Home   |   About   |   Terms   |   Library   |   Contact    
A platform for writers

অপরাধী ( পর্ব ২ )

বাংলা গল্প

All Bengali Stories    109    110    111    112    113    114    115    116    (117)     118   

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ আমাদের এই ওয়েবসাইট ( RiyaButu.com )-এ প্রকাশিত গল্পগুলির মধ্যে থেকে কিছু গল্প নিয়ে এবছরই প্রকাশিত হবে আমাদের 'রিয়াবুটু'র গল্প'।
--------------------------



অপরাধী ( পর্ব ২ )
বাংলা গল্প
স্বরচিত গল্প প্রতিযোগিতার ( নগেন্দ্র সাহিত্য পুরস্কার , ২০২১) একটি নির্বাচিত গল্প
লেখিকা - জয়িতা সিং মুন্ডা, বাবা- কালিনাথ সিং মুন্ডা, বান্দোয়ান, পুরুলিয়া


28 th July, 2021

অন্যান্য পর্বঃ পর্ব ১    পর্ব ২    পর্ব ৩   

## অপরাধী ( পর্ব ২ )
দেখতে দেখতে পার হয়ে গেছে দুটি বছর। প্রশান্ত এখন বন্ধু মহলে বেশ জনপ্রিয়। সময়ের সাথে-সাথে পরিবর্তিত করেছে নিজেকে। ঢেকে নিয়েছে নিজেকে শহরের কৃত্রিম চাকচিক্যতায়। পড়াশোনার পাশাপাশি একটা ঔষধের দোকানে সামান্য মাইনেতে কাজ করে নিজের হাতখরচের তাগিদে। বাসাও বদল করেছে ইতিমধ্যে। তবে শুধুমাত্র ব্যবহারেই নয়, তুখোড় বুদ্ধিমত্তার জেরে সে অচিরেই জায়গা করে নিয়েছে সবার মনে।

'ক্রিং-ক্রিং' শব্দে নিজের বুকপকেট হতে ছোট্ট মুঠোফোনটা কানে লাগায় প্রশান্ত। এটাও শহুরে পরিবেশের আড়ম্বরতার সাথে নিজেকে তাল মেলানোর একটা প্রচেষ্টা। কয়েকদিন আগেই দোকান থেকে পাওয়া জমানো মাইনে হতে কিনে এনেছে ছোট্ট এই মুঠোফোনটি। ও প্রান্ত হতে ভেসে আসে একটি সুমিষ্ট মেয়েলি কণ্ঠস্বর,"হ্যালো প্রো, ডার্লিং ..কী করছো?"

"কিছু না এই তো তোমার কথাই ভাবছিলাম।"

"ওহো তাই ...ঘুরতে যাওয়ার কথা মনে আছে তো? আমি কিন্তু এখুনি পৌঁছে যাবো। তুমি তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নাও।"

ছোট্ট করে 'হুম' বলে প্রশান্ত মুঠোফোনটা কান থেকে সরিয়ে নিজের মনেই একটু হেসে উঠে। নয়নীকা তুমি যেমন আমায় খুব ভালোবাসো আমিও তোমাকে খুব.. খুউব ভালোবাসি। তুমি না থাকলে হয়তো হারিয়ে যেতাম এই শহরের বুকে। তোমার কারণেই আমি নিজেকে নতুন রূপে, নতুন ভাবে আবিষ্কার করেছি।

নয়নীকা ব্যানার্জি। এক কথায় সুন্দরী। মহাবিদ্যালয়ের সবাই প্রশান্তর বুদ্ধিমত্তার প্রশংসায় যখন পঞ্চমুখ ঠিক তখনই ওর জীবনে আবির্ভাব ঘটেছিলো এই নয়নীকার। কিন্তু চুপচাপ ও শান্ত, স্বল্পভাষী স্বভাবের প্রশান্ত মেয়েদের যথেষ্ট এড়িয়েই চলতো। কিন্তু একই ক্লাসের হওয়ায় নয়নীকা যেচে বন্ধুত্বের প্রস্তাব নিয়ে ঘুরঘুর করেছিলো বেশ কয়েকদিন। শেষে সাড়া দিয়েছিলো প্রশান্ত। আস্তে-আস্তে সেই বন্ধুত্ব ভালোলাগায় রূপান্তরিত হয় প্রশান্তর অজান্তেই। ধীরে- ধীরে প্রশান্ত হয়ে উঠে নয়নীকার 'প্রো ডার্লিং'।

একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে প্রশান্ত মুঠোফোনটা রেখে কি মনে হতেই পুরনো ছেঁড়া খাতা হতে খুঁজে বের করে কয়েকটি অস্পষ্ট হয়ে যাওয়া সংখ্যা। অনেকদিন আগের লেখা হওয়ার কারণেই হয়তো বা পাতায় হলদে ছাপ স্পষ্ট।

#
বৃদ্ধা মনিমালা উঠোনে বসে সবার অলক্ষ্যে চোখের জল ফেলেন। দুই বছর কেটেই গেলো, কোনও সংবাদ নেই। বাধ্য হয়ে থাকতে না পেরে মিনুকে দিয়ে কতো চিঠি লেখালেন, কিন্তু কই, একটারও তো জবাব এলো না। পাঁচজনে যে পাঁচটা কথা বলে, তাহলে সত্যি কি আর বাবু ফিরবে না? না এ হতে পারে না, প্রশান্ত এরকম করতেই পারে না। নিশ্চয় পড়াশোনায় ব্যস্ত আছে।

"ও প্রশান্তর-মা, জমিদারবাবু তোমারে ভেতরে ডাকিলেন। তোমারে লাগি কে যেন টেলিফোন ...."

"আমার লাগি টেলিফোন?" কিছুটা বিস্মিত হন বৃদ্ধা মনিমালা। তাহলে কি বাবু ..! কথাটা মনে হতেই আনন্দে তড়িঘড়ি বাসনগুলো একপাশে ফেলে কল হতে হাত ধুয়ে মনিমালা আনন্দে আত্মহারা হয়ে জমিদারবাড়ির অন্দরমহলের দিকে ছুটলেন। "তার মানে ..স..সবার কথা মিথ্যে। আমি জানতাম ..জানতাম বাবু ওরকম করতেই পারে না।"

গাঁয়ে টেলিফোন নামক যন্ত্রটা জমিদারবাড়িতেই রয়েছে শুধু। কাঁপা-কাঁপা হাতে ধাতব যন্ত্রটি কানে লাগাতেই ও-প্রান্ত হতে ভেসে আসে, "মা, কেমন আছো?"

বৃদ্ধা মনিমালা চোখের জল ধরে রাখতে পারে না। "ভালো আছি বাবু। তুই ভালো আছিস তো? কবে আসবি তুই? আচ্ছা বাবু শোন না, তোর মিনুকে কেমন লাগে?" অনেকদিনের জমানো কথাগুলো একসাথে বলে যান বৃদ্ধা মনিমালা। ও প্রান্ত হতে ভেসে আসে দুটি বাক্য, "হ্যাঁ আমি ভালো আছি। এখন যেতে পারবো না।" তারপরই টুঁ...টুঁ আওয়াজ করে কেটে যায় ফোনটি।

দরজায় টোকার আওয়াজে দুটি কথা বলেই মুঠোফোনটি বিছানায় রেখে দরজার দিকে এগোয় প্রশান্ত। দরজা খুলতেই নয়নীকা এসে জড়িয়ে ধরে প্রশান্তকে।

"নয়নীকা ...এসো বসো।" নয়নীকার দিকে তাকায় প্রশান্ত। "মা কি বলতে চাইছিল, 'মিনুকে কেমন লাগে?' মানে ..." ভ্রু কোঁচকায় প্রশান্ত, "ফু: কোথায় নয়নীকা, আর কোথায় মিনু! নয়নীকার মতো মেয়ে থাকতে আমি মিনুকে ....কখনোই না।"

রাত্রি দশটা। নয়নীকার কাঁধে হাত রেখে টলতে-টলতে কোনোক্রমে নিজের বিছানায় এসে শুয়ে পড়ে প্রশান্ত, মুখে তখনও বিলিতি মদের কটু গন্ধ আর একমনে বিড়বিড় করে চলেছে, "খুউ..ব, খুব ভালো..বা..সি তোমায় নয়..নীকা।"

নয়নীকাই যত্ন করে শিখিয়ে দিয়েছে তাকে বিলিতি মদের নেশায় মাতিয়ে রাখতে আর সঙ্গে রয়েছে অত্যধিক ধূমপানও। নয়নীকা প্রশান্তকে বিছানায় শুইয়ে একটু মুচকি হেঁসে দরজা ভেজিয়ে বেরিয়ে যায়।

#
মিনু প্রত্যেক দিন সেজে-গুজে পাত্রপক্ষের সামনে বসে হাজিরা দেওয়া। আর কতদিন ...কতোবার বলেছে বিয়ে করবে না সে। জানে গাঁয়ের পাঁচটা লোকে পাঁচটা কথা বলে। কিন্তু সে যে শুধু একজনকেই সেই আসনে বসিয়েছে ...কীভাবে সে? মা-বাবার অলক্ষ্যে চোখের জল ফেলে মিনু। "প্রশান্ত তুমি কি সত্যি আসবে না আর ...আসবে না?" বিশেষ করে মনিমার জন্য খুব কষ্ট হয়। এই তো কালকেই কতো কান্নাকাটি করছিলো। একবছর আগে নাকি জমিদারবাড়ির টেলিফোনে ফোন করেছিলো প্রশান্ত। তারপর কেটে গেছে আরও অনেক শীত, গ্ৰীষ্ম, বর্ষা। রোজ এসে একটা করে চিঠি লিখতে বলেন আর সেটা ডাকবাক্সে ফেলে দিয়ে আসেন। কিন্তু মিনু জানে সেগুলো অপঠিত অবস্থায় পড়ে রয়েছে 'ডাকবাক্সের কোনও এক কোনে।

#
খুক-খুক শব্দে প্রচণ্ড কাশিতে বিছানায় উঠে বসে প্রশান্ত। ইদানীং শরীরটা ঠিক যাচ্ছে না। দুর্বল শরীরটাকে টেনে-টেনে এগিয়ে নিয়ে যায় বাথরুমের দিকে। আরও কাশি হতেই মুখে দুই হাতে চাপা দেয়। তাতে উঠে আসে চাপ-চাপ রক্ত। প্রশান্ত ভয়ে চিৎকার করে উঠে,"না!!"

মুঠোফোনটা নিয়ে ডায়াল করে, " নয়না.."

কিছুক্ষণ পর ও প্রান্ত হতে বিরক্তি-সূচক শব্দে ভেসে আসে, "উফ.... রাখো তো। এখন আমি ঘুমোচ্ছি। বিরক্ত করো না।"

এ-প্রান্ত হতে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ধাতব যন্ত্রটি কেটে গেলো 'টুঁ....টুঁ' করে। প্রশান্ত অসহায় হয়ে ধপাস করে বসে পড়লো বিছানায়। মা কে খুব ...খুব মনে পড়ছে এখন। মা থাকলে হয়তো এখন ...তড়িৎ-গতিতে মুঠোফোনটা হাতে নেয়। কিন্তু সেটা ক্রিং -ক্রিং করে একনাগাড়ে বেজেই যায় কিন্তু কোনও উত্তর আসে না। প্রচণ্ড অসহায় হয়ে বিরক্তিতে আছাড় মারে ফেলে দেয় মেঝেতে। টেবিল হাতড়ে কলম নিয়ে তড়িঘড়ি একটা চিঠি লিখে, "শ্রীচরণেষু মা, ......ইতি, তোমার বাবু।"

চিঠিটা ডাকবাক্সে ফেলতে গিয়ে অবাক হয়, নিজের ডাকবাক্সে তার নামে এতো চিঠি? তবে কি মা ...আর সে কিনা এভাবে দিনের পর দিন। চিৎকার করে 'মা-মা' বলতে-বলতে সেখানেই লুটিয়ে পড়ে সে।

#
আজ হঠাৎ অনেকদিন পর ডাকঘরের ছেলেটিকে দরজার সামনে দাঁড়াতে দেখে অবাক হন বৃদ্ধা মনিমালা।

"এই যে তোমার নামে চিঠি।"

খামে মোড়া চিঠিটা নিয়ে মিনুকে ডাক দেন। মিনু এসে বলে, "বলো মনিমা।"

"আচ্ছা দেখ দিকিনি। এদ্দিন পর কার চিঠি এলো? বাবু নয় তো ...!"

মিনু খামখানা খুলে আনন্দে চেঁচিয়ে উঠে ,"হ্যাঁ মনিমা, প্রশান্তর চিঠি। লিখেছে মা, প্রণাম নিও, কেমন আছো, ... আমি ......"

"আরে কি হল কি? পড় ..বাবু কেমন আছে? বল না মিনু ...তুই কিছু বলছিস না কেন?"

"মনিমা ও ...ওর শরীর খুব অসুস্থ। তোমাকে দেখতে চায়।"

"কি বলছিস মিনু? কি হয়েছে বাবুর?" আঁচল চাপা দিয়ে ডুকরে কেঁদে উঠে বৃদ্ধা মনিমালা। "মিনু... মিনু ..যেতে হবে শহরে, আমায় যেতে হবে .."

"মনিমা তুমি পারবে না। ওটা আমাদের এই ছোট্ট পাড়াগাঁ না।"

"কিন্তু যেতে হবে তো মিনু। যাবো আমি বাবুর কাছে।"

"আচ্ছা শান্ত হও ....আমি তোমায় একা ছাড়বো না। আমিও যাবো তোমার সাথে।"

"তুই যাবি!! কিন্তু বাড়িতে ..."

"তুমি ও চিন্তা করো না। আমরা আজ রাত্তিরেই শহরের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে যাবো।"
Next Part


All Bengali Stories    109    110    111    112    113    114    115    116    (117)     118   


## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers. The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation. Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##


◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717