Home   |   About   |   Terms   |   Library   |   Contact    
A platform for writers

অর্ধেক সম্পর্ক উপত্যকা

Bengali Story

All Bengali Stories    90    91    92    93    94    95    96    97    (98)    

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ আমাদের এই ওয়েবসাইট ( RiyaButu.com )-এ প্রকাশিত গল্পগুলির মধ্যে থেকে কিছু গল্প নিয়ে এবছরই প্রকাশিত হবে আমাদের 'রিয়াবুটু'র গল্প'।
--------------------------



অর্ধেক সম্পর্ক উপত্যকা

লেখিকা - শ্রীপর্ণা দে, দুর্গাচরণ মিত্র স্ট্রিট, কলকাতা
( বিভিন্ন লেখা দেশ, কথাসাহিত্য, উনিশ কুড়ি, প্রসাদ, উদিতা, নন্দন, গৃহশোভা এবং আরও অনেক লিটিল ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়েছে।)

■ অর্ধেক সম্পর্ক উপত্যকা

সাতটার ঘর ছুঁয়ে পুরনো আমলের দেওয়াল ঘড়িটা সশব্দে বেজে উঠলো। নার্স জানালার পর্দাটা সরিয়ে দিতেই সকালের সূর্যের নরম আলো গোটা ঘরে ঢুকে বিছানায় ছড়িয়ে পড়ল। ঘুমন্ত লোকটার মুখে আলো পড়ায় লোকটি চিৎকার করে বলে উঠল, "নিভিয়ে দাও আলো। আমার আলো ভালো লাগে না। এই আলো সব জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেবে। অন্ধকার শুধু অন্ধকার।"

নার্স শান্ত গলায় লোকটিকে বলল, "ঘর অন্ধকার করে কেউ থাকে? রাতের অন্ধকার কেটে গিয়ে সকালের সূর্যের আলোয় চারিদিক ভরে উঠেছে। দেখুন, আপনার ভালো লাগবে।"

লোকটা হলদে দাঁতগুলো বের করে হাসিমুখে বলল, "অন্ধকার দাও। কালো সব কালো চোখের সামনে।"

নার্স লোকটিকে বলল, "ঠিক করে বসুন। আপনার ব্রেকফাস্ট এনেছি। খাবার খেয়ে অনেকগুলো ওষুধ খেতে হবে। ফ্রেশ হয়ে নেবেন। আসুন আমার সঙ্গে।"

লোকটা নার্সের কথার কোনো গুরুত্ব না দিয়ে পা মেলে যেভাবে বসেছিল সেভাবেই বসে থাকল। অদ্ভুত একটা দৃষ্টিতে নার্সের দিকে তাকিয়ে বলল, "তুমি আমার কাছে এসো। আমি তোমায় খাইয়ে দেব।"

নার্স বলল, "খাবারটা আপনার, আপনি খাবেন।"

লোকটি জোর গলায় বলল, "না, আমি খাব না। খেতে আমার ভালো লাগে না। জোর করে কেন খাওয়াও!"

নার্স লোকটির পাশে বসে স্মিত হেসে বলল, "ঠিক আছে, মেনে নিলাম আপনার খেতে ভালো লাগে না। কি ভালো লাগে আপনার? যেটুকু ভালো লাগে সেটুকুই খাবেন। জোর করব না।"

লোকটা ভ্যালভ্যাল করে তাকিয়ে রইল নার্সের দিকে। নার্স খাবারটা এনে লোকটাকে বলল, "দেখি, এবার শান্ত ছেলের মতো হাঁ করুন তো।"

নার্সের কথা শুনে লোকটা রেগে গিয়ে বলল, "কেন আমায় বিরক্ত করছো? যাও, আমি খাব না।"

নার্স নীচু গলায় বলল, "খেয়ে নিন। না খেলে আপনি অসুস্থ হয়ে পড়বেন।"

লোকটা হাসতে লাগল নার্সের কথায়। নার্স খাবারটা মুখের কাছে দিতেই লোকটা খাবারগুলো ছুঁড়ে ফেলে দিলো। গর্জে উঠে লোকটা বলল, "বললাম খাব না। শুনতে পাওনি।"

নার্স রেগে গিয়ে বলল, "আপনি খাবেন না। ঠিক আছে। তাই বলে এরকমভাবে খাবার ফেলে দেবেন! গত চার দিন ধরে আমার কথা শুনছেন না। নোংরা পোশাক পড়ে আছেন। ব্রাশ করছেন না। কি ভেবেছেন কি আপনি! আপনার বাবা আমাকে বকুনি দেবেন। আর আপনি মজা দেখবেন!"

নার্সের কথার কোনো প্রত্যুত্তর না দিয়ে লোকটি অসহায় দৃষ্টিতে চেয়ে বলল, "তুমি আমায় এত বকো না। আমার খুব কষ্ট হয়। আমার কাছে একটু বসো।"

নার্স চেঁচামিচি না করে লোকটার মুখোমুখি বসল। লোকটা নার্সের মুখে হাত বুলিয়ে নরম গলায় বলল, "দীপা, তুমি আমার উপর রাগ করো না। তোমার বিরক্তি-ভরা মুখ দেখতে আমার ভালো লাগে না। তোমায় আমি কোথাও যেতে দেব না আমাকে ফেলে রেখে। এই ধরেছি। আর ছাড়ব না," কথা শেষ করে লোকটা প্রাণপণ শক্তি দিয়ে নার্সকে জড়িয়ে ধরল। নার্স কিছুটা ভয় পেয়ে লোকটিকে বলল, "কি করছেন! ছাড়ুন আমায়। আমি দীপা নই। আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে।"

লোকটি আদুরে গলায় বলল, "কিছুতেই ছাড়ব না।"

নার্স লোকটির দু'হাতের বাঁধনে পড়ে অস্বস্তি-বোধ করতে লাগল। বিরক্ত হয়ে নার্স বলল, "দেখুন, আপনি এরকম অভদ্র আচরণ আমার সঙ্গে করবেন না।"

লোকটা নার্সের কোনো কথা না শুনে বার-বার একই কথা বলল, "দীপা, আমার দীপা। শুধু আমার।"

নার্স নিজেকে মুক্ত করার জন্য লোকটাকে জোরে ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে দিল। লোকটা বিছানায় পড়ে গিয়ে চিৎকার করে বলল, "দীপা, তুমি যেও না। যেও না আমায় ফেলে।"

নার্স দ্রুত টেবিলে রাখা ইঞ্জেকশনটা লোকটার শরীরে প্রয়োগ করল। লোকটি একটু নড়াচড়া করেই স্তিমিত হয়ে গেল।ক্ষীণ গলায় লোকটির মুখ থেকে দু'বার একই নাম শোনা গেল, "দীপা।"

লোকটির বয়স ঊনচল্লিশের কাছাকাছি। দীর্ঘদিন অযত্নের ফলে লোকটির সর্বাঙ্গে বার্ধক্যের প্রলেপ পড়েছে। তার গায়ে অপরিষ্কার সাদা পাঞ্জাবি-পাজামা। মুখ ভর্তি দাড়ি বুক ছুঁয়েছে। মাথার উসকো খুসকো তামাটে চুল ঘাড় ছাড়িয়ে নেমেছে। গাল দুটো মুখ-গহ্বরের দিকে ঢুকে গেছে। কপালে সরু-সরু রেখার মতো ভাঁজ পড়েছে। ভ্রুর নিচে ধূসর নিস্তেজ চোখ দুটোর দিকে তাকালে যে কারোর মায়া পড়বে। এহেন লোকটির নাম দৃপ্ত সেন। বিখ্যাত ব্যারিস্টার শুভময় সেনের একমাত্র ছেলে।

দৃপ্তর কাছ থেকে সরে গিয়ে নার্স বেরিয়ে কাজের লোককে বলল, "ঘরের মধ্যে খাবারগুলো তুলে ঘরটা পরিষ্কার করে দাও।"

নার্স হন্তদন্ত হয়ে দৃপ্তর বাবার কাছে এলো। দৃপ্তর বাবা শুভময় সেন সোফায় বসে সকালের কাগজে মনোযোগ সহকারে চোখ বোলাচ্ছিলেন। নার্স শুভময় সেনকে হতাশ হয়ে বলল, "হবে না স্যার। এভাবে হবে না। আজও উনি কিছু খেলেন না। এভাবে না খেয়ে শুধু ওষুধ, ইঞ্জেকশন দিয়ে কতদিন চলবে! আপনি অ্যাসাইল্যামে না দিয়ে বাড়িতে রেখে ট্রিটমেন্ট করতে চাইছেন ভালো কথা, কিন্তু উনি তো কোনো কথাই কানে নিচ্ছেন না, উল্টোপাল্টা বকছেন আর একই নাম আওড়াচ্ছেন। দীপা, আর দীপা।"

শুভময়বাবু নার্সের কথা শুনে গম্ভীর মুখে বললেন, "শুনুন, আপনাকে যে এত টাকা দেওয়া হচ্ছে তা কি আমার ছেলেকে অ্যাসাইল্যামে পাঠাবার জন্য? সেবিকা হিসাবে আপনার দায়িত্ব ওনাকে ভালবাসা দিয়ে শুশ্রূষা করা। সেটা না করে আপনি অভিযোগ করছেন! আপনি যদি দায়িত্ব পালন করতে না পারেন তাহলে আমাকে ক্লিয়ারলি বলে দিন, আমি আপনার পরিবর্তে অন্য কাউকে দায়িত্ব দেব।"

নার্স আমতা-আমতা গলায় বলল, "আমি তাই বলেছি নাকি যে দায়িত্ব নিতে পারব না। উনি এভাবে না খেলে অসুস্থ হয়ে পড়বেন, এটাই ভাবছিলাম আমি। আচ্ছা স্যার একটা কথা বলব..."

শুভময়বাবু বললেন, "বলুন।"

নার্স অস্ফুট কণ্ঠে বলল, "একটা কৌতূহল হচ্ছে। জানি আপনি অধিক কৌতূহল পছন্দ করেন না। তবু আমার কাজের সুবিধার জন্য বিষয়টা জানতে চাইছি। দীপা, কে স্যার? আপনার ছেলে দৃপ্ত কেন দীপাকে খোঁজে?"

শুভময়বাবু একটু ধরা গলায় বললেন, "সে এক মর্মান্তিক ঘটনা। দীপা দৃপ্তর মামার মেয়ে। এই পরিচয় ছাড়া দীপার আরও একটা পরিচয় ছিল। সে দৃপ্তর প্রথম প্রেম, প্রথম পাওয়া ভালবাসা যার কারণে আজ আমার ছেলে এই অবস্থায়।"

নার্স বলল, "স্যার, যদি আপনি কিছু না মনে করেন তাহলে একটা কথা জানতে পারি কি!"

"বলুন কি জানতে চান।"

"কি ঘটেছিল ওনার জীবনে যার কারণে উনি এ অবস্থায়!"

"শুনতে চান আপনি! সব বলছি আপনাকে।" শুভময়বাবুর সঙ্গে নার্সের কথা বলার ফাঁকে কাজের লোকটি দু'কাপ চা দিয়ে গেল। হালকা নিঃশ্বাস ফেলে শুভময়বাবু বলতে শুরু করলেন।
পরবর্তী পর্ব


All Bengali Stories    90    91    92    93    94    95    96    97    (98)    


## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers. The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation. Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##


◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717