Home   |   About   |   Terms   |   Library   |   Contact    
A platform for writers

ব্যতিক্রম ( ছোট গল্প )

Bengali Short Story

All Bengali Stories    68    69    70    71    72    73    74    (75)     76   

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ আমাদের এই ওয়েবসাইট ( RiyaButu.com )-এ প্রকাশিত গল্পগুলির মধ্যে থেকে কিছু গল্প নিয়ে এবছরই প্রকাশিত হবে আমাদের 'রিয়াবুটু'র গল্প'।
--------------------------



◕ ব্যতিক্রম ( ছোট গল্প )
- প্রসেনজিৎ ঘোষ, সতীন সেন পল্লী, বেলঘরিয়া, কোলকাতা- ৭০০ ০৫৬

অন্ধকারের গাঢ়ত্বে রাতের গভীরতা মাপার ক্ষমতা নীলের কখনোই ছিল না। তাই তো সেই ছেলেবেলা থেকে আজকের ব্যস্ত কর্মজীবন অবধি কত বিনিদ্র রজনীই যে, সে কাটিয়েছে তার কোনো ইয়ত্তা নেই। সদ্য অপারেশন রুম থেকে বেরিয়ে নীল হাসপাতালের ডক্টরস-রুম এর দিকেই এগোচ্ছিল, বড্ড ধকল যাচ্ছে তার আজকাল। মেডিক্যাল কলেজ থেকে প্রথম শ্রেণীর নম্বর নিয়ে ডক্টরি পাস করেও সে অন্যান্য ডক্টরদের মত শুধুই দুটো – পাঁচটা ডিউটি করতে পারেনি। তার স্বপ্ন, একটা মানুষও যাতে বিনা চিকিৎসায় মারা না যায়, আর তাই সে স্বেচ্ছায় অসহায়ের সেবায়, সারাদিন হাসপাতালেই কাটায়। যত রুগীই হোক না কেনো, কিংবা যত রাতেই যেকোনো জরুরী পরিষেবারই দরকার পড়ুক, নীল কখনো না বলতে পারেনি। শুরু-শুরুতে অনেকে বারণ করতো, কিন্তু না ব্যতিক্রমীরা বোধ হয় এমনই হয়। হঠাৎ পাশ দিয়ে হেটে যাওয়া এক ওয়ার্ড-বয় এর মুখে একটা নাম শুনে যেন থমকে গেলো।

"দয়িতা চক্রবর্তী।"

হ্যাঁ দয়িতা চক্রবর্তীই। ঠিক এই নামটাই উচ্চারণ করেছে ওয়ার্ড-বয়।

৭ বছর আগের ঘটনা :
বাবা মরা একটা কিশোর ছেলেকে আজ শুধুমাত্র আর্থিক ও সামাজিক নিম্নবিত্তের কারণে মার খেতে হয়ছে , শুধু মার নয় ভাঙ্গা ঘরটুকু জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে অচ্ছুৎ হবার কারণে। যদিও আসল কারণ ছিল অন্য, আর সেটিই ছিল প্রকট। এই অচ্ছুত ছেলেটি ভালোবেসে ছিল উচ্চবিত্ত গ্রাম-প্রধানের এক মাত্র মেয়েটিকে। ভালোবাসা নিষ্পাপ। তাই তো দুটি মন উঁচু-নিচুর ভেদ করতে পারেনি। চেয়েছিল এক হতে। কিন্তু পারেনি। মুখোশধারি সামাজিক পার্থক্য আলাদা করেছিল সেদিন দুটো কিশোর-কিশোরীকে, সেদিনের অসহায় নীল আর দয়িতাকে।

হাসপাতালের বাইরে :
"এটা পুলিশ কেস। পুলিশ না আসা অবধি কোনো ট্রিটমেন্ট হবে না। " ওয়ার্ড-বয় একজন মাঝ বয়সী বিধ্বস্ত মানুষকে এই কথাটাই বার-বার বলে যাচ্ছিল।

"দয়া করুন। মেয়েটা আমার মরে যাবে। দয়া করুন। " মাঝ বয়সী ভদ্রলোক হাত জোড় করে গুন-গুন করছিল।

"দেখুন আপনার মেয়েকে শ্বশুরবাড়ির লোক পুড়িয়ে মারতে চেয়েছে। এটা মার্ডার কেস। পুলিশ না আসা অবধি কিছু করার নেই। আর হসপিটালে এত রাতে কোনো ডক্টরও নেই। একজনই আছে, কিন্তু ওনার এখন ডিউটি নেই, তাও ইমার্জেন্সী কেস বলে উনি এই মাত্র একটা অপারেশন করতে ঢুকেছেন। ওনার পক্ষে আর সম্ভব নয়।" কথাগুলো এক নাগাড়ে বলে গেল ওয়ার্ড-বয়টি।

ভদ্রলোক যেন হতাশায় হাউ-মাউ করে ডুকরে কেঁদে উঠলেন। কাঁদা-কাঁদা গলায় বলে উঠলো, “আমি ওনার পায়ে ধরতে রাজি, দয়া করতে বলুন। প্লিজ। নয়ত আমার একমাত্র মেয়ে ...” কথা শেষ হল না, ভদ্রলোকের গলা কেঁপে উঠলো।

নীল আবার চমকে উঠলো। এ লোকের গলা তার পরিচিত। ডক্টরস চেম্বারে ঢুকতে গিয়েও সে সরে এলো বাইরের লনটায়। দূর থেকে দেখেই বুঝতে পারলো ভদ্রলোক আর কেউ নয়, ইনি দয়িতার বাবা , তাদের সেই গ্রামপ্রধান। না মানুষটা অনেক বদলে গেছে। নদীর মত শান্ত হয়ে গেছে।

নীল এগিয়ে এলো। ওয়ার্ড-বয়কে ইশারা করে বলল পেসেন্টকে অপারেশন রুমে নিয়ে যেতে। না নীল আজ আর সেই সাত বছর আগের পরিচয় হীন যুবক নেই। সে আজ প্রতিষ্ঠিত। নামের আগে একটা ডক্টর উপমা সমাজ উচ্চারণ করে। জানি না হয়তো দায়িত্ববোধ মানুষকে সমস্ত সম্পর্কের চাইতে অনেকটা উঁচুতে নিয়ে যায়, একটা অন্য মাত্রা দেয়। আর তাই এই মুহূর্তে সে একজন ডক্টর হয়ে একজন মুমূর্ষু রুগী ও অসহায় পরিবারের বিপদে কি করে সরে যাবে? সে যে স্বেচ্ছায় এই যুদ্ধে সামিল হয়েছে। তা-ই হোক না, যতই সে রুগীর নাম দয়িতা হোক কিংবা হোক তার পরিবার।

নীলকে দেখে দয়িতার বাবার কি অবস্থা হয়েছিল তা সহজেই অনুমেয়। চরমতম লজ্জায় সে লোকটি মাটিতে মিশে বোধ হয় পুরনো সব পাপের প্রায়শ্চিত্ত করেছিল। পরিবারের কিছুটা পাপের দায় হতো মেয়েটির ও ভোগ করবার ছিল, আর তাই আজ তার (দয়িতার) এই অবস্থা।

অপারেশন-রুমে :
প্রিয় জনকে ভালবাসতে গেলেও বোধ করি আঘাত পেতে হয়। অপারেশন-রুমে আজ দীর্ঘ সাত বছর পর নীলের মুখো-মুখি দয়িতা শুয়ে। শ্বশুরবাড়ির অত্যাচারে তার শরীরের অনেকটা পুড়ে গেছে। না মুখটায় আগুনের তেমন আঁচ আসেনি। আজও বড্ড সরল সে মুখ। সেই লাবণ্য, সেই টানাটানা চোখ। মেয়েটা আজও গাঢ় করে কাজল পরে! নীল মুহূর্ত কলে হারিয়ে যাচ্ছিল ছোটবেলায়। কখনো কি সে ভেবেছিল তাদের আবারও দেখা হবে, এভাবে ! নীল নিজেকে সামলে নিল। আজ তাকে শেষ বারের মত ভালোবাসার প্রমাণ দিতেই হবে। সে ট্রে থেকে দুটো ফর্সেপ তুলে নিলো। একদিন অচ্ছুত হওয়ার কারণে তার বাড়ি জ্বলেছিল , যাকে ভালোবাসার অপরাধে তাকে সবটা মুখ বুঝে মেনে নিতে হয়েছিলো। আজ বিধাতার কি নিঠুর পরিহাস? সেই অচ্ছুত ছেলেটার হতেই মেয়েটির বাঁচা-মরা নির্ভর করে আছে। আজ তাকে এই অচ্ছুৎ হতেই মেয়েটির সমস্ত শরীরকে ছুঁয়ে-ছুঁয়ে একটু-একটু করে ভালোবাসা জুড়ে-জুড়ে বাঁচিয়ে তুলতে হবে মানবতা।
( সমাপ্ত )
Next Story


All Bengali Stories    68    69    70    71    72    73    74    (75)     76   


## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers. The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation. Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##


◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717