All Bengali Stories
75
76
77
78
79
80
81
82
83
(84)
RiyaButu.com কর্তৃক বিভিন্ন Online প্রতিযোগিতাঃ
■ স্বরচিত গল্প লেখার প্রতিযোগিতা ...
Details..
■ প্রবন্ধ প্রতিযোগিতা ...
Details..
■ Hindi Story writing competition...
Details..
■ RiyaButu.com হল লেখক / লেখিকাদের গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ প্রকাশ করার একটি মঞ্চ। ঘরে বসেই নির্দ্বিধায় আমাদের কাছে লেখা পাঠাতে পারেন সারা-বছর ...
Details..
◕
বিকালে ভোরের শিউলি
লেখক - খগেন্দ্রনাথ অধিকারী
অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ, সাউথ সিটি কলেজ, কলিকাতা
ব্যাঙ্কের প্রায় সব কর্মীরা চলে গেছেন। কেবলমাত্র দু'জন গ্রুপ-ডি স্টাফ রয়েছে। নিজের চেয়ারে বসে ব্রাঞ্চ ম্যানেজার সাহানা পারভিন পেনডিং
কাজগুলি সারছেন। হঠাৎ সই করতে-করতে একটা জয়েন্ট একাউডেন্টের এপ্লিকেশনের দিকে তার নজর গেল; অধ্যাপিকা দীপ্তি নাগ ও ডাক্তার সুভাষ
নাগ। ফটো দুটোর দিকে চোখ পড়তেই তিনি নিশ্চিত হলেন, এ তো চল্লিশ বছর আগে বসিরহাঁট কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান অনার্সে তার সহপাঠিনী দীপ্তি। পাসে
স্বামীর ফটোটা একটু বিস্ময়কর। বাঙালী উপাধি নাগ। কলেজেও দীপ্তির এই উপাধিই ছিল, কিন্তু স্বামী ভদ্রলোকের চেহারা দেখে মনে হল উনি
উপজাতি সম্পদয়ের মানুষ। গায়ের রংটা তো ফটোতে কালো বলেই মনে হচ্ছে।
যাই হোক, আর দশ দিন বাদে সাহানা ম্যাডাম ষাট পূর্ণ করবেন, চাকরি থেকে অবসর নেবেন। প্রায় ৩৯ বছর যাবৎ তিনি স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার
কর্মচারী হিসেবে বিভিন্ন পদে থেকে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে বিভিন্ন শাখায় চাকরি করেছেন। এবার উদয়পুর ব্রাঞ্চ থেকে সিনিয়র ম্যানেজার হিসাবে
অবসর নিয়ে আবার ফিরে যাবেন নিজের শহর পশ্চিমবঙ্গের বসির হাটে। কর্মজীবনের পড়ন্ত বেলা, শেষ প্রহরে এসে এমন একটা চমক তার
সামনে আসবে, তিনি ভাবতেও পারেন নি।
তার চোখের পর্দায় ভেসে উঠল চল্লিশ বছর আগের কলেজ জীবনের ছবি। ১৯৭৭ সাল থেকে ১৯৭৯ সাল, সাহারা-দীপ্তি ও আর এক বান্ধবী
করবী বি.এ অনার্স পাশ করে। ওর বন্ধু; বর্তমানে স্বামী, আমিরুলও এক সাথে অনার্স পাশ করে। দীপ্তি ছিল বিশাল ধনীর মেয়ে, মেধাবীও ছিল।
কাজেই ও কলকাতার বিশ্ববিদ্যালয়ে এম.এ পড়তে চলে যায়। সাহানার রেজাল্ট আরো বেশী ভাল হলেও, তাদের নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার।
কাজেই অনার্স পাশ করেই ও ব্যাঙ্কিং এ পরীক্ষা দিয়ে চাকরিতে যোগ দেয়। তারপর থেকে দীপ্তি-সাহানা সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। এমনকি কলেজে
পড়তে-পড়তে ফার্স্ট ইয়ারেই করবী ও সাহানা ওর সাথে আলাপ বন্ধ করে দেয়। কারণটা হল এ রকম: ওরা তিনজনই আন্তরিক বন্ধু ছিল।
সেই সুবাদে দীপ্তি যে তরুণ, সদ্য পাশ করা, National Scholar স্যারের কাছে নিজের বাড়িতে প্রাইভেট পড়ত, সেই স্যারের কাছেই
সাহানা ও করবী, দীপ্তির বাড়িতেই প্রাইভেট পড়তে চাইল। দীপ্তি সম্মতি দিয়েছিল। দু-তিন দিন ওরা দু'জনে দীপ্তির বাড়িতে স্যারের কাছে
পড়তে গিয়েছিল। কিন্তু, স্যারকে দিয়ে সুকৌশলে দীপ্তি তার বাড়িতে ওদের পড়া বন্ধ করে দেয়। ক্ষোভে ওরা আর কোনোদিন দীপ্তির সাথে
আলাপ করে নি। করবী আর সাহানা নিজেদের মধ্যে বলাবলি করত যে, দীপ্তির বাইরেরটা সোনার মত চকচকে, কিন্তু ভিতরটা ময়লা,
অত্যন্ত কালো, অত্যন্ত স্বার্থপর। নিজের বাড়িতে ভালো প্রফেসারের কাছে একা-একা পড়ে খুব ভাল রেজাল্ট করবে, তাই স্যারকে সামনে
রেখে দীপ্তি পিছন থেকে ওদের পড়ানোটা বন্ধ করে দিল। কলেজে ঢুকেই যার সঙ্গে ওদের এত গলায়-গলায় ভাব, তার সঙ্গে কয়েকদিনের
মধ্যেই আদায়-কাঁচকলা সম্পর্ক হয়ে গেল। এমনকি দীপ্তি যে বেঞ্চে বসত, সেই বেঞ্চে সাহানারাও বসতো না।
দীর্ঘ প্রায় ৪২ বছর বাদে তার ছবি দেখে সাহানার বুকের মধ্যে একটা অদ্ভুত অনুভূতি, একটা অদ্ভুত আকুতি দেখা দিল সেদিনের সেই অষ্টাদশী
সহপাঠিনীর সঙ্গে কর্মজীবনের শেষ প্রান্তে এসে দেখা করার। তার সহপাঠী, ছাত্রজীবনে তার প্রেমিক ও বর্তমানে তার স্বামী আমিরুলের কাছে থেকে
সে টুক-টাক কিছু খবর পেয়েছে দীপ্তি সম্পর্কে এবং সেই স্যার সম্পর্কে, যিনি দীপ্তিকে প্রাইভেট পড়াতেন। দীপ্তির সাথে ঐ স্যারের দীর্ঘ পাঁচ বছর
অর্থাৎ অনার্স থেকে এম.এ পড়া পর্যন্ত গভীর প্রেমের সম্পর্ক ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিয়েটা হয় নি। দীপ্তিই ডাঃ সুভাষ নাগকে বিয়ে করে ত্রিপুরায়
চলে আসে। সাহানা এও জেনেছিল যে, দীপ্তি ত্রিপুরার কোনও একটি গার্লস কলেজে অধ্যাপনার কাজ পেয়েছে। কিন্তু সেটা যে উদয়পুরেরই কোনও
এক গার্লস কলেজ, সেটা সে জানত না। আজ সব স্পষ্ট হল ব্যাঙ্কের ঐ কাগজগুলি দেখে।
কর্মসূত্রে সাহানা আজ উদয়পুরে। দশ দিন বাদেই, অবসরের পর সে চলে যাবে নিজের রাজ্যে, নিজের শহরে। আর বিবাহসূত্রে দীপ্তি আজ
স্থায়ী বাসিন্দা উদয়পুরের, অন্তত তার দরখাস্ত তো তাই-ই বলছে। কাজেই তার অবসরের পরে উদয়পুর ছেড়ে চলে গেলে আর তো কোনদিনও দেখা
হবে না দীপ্তির সঙ্গে। তাই অতীতের সব তিক্ততা মুহূর্তের মধ্যে ভুলে গিয়ে ফর্মের মধ্যে লেখা দীপ্তির মোবাইল নম্বর ধরে সাহানা ফোন করল,
"গুড আফটার-নুন ম্যাম, আমি এস.বি.আই উদয়পুর ব্রাঞ্চের সিনিয়র বি.এম বলছি।"
"গুড আফটার-নুন। বলুন, বলুন।"
"আপনাকে কাল একবার সকালে ৯টা ৩০ এর মধ্যে এসে আমার কেবিনে আমার সঙ্গে দেখা করতে হবে। আপনার এপ্লিকেশনে কিছু ভুল
আছে, সেগুলি ঠিক করতে হবে। সমস্ত Orighinal কাগজপত্র নিয়ে আসবেন। একা এলেই হবে।"
"ঠিক আছে ম্যাম। তবে বলছিলাম কি, টাইমটা দশটা করলে আমার একটু সুবিধা হয়।"
"না-না ম্যাম, ঐ সময় তো সব স্টাফরা এসে পড়ে, তখন আমি আপনাকে সময় দিতে পারব না। আপনার ঐ কারেকশনগুলি করতে বেশ
সময় লাগবে।"
"ও-কে ম্যাম, তাই হবে। "
পরদিন অধ্যাপিকা দীপ্তি ঠিক সময়ে এসে ব্রাঞ্চ ম্যানেজারের কেবিনের সামনে দাঁড়ালেন। দরজার পিওনকে নিজের নাম লিখে স্লিপটি দিলেন।
সেটা হাতে পেয়ে বি.এম. সাহানা ভাবলেন যে প্রথমে দীপ্তিকে একটু ঘাবড়ে দেবেন, তারপর আসল পরিচয় দেবেন। তাই তিনি মুখে মাস্ক পড়লেন
আর ইচ্ছা করে চোখে কালো সান-গ্লাস পড়লেন। পিওনকে বললেন ওকে ভিতরে ডাকতে।
"নমস্কার ম্যাম, আমার একটু দেরি হল আসতে। রাস্তায় খুব জ্যাম," দীপ্তি কাচুমুচু মুখে বলল।
সাহানা বাকরুদ্ধ হয়ে গেল দীপ্তিকে দেখে। কি মায়ালী চোখ, একটা চাপা অসহায়তার ছাপ ওর সারা মুখে। বৈভবের মাঝেও সেটা উঁকি মারছে।
পরনে জামদানী, গলায় দামী মুক্তার হার, সোনার কাঁকন দু'হাতে। নাকফল আর কানের দুল থেকে হীরের দ্যুতি ঠিকরে পড়ছে। দাঁতগুলি দুধ
সাদা। কলপ করা কিনা বুঝতে পারছে না, কিন্তু দীপ্তির মাথা-ভর্তি চুলগুলো কাজলা দীঘির মত কুচকুচে কালো। সাহানার মনে হল যেন, এক
পরি তার ঘরে ঢুকেছে, কিন্তু এক চাপা বেদনার রেশ যেন বেরিয়ে পড়ছে তার সর্বাঙ্গ থেকে। সাহানা নীরবে সব পর্যবেক্ষণ করছে।
Next Part
All Bengali Stories
75
76
77
78
79
80
81
82
83
(84)
RiyaButu.com কর্তৃক বিভিন্ন Online প্রতিযোগিতাঃ
■ স্বরচিত গল্প লেখার প্রতিযোগিতা ...
Details..
■ প্রবন্ধ প্রতিযোগিতা ...
Details..
■ Hindi Story writing competition...
Details..
■ RiyaButu.com হল লেখক / লেখিকাদের গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ প্রকাশ করার একটি মঞ্চ। ঘরে বসেই নির্দ্বিধায় আমাদের কাছে লেখা পাঠাতে পারেন সারা-বছর ...
Details..
◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 7005246126