রয়েছে এই মহাবিশ্বে, যে গুলো বুঝতে পেরেও পারছি না। দিদি আমি যদি বিজ্ঞান নিয়ে ভবিষ্যতে পড়াশুনা করি, তাহলে আমি এই প্রশ্নগুলোর উওর খুঁজে পাব? বল..."

দিদি কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলতো, "আমার ভাই নিশ্চয়ই পারবে। "

এই ছিল প্রায় প্রত্যেক দিনের ঘটনা। তার দিদি পড়তো কলেজে 1styear এ। আর সুব্রত ছিল দশম শ্রেণীর ছাত্র, তাকে তার দিদি পড়াশুনায় যতটুকু পারত সাহায্য করত। তার বাবা ছিল দিনমজুর, মা গোরু, ছাগল পালন করতো। ওরা শিক্ষিত ন হলেও ছেলে-মেয়েকে পড়াশুনার জন্য উৎসাহ দিত। যাইহোক, সুব্রতর আজ মাধ্যমিকের টেস্ট রেজাল্ট বেরিয়েছে, সে খুব ভালো রেজাল্ট করছে, তা দেখে তার দিদি আনন্দে মায়ের কাছে এসে বলে, "মা.., ভাই খুব ভালো রেজাল্ট করেছে। ভাইকে কিন্তু science নিয়ে পড়াবো, ভাইয়ের এটা স্বপ্ন ।"

তা শুনে মা খুশি হয়ে হাতের কাজ ফেলে বলে, "মা-রে, ঐটা আবার কী পড়া।"

"মা ঐ বিষয়টা বিজ্ঞান, ঐটা নিয়ে পড়াশুনা করতে অনেক চেষ্টা ও পরিশ্রমের প্রয়োজন, সঙ্গে বুদ্ধিরও।" এরপর কিছুক্ষণ চুপ থেকে ও আবার বলে, "মা সঙ্গে টাকার ও প্রয়োজন।"

তখন মা উৎসাহের সঙ্গে বলে, "আমার বাবুর যখন যোগ্যতা আছে তাহলে কী করে না বলি? কত রে মা, পাঁচশো-হাজার হলে হবে তো?"

দিদি মাথা নেড়ে বলে, "না মা, প্রত্যেক মাসে টিউশনের টাকা অনেক, একটা-একটা টিউশন নেবে পাঁচশো টাকা, তারপর ব‌ই, খাতা, কলম ও ‌practical খরচ তো রয়েছেই। তার‌পরও ওর তো বিভিন্ন ব‌ই ঘাটার অভ্যাস, তা না হয় ও লাইব্রেরি থেকে নিয়ে নেবে।"

তখন মা বলে, "আরে আমি তো ও সব কিছু বুঝি না, তোর ভাই ঐ সব করলে কিছু করতে পারবে তো! নয়তো তোর বাবা মত দেবে না, তোর বাবা যদি শোনে প্রত্যেক মাসে এত খরচ, শুনেই না বলবে। তোর বাবা মনে করে গরিবের নিজের সামর্থ্যের মধ্যে থাকা ভালো, নয়তো ভাগ্য‌ও তার সুযোগ নিতে ছাড়ে না।"

"কিন্তু মা ভাইয়ের বুদ্ধি ও চেষ্টার কোন দাম থাকবে না!"

মা বলে, "আমি তো চাই, কিন্তু ভয় করে, কারণ গরিবের বেশি স্বপ্ন ভালো নয়। তোর বাবা এত খরচের কথা শুনলেই ক‌ইবে, 'বাবুকে বলো অন্য কিছু নিয়ে লেখাপড়া করতে। যার খরচ আমাদের রোজগারের মধ্যে', কিন্তু আমি চাই সে যেটা চায় তাই নিয়ে পড়াশুনা করুক। আমি চেষ্টা করে দেখব জোগাড় করতে পারি কিনা, কিন্তু তুই তোর বাবাকে এত খরচাপাতির কথা কইতে যাইস না। এমনি তে পড়াশুনার তেমন কিছু জানে না শুনলে যদি বাবু কে 'না' বলে; বাবুটা আমার কষ্ট পাবে।"

"ঠিক আছে মা বলবো না, তুমি চিন্তা করনা, আমিও তোমার সাথে টুকটাক হাতের কাজ করবো, ঠিক টাকা জোগাড় হয়ে যাবে। কিন্তু জীবনের পথে টাকার জন্য কি থেমে যাওয়া উচিত হবে? বলো মা।"

মা কিছু না বলে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে।

#
সুব্রত মাধ্যমিক পরীক্ষা দেয়। পরীক্ষা শেষ হওয়ার কয়েকদিনের মধ্যে সে সাইন্সের বিষয়গুলো নিয়ে বিভিন্ন টিচারের কাছে টিউশন নিতে শুরু করে। এইভাবে কেটে যায় একমাস। সুব্রত খাটের ওপর বসে লিখছিল, দিদি এসে তাকে দুধ-মুড়ি খেতে দেয়। বলে, "ভাই এটা খেয়ে নে। আর বলছিলাম, একমাস তো হয়ে গেছে। তোকে যে বলেছিলাম টিউশনের ফি-গুলো জানতে, জিজ্ঞাসা করেছিস?"

মুড়ি খেতে-খেতে সুব্রত উত্তর দেয়, "দুটো 500 ও দুটো 600 টাকা করে। দিদি জানিস তো ,ভাবছি English টিউশন রেজাল্ট বের হওয়ার পর নেব, আর বাংলা তোর থেকে ভালো কেউ আমায় বোঝাতে পারবে না।"

দিদি চুপ করে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে। বলে, "তা নয় বোঝাবো, কিন্তু তুই sirদের একটু বল না, টাকাটা একটু কম নিতে। আসলে মাসে অনেকগুলো টাকা হয়ে যাচ্ছে তো..."

"আমার বন্ধুরা কেউ বলেনি; আমি, মানে...কীভাবে বলবো, যদি কিছু মনে করেন..." এই বলে সে খাওয়া বন্ধ করে চুপ করে বসে থাকে, তা দেখে তার দিদি বলে, "ঠিক আছে ভাই, তোকে এসব ভাবতে হবে না, তোর টিউশনের টাকা ঠিক হয়ে যাবে, তুই শুধু তোর ভাবনাগুলো কে মূল্য দে।" এই বলে তার দিদি যখন মায়ের কাছে টাকার কথা বলতে গেল, বাইর থেকে শুনতে পায় মা বাবাকে বলেছে, টিউশনের টাকার কথা। বাবা জিজ্ঞাসা করছে, কত, তারপর 500টাকা বের করে মা'র হাতে দেয়, তা দেখে মা বলে, "ছেলে তো দামি বিষয় নিল, এতে হবে না, দেড়-হাজার খানেক লাগবে।"

তা শুনে বাবা বলে, "আমি মানছি ছেলে লেখাপড়ার ভালো, কিন্তু আমার আয় না হলে আমি কী করতে পারি! ও গরিবের ছেলে, ওর ভাবনা গুলো আমার আয়ের মধ্যেই রাখা দরকার। গরিবের স্বপ্ন বলে কিছু হয় না, এটা কওয়ার দরকার ছিল তোমার। আমার মাসিক আয় বেশিরভাগ সময় ছয় হাজার টাকা। আমি যদি ওর টিউশনে এত দেই, তাহলে আমি খাওয়ার, ওষুধের, জামাকাপড়ের চারজনের খরচ চালাবো কী করে? মেয়েটাও তো পড়াশুনা করছে। ওর বিয়ে দিতে হবে। এতসব সামলানো কী সহজ? তাছাড়া ফলাফল বের হওয়ার পর ও লেখাপড়া শুরু করতে পারতো। ওকে আমি বুঝিয়ে বলতাম, বাবু তুমি সামর্থ্য অনুযায়ী পড়াশুনা কর।"

তা শুনে তার মা বলে, "চুপ করো ক‌ইছি, আমার ছেলেটা এসব শুনে সহ্য করতে পারবে না।"

এসব শুনার পর দিদি কিছু না বলে চুপ করে চলে যায়

কিছুদিন পর দিদির কলেজের পরীক্ষার ফলাফল বের হয়। সে যথেষ্ট ভালো রেজাল্ট করে, কিন্তু বাড়ি ফিরে বলে, "বাবা আমি ভালো রেজাল্ট করতে পারি নি, তাই আমি আর পড়াশুনা করবো না। আমি এখন থেকে ছোট-ছোট বাচ্চাদের পড়াবো। আর আমি এখন বিয়েও করতে চাই না," এই বলে পুকুর পাড়ে বসে সে খুব কাঁদে। যেহেতু তার মা বাবা এসব কিছু জানত না, তাই তারা তাদের মেয়ের এইসব বলার কারণ জানতে পারল না। এরপর কেটে যায় আরও এক মাস।
Next Part


All Bengali Stories    106    107    108    109    110    111    112    113    114    (115)     116    117    118   


## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers. The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation. Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##


◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717