Home   |   About   |   Terms   |   Library   |   Contact    
A platform for writers

বিকালে ভোরের শিউলি

Bengali Story

All Bengali Stories    75    76    77    78    79    80    81    82    83    (84)    

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ আমাদের এই ওয়েবসাইট ( RiyaButu.com )-এ প্রকাশিত গল্পগুলির মধ্যে থেকে কিছু গল্প নিয়ে এবছরই প্রকাশিত হবে আমাদের 'রিয়াবুটু'র গল্প'।
--------------------------



বিকালে ভোরের শিউলি

লেখক - খগেন্দ্রনাথ অধিকারী
অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ, সাউথ সিটি কলেজ, কলিকাতা

◕ পর্ব ২

Previous Part

ঘরের নিস্তব্ধতা ভেঙ্গে দীপ্তি বলল, "সরি ম্যাম, আমি ইচ্ছা করে দেরী করিনি, বিশ্বাস করুন।" তার গলায় আকুতির সুর, চোখে মুখেও সেই ভাব।

সাহানার হৃদয়ের কৃত্রিম বাঁধ আবেগের স্রোতে এবার ভেসে গেল। সে মাস্ক ও চশমা খুলে ফেলল। চেয়ার থেকে উঠে দীপ্তির কাছে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে বলল, "আমি ..."

"তুই!! সাহানা!!"

দুই বান্ধবী একে অপরকে জড়িয়ে ধরে আবেগে কেঁদে ফেলল। চল্লিশ বছর ধরে বাঁধে আটকে থাকা জল যেন তীব্র স্রোতে বইতে লাগল। সেই স্রোতে ভেসে গেল দু'জনে। কিছুক্ষণ পরে চোখ মুছে দীপ্তি বলল, "তুই আর করবী, তোরা খুব নিষ্ঠুর সাহি। একটিবার আমার কথা তোরা শুনলি না। কথাই বন্ধ করে দিলি?"

"ওসব কথা থাক দীপ্তি।"

"না, আমি খুবই খারাপ সাহি, তবে এতটা খারাপ নই রে। আমার সেই অকথিত কথাগুলি আজ তোকে শুনতেই হবে।"

"ঠিক আছে, তাই হবে। শুনবো।"

ইতিমধ্যে চা এসে গেল। চায়ের কাপে চুমুক দিতে-দিতে দীপ্তি বলে চলল, "তোর কাছে আজ কিছুই লোকাবো না। প্রথম থেকেই স্যারকে আমি ভালবেসে ফেলেছিলাম। উনি ভীষণ ভালমানুষ ছিলেন। গোঁড়া থেকেই উনি আমায় স্বপ্ন দেখতে শেখালেন বড় হবার। সেই বড় হবার কারণে আমি উনাকে শুধু বলার চেষ্টা করেছিলাম যে, তিন জনের একই নোট হয়ে গেলে রেজাল্টটা কারোরই হাই-ফাই হবে না। তাই তোদের একটু আলাদা দেখাতে বলেছিলাম। খুবই সেন্টিমেন্টাল ছিলেন উনি। সাহি, আজ আমি পরস্ত্রী, তাই কাউকেই কোনোদিন এ কথাটা বলতে পারিনি। তবে তোকেই বলি, উনি যে কত উঁচু মনের মানুষ ছিলেন সেদিন বুঝেছিলাম। সেদিন পড়ানোর পর উনি বললেন, আর পড়াতে আসবেন না। কান্নায় ভেঙ্গে পড়লাম আমি। আমায় উনি স্বার্থপর, নীচ ইত্যাদি বলে গালাগাল করলেন। আমি হাত জোড়ে ক্ষমা চাইলাম। উনি ক্ষমা করলেন বটে, কিন্তু কঠোর শাস্তি দিলেন আমায়। বললেন, 'আমায় তুমি মৃত দেখবে যদি সাহানা ও করবীকে কিছু পড়ার ব্যাপারে কিছু বলো। ওদের যা বলার আমি বলবো।' ওনার এমন একটা কথায় আমি দুর্বল হয়ে গিয়েছিলাম, তাই তোদের কিছুই বলতে পারিনি। শুধু দেখলাম তোরা কথা বন্ধ করে দিয়েছিস, আমায় ঘৃণার চোখে দেখছিস। আমি বন্ধুহীন হয়ে গেলাম। নিজেকে খুবই অপরাধী মনে হতে লাগল, কিন্তু তোদেরকে কিছু বলার উপায় ছিল না। স্যারকেও এ ব্যাপারে বলার কিছু সাহস হতো না। বেশ কিছুদিন বাদে একদিন চক্ষু-লজ্জার মাথা খেয়ে বললাম,'আজ ভ্যালেন্টাইন ডে। পল-সাইন্স পড়াতে-পড়াতে ছাত্রীর লাভ-সাইন্স পেপারটা পড়াতে তো ভুলেই গেলেন। আজ প্রেমিকাকে কিছু দিতে হয়; দিন!'
উনি বললেন, 'হাত পাতো।'
হাত পাতলাম। উনি একটা ছোট্ট কাগজ বের করে আমার হাতে দিলেন। নিজের লেখা একটি সুন্দর কবিতা, আর তার নীচে আঁকা একটি চোখ। চোখের মাঝখানের মণিতে লেখা 'দীপ্তি'। আমি খুশিতে ভরে উঠেছিলাম। কিন্তু তবু বললাম, 'আমায় আর একটা জিনিস দিতে হবে আজ। কথা দিন ফেরাবেন না।'
'কথা দিলাম।'
"সাহানা ও করবীকে পড়াতে হবে।"
'ওদের পড়ার অলরেডি ব্যবস্থা করেছি আমি। আমিরুল পড়ে যায় এবং নোট নিয়ে যায়। ওরা তার থেকেই সব পাবে।'"

সাহানা বলল, "ঠিক তাই-ই দীপ্তি। তুই তো জানিস, স্কুল লাইফ থেকেই আমিরুল ও আমি পরস্পরকে ভালবাসি। আমিরুলের দারিদ্র্যতার কথা শুনে স্যার ওকে বিনা পয়সায় পড়াতেন। আর বলতেন যে, সাহানা ও করবীকে যে ও নোটগুলি দিয়ে দেয়। আমরা তিন জনই এ জন্য স্যারের কাছে কৃতজ্ঞ। অন্যদের মত উনি পয়সা-পিশাচ হলে আমাদের অনার্স পড়া হতো না। আমিরুলের কাছে শুনেছি, উনি কলেজ থেকে মাইনে পেতেন মাসে ২৫৫ টাকা। তার উপর সুদূর কাটোয়া কলেজে ওনার অধ্যাপনা, মেস করে থাকতেন। বাবা অসুস্থ; অবসর প্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষক। বাবার পেনশনও ছিল না। বাড়িতে বিবাহযোগ্য বোন। ইত্যাদি নানা কারণে স্যারকে প্রতি সপ্তাহে বাড়িতে আসতে হতো। এর মধ্যেই ওনাকে চলতে হতো। আমিরুলের মুখে শুনেছিলাম, এই আর্থিক কষ্ট হতে মুক্তি পেতে স্যার IAS পরীক্ষা দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু স্যারের বাবা স্যারকে বলেছিলেন, তুমি একজন শিক্ষকের ছেলে। তুমি অধ্যাপক হবে। ভাল মানুষ তৈরি করবে। স্যারের বাবা ছিলেন একজন লড়াকু মানুষ। রক্তের মধ্যেও স্যারের সেই প্রতিবাদ - প্রতিরোধের ধারা।"

"আমি সবই জানি সাহানা।"

"না দীপ্তি, তুই সবটা জানিস না। করবী আর আমাকে নোটগুলির ভূমিকা আর উপসংহার একটু-একটু চেঞ্জ করতে বলেছিলেন উনি। কারণ তিন জনের একই নোট লিখলে অসুবিধা হতে পারে, এই ভেবে। ভাবতে পারিস। এমন স্যার খুব কম হয় রে।"

সাহানার কথাগুলি শুনতে-শুনতে দীপ্তির চোখের কোনায় জল এসে গেল।

"একি! তুই কাঁদছিস কেন রে দীপ্তি?"

কোনও উত্তর না দিয়ে জানালার ফাঁক দিয়ে দীপ্তি বাইরের দিকে তাকিয়ে রইল। পাসে একটি ক্লাবে রক্তদান শিবির চলছিল। সেখানে খুব সুন্দর-সুন্দর রবীন্দ্রসংগীত বাজছিল। হঠাৎ উত্তমকুমারের কণ্ঠে সেই বিখ্যাত গানটি বেজে উঠল,
'অনেক কথা বলেছিলেম কবে তোমার কানে-কানে, কত নিশীথ অন্ধকারে কত গোপন গানে-গানে।।'
দীপ্তির মনে হল ওর প্রিয়তম স্যার বোধহয় ওকে কাঁদাতে জানালার নীচে দাঁড়িয়ে ওর হৃদয় মুচড়ে দিতে এই গানটি গাইছে। গানটি শেষ হওয়া মাত্র চোখ মুছতে-মুছতে দীপ্তি ওর মোবাইলে একটি গান ছাড়লো-
'তুই ফেলে এসেছিস কারে মন মনরে আমার.... তাই জনম গেল শান্তি পেলি না রে ....'

"অসাধারণ মিষ্টি গলা তো, এটা কার গাওয়া রে দীপ্তি? সুচিত্র মিত্র, না কি সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়?"

"এদের কারোরই না। রেবেকার।"

"রেবেকা? কে সে?"

"এই তো তোর সামনে বসে আছে।"

"তার মানে?"

"রেবেকা!"

সাহানার মনে পড়ে গেল।
Next part


All Bengali Stories    75    76    77    78    79    80    81    82    83    (84)    


## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers. The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation. Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##


◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717