Home   |   About   |   Terms   |   Library   |   Contact    
A platform for writers

বোধিবৃক্ষ - পর্ব ২

বাংলা গল্প

All Bengali Stories    124    125    126    127    128    129    (130)     131    132    133   

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ আমাদের এই ওয়েবসাইট ( RiyaButu.com )-এ প্রকাশিত গল্পগুলির মধ্যে থেকে কিছু গল্প নিয়ে এবছরই প্রকাশিত হবে আমাদের 'রিয়াবুটু'র গল্প'।
--------------------------



বোধিবৃক্ষ - পর্ব ২
বাংলা গল্প
লেখক - দীপ্তেশ মাজী, চেতলা রোড, কলকাতা
স্বরচিত গল্প প্রতিযোগিতার ( নগেন্দ্র সাহিত্য পুরস্কার , ২০২১) একটি নির্বাচিত গল্প


অন্য পর্বগুলিঃ পর্ব ১    পর্ব ২    পর্ব ৩    পর্ব ৪   

## বোধিবৃক্ষ - পর্ব ২
"আপনি অত ভোরেও জেগে ছিলেন মি.কস্তুরি! এটা কি নিয়মিত! মানে আপনি কি ঘুমোন না রাতে!"

কস্তুরি বললেন, "না না, তা কেন! তবে সেদিন ঘুম ভেঙে যায়। আর তারপরই ফোনটা বেজে ওঠে।"

শ্রীজাত বলল, "আপনি কি কাউকে সন্দেহ করেন?"

"সন্দেহের লিস্টে তেমন কেউ নেই...থানার পুরকায়স্থও একই কথা জিজ্ঞেস করেছিল। তবে একটা কথা বলতে পারি, যারা-যারা প্রদর্শনীতে আসছে বা থাকবে, দোষী তাদের মধ্যে হলেও হতে পারে।"

শ্রীজাত এবার আমার দিকে তাকিয়ে বলল, "সুজিত, তুমি কিছু কি জিজ্ঞেস করবে মি.কস্তুরিকে?"

আমি বইটা খানিক সরিয়ে ওর দিকে তাকালাম। ও বলল, "না না সুজিত, হতেও তো পারে তুমি কিছু আলাদা ভাবছো।"

আমি বললাম, "না শ্রীজাত, আমার কিছুই জিজ্ঞেস করবার নেই।"

শ্রীজাত এবার চেয়ার ছেড়ে বলল, "আচ্ছা মি.কস্তুরি, আপনি এখন একটু সাবধানে থাকুন। আমরা দেখছি। যদি কিছু সূত্র লাভ করতে পারি তাহলে অবশ্যই জানাব। নমস্কার।"

আন্দাজ সাড়ে বারোটার সময় আমরা মি.কস্তুরিকে বিদায় দিয়ে তৃতীয় দফার চা ঘোষণা করলাম। নগেন চা দিয়ে গেল। টেবিলের ওপর কস্তুরির কার্ডটা ছিল। শ্রীজাত সেটা তুলে নিয়ে বলল, "এখানে প্রায় একশো জনের নাম আছে সুজিত। কিন্তু..." এই বলে শ্রীজাত এক, দুই, তিন, চার, বলে গুনতে আরম্ভ করল। তারপর বলল, "মোট সাতটা নামের তলায় দাগ দেওয়া আছে। দেখো সুজিত," এই বলে ও আমায় কার্ডটা হস্তান্তরিত করল।

আমিও দেখলাম বর্গাকার কালো রঙের কাগজটির ওপরের দিকে নামগুলো সারিবদ্ধ, নিচের দিকে খানিক ডিজাইন। একটা ছোটো জায়গা দখল করে আছে মি.কস্তুরির হাসিমুখ আর তাঁর বৃত্তান্ত। ওপরের নামগুলোকে বোধ হয় উনি নিজেই হাইলাইট করে গেছেন। আমি বললাম, "এই নাম ক"টা বরং আমি দেখে রাখছি। বিকেলে তোমাকে জানিয়ে দেব আশা করছি।"

শ্রীজাত আমার পিঠে একটা চাপ্পড় মেরে বলল, "শাবাশ সুজিত। যোগ্য সহযোগী হয়েছো। আর আমি এখন একটু লেক কালীবাড়ির দিকে হানা মেরে আসি। যদি কিছু গন্ধ পাওয়া যায়। প্রদর্শনী শুরু সন্ধ্যে সাড়ে ছ"টা দিকে," এই বলে ও জামাটা গলিয়ে সিঁড়ি দিয়ে হনহন করে নেমে গেল। একা ভূতের মত আমি ঘরে বসে রইলাম।

#
বিকেলে, চায়ের টেবিলে আমাদের সাক্ষাৎ হল। পাঁচদিন প্রদর্শনী চলবে। স্থান। হল সাদার্ন এভিনিউ, কলকাতা। যারা আসছেন, সেই একশো জনের মধ্যে মোট সাতজনকে চিহ্নিত করে গেছেন মি.কস্তুরি। আমার বিপরীতে বসে শ্রীজাত মন দিয়ে শুনতে লাগল আমার এক একটা কথা, "প্রথম ব্যক্তি: প্রকাশরঞ্জন লাটু। ব্যস প্রায় ৭২, দেখতে খানিক হিন্দি সিনেমার ভিলেনদের মত। বৃত্তাকার মাথা এবং ফ্রেঞ্চকাট দাড়ি। চোখে সাধারণত বক্স সানগ্লাস ব্যবহার করেন। এই চশমার জন্য বেশ কয়েকবার এই দেশ, ঐ দেশ ঘুরে বেড়িয়েছেন। চশমার কালেকশনটা হবি বলতে পার। বর্তমানে একাই থাকেন। একটি পোষ্য আছে, জার্মান শেফার্ড। গ্র্যান্ড হোটেলে উঠেছেন।

দ্বিতীয় ব্যক্তি: নিবৃতি কুমারী। চিত্রশিল্পীর পাশাপাশি মুঘল ornaments এর ওপর আগ্রহ আছে। বিদেশের বিভিন্ন জায়গায় যে ছোটোখাটো মেলা বা ফেস্টিভ্যাল আয়োজিত হয় যেমন ধরো, জার্মান বুকফোর, আমেরিকার ফুড ফেস্টিভ্যাল ইত্যাদি জায়গায় নিজে দোকান দেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় যথেষ্ট প্রভাব আছে। খুব সম্ভবত ইনি ডিভোর্সি এবং বয়স ৪২।

তৃতীয় ব্যক্তি: মেহেরুন্নিসা আল ওয়াকিস, ইজিপ্ট। ইনি প্রথমবার ভারতে আসছেন। চিত্রশিল্পী বলা যায়। একটি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য আছে। ইনি আজ থেকে চার বছর আগে বিশ্বব্যাপী একটি নামী বিউটি-কন্টেষ্ট জিতেছিলেন। সোশ্যাল মিডিয়ার সাথে যুক্ত নন। হাসবেন্ড আছেন, তবে একসাথে থাকেন না। বয়স ৩৫।

চতুর্থ ব্যক্তি: মোনা কিরাণ ভাগভ ,মালয়েশিয়া। স্বামী লন্ডনে থাকেন। কেবলমাত্র কলাশিল্প আর ভারত নাট্যম-এর সাথে জড়িত। এই নিয়ে চারবার প্রদর্শনীতে আসছেন। দু"বার এনার আঁকা ছবি বোধিবৃক্ষ আকাদেমি থেকে পুরস্কৃত হয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় মি.কস্তুরির সাথে বেশ কয়েকটি ফটো পাওয়া গিয়েছে। বয়স ৩১।

পঞ্চম ব্যক্তি: এনগিডি মাকাওয়ানডা, আফ্রিকার বাসিন্দা। হাতির দাঁতের অসামান্য কাজ জানা আছে ভদ্রলোকের। ভারতে এ নিয়ে দু'বার। বয়স ৭০। মি.কস্তুরির সাথে সুপরিচিত। বিবাহ করেন নি।

ষষ্ঠ ব্যক্তি: পল্লবী পাল্লিক্যাল, ভূপাল। কলকাতায় প্রথমবার আসছেন। সবথেকে কনিষ্ঠা। বয়স ২৩। মি.কস্তুরির সাথে সখ্যতা বেশ আছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় সুপরিচিত।

সপ্তম ব্যক্তি: প্রেরণা ভট্টাচার্য, কলকাতা। বয়স ২৭। ইনিও প্রথমবার আসছেন প্রদর্শনীতে। রবীন্দ্রনাথের চরম ভক্ত এবং শ্রীজাত, তুমি যদি একবার এনার গলায় রবীন্দ্রসংগীত শোনো, তুমি পাগল হবেই। আর একটা কথা, এর সাথে মি.কস্তুরির দুটো ছবি আছে।"

এই সময় নগেন এসে চা দিয়ে গেল। শ্রীজাত চা সহ প্লেট নিয়ে বলল, "এগুলো অনেকটা পাউরুটিতে জ্যাম প্রলেপনের মত। কামড় না দেওয়া পর্যন্ত বোঝা যাবে না দুটোর কেমন আদতে স্বাদ!"

আমি জানতাম ও এমনই কিছু একটা বলবো তবুও একই সুর দিয়ে বললাম, "সে নয় বুঝলাম, কিন্তু তুমি কি দেখলে সেটা বলো।"

শ্রীজাত একটু ভুরু কুঁচকে বলল, "দেখলাম মি.কস্তুরি আর এক বিদেশীকে, বোধহয় ওটা গ্রেগারী, পোল্যান্ডের দূত।"

#
লেক থানার অফিসার পুরকায়স্থ বললেন, "হু..ম.. শ্রীজাত, আমি কস্তুরিকে তোমার কাছে পাঠালাম। উনি আবার আমাদের উপস্থিতি ঠিক বরদাস্ত করবেন না। তোমার যদি কিছু সাহায্য লাগে আমায় জানিও।"

পুরকায়স্থ ফোন রাখল। পরে শ্রীজাত বলল, "এই কেসটা বড্ড বেয়ারা সুজিত। তবে একটা বিষয়ে বাঁচোয়া, চুরি এখনো হয়নি।

আমি বললাম, "সেটা তো সু-খবর। যাই হোক, বিকেলে কি-পরে যাবি বল?"

শ্রীজাত আলমারির সামনে গিয়ে একটার পর একটা জামা নেড়েচেড়ে দেখতে লাগল। গোলাপি রঙের একটা শার্ট বের করে বলল, "না, এ কি করছি আমি!"

আমি বললাম, "কি হল আবার! ভুলে গেলি নাকি কিছু!"

"না, ধরো মি.কস্তুরি আমাদের নিয়োগ করেছেন। সেটা যদি কেউ বুঝে যায়!"

"তাহলে কি বলিস, ছদ্মবেশ!

শ্রীজাত বলল, "বলা তো যায় না, চোর নাকের ডগায় এসে সুরসুরি দিতে-দিতে সব যদি হাপিস করে দেয়!"

#
আকাদেমিতে গিয়ে দেখলাম অসম্ভব ভিড়। আমন্ত্রিত সবাই পশ্চিমী আদব কায়দায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। ঢোকার মুখেই আমাদের তন্নতন্ন করে তল্লাশি নেওয়া হল। আমি আর শ্রীজাত পরস্পরের থেকে সরে ছিলাম। ঠিক করেছিলাম সেই সাতজনকেই আমরা চিহ্নিত করব। হঠাৎ দেখলাম একজন পাঞ্জাবি পরিহিত বাঙালি ইংরেজিতে কথা বলছেন। বিপরীতে দাঁড়িয়ে আছেন আফ্রিকার এনগিডি মাকাওযানডা। শ্রীজাত তাকে ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে নিচ্ছে। এরপরই দেখলাম আমার পাশ দিয়ে চলে গেলেন মি.লাটু। চিত্র প্রদর্শনী হলেও এটাকে ছোটোখাটো মডেলিং শো বললেও ভুল হবে না। ক্যামেরার আলোর ঝলকানিতে চোখ ঝলসে যাচ্ছে। মাঝে-মাঝেই লাটু সাহেবের জার্মান শেফার্ডটি এদিক-ওদিক তাকিয়ে একে-তাকে নিরীক্ষণ করে সবাইকে ব্যতিব্যস্ত করে তুলছে। পশ্চিমী আদলে মেয়েদের কলকলানি তাক লাগিয়ে দিচ্ছে আমাদের। মনে হল যেন, আমরা অকস্মাৎ লিবারেলদের সমসাময়িক হয়ে উঠেছি। একবার মনে হল, কে যেন পাশ দিয়ে বলে গেল, "রাতের রজনী সুজিত।" আমি ঘুরেই যেন ভিমড়ি খেলাম। মনে হল, এত জনসমাবেশের মধ্যেও কারা যেন এক স্বর্গীয় অপ্সরাকে ভুল করে রেখে গেছে। ইনি হলেন প্রেরণা ভট্টাচাৰ্য। এর গানের গলা আমি শুনেছি। অসাধারণ গায়িকা ইনি। অর্থাৎ এই সন্ধ্যায় আমাদের তৃতীয় অতিথি।

আন্দাজ সাড়ে আটটার সময় হলঘর খালি হয়ে গেল। দেখলাম, পুরকায়স্থবাবু শ্রীজাত-র সাথে কি কথা বলছেন। আমি পাশে য়েতেই শ্রীজাত বলল, "এই যে আমার বর্তমান সহযোগী, সুজিত।"

আমার সাথে হাত মেলালেন পুরকায়স্থ। অভিনব পুরকায়স্থ আজ পাঁচ বছর ধরে লেক-থানায় আছেন। ওনাকে বিদায় দিয়ে আমরা ভূতের মত দাঁড়িয়ে রইলাম। সারা হলঘরে গোটা পাঁচেক কক্ষ। কোনোটায় মিশরীয় পিরামিডের ভগ্নাবশেষ, কোথাও আবার খৃষ্ট পূর্বাব্দ চৌদ্দ শতকের রাজার ছুরিকা, তো কোথাও আবার মহামূল্যবান বৌদ্ধ পুঁথির সঞ্চয়। এই সময় মি.কস্তুরি আসলেন। আমাদের ফিসফিসিয়ে বললেন, "নিচের তলায় আসুন। গ্রেগারী আছেন। আর একজনের সাথে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেব।"
Next Part   


All Bengali Stories    124    125    126    127    128    129    (130)     131    132    133   


## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers. The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation. Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##


◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717