All Bengali Stories
109
110
111
112
113
114
115
116
(117)
118
-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ আমাদের এই ওয়েবসাইট ( RiyaButu.com )-এ প্রকাশিত গল্পগুলির মধ্যে থেকে কিছু গল্প নিয়ে এবছরই প্রকাশিত হবে আমাদের 'রিয়াবুটু'র গল্প'।
--------------------------
◕
অপরাধী ( পর্ব ৩ )
বাংলা গল্প
স্বরচিত গল্প প্রতিযোগিতার ( নগেন্দ্র সাহিত্য পুরস্কার , ২০২১) একটি নির্বাচিত গল্প
লেখিকা - জয়িতা সিং মুন্ডা, বাবা- কালিনাথ সিং মুন্ডা, বান্দোয়ান, পুরুলিয়া
28 th July, 2021
অন্যান্য পর্বঃ
পর্ব ১
পর্ব ২
পর্ব ৩
##
অপরাধী ( পর্ব ৩ )
শহরে এসে চিঠিতে দেওয়া ঠিকানা অনুযায়ী বাসায় খোঁজ করে মনিমালা ও ময়না। কিন্তু বাসা ফাঁকা। বাড়িওয়ালা তাদের পোশাক-আশাক দেখে নাক সিঁটকিয়ে শুধোয়, "কি ..কাকে চাই?"
প্রশান্তর কথা বলতেই হাসপাতালের ঠিকানা দেয়। কাঁদতে-কাঁদতে মনিমালা দেবী হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে থাকা ছেলেকে দূর হতে দেখেন। "কি অবস্থা করেছিস বাবু শরীরের। তোর মা এসেছে দেখ ..দেখ না।"
ডাক্তারকে বেরোতে দেখেই ছুটে যায় মিনু, তার পিছু-পিছু বৃদ্ধা মনিমালা। "ডাক্তারবাবু কি হয়েছে প্রশান্তর?"
ডাক্তার বাবু আপাদমস্তক দেখে বলেন "আপনারা কারা?"
"আমি ওর মা ডাক্তারবাবু। বলুন...বাবুর..."
"দেখুন উনার অবস্থা খুব শোচনীয়। উনার যক্ষ্মা ধরা পড়েছে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শরীরে রক্ত দিতে হবে। আর সবচেয়ে বড়ো কথা উনার একটা কিডনি খারাপ হওয়ার পথে। তড়িঘড়ি সেটা না ...বুঝতেই পারছেন।"
ময়না যতটা সম্ভব নিজেকে শক্ত করে রাখার চেষ্টা করে, "প্রশান্তর এ কি হল? হা ভগবান এ কোন অপরাধের শাস্তি তুমি ওকে দিচ্ছ?"
বৃদ্ধা মনিমালা সেখানেই আঁচল চাপা দিয়ে বসে পড়েন, "না বাবুর কিচ্ছু হবে না ...কিছু হতে দেবো না আমি।"
চোখের জল মুছে ময়না উঠে দাঁড়ায়, "মনিমা আমি রক্ত দেবো প্রশান্তকে চলো।" মনিমালা চোখ তুলে তাকান। চোখের জল মুছে বলেন, "সত্যি তুই দিবি?"
মনিমালা ময়নার হাত দুটি ধরেন,"শোন মা, আমার ছেলেটাকে দেখিস। আশীর্বাদ রইলো মা। চল ডাক্তারবাবুর সাথে আমারও কিছু কথা আছে।"
"মনিমা, কি যে বলো না। তোমার বাবু ঠিক হয়ে যাবে দেখো। চিন্তা করো না।"
মনিমালা বিড়বিড় করে, "হুম ঠিক হয়ে যাবে।"
#
নয়নীকাও অবশ্য এসেছিলো হাসপাতালে অন্য একটা ছেলের হাত ধরে। মুখ বেঁকিয়ে প্রশান্তকে বলেছিল, "কি ভেবেছিলে, তোমার মতো গাঁইয়া ছেলেকে আমি ভালোবাসবো। বামন হয়ে চাঁদে হাত... শখ মন্দ নয়।"
যাক, সমস্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ময়নাকে নিয়ে যাওয়া হয় প্রশান্তর বিছানার পাশে। পাশ ফিরে তাকিয়ে একটু হাসে ময়না, "তোমার কিছু হতে দেবো না প্রশান্ত।" দুই ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ে গাল বেয়ে।
রক্ত দেওয়া অনেক আগেই শেষ। ময়না বিছানায় শুয়ে রয়েছে। প্রশান্ত অপারেশন থিয়েটারে। "কিন্তু মনিমা চোখে পড়ছে না কেন? কোথায় গেলো আবার? নিশ্চয় ঠাকুরের কাছে .....যাই দেখি।"
চারদিকে খোঁজাখুঁজির পরও কোথাও দেখতে পেলো না ময়না তার মনিমাকে। ওদিকে অপারেশন শেষ হওয়ায় ডাক্তারবাবু ডেকে পাঠানোয় সেদিকে গেলো ময়না।
কিছুদিন পর সুস্থ হয়ে ময়নার সাথে প্রশান্ত ফিরে এলো গ্ৰামে, কিন্তু মনিমালা আর এলেন না। পরে ডাক্তারবাবু জানিয়েছিলেন, "প্রশান্ত বাবু আপনার মা-ই নিজের কিডনি দিয়ে আপনার খারাপ হয়ে যাওয়া কিডনি ...। উনি আপনার মধ্য দিয়েই বেঁচে থাকতে চান। তিনি আমাকে করজোড়ে কাতর অনুরোধ করেছিলেন ,'বাবুকে বাঁচান ডাক্তারবাবু। আমার বাবুর মধ্য দিয়ে আমি বেঁচে থাকতে চাই '"
প্রশান্ত জমিদারবাবুর কাছে জানতে পারে মা সামান্য একটুখানি ভিটেটুকুও বন্ধক রেখেছিলো তার পড়াশোনার জন্য। অথচ এতো বড় কথা ঘুণাক্ষরেও টের পেতে দেয়নি প্রশান্তকে।
ময়নার দেখাশোনায় খুব শীঘ্রই সুস্থ হতে লাগলো প্রশান্ত। আজও মাঝে-মাঝে মায়ের পুরনো ঘটি-বাটি গুলো দেখলে চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করে। কিন্তু কান্নাগুলো দলা পাকিয়ে যেন গলার কাছে এসে আটকে যায়। ময়নাকে
দেখে সত্যিই অবাক হয়ে যায় প্রশান্ত! কি করে পারে মিনু ...কি করে এতোটা নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসতে? প্রশান্ত বোঝে, গ্ৰামের মেয়েটিকে পাঁচ লোকে পাঁচটা কথা শুনিয়েছে। কিন্তু সে ওগুলোর পরোয়া না করে তাকে ভালোবেসে
গেছে। মাঝে-মাঝে সত্যিই মনে হয় সে কি আদৌ মিনুর ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য? এখন ওই শহুরে চাকচিক্য, আড়ম্বরপূর্ণ সবকিছুই কেমন যেন.... ভাবলেই গা ঘিনঘিন করে উঠে। গ্ৰামের এই সবকিছুই এখন ভীষণ প্রিয়, ভীষণ ভালো
লাগে। এখানে না আছে কৃত্রিমতার ছোঁয়া, না আছে ভালোবাসার আড়ালে মেকি অভিনয়। মিনুই শিখিয়েছে ভালোবাসার মানে। যে আলেয়ার পেছনে সে ছুটছিল শহরে, তা ভালোবাসার নামে আবেগের বশবর্তী হয়ে ভালোলাগা মাত্র। যা
দামি-দামি উপহার, খাওয়া, পোশাক-আশাকেই সীমাবদ্ধ। কিন্তু মিনুর ভালোবাসার মধ্যে দেখেছে সেই স্বার্থহীন ভালোবাসা, যেখানে কৃত্রিমতায় মোড়কে ঢাকা ভালোবাসার অভিনয় নেই। আছে শুধু অপার, নিঃস্বার্থ প্রেম, ভালোবাসা।
প্রশান্ত এখন গ্ৰামেরই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করে। গরীব ছেলেমেয়েদের নিখরচায় পড়ায় সকাল, বিকেল। কেউ যখন প্রশংসা করে, চোখের কোনটা চিকচিক করে উঠে,"মা দেখো...দেখো তোমার বাবু পেরেছে, পেরেছে ...."
কিন্তু বলতে পারে না, ভেতর হতে কেউ যেন বলে উঠে 'তুই অপরাধী'।
তারপর পার হয়ে গেছে কয়েকবছর। দোতলা একটি বাড়ি। চারিদিকে আলোর রোশনাই। নেম-প্লেটে নাম জ্বলজ্বল করছে "বিজয়মালা ভবন"। আজ মিনু ও প্রশান্তর বিয়ে। দুটি মন এক হল সন্ধ্যার শুভ লগ্নে। সানাইয়ের সুর ও
লোকজনের ভিড় কমে এলে নিঃশব্দে দুজনে গিয়ে দাঁড়ালো মা-বাবার ছবির পাশে। প্রশান্ত হাঁটু মুড়ে দু'হাত মুখ ঢেকে ফুঁপিয়ে উঠলো, "মা, ক্ষমা করো মা। আমি অপরাধী, তোমার অপরাধী। ক্ষমা করবে না তোমার বাবুকে...বলো?"
ময়না দু'হাত ধরে তুলে প্রশান্তকে। আঁকড়ে ধরে। "নিজেকে শক্ত করো তুমি। মনিমা তোমার মধ্যেই বেঁচে আছে। তোমাকে এভাবে দেখলে তিনি আদৌ খুশী হবেন? তুমি যে তোমার ভুল বুঝতে পেড়েছো এটাই অনেক। তুমি কষ্ট পেয়ো না।"
হাতে হাত মিলিয়ে দুইজনে একসাথে ছবির চরণে মাথা ছোঁয়ায়। মিনু মনে-মনে বিড়বিড় করে,"আশীর্বাদ করো মনিমা, তোমার বাবুর পাশে সবসময় এভাবেই যেন দাঁড়িয়ে থাকতে পারি।"
( সমাপ্ত )
Next Bangla Story
All Bengali Stories
109
110
111
112
113
114
115
116
(117)
118
## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers.
The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation.
Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##
◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717