Home   |   About   |   Terms   |   Library   |   Contact    
A platform for writers

ডাক্তারবাবু ( পর্ব ২)

বাংলা গল্প

All Bengali Stories    119    120    121    122    123    124    (125)     126    127    128   

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ আমাদের এই ওয়েবসাইট ( RiyaButu.com )-এ প্রকাশিত গল্পগুলির মধ্যে থেকে কিছু গল্প নিয়ে এবছরই প্রকাশিত হবে আমাদের 'রিয়াবুটু'র গল্প'।
--------------------------



ডাক্তারবাবু ( পর্ব ২ )
বাংলা গল্প
লেখক - অনিন্দ্য রক্ষিত, পিতা- কমনীয় কুমার রক্ষিত, তালবাগান মেইন রোড, নোনাচন্দনপুকুর, ব্যারাকপুর


Previous Part

## ডাক্তারবাবু
পর্ব ২
সুধীর গদগদ স্বরে বলল – স্যার, ভাগ্যিস আপনি ছিলেন। সেই জন্যেই তো অমিতাভর সঙ্গে আমার এত বছর পরে আবার যোগাযোগ হয়ে গেল। পুরনো বন্ধু বলে বলছি না স্যার, ও মানুষ নয়, সাক্ষাৎ ভগবান!
আমি বললাম – ভণিতা ছেড়ে আসল কথাটা বল না ...
কী বলব স্যার – বলল সুধীর – গত মাসে একদিন, রাত তখন সাড়ে নটা বেজে গেছে, হঠাৎ শুনি আমাদের বাড়ির সামনে গাড়ির হর্ন। বার চারেক হর্নের শব্দ শুনে জানলা দিয়ে উঁকি মেরে দেখি, গাড়িটা আমাদের বাড়ির দরজায় থেমেছে আর ড্রাইভার আমাদের বাড়ির দিকে তাকিয়েই হর্ন বাজিয়ে চলেছে। দরজা খুলে বাইরে যেতেই গাড়ির পেছনের সিট থেকে একটা লোক নেমে এল। মুখে দুষ্টুমি ভরা হাসি। আমার দিকে চেয়ে বলল, কি রে ব্যাটা লম্বু, আমাকে চিনতে পারছিস না? আমি তো থতমত খেয়ে গেছি। সত্যিই আমি লোকটাকে চিনতে পারি নি। গোলগাল, ফর্সা চেহারা। কাঁচাপাকা চুল। মোটা গোঁফ। চোখে দামী চশমা। পরনে দামী পোশাক-আশাক। এমন লোক হঠাৎ করে এই সময়ে আমার মতো গরীবের বাড়িতে কেন এসেছে সেটাই ভাবছিলাম দরজায় দাঁড়িয়ে।
লোকটা তখন আমার দিকে চেয়ে বলল,
'আমাদের ফার্স্ট বয় লম্বু সুধীর,
প্রতি বচ্ছর তার আসনটা স্থির।
সুধীরের ডান গালে একটা আঁচিল,
অনায়াসে টপকায় পরীক্ষা-পাচিল।'
এই বলে, হা হা করে হেসে উঠে বলল, এখনও চিনতে পারছিস না? – বলে চলল সুধীর – ছড়াটা কানে যেতেই আমার মনে পড়ে গেল, স্কুলে থাকতে অমিতাভ এই ছড়াটা বানিয়েছিল আমার নামে। রোজ এটা আউড়ে আমার পেছনে লাগত। আমি বললাম, অমিতাভ! তুই অমিতাভ!
অমিতাভ আমাকে জড়িয়ে ধরে হাসতে-হাসতে বলল, যাক। চিনেছিস তাহলে। ঘরে আসতেও বলবি না, নাকি?
আমি সঙ্কোচে জড়সড় হয়ে কোনোরকমে বললাম, আয়, ভেতরে আয়। অমিতাভ হাসি মুখে ঘরে ঢুকল। এদিক ওদিক তাকিয়ে খাটের পাশে রাখা একটা মোড়া টেনে নিয়ে বসে পড়ে বলল, কই, তোর বাড়ির বাকি সদস্যরা সব কোথায়? নাকি একাই থাকিস এখানে ...
অমিতাভর কথা স্যার, আপনার কাছে শোনার পরে আমি আমার বৌকে বলেছিলাম – সুধীর বলতে লাগল – আমার ডাকে পাশের ঘর থেকে আমার বৌ আর আমাদের একমাত্র মেয়ে সৌরভি এসে দাঁড়ালো। অমিতাভ আমার বৌয়ের দিকে চেয়ে হাতজোড় করে বলল, নমস্কার বৌঠান। আমি সুধীরের ছেলেবেলার বন্ধু। তবে সেই ক্লাস এইটের পর থেকে এই ব্যাটার আর কোনো খোঁজখবর পাই নি। যাহোক, সেদিন আমার এক পেশেন্টের কাছে ওর কথা শুনে, তাঁর থেকেই এবাড়ির ঠিকানা নিয়ে আপনাদের সঙ্গে দেখা করতে চলে এলাম। একটু বেখাপ্পা সময়ে এসে পড়েছি বটে, কিন্তু কী করা যাবে বলুন, আমাদের পেশায় সময় করে ওঠাটাই খুব মুশকিলের ব্যাপার। আপনি নিশ্চই আমার ওপরে বেশ খাপ্পা হয়েছেন এই অসময়ে আপনাদের জ্বালাতন করতে চলে এলাম বলে ...
আমার বৌ তাড়াতাড়ি হাতজোড় করে নমস্কার জানিয়ে বলল, না, না... ছি ছি ... এ কি বলছেন! আপনি এত ব্যস্ততার মধ্যে সময় বের করে পুরনো বন্ধুর কাছে এসেছেন, এটাই তো আমাদের কাছে বিরাট ব্যাপার। কিন্তু আপনাকে যে কী দিয়ে আপ্যায়ন করি...
শুধু এক কাপ কম চিনি দেওয়া লিকার চা, বলল অমিতাভ, যদি আপনার অসুবিধে না থাকে...
না, না... কোনো অসুবিধে নেই ... আপনারা বসে গল্প করুন, আমি এখনই চা নিয়ে আসছি। এই বলে ভেতরে চলে গেল লতু, মানে, আমার বৌ।
অমিতাভ এবারে আমার মেয়ের দিকে চেয়ে বলল, এদিকে আয় তো মা, এই খাটে এসে বস। তোর নাম কী মা? মেয়ে এগিয়ে এসে অমিতাভর আর আমার পা ছুঁয়ে প্রণাম করে নিজের নাম বলল। অমিতাভ ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল, কেমন আছিস বল। সৌরভি কী বলবে বুঝতে না পেরে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল। আমি তখন ওকে বললাম, তোর শারীরিক অসুবিধেগুলো ডাক্তার কাকুকে খুলে বল। আমি বরং ওদিকে দেখে আসি চা হলো কি না।
তারপর স্যার, চা নিয়ে আমার বৌ আর তার পেছনে আমি যখন ঘরে ঢুকলাম, ততক্ষণে অমিতাভ যা জানার জেনে নিয়েছে। ওর সঙ্গে আনা ব্যাগ থেকে যন্ত্রপাতি বের করে সৌরভিকে এক প্রস্থ চেক-আপও করে ফেলেছে। ওর টেস্ট রিপোর্টগুলোও খুঁটিয়ে দেখল চা খেতে-খেতে। তারপর আমাকে বলল, ঘাবড়ানোর কিছু নেই। আমি কতগুলো ওষুধ লিখে দিচ্ছি। এগুলো খাওয়াতে থাক। ঠিক এক সপ্তাহ পরে মাকে আমার চেম্বারে নিয়ে যাবি। তখন আর একবার দেখব। আর ওকে রোজ সকালে একটু দুধ আর একটা করে ডিম দিবি। আর লাঞ্চে চিকেন অথবা ছোট মাছ দিবি। সঙ্গে ডাল আর নানারকমের শাক-সব্জিও দিবি। আর ফল খেতে দিবি। রোজ অন্তত একটা করে। যে কোনো ফল। সব ঠিক হয়ে যাবে। কোনো চিন্তা করিস না। আমার ফোন নাম্বারটা রাখ। কোনো প্রয়োজন হলে তখনই ফোন করবি।
কি বলব স্যার – সুধীরের চোখ ছলছল করে উঠল – বাড়ির বাইরে এসে গাড়িতে ওঠার আগে অমিতাভ আমার হাতটা ধরে একগাদা নোট ধরিয়ে দিল। বলল, এটা রাখ। এটা দিয়ে মায়ের জন্যে খাবার দাবার কিনবি। আমি তো লজ্জায়, সঙ্কোচে একাকার! বললাম, না, না ... এ আমি নেব না। তুই বাড়িতে এসে আমার মেয়েকে দেখে গেলি, এটাই আমার কাছে অপ্রত্যাশিত পাওয়া। এরপর আবার টাকা...
অমিতাভ বলল, কেন রে শালা! আমি তোর বিয়েতে আর তোর মেয়ের মুখেভাতে এলে কিছু দিতাম না নাকি রে? সেগুলো তো ডিউ ছিল। তাই এখন একসঙ্গে দিচ্ছি। নে, নে... আর বেশি কথা বাড়াস না তো ... আজ আমি চললাম। সামনের সপ্তাহে অবশ্যই আসবি কিন্তু সৌরভি মাকে সঙ্গে নিয়ে।
একটু সময় চুপ করে থেকে সুধীর বলল – এক সপ্তাহের মধ্যে স্যার, ডাক্তারের ওষুধে আর পথ্যে মেয়ে আমাদের অনেকটাই সুস্থ হয়ে উঠল। পরের সপ্তাহে এক সন্ধ্যায় ওকে নিয়ে অমিতাভর চেম্বারে গেলাম। গিয়ে দেখি সেখানে দারুণ ভিড়। শুনলাম, ডাক্তারবাবু এখনও এসে পৌঁছান নি। অন্যান্য দিন সন্ধ্যে সাড়ে ছটার মধ্যে এসে যান কিন্তু আজ কোনো কারণে দেরি হচ্ছে। আর একটা চেম্বার সেরে আসছেন কি না, সেইজন্যে। এই চেম্বার ছাড়া অমিতাভ আর কোথাও বসে, এটা তো ও আমাকে বলে নি। যাহোক, আমার পাশে বসা এক ভদ্রলোককে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম, অমিতাভ নাকি সপ্তাহে তিনদিন জুট-মিল বস্তিতে বিকেল তিনটে থেকে সন্ধ্যে ছটা পর্যন্ত বসে। সেখানে ও শুধু বিনি পয়সায় চিকিৎসাই করে না, বিনি পয়সায় ওষুধও দেয়।
কি বলব স্যার, শুনে আমার চোখে জল চলে এল। মনে-মনে বললাম। ভগবান আছেন। বিভিন্ন রূপে তিনি আমাদের পাশে আছেন। আর আমার অপার সৌভাগ্য যে তিনি আমার পাশে, আমার ছোটোবেলার বন্ধুরূপে এসে দাঁড়িয়েছেন।
আমার মেয়ে এখন একদম সুস্থ হয়ে গেছে স্যার। স্কুলে যাওয়াও শুরু করেছে – কিছুক্ষণ থেমে থাকার পর সুধীর বলল – অমিতাভ মাঝে-মাঝে ফোন করে। আমাদের সকলের খোঁজখবর নেয়। আমিও করি। রাতের দিকে ওর চেম্বারে যাই কখনও-কখনও। দুই পুরনো বন্ধুতে আড্ডা হয়। আপনার জন্যেই তো এটা সম্ভব হলো ...
আমি বললাম, আরে না, না... আমি তো নিমিত্ত মাত্র। তোদের যোগাযোগটা ঘটিয়ে দিতে পেরেছি, এইটুকুই। এর বেশি আমার কোনো ভূমিকা নেই।"

এত বলে দামুদা থামলেন। পার্সোন্যাল জলের বোতল খুলে খানিকটা জল খেলেন। তারপর হরিহরদার দিকে চেয়ে বললেন, "হরে, এবারে বুঝলি তো, সবাইকে একই রকম দৃষ্টিতে বিচার করা উচিৎ নয়।"

হরিদা পকেট থেকে ফোন বের করে দামুদাকে বললেন, "অমিতাভ ডাক্তারের নাম্বারটা বলুন তো ..."

দামুদা বললেন, "সে বলছি, কিন্তু জেনে রাখ, চেম্বারে ওর ভিজিট ছশো টাকা। আর, বাড়িতে কল দিলে বারোশো ... একেবারে কসাই ডাক্তার, কি বল ..."
( সমাপ্ত )


Next Bangla Story

All Bengali Stories    119    120    121    122    123    124    (125)     126    127    128   


## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers. The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation. Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##


◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717