Home   |   About   |   Terms   |   Library   |   Contact    
A platform for writers

অসময়ের ইতিবৃত্ত ( পর্ব ২ )

বাংলা গল্প

All Bengali Stories    110    111    112    113    114    115    (116)     117    118   

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ আমাদের এই ওয়েবসাইট ( RiyaButu.com )-এ প্রকাশিত গল্পগুলির মধ্যে থেকে কিছু গল্প নিয়ে এবছরই প্রকাশিত হবে আমাদের 'রিয়াবুটু'র গল্প'।
--------------------------



অসময়ের ইতিবৃত্ত ( পর্ব ২ )
বাংলা গল্প
স্বরচিত গল্প প্রতিযোগিতার ( নগেন্দ্র সাহিত্য পুরস্কার , ২০২১) একটি নির্বাচিত গল্প
লেখক- শান্তনু চ্যাটার্জী, বাবা- বিমলেন্দু চ্যাটার্জী, ন্যাশনাল পার্ক, নৈহাটি, উত্তর ২৪ পরগণা


25 th July, 2021

আগের পর্বঃ পর্ব ১    পর্ব ২   

## অসময়ের ইতিবৃত্ত ( পর্ব ২ )
বাবা আমাকে বলেছে, "রাজু, আপাতত তুমি নিশ্চিন্ত মনে পড়াশুনাটা চালিয়ে যাও। বাইরের পরিস্থিতি নিয়ে তোমাকে এখন ভাবতে হবে না," এই কথা বলে বাবা আবার যোগ করে, "আমার খুব ইচ্ছা, তুমি এই পরীক্ষাটায় ভালোভাবে এবার পাশ কর।"

বাবার এই কথাগুলো আমাকে খুব উৎসাহ দেয়। যদিও লক্ষ্য করেছি, কথাগুলো বলবার সময়ে বাবার গলার স্বরটা বেশ ভারী হয়ে আসে; কোথাও যেন একটা চাপা কষ্ট কাজ করে বাবার ক্ষয়ে চলা বুকটার ভেতরে। বুঝতে দেয় না। এ বছর চাকরিটা পাবার একটা জোর আশা আছে আমার। এর প্রথম কারণটা হল, গত বছরের থেকেও এ বছর আমার আরো ভালো প্রিপারেশন আছে। বাড়িতে মক-টেস্ট দিয়ে নিজের দুর্বল জায়গাগুলোকে বুঝতে পারছি। গত বছর এতো সিরিয়াসলি সিলেবাসটাকে বুঝতেই পারিনি। আর তাতেই ইন্টারভিউয়ের ডাক পেয়েছিলাম। যে ক’টা টিউশানি করতাম, দুজনকে বাদে বাকী সব ছেড়ে দিয়েছি শুধু পড়াশুনা করবার জন্য, তাই এবার আমার আশাটা বেয়ারা রকমের বেড়ে উঠেছে।

গৃহবন্দী জীবন কেবলই আবর্তের মধ্যে ঘুরে-ঘুরে ফেরে। পৃথিবীর অসুখের বিরুদ্ধে এক হওয়া আজ দুরাশা। আমরা আরো দূরে থাকার মন্ত্র শিখছি। মানুষকে মানুষ বলে চেনা যায় না। টুকরো-টুকরো হয়ে যাচ্ছে সম্মিলিত জীবন। সভ্যতার সংজ্ঞাটা এই লকডাউনে বদলে গেছে অনেকখানিই। বদলে গেছি আমরাও। নির্বোধ স্থবির জীবন আমাদের থেকে কী চায়? আমরা তাদের কী দিতে পারি?

#
১৬ই এপ্রিল, ২০২০
বাবার শরীরটা বিশেষ ভালো যাচ্ছে না। মাঝে-মাঝেই অসুস্থ হয়ে পড়ে। বুকের যন্ত্রণা নিয়ে শুয়ে থাকে। আমি লক্ষ্য করে দেখেছি, দোকানটা বন্ধ হয়ে যাবার পর থেকেই বাবা কেমন যেন ঝিমিয়ে পড়েছে। যখন দোকান খোলা থাকতো, তখন কাজের মানুষটাকে ঘরের মধ্যে পাওয়া যেত না। আর আজ বাড়ির মধ্যে এবং শুধুমাত্র বাড়ির মধ্যে থাকতে-থাকতে তার জীবনটাই কেমন যেন শ্লথ হয়ে যাচ্ছে। নিত্যনৈমিত্তিক কাজ, যেমন স্নান করা, খাওয়াদাওয়া - সব কিছুতেই যেন তার একটা অনীহা বোধ কাজ করছে। কিছু জিগ্যেস করলেই বলে, "ভাল্লাগছে না। আর ক'টা দিনই বা বাঁচবো। কিন্তু তারও মধ্যে আমাকে মাঝে-মাঝে ঠিক বলে দেয়, পড়াশুনোটা ভালো করে চালিয়ে যাস রাজু। এবার তোকে ক্র্যাক করতেই হবে।

অনেকদিন সুচির সাথে কথা হয়নি, আজ হল। তবে ওর সাথে কথা বলে মনে হলো, ও যেন আজ খুব ডিস্টার্বড অবস্থায় আছে। আমার সাথে কথা বলছিল। স্বাভাবিকভাবেই বলছিল। কিন্তু আমার কেবলই মনে হচ্ছিল, এ ঠিক সেই সুচেতনা হয়, যাকে আমি বন্ধু হিসাবে এতদিন চিনে এসেছি। সেসময় সে ছিল স্বতঃস্ফূর্ত। আজ মনে হচ্ছিল, ও যেন আমার সাথে কিছুটা দায়ে পড়ে কথা বলতে বাধ্য হচ্ছে। নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে পরস্পরের খবর নিলাম। ও বলল, "তোর পড়াশুনোর খবর কী?" আমি বললাম, "চলছে। বাড়িতে বসেই করছি। যতটা পারছি সময়টাকে কাজে লাগাচ্ছি। এদিকে বাবার শরীরটাও ভালো নয়..." আমাকে কার্যত কথার মাঝপথেই থামিয়ে দিয়ে ও বলল, "তুই চাকরির ব্যাপারে ভাবছিস না?" আমি কিছুটা বিস্মিত হয়ে বললাম, "তা আমি পড়াশুনোটা তো চাকরি পাওয়ার জন্যই করছি..."

ও কিছুটা থমকে গেল। তারপর ধীরে-ধীরে বলল, "তা ঠিক। আমি ভাবছিলাম, এখন যা পরিস্থিতি, তাতে এভাবে কতদিন চলবে? তুই তো অন্য চাকরির পরীক্ষাগুলোও দিতে পারতিস..."

হঠাৎ এই কথাগুলোর বলবার তাৎপর্য কী, সেটা আমি ঠিকমতো অনুধাবন করে উঠতে না পেরে বলে উঠলাম, "দেখ, বাবা আমাকে বলেছে পড়াশুনোটা মন দিয়ে চালিয়ে যেতে। এ বছরটা তাই আমার কাছে একটা চ্যালেঞ্জিং সময়। আর এটাকে আমি কাজে লাগাতে চাই।"

ফোনের ওপার থেকে কোন উত্তর এলো না। আমি বললাম, "তুইও তো প্রিপারেশন নিচ্ছিস। এক কাজ করলে হয় না? আমরা যে গ্রুপ স্টাডিটা লাইব্রেরীতে বসে করছিলাম, সেটা এবার থেকে তোদের বাড়িতে বা আমাদের বাড়িতে হোক। তাহলেই তো আবার সেই আগের মতো হতে পারে।" কথাটা বলার প্রায় সঙ্গে-সঙ্গেই একটা নিষ্ঠুর "না’ভেসে এল আমার কানে। তারপরেই ও নিজেকে সংযত করে ফেললো, "আমি আর ঐ পরীক্ষা দেবো না রে রাজু।"

আমি বললাম, "কেন রে? অনেক দূর তো আমরা পড়াশুনো করেছিলাম।"

ও একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, "যা। করেছি, করেছি। আমার দ্বারা আর ওসব হবে না। অত ভালো মেয়ে আমি নই।"

ও কিছু না বললেও, আমি বুঝতে পারছিলাম, ওর এই কথাটার পেছনে খুব গভীর একটা বেদনা কাজ করছে। এরপর কথা আর বিশেষ এগোয়নি, সাধারণ দু-চারটে কথাবার্তার পর আমি ফোনটা রেখে দিয়েছিলাম।

#
২রা মে, ২০২০
গৃহবন্দী হয়ে আছি, একমাসের ওপর হয়ে গেল। আমাদের দোকানটা কিছুদিন হলো খুলেছে। কিন্তু কিনবে কে? বইপত্র আনবার জন্যে বাবা শ্যামল-কাকুকে পাঠাতো কলকাতায়। এখন আনবে কে? ট্রেন বন্ধ, বাস বন্ধ। এভাবে বাঁচা যায়? বাবা বলছিল, বাচ্চুদা নাকি সাইকেল করে জিনিস আনতে কলকাতায় যায়। চল্লিশ কিলোমিটার রাস্তা সাইকেল চালিয়ে কলকাতা থেকে বই নিয়ে আসা, আর যাই হোক, বাবার পক্ষে সম্ভব নয়, আমিও পারবো না। তাই দোকানের বিক্রি কার্যত বন্ধ। আমাদের এ অঞ্চলে বাজার বসছে একদিন অন্তর। বাজারে যেতে হলে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক। বাবা আমাকে মাথায় রুমাল জড়াতে বলে। সত্যি কথা বলতে কি, এসব আমার কাছে এখনও পর্যন্ত বাহুল্য বলেই মনে হচ্ছে। যদিও প্রতিদিনই কোভিড সংক্রমণের হার বেড়েই চলেছে, তবুও মানুষের রুটিরুজির তুলনায় এ যেন কিছুই নয়। তাছাড়া কোভিডে মৃত্যুর হার তো মোটেই বেশি নয়। তাহলে কেন এই বাড়াবাড়ি? কত মানুষ নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। ভিন রাজ্যে কত পরিযায়ী শ্রমিক আটকে পড়েছে, সেসব ভাবলে শিউরে উঠতে হয়।

আমি আজ রাস্তায় বেরিয়েছিলাম। বিকেলবেলায় উদ্দেশ্যহীনভাবে মাঝে-মাঝে ঘুরতে আমার ভালো লাগে। কিন্তু এ দিন বড়ো রাস্তাটাকে ভর সন্ধেবেলায় যা দেখলাম তাতে ঠিক চিনতে পারলাম না। একটা ছুটে চলা শিশু যেন প্রাণহীন নিস্তব্ধ হয়ে পড়ে আছে জড় পদার্থের মতো | রাত বারোটার পরেও সে এতো জনশূন্য থাকে না। প্রতিদিন দেখে-দেখে খুব বিরক্ত লাগতো । ভ্যান, টোটো থেকে শুরু করে বাস, লরি কিছুই বাদ ছিল না। রাস্তা দিয়ে নিশ্চিন্ত মনে হাঁটা যেত না। সেই রাস্তাই আজ এমন মৃতবৎ!!!

গোটা বিশ্বের সংকটের কাছে এই কলরব-মুখর রাস্তাটা আজ বিস্ময়ে, ত্রাসে বেবাক হয়ে গেছে। না দেখলে বিশ্বাস হয় না। পথের দু'ধারে বেশ কিছু ভিখারি আর পাগল - কেউ বসে রয়েছে, কেউ বা আনমনে হেঁটে চলে বেড়াচ্ছে। এদের এ যাবৎ দেখেছি বলে মনে পড়ছে না। হাঁটতে-হাঁটতে আমি এগিয়ে চললাম। আঢাকা খাবারে বসা মাছির মতো চিন্তা উড়ে এসে বসলো মনে। এখন তো শুধু বাবার সঞ্চয়ের ওপরেই চলছে। কিন্তু এভাবে আর কতদিন? গতকালই তো দেখলাম, আমাদের পাড়ায় একটা রাজনৈতিক সংগঠন থেকে খাবার বিতরণের আয়োজন করেছে। আর লাইন দিয়েছে মানুষ, যেন ভোগের খিচুড়ি নিতে এসেছে। চেনা- অচেনা অনেক মুখ চোখে পড়লো ঐ লাইনে। আমাদের বাড়িতে আগে ইলেকট্রিকের কাজ করতো বাবুদা। তাকেও দেখলাম সেই লাইনে। আমাকে দেখেই সে মুখ সরিয়ে নিল। বাবুদার চেহারার দিকে তাকানো যাচ্ছিলো না, একেবারে অস্থিচর্মসার হয়ে গেছে। শিপ্রা বৌদিকেও দেখলাম। এই বৌদি তো একটা কারখানায় সেলাইয়ের কাজ করতো জানতাম। ওর একটা ন-দশ বছরের ছেলে রয়েছে; তাছাড়া বাড়ীতে শ্বশুর, শাশুড়িও রয়েছে। সব মিলে একটা কম বড়ো সংসার নয়। ওর স্বামী গণেশদা। সে তো চেন্নাইয়ে মিস্ত্রীর কাজ করে। লকডাউনে ফিরতেও পারেনি। আমাকে দেখে শিপ্রা বৌদি আঁচলটা মাথায় দিয়ে ঘোমটা টেনে নেয়।

এদের দেখে ভয় তো আমারও করে। আজ একটা স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করবার লক্ষ্যে আমি ছুটে চলেছি। তবু মনটাকে কিছুতেই শান্ত করতে পারি না। বাবা আমার ওপরে এখনও কিছু চাপ সৃষ্টি করেনি। সে আমাকে আমার এই স্বপ্ন পূরণের জন্য সবসময়ে সাহস দিয়ে যায়। কিন্তু আমার আশঙ্কা, আমি এখন থেকেই আয় করতে পারলে আমাদের পরিবারটাও না একটা বিপদের সম্মুখীন হয়!
Next Part


All Bengali Stories    110    111    112    113    114    115    (116)     117    118   


## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers. The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation. Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##


◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717