Home   |   About   |   Terms   |   Library   |   Contact    
A platform for writers

আর একটি নতুন ভোর

Bengali Story

All Bengali Stories    84    85    86    87    88    89    90    91    92    93    (94)     95   

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ আমাদের এই ওয়েবসাইট ( RiyaButu.com )-এ প্রকাশিত গল্পগুলির মধ্যে থেকে কিছু গল্প নিয়ে এবছরই প্রকাশিত হবে আমাদের 'রিয়াবুটু'র গল্প'।
--------------------------



আর একটি নতুন ভোর

লেখিকা - শ্রীপর্ণা দে, দুর্গাচরণ মিত্র স্ট্রিট, কলকাতা
( লেখিকা পরিচিতি: প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে পড়াশোনা শেষ করে একটি কলেজে অধ্যাপনা করেছেন। লেখিকার বিভিন্ন লেখা দেশ, উনিশ কুড়ি, গৃহশোভা, কথাসাহিত্য, প্রসাদ, নন্দন, উদিতা এবং আরও অনেক লিটল ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়েছে। )

অন্য পর্ব গুলিঃ পর্ব ১    পর্ব ২    পর্ব ৩    পর্ব ৪

পর্ব ৪


দুপুরে হাবল খেতে বাড়ি এলে মিনু বলল, "শোনো, আজ বিকেলে একবার উজ্জ্বল ডাক্তারকে নিয়ে এসো তো। রাণীর শরীর ভালো নাই। দুপুরে কিচু খেতে পারে নাই। পেটের খাবার সব বমি করে উগড়ে দিলো।"

হাবল বলল, "মিনু, তুই ওই রাণীকে নিয়ে বাড়াবাড়ি করা বন্ধ কর। আর রোজ-রোজ গাদাগুচ্ছের টাকা খরচ করে আমি ডাক্তার ডাকতে পারব না। এই তোকে বলে দিলাম।"

মিনু অভিমান ক্ষুব্ধ গলায় বলল, "ঠিক আচে। তুমি না পারো আমিই ডেকে আনব।" মিনু চড়েছে দেখে হাবল বলল, "কি দরকার ওসবের মিনু! খানিক বিশ্রাম নিলেই রাণী ভালো হয়ে যাবে। আচ্ছা ঠিক আছে, আমি বিকালে ডাক্তার নিয়ে আসব।"

বিকালে হাবলের বাড়িতে উজ্জ্বল ডাক্তার এলো। রাণীকে ভালো করে দেখে মিনুকে বললেন, "চিন্তার কোনও কারণ নেই। এই সময় এটা স্বাভাবিক ব্যাপার।"

মিনু বলল, "তার মানে রাণীর শরীর ঠিক আচে!"

উজ্জ্বল ডাক্তার স্মিত হেসে বললেন, "তোমার রাণী মা হতে চলেছে। এই সময় খুব সাবধানে, যত্নে রেখো। খেয়াল রেখো যেন কোনও ত্রুটি না হয়।"

উজ্জ্বল ডাক্তার চলে গেলেন। ডাক্তারবাবুর মুখ থেকে 'রাণী মা হবে' শুনে মিনুর চোখে মুখে অসীম আনন্দ ফুটে উঠল। কোনোদিক না ভেবে মিনু ভাবল যে, তার সন্তান নেই তো কি হয়েছে, ভগবান আজ তার কোল জুড়ে দুটো প্রাণের ভার দিয়েছেন। এই অধিকার থেকে তাকে কেউ বঞ্চিত করতে পারবে না।"

তবে এই খবর শুনে রাণী কেমন যেন মনমরা হয়ে গেল। শারীরিক দিক থেকে সে সুস্থ হলেও মানসিক দিক থেকে সে এখনও সুস্থ হতে পারেনি। তার উপর এরকম একটা খবর তার কাছে যেন অবাঞ্ছিত, অপ্রত্যাশিত ধাক্কা। রাণী বলল, "আমি তো এ খবর শুনতে চাইনি মা।" সে দু'হাত দিয়ে নিজের পেট এমনভাবে খামচে ধরল যেন সুপ্ত শিশুর গলা টিপে ধরতে চাইছে। মিনু রাণীকে দেখে আঁতকে উঠে বলল, "কি করচিস তুই! এত আনন্দের একটা খবর। তুই পাগল হলি নাকি!"

রাণী কাঁদতে-কাঁদতে বলল, "মা, কি পরিচয় হবে তার, যে আমার গর্ভে আসতে চলেছে! কোন পরিচয়ে সে বাঁচবে? এই কথাটা ভেবে দেখেছো একবারও?"

মিনু বলল, "তোর সন্তান বাঁচবে। সে মাথা উঁচু করে বাঁচবে আমাদের পরিচয়ে। কেন, তুই বেঁচে নাই?"

রাণী না হতে চলেছে শুনে হাবলের মাথার রক্ত টগবগ করে ফুটতে শুরু করল। হাবল ঝাঁঝালো গলায় মিনুকে বলল, "শোন, আমি কারোর দায়িত্ব নিতে পারব না। এই আদিখ্যেতা আমার সহ্য হয় না। একটা অবিবাহিত কুমারী মেয়ে বাচ্ছার জন্ম দেবে! লোকে ছি ছি করবে। এমনিই তো চরের পাঁচজন পাঁচ কথা বলে। মেয়েটার সঙ্গে আমাদের কি সম্পর্ক, মেয়েটাকে কোথায় পেল, হিসেবি হাবলদা কোন গ্যাঁড়াকলে পড়ে মেয়েটাকে ভাত দিচ্ছে? আরও কত কি সব কথা! তারপর যদি শোনে মেয়েটার পেটে বাচ্ছা এসেছে, তাহলে তো আর রক্ষে নেই। হয় চরের লোক আমাদের একঘরে করবে ,নয়তো আমাদের ভিটে ছাড়া করবে। যাদের বাপের ঠিকানা নেই তাদের পৃথিবীর আলোও দেখতে নেই।"

মিনু গর্জে উঠে বলল, "চুপ করো বলচি। যা বলেচো ঢের বলেচো। ওই জন্যই তোমার মতো লোকের সন্তান দেননি গো ভগবান। আর আমি মা হতে অক্ষম। আজ যখন ভগবান চান আমার এই মাটির ঘরে নতুন আলো আসুক তখন তুমি সে আলো নিভিয়ে দিতে চাও। অন্ধকারের মধ্যে রেখে দিতে চাও আমাকে চিরটাকাল। তোমার মন বলে কিছু নাই।" মিনু কথা বলতে-বলতে হাউ-হাউ করে কেঁদে ফেলল।

হাবল একটু নরম গলায় বলল, "মিনু, তুই কেন বুঝতে চাইছিস না, যে আসতে চলেছে সে আমাদের কেউ নয়; ওই মেয়েটার পাপের ফসল। ওর জন্য আমরা কেন ভুগব বলতে পারিস! রাণীকে আমরা যতই লালন পালন করি না কেন সে তো আমাদের রক্তের কেউ নয়। আর এক গাছের ছাল কখনো অন্য গাছে লাগে না, একদিন না একদিন সে খসে পড়ে। তাছাড়া কোনও ভদ্রলোকেও এটা মেনে নেবে না। সমাজ মেনে নেবে না। বড়লোকেরাও ফেলে দেয় এরকম জঞ্জাল। ওরা কি ভরণ-পোষণ করতে পারে না! ওরা কারোর পাপের ভাগ নেয় না।"

মিনু হেসে বলল, "পাপ কাকে বলচো! একটা নিষ্পাপ শিশু পৃথিবীতে আসবে এটা পাপ! আর তার মায়েরই বা কি দোষ বলো! সেদিন আমরা যদি না বাঁচাতাম রাণী হয়তো বাঁচতো না। যারা রাণীর সর্বনাশ করেছে পাপী তো তারা। আর বড়লোকের কথা বলচো! টাকা থাকলেই কি মানুষ হয়? টাকার সঙ্গে বড় মন থাকতে হয়। আমরা গরিব হতে পারি, কিন্তু রক্ত-মাংসের মানুষ। আমরা পারি না মা আর তার সন্তানকে আশ্রয়হীন করতে। তুমি চিন্তা কোরো না। চরের মানুষজন যদি নিজের অধিকারের বাইরে কথা বলতে আসে সেটা আমি বুঝে নেব।"

হাবল বলল, "মিনু, তোর সত্যিই একটা বড় মন আছে। আমার পাপেই বোধ হয় ভগবান তোকে মা হতে দিলেন না।"

মিনু বলল, "আমার তোমার কাছে একটাই আর্জি, রাণীকে আমাদের মেয়ে বলে মেনে নাও। আজ যদি আমাদের ছেলেমেয়ে হতো সেও রাণীর বয়সেরই হতো। সেই মেয়ের যদি এরকম অবস্থা হতো, পারতে ফেলে দিতে? তোমার কাছে এই জীবনে আর কিচু চাইব না।"

হাবল বলল, "তুই যা চাস তাই হবে। তুই এই প্রথমবার আমার কাছে চেয়েছিস। তোর কথা মনে নিলাম।"

হাবল রাণীকে জড়িয়ে ধরে বলল, "আয় মা, তোকে বুকে জড়িয়ে ধরে বুকটা জুড়িয়ে নিই। আজ থেকে তুই আমাদের মেয়ে হয়ে থাকবি। আমাদের পরিচয়ই তোর পরিচয়। কারণে-অকারণে কত খারাপ কথা তোকে বলেছি। আমাকে ক্ষমা করিস মা।" হাবলের হৃদয়ে স্নেহের ফল্গুধারা তাকে এক লহমায় নিমজ্জিত করতে চাইল।

রাণী বলল, "তোমরাই আমার বাবা-মা। বাবা হয়ে মেয়ের কাছে ক্ষমা চেয়ে আমার পাপ বাড়িও না। এতদিন হয়ে গেল আমি বাড়ি নেই। আমার নিজের ঘরবাড়ি কোথায় মনে করতে পারি না। কিন্তু আমার বাড়ির লোক, আপনজন কেউ তো আমার খোঁজে আসেনি। তোমরাই তো আমাকে প্রাণে বাঁচিয়েছ। ঘরবাড়ি, আশ্রয়, পরিচয় সব দিয়েছ। তোমাদের এই ঋণ শোধ করার ক্ষমতা আমার নেই। এই বাচ্ছার বাবা কে, তা আমি জানি না, কিন্তু মা তো আমি। মা হয়ে কি করে আমি নিজের বাচ্ছাকে খুন করব বলো!" রাণীর গলার স্বর আর্দ্র হয়ে এলো। মিনু বলল, "ধূর বোকা। বাবা-মার ঋণ কেউ শোধ করতে পারে না।"

দেখতে-দেখতে হাবল আর মিনুর রাণীকে নিয়ে প্রায় নটা মাস কেটে গেল। আর কিছুদিনের মধ্যে রাণী হয়তো সন্তানের জন্ম দেবে। হাবলের মাও দু'মাস হলো মারা গেছে। রাণী এখন ভরপুর পোয়াতি। শরীর ভারী হওয়ায় চলতে-ফিরতে তার খুব কষ্ট হয়। মিনু সারাক্ষণ তার খেয়াল রাখে। মা না হলেও মিনু জানে সন্তান জন্ম দেওয়া খুব কষ্টের। মিনু মাঝেমধ্যেই রাণীকে বলে, "আর তো কটা দিন মা। একটু ধৈর্য ধর।" রাণীও এই কয়েকটা মাসে হাবল-মিনুকে আপন করে নিয়েছে। রাণীর পূর্ব পরিচয় যাই হোক না কেন, সে এই পরিবেশ, মিনু- হাবলের মতো সরল সাদাসিদে বাবা-মাকে সানন্দে মেনে নিয়েছে।

ইতিমধ্যে এক কাণ্ড ঘটল। সন্ধ্যায় "ভুসুন্ডি চর"-এর মানুষজন হাবলের বাড়িতে রাণীর থাকা নিয়ে মিটিং ডাকল। একটা কুমারী মেয়ে এতদিন হাবলের বাড়িতে বিনা পরিচয়ে থাকছে, তার উপর শোনা যায় সে নাকি সন্তানের মাও হতে চলেছে, সমাজে এইসব ঘোর অন্যায়, চরমতম পাপ, হাবল-মিনু স্বামী-স্ত্রীতে মিলে এই অন্যায়কে সায় দিচ্ছে, ওরা চরের মানুষকে ঠকিয়ে, ফাঁকি দিয়ে সবকিছু করছে- এসব কথা উঠে এলো। হাবল-মিনুকে কাঠগড়ায় দাঁড় করালো চরের মানুষজন। সমবেত জনতার মধ্যে থেকে কানু বাগদি দাঁড়িয়ে হাবলকে বলল, "হাবল, তুমি এ কি করছো বলো দেখি! এটা কি ঠিক? আমাদের চরের লোকজন কি শিখবে!"

কানু বাগদি এই "ভুসুন্ডি চর"-এর পুরনো বাসিন্দা। হাবলরা নদীর চরে এসে বসবাস করার ঠিক এক মাস পর কানু বাগদিরা আসে। হাবলের কাছাকাছি বয়স বলে তাকে নাম ধরে ডাকে কানু। হাবল আমতা-আমতা করে বলল, "মিনু মেয়েটাকে রাখতে বলল তাই।"

কানু উচ্চস্বরে বলল, "কি, মিনু বলল? একটা মেয়েছেলের বুদ্ধিতে তুমি চলছো দেখছি। মিনি কি তোমার হাতে চুড়ি পরিয়ে রেখেছে!" কথা শেষ করে কানু "হো-হো- হো' করে হাসতে লাগল। চরে সমবেত লোকজনও অট্টহাসিতে ভেঙে পড়ল। কানু বাগদির বউ, পাখি মাঝখান থেকে বলে উঠল, "হাবলদা, সত্যিই মাইরি মিনুদির ক্ষমতা আছে। আমরা তো আমাদের মরদকে কথা বলতে ভয় পাই গো। আর তোমার কথায় তোমার মরদ কাত।" কানুর সঙ্গে গলা মিলিয়ে "ভুসুন্ডি চর"-এর প্রবীণ মানুষগুলো পানু হাড়ি, লাল্টু মালিক, নিশীথ বাগদি, খালেদ ডোম, রঘু হাড়ি সকলে একসঙ্গে বলে উঠল, "মেয়েটাকে এ চর থেকে বের করে দিতে হবে। মেয়েটা কার না কার পাপ এনেছে সঙ্গে করে। আর আমরা তো সুবীর ডাক্তারের কাছে খোঁজ নিয়ে জেনেছি যে মেয়েটার সর্বনাশ করে কেউ এই চরে ফেলে দিয়ে গিয়েছিল। কোনও ভদ্রসমাজ, কোনও বড় জাতের মানুষ কি এসব অন্যায় প্রশ্রয় দেবে? এই অন্যায় আমরাও কিছুতেই মানব না।" এর সঙ্গে চরে উপস্থিত দর্শকেরাও গলা মেলালো।

পরিস্থিতি প্রতিকূল জেনেও মিনু সাহসের সঙ্গে মুখ খুলল। সে বলল, "এখানে অনেক মাথা দেখচি। আমার বাড়িতে আমার মেয়ের থাকা নিয়ে অনেকের অনেক সমস্যা। একটা অসহায় মেয়ের পাপ দেখচেন আপনারা। এ চরে সব কাম বোধ হয় পুণ্যের কাম। আমি এ চরে বাইশটা বচর আচি। আমার বয়স কম হলো না। জানতে আমার বাকি নাই চরের মধ্যে রাতের অন্ধকারে নিঃশব্দে কত খেলাই না চলে। আমরা নাক গলাই না কারো ব্যাপারে। তাই বলে খবর রাখি না এটা নয়। ভদ্রলোকের সমাজে কি চলে, কি চলে না, সে শিক্ষে আমি কারো থেকে লিব না। যাদের মনে হচ্চে এ চর পাপে ভরপুর হয়ে যাচ্চে তারা ভদ্রসমাজে গিয়ে বাস করুন। দেখি কোন ভদ্রসমাজ চরের মানুষের ভার নেয়!"

মিনুর কথা শুনে একে অপরের মুখের দিকে চাইল। একটা জটলা শুরু হলো। কেউ-কেউ বলল, "মিনু, নিছক খেলো কথা বলছে না। কথার যুক্তি আছে।" কারোর মুখে শোনা গেল, "হ্যাঁ, ভদ্রসমাজ তো আমাদেরও ভালো চোখে দেখে না। তাই বলে আমরা কি খারাপ!" কানু বাগদি বলল, "মিনু, তুমি রেগে যেও না। আমরা ভেবে দেখছি।" পাখিও "চরে রাত্রিতে খেলা"-র কথা শুনে চুপ করে গেল। সে ভাবতে পারেনি যে মিনু তার চরিত্রের দিকে আঙুল তুলবে। পাখি হঠাৎ নরম গলায় আমতা-আমতা করে বলল, "মিনুদি, তুমি শান্ত হও। দেখো মেয়েটা অবিবাহিত। এতদিন তোমার বাড়িতে থাকা নিয়ে কোনও সমস্যা ছিল না। কিন্তু মেয়েটা এখন পোয়াতি। তার পরিচয়, তার ছেলের পরিচয় কে নেবে বলো! আমি বলছিলাম যদি চরের কারো সঙ্গে মেয়েটার বিয়ে দিয়ে ঘর বেঁধে দেওয়া হয় তাহলে তো ভালো হতো। তোমাদেরও চাপও কম হতো।"

মিনু হাসতে-হাসতে বলল, "সত্যিই পাখি, তুই আমাদের জন্য এত ভেবেচিস ভেবে ভালো লাগচে। কিন্তু আমাদের মেয়ের ভরণ-পোষণের ভার আমরা নিতে পারব। ও লিখাপড়া জানে অনেক। ও কেন পরের বোঝা হয়ে থাকবে? আমরা গরিব হতে পারি, কিন্তু মানুষ তো। আমাদের মন ভদ্রলোকদের চেয়ে অনেক বড়। ভদ্রসমাজ যে ভালোবাসা দেখায় তা উপর-উপর। আমরা যাকে ভালবাসি তাকে জান দিয়ে ভালবাসি। রাণী এই চরের মেয়ে। রাণী আমাদের একার তো মেয়ে নয়, ও আপনাদেরও মেয়ে। আর আমরা চরের এতজন মিলে একটা মা-বাচ্চার দায়িত্ব নিতে কি পারব না? আমরাও যদি একটা অসহায় মেয়ের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিই তাহলে ভদ্রসমাজের সঙ্গে আমাদের তফাৎ কোথায়! বলুন সকলে। এই বিচার আগে করুন।"

মিনুর কথায় মিটিং-এ উপস্থিত সকলে একমত হয়ে বলল, "হ্যাঁ মিনু, তুমিই ঠিক বলেছো। আমরা ভদ্রলোকের চেয়ে অনেক বড়। আমরা গরিব হলেও আমাদের মন অনেক বড়। আমাদের সবার মেয়ে হয়ে রাণী এই চরেই থাকবে। তুমি আমদের চোখ খুলে দিয়েছ। তুমি নিজেও পুণ্যি করছো, আমাদেরও একটা পুণ্যির কাজ করিয়েছো। হাবল তোমার বউ বড় মনের মানুষ। চলি গো।" একে-একে সমবেত লোকজনের ভিড় ফিকে হতে শুরু করল। হাবল-মিনুও বাড়ির পথে পা বাড়ালো।

সন্ধ্যে থেকেই রাণীর শরীরটা খুব খারাপ। তার পেটে মাঝেমধ্যেই প্রসব যন্ত্রণা হচ্ছে। শরীরের ভার যেন সে আর বইতে পারছে না। হাবলদেরও ঘরে ফিরতে বেশ দেরি হলো। মিনু বলল, "তোকে এ অবস্থায় একা রেখে যেতে হলো। বড় কষ্ট হচ্ছে না রে?" রাণী বলল, "পেটে ব্যথা করছে মাঝেমধ্যেই। বাচ্ছাটা যেন পেট ঠেলে বাইরে আসতে চাইছে।" হাবল বলল, "রাত দশটা বাজতে যায়। ওকে বরং খাইয়ে শুয়ে দাও।" রাণীর খাবারে অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও মিনু পরম যত্নে তাকে শুইয়ে দিলো। খাবার পর যন্ত্রণা কমে যাওয়াতে রাণী ঘুমিয়ে গেল।

রাত প্রায় তিনটে, রাণীর ঘুমটা ভেঙে গেল। তার পেটে অসহ্য ব্যথা উঠেছে। যন্ত্রণায় সে কাতরাচ্ছে। সারাদিন খাটাখাটনির পর হাবল- মিনু দাওয়ায় শুয়ে অঘোরে ঘুমাচ্ছে। গরমটাও বেড়েছে গত দু'দিনের চেয়ে। ঘণ্টা-খানেক পর রাণী বিছানায় শুয়ে "মাগো, মা" বলে চিৎকার করায় মিনুর ঘুমটা কেটে গেল। ভোর ঠিক চারটে। চারিদিকে হালকা-হালকা আলো ফুটছে। রাণীর চিন্তায় মিনু ধড়মড় করে উঠে বিছানা ছেড়ে ঘরে গেল। মিনু ঘরে ঢুকে অপলক চোখে বিছানায় তাকিয়ে রইল। এ যেন তার অমূল্য ধন। বিছানার একপাশে রাণী শুয়ে, অন্যপাশে তার রক্তমাখা সদ্যজাত শিশু শুয়ে আছে। রাণীর সদ্যজাত কন্যা সন্তান কোনও অজ্ঞাত কারণে হেসে উঠল। মিনু হন্তদন্ত হয়ে হাবলকে ঘুম থেকে ডেকে তুলল। হাবল-মিনুকে দরজার সামনে দেখে রাণী অস্ফুট কণ্ঠে বলল, "মা, তুমি এসেছো!" রাণী হাবল-মিনুর চোখে স্নিগ্ধ সকালের মতো চাহনি দেখল। এই সকালই একটা অপ্রত্যাশিত ভোরকে আজীবন বয়ে নিয়ে বেড়াবে। অন্তর্যামী ছাড়া সেই দৃশ্য কেউ দেখতে পেল না।
( সমাপ্ত )


অন্য পর্ব গুলিঃ পর্ব ১    পর্ব ২    পর্ব ৩    পর্ব ৪

Next Bengali Story

All Bengali Stories    84    85    86    87    88    89    90    91    92    93    (94)     95   


## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers. The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation. Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##


◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717