Home   |   About   |   Terms   |   Library   |   Contact    
A platform for writers

আর একটি নতুন ভোর

Bengali Story

All Bengali Stories    84    85    86    87    88    89    90    91    92    93    (94)     95   

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ আমাদের এই ওয়েবসাইট ( RiyaButu.com )-এ প্রকাশিত গল্পগুলির মধ্যে থেকে কিছু গল্প নিয়ে এবছরই প্রকাশিত হবে আমাদের 'রিয়াবুটু'র গল্প'।
--------------------------



আর একটি নতুন ভোর

লেখিকা - শ্রীপর্ণা দে, দুর্গাচরণ মিত্র স্ট্রিট, কলকাতা
( লেখিকা পরিচিতি: প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে পড়াশোনা শেষ করে একটি কলেজে অধ্যাপনা করেছেন। লেখিকার বিভিন্ন লেখা দেশ, উনিশ কুড়ি, গৃহশোভা, কথাসাহিত্য, প্রসাদ, নন্দন, উদিতা এবং আরও অনেক লিটল ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়েছে। )

অন্য পর্ব গুলিঃ পর্ব ১    পর্ব ২    পর্ব ৩    পর্ব ৪

পর্ব ৩


কয়েক ঘণ্টা পর উজ্জ্বল ডাক্তার এসে মেয়েটিকে দেখে কিছু প্রয়োজনীয় ওষুধ লিখে দিলেন। হাবলকে তিনি বললেন, "তুমি যত শীঘ্র পারো এই ওষুধগুলো কিনে আনো। আমি আপাতত একটা ইঞ্জেকশন দিয়ে দিচ্ছি।" উজ্জ্বল ডাক্তার হাবলের হাতে প্রেসক্রিপশনটা ধরিয়ে দিলেন। হাবল ওষুধ নিয়ে আসার পর কোন ওষুধ কখন খাওয়াতে হবে উজ্জ্বল ডাক্তার মিনুকে ভালোভাবে বুঝিয়ে দিলেন। তিনি মিনুকে যাবার আগে বললেন, "এই ওষুধগুলো সময়মতো খাওয়াবে। আর মেয়েটা কেমন থাকে হাবলকে দিয়ে একটু জানিও।"

উজ্জ্বল ডাক্তারের কথামতো মিনু সময়মতো খাবার আর ওষুধ খাওয়ালো। মিনু পরমাত্মীয়ের মতো দিনরাত এক করে মেয়েটার সেবা যত্ন করল। মেয়েটাকে সুস্থ করাই তার ধ্যানজ্ঞান হয়ে উঠল। হাবল মেয়েটার জন্য মিনুকে এত কিছু করতে দেখে প্রায়ই বলে, "কে হয় মেয়েটা তোর? সারাদিন ওই মেয়েটার পিছনে পড়ে থাকিস! ওর নিজের লোক থাকলেও এত করত না।" হাবলের কথা শুনে মিনু বলে, "কে নিজের, কে পরের এইভাবে বিচার করো না। পরিস্থিতি নিজের কোনটা পরের কোনটা ঠিক করে।" হাবল কৌতূহল-বশত জিজ্ঞাসা করে, "মানে!" মিনু হেসে বলে, "ও মানে তুমি বুঝবে না গো।"

উজ্জ্বল ডাক্তার সকলের কাছে হাতুড়ে ডাক্তার বলে পরিচিত হলেও তার ওষুধেই মেয়েটা দু'সপ্তাহের মধ্যে সেরে ওঠে। তার সঙ্গে মিনুর অক্লান্ত সেবাযত্ন মেয়েটার শারীরিক অবস্থার অনেকখানি উন্নতি ঘটায়। মেয়েটার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হলেও মানসিকভাবে সুস্থ হওয়ার কোনও লক্ষণ দেখা গেল না। একদিন মিনু মেয়েটাকে জিজ্ঞাসা করল, "তোর নাম কি রে? কোথায় ঘর তোর? এখানে এলি কিভাবে?"

মেয়েটি নীরব থেকে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে মিনুর দিকে একভাবে তাকিয়ে রইল। মিনু তা আঁচ করতে পড়ে বলল, "কি রে, কথা বল। ভয় কি তোর! আমি তো আছি। ঠিক আচে তোকে কিছু বলতে হবে না। আমি তোর নাম দিলাম রাণী। নামটা পছন্দ তোর।" মেয়েটি ঘাড় নেড়ে মিনুর কথায় সম্মতি জানালো। হাবল তাচ্ছিল্যের সুরে বলল, "রাণী, তা কোন দেশের রাজরানী? পায়ের উপর পা তুলে তো দিব্যি এতগুলো দিন কাটিয়ে দিলে।" মিনু হাবলকে মুখ ঝামটা দিয়ে বলল, "এমন বলো ক্যানে? কথা বলতে শেখো লাই। দেখচ মেয়েটা অসুস্থ। মনে করতে পারচে না কিচু।" হাবল বলল, "মনে করতে পারে না, নাকি মনে করতে চায় না! ওর কি মতলব! নয়-নয় করে প্রায় দেড় মাস কাটিয়ে দিলো। আর কতদিন থাকবে এখানে?"

মিনু জোর গলায় বলল, "থাকবে যতদিন খুশি। তোমার কি হয়েচে তাতে! ওকে যখন মৃত্যুর মুখ থেকে বাঁচিয়েচি তখন সব দায়িত্ব আমার।" হাবল বিরক্তির সুরে বলল, "মিনু, তুই বড্ডো বোকা। এমনও তো হতে পারে ওর সব মনে আছে। এখানে থাকবে বলে ন্যাকামো করছে।"

হাবল-মিনুর এসব কথাবার্তা শুনে মেয়েটা কি যেন চিন্তা করে বলল, "আমার জন্য তোমরা অশান্তি করো না। আমাকে যেখান থেকে তোমরা এনেছিলে সেখানেই দিয়ে এসো।" মিনু বলল, "না মা, এসব কথা মুখেও আনিস না। তুই কোথাও যাবি না আমি থাকতে।" মেয়েটাকে মিনু বুকে এমনভাবে জড়িয়ে ধরল, দেখে মনে হলো তার কোনও বহু মূল্যবান জিনিস কেউ ছিনিয়ে নিতে এসেছে। মিনুর এই আচরণটা হাবলের চোখে কেমন যেন ঠেকল। মিনুর মেজাজ বিগড়ে যাবে বলে সে চুপ থাকল এই ভেবে যে, মাস-খানেক তো হয়েই গেল আর কিছুদিন মেয়েটা থাকুক। তারপর আরেকটু সুস্থ হলেই বিদায় করব মেয়েটাকে। মিনু বড় সরল। সে তো বোঝে না এই বাজারে মেয়ে পোষার কত খরচ। মিনু না বুঝলেও সে তো মেয়েটার পাল্লায় পড়ে বোকা বনবে না।

সেদিন রাত্রের খাবার খাওয়ার পর রাণী হঠাৎ বমি করতে শুরু করল। মিনু ভয় পেয়ে বলল, "রাণী আবার তোর শরীর খারাপ করচে বুঝি! কোথায় কষ্ট হচ্চে?" রাণী মিনুর ডান হাতটা কপালে নিয়ে বলল, "মাথাটা কেমন ঘুরছে।" মিনু বলল, "ঠিক আচে। তোকে আর বসে থাকতে হবে না। শুবি চল।" রাতটা কেটে গেল চোখের নিমেষে।

হাবল সকালে উঠে জোর গলায় বলল, "রাজরাণী হয়ে ঘরের মধ্যে দিনরাত শুয়ে বসে আছে। বাড়িতে গতর খাটাতে আপত্তি। একে আমার মা-টা পড়ে আছে, তার উপর ওই ফেউ এসে জুটেছে। বাড়িটাকে বাড়ি না বলে ধর্মশালা বলা ভালো।" মিনু হাবলের গলা পেয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে এসে বলল, "কি হয়েচে তোমার? সকাল সকাল চিৎকার করো ক্যানে? তোমার যদি শুতে মন হয় শোও। কেউ তো তোমাকে বাধা দিচ্চে না!" হাবল বিরক্তি ভরা গলায় বলল, "আমি শুলে সংসার শুয়ে পড়বে। এই ক'দিন কত খরচ হলো তোর ধারণা আছে! খাবার-দাবার, ওষুধ, ডাক্তার- এসব খরচ ভেবে দেখেছিস! রাণীর মতো সুখের শরীর নয় আমার। কাম আছে। ওই মেয়েটা সারাদিন শুয়ে বসে না থেকে তোর কামে হাত লাগাতে পারে তো। শুধু তোর সেবাযত্ন নিয়ে প্রায় দু'মাস কাটিয়ে দিলো।"

মিনু বলল, "দোহাই তোমার, একটু চুপ করো। রাণী শুনলে কি ভাববে! আমার কামে কাউকে লাগবে না। মেয়েটার শরীরটা ভালো নাই।" হাবল ঠোঁট উল্টিয়ে বলল, "থাম, থাম। সব কাম না-করার বাহানা। আমি কামে বেরোচ্ছি।" হাবল নিজের কাজে বেরিয়ে গেল।

ঘর থেকে রাণী সব কথাই শুনছিল। সে বাইরে এসে ঝাঁটা তুলে নিয়ে উঠোন ঝাঁট দিতে শুরু করল। মিনু রাণীকে ঝাঁট দিতে দেখে বলল, "এ কি করিস! তোর না কাল রাত থেকে শরীর খারাপ। ওই মানুষটার কথায় তুই কাম করচিস। ওর বাইরেটা কাঠখোট্টা, ভিতরটা খুব নরম। ওর কথা তুই ধরিস না।" রাণী বলল, "কাজ না করে আমার খাওয়া উচিত নয়। তোমাকে তো আমি মা ডাকি। মেয়ে হয়ে মায়ের কাজে সাহায্য করলে ক্ষতি কি! সারাদিন এত পরিশ্রম করো তুমি, তোমারও তো কষ্ট হয়। মিনু হেসে বলল, "আমার খাটতে কষ্ট হয় না রে। ঠিক আচে তুই ঝাঁট দে। কিন্তু কেবল ঝাঁটটুকুই।" মিনুর সন্তান না থাকার অভাব রাণী এই কয়েকটা দিনেই রাণী পূরণ করে দিয়েছে। কথা শেষ করে মিনু দুটো বালতি দু'হাতে নিয়ে নদীতে জল আনতে গেল।

ঘণ্টা-খানেক পর মিনু নদী থেকে ফিরে এসে দেখল রাণী অজ্ঞান হয়ে উঠোনে পড়ে আছে। মিনু জলের বালতি নামিয়ে বলল, "রাণী, কি হয়েচে তোর? শুনতে পাচ্চিস! চোখ খোল।" মিনু হাতের তালুতে খানিকটা জল নিয়ে রাণীর চোখে-মুখে ঝাপটা দিলো। জলের স্পর্শ পেয়ে রাণী চোখ খুলল। রাণী বলল, "মা, আমার মাথাটা কেমন ঘুরছিল। তাই পড়ে গেলাম।" মিনু বলল, "এই কারণেই আমি ঘরে থাকতে বলছিলাম। আমার কাম আমি ঠিক করে নেব। তোর শরীর সুস্থ নয়। দাঁড়া, আজই একবার উজ্জ্বল ডাক্তারকে আনার ব্যবস্থা করচি। এভাবে ফেলে রাখা ঠিক নয়।" সে রাণীকে ঘরে নিয়ে গিয়ে শুয়ে দিলো।
Next Part


অন্য পর্ব গুলিঃ পর্ব ১    পর্ব ২    পর্ব ৩    পর্ব ৪

All Bengali Stories    84    85    86    87    88    89    90    91    92    93    (94)     95   


## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers. The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation. Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##


◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717