Home   |   About   |   Terms   |   Contact    
RiyaButu
A platform for writers

নীল খামে কাব্য


Bengali Short Story


All Bengali Stories    62    63    64    65    66    67    68    (69)     70    71   

- এনা সাহা, নতুনপাড়া, নোনা চন্দনপুকুর, ব্যারাকপুর

নীল খামে কাব্য
- এনা সাহা, নতুনপাড়া, নোনা চন্দনপুকুর, ব্যারাকপুর
একটি নির্বাচিত গল্প
নগেন্দ্র সাহিত্য পুরস্কার, ২০২০, ত্রিপুরা

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ আমাদের এই ওয়েবসাইট ( RiyaButu.com )-এ প্রকাশিত গল্পগুলির মধ্যে থেকে কিছু গল্প নিয়ে এবছরই প্রকাশিত হবে আমাদের 'রিয়াবুটু'র গল্প'।
--------------------------



■ অনেকক্ষণ ধরে স্টেশনে বসে আছি। ট্রেন আসার নাম- গন্ধই নেই। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি দশটা বাজতে দশ; এই মুহূর্তে ট্রেন এলো। ট্রেনে উঠে জানলার ধারে একটা সীটে বসলাম। ব্যাগ থেকে জীবনানন্দ দাশের 'বনলতা সেন' বার করে পড়া শুরু করলাম। যখনই বনলতা তার ব্যর্থ প্রেমের ফিরে আসার দিন গুনছিল তখনই ট্রেন হুইসল দিলো। ট্রেন থেকে নেমে পাঁচ মিনিটের হাঁটা পথে পৌঁছলাম কলেজ। সবুজ ঘাসের জমি পেরিয়ে হাতে রাখা 'বনলতা সেন'কে ব্যাগে রাখতে যাব তখনই খেয়াল করলাম বইটা হাতে নেই। হঠাৎ মনে পড়ল ট্রেন থেকে নামার সময় তো বইটা হাতে ছিল না। মাই গড! সীটেই রেখে এসেছি! বইটা মায়ের শেষ স্মৃতি ছিল। মায়ের কথা মনে পড়তেই চোখে জল এলো। আমার দশ বছরের জন্মদিনে মা দিয়েছিল। যার ঠিক দুইদিন পর মা ক্যানসারের জন্য আমাকে আর বাবিকে ছেড়ে চলে যায় না ফেরার দেশে। দুটো ক্লাস করে বাড়ি চলে এলাম। বাড়ি এসে ফটো আ্যলবাম থেকে মায়ের ছবি দেখছিলাম। তখনই বাড়ির চাকর রামু জেঠু এসে ডাকল। আমি বাইরে গিয়ে বললাম - বলো জেঠু।

- মামনি বাড়ির বাইরে একজন এসেছে; তোমাকে ডাকছে।

- তুমি যাও আমি যাচ্ছি।

বাইরে গিয়ে দেখি একটা নীল রঙের শার্ট পড়া, চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা পড়ে একটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। আমি এগিয়ে যেতেই বলল- আপনি অনুদ্রিতা সেন?

- হুম। আপনি?

- আমি নীলাভ্র বিশ্বাস। এই নিন। বলেই ও আমার দিকে একটা বই এগিয়ে দিলো। বইটা হাতে নিয়ে আমি চমকে গেলাম। - আরে! এ তো আমার 'বনলতা সেন'। আপনার কাছে গেল কী করে?

- আসলে আপনি এটা ট্রেনে ফেলে এসেছিলেন। আপনি চলে গেলে আপনার পাশের সীটে বসা মহিলাটির কাছ থেকে আপনার বাড়ির ঠিকানা পেলাম। তাই দিতে চলে এলাম।

- ওহ! এই দেখুন আপনি এত বড় উপকার করলেন আর আমি আপনাকে কিছুই বললাম না। আসুন, ভিতরে আসুন। ওকে ভিতরে এনে বসতে দিলাম। - চা না কফি?

- আপনার যেটা ইচ্ছা।

আমি কফি করে এনে ওকে দিলাম। - আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

- কীসের?

- আসলে এই বইটা মা আমাকে দিয়েছিল আমার জন্মদিনে।

- ও। তা আপনার মা কে তো দেখতে পাচ্ছি না। কোথায় উনি?

- আসলে আমার মা নেই। আমার যখন দশ বছর তখন মা ক্যানসারে মারা যান। আমি আর বাবি থাকি এখন।

- ও! সরি।

- তা আপনার মা- বাবা কেমন আছেন?

- আমার মা বাবা কেউ নেই। সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে।

- ও!

- আচ্ছা আপনি বইয়ের প্রথম পাতাটা দেখুন।

আমিও বইয়ের প্রথম পাতা খুলে দেখি কালো কালিতে লেখা-
"আজ এই গন্ধবিধুর সমীরণে, কার সন্ধানে ফিরি বনে বনে-
আজি ক্ষুব্ধ নীলাম্বর মাঝে একি চঞ্চল ক্রন্দন বাজে,
সুদূর দিগন্তে সকরুণ সঙ্গীত লাগে মোর চিন্তায় কাজে।" - রবীন্দ্রনাথের লেখা।

- হুম। 'যমুনা'কাব্যগ্ৰন্থের অন্তর্গত।

- আপনি লেখালেখি করেন?

- হুম।

- আচ্ছা আপনার নাম দিলাম মিহি।

- আমিও তবে দিলাম নীল।

- আচ্ছা আজ তবে উঠি, কাল দেখা হবে। এই বলে ও উঠে গেলো।

সন্ধ্যাবেলা ছাদে বসে আছি। বসন্তের মৃদু বাতাসে কৃষ্ণচূড়ার রক্তিম ফুলগুলি থর-থর করে কাঁপছে। হঠাৎ মনে পড়ল নীলাভ্রর কথা। প্রশান্ত একটা হাসিতে ওকে বেশ মানায়। গোধূলির শেষ মুহূর্তে বসন্তের লাল আবিরের আভাস দিকচক্রবালে প্রস্ফুটিত হয়। কৃষ্ণচূড়া-রাধাচূড়ার মিলনের ফলে বিতান তলে ঝরে পড়া পাপড়িগুলি বসন্তের নতুন প্রেমের সূচনা করে। রক্ত রাগের নব উন্মাদনা চতুর্দিগ্ভাসিতা হয়ে ছড়িয়ে পড়ে। এরপরেই আসে অনিন্দ্যসুন্দর রজনী। রজনীগন্ধার সৌরভ হৃদয়কে সুরভিত করে। দীর্ঘ রাত্রিযাপনের পর আসে প্রত্যুষ, যা একটা নতুন ঘটনার সাক্ষী হয়ে নতুনের সূচনা করে। আজও তেমন রোজকার মতই কলেজে যাওয়ার জন্য তৈরি হতেই মনে পড়ল আজ যে দোলৎসব। ছাদে বসে আছি হঠাৎ দেখি নীচ থেকে কে একটা ডাকছে। নীচে তাকিয়ে দেখি নীলাভ্র। নীচে নেমে এলাম। ওর সামনে যেতেই আমার গাল ওর হাতে থাকা লাল আবির দিয়ে রাঙিয়ে দিলো। তারপর আমার হাতে একটা নীল খাম দিয়ে বলল- পড়ে নিও। ও চলে গেলে আমি খামটা খুললাম। একটা ছোট্ট চিঠি ছিল। চিঠিটা হাতে নিয়ে পড়তে শুরু করলাম-
"তুমি কি হবে আমার স্বপ্নদেশের রানী?
তোমার জন্য সুদূর থেকে মুক্তা কুড়িয়ে আনি-
ভালো লাগে শুধুই দেখতে তোমার হাসি
সত্যি বলতে কি জানো? আমি তোমায় ভালোবাসি। " ইতি- নীলাভ্র

নীলাভ্র আমাকে ভালোবাসে? কিন্তু আমি তো ওকে ভালোবাসি না। সারাটা রাত ঘুম হল না। ওই এক কথা আমাকে কুড়ে-কুড়ে খাচ্ছে। পরদিন সকালে ট্রেনে নীলকে দেখলাম না। তাই একটু মন খারাপ হল। তারপর থেকে আর ওকে দেখলাম না। আমিও ওকে একটা সময় পরে ভালোবেসে ফেললাম। প্রায় এক বছর হল ওর কোনও খবর নেই। এতই যখন ভালোবাসে তখন কেন এভাবে কিছু না বলে চলে গেলো? এক বছর পেরিয়ে গেছে। দীর্ঘদিন যাবৎ রাত্রি জাগার কারণে চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা উঠেছে। এমনই একদিন ছাদে বসে আছি। হঠাৎ 'মিহি' বলে কেউ ডাকল। আমি চমকে উঠলাম অজান্তেই। মুখ দিয়ে বেরিয়ে এল 'নীল'। নীচে নেমে এলাম। ওকে দেখে চলে যাব এমন সময় হাত টেনে ধরে বলল- রাগ করেছ?

- ছাড়ো হাতটা।

ও একটানে আমাকে ওর কাছে টেনে নিয়ে বলল- ঐ পাগলী রাগ করেছ?

আমি কেঁদে ফেললাম। বললাম- কেন চলে গিয়েছিলে? ভালোবাসি বললেই হল? তা পালন করতে হয় না?

- জানি পাগলী।

- জানোই যখন, তখন কেন গিয়েছিলে?

- আমি তোমাকে সময় দিয়েছিলাম, যাতে তুমি অনুভব করতে পারো আমাকে। আর এই সুযোগে চাকরীটাও পেয়ে গেলাম।

- এখনো ভালোবাসো আমাকে?

- হুম, খুব। কাল পার্কে আসবে?

- আচ্ছা।

পরদিন ছিল ১৪ই ফেব্রুয়ারি। বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। আমি ওর পছন্দের লাল শাড়ী পড়ে, হাতে কাঁচের চুড়ি, ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক আর চোখে কাজল দিলাম। তারপর পার্কে গেলাম। গিয়ে দেখি ও বসে আছে। ও আজ লাল রঙের পাঞ্জাবী পরেছে। আমি সামনে যেতেই আমার দিকে তাকিয়ে বলল- কীসের একটা কমতি আছে।

- কীসের?

- হুম। এক মিনিট। বলেই ও একটা টিপের পাতা কিনে আনল। তারপর একটা টিপ আমাকে পড়িয়ে বলল- এটার কমতি ছিল। এবার চোখ বন্ধ করো। আমি চোখ বন্ধ করলাম। ও আমার পায়ে নূপুর পড়িয়ে দিলো। তারপর একটা রজনীগন্ধা আমার হাতে দিয়ে বলল-
'তুমি কী হবে আমার নীল খামের কাব্য?
যার জন্য সারাদিন, সারারাত জাগবো।
তুমি কী হবে আমার সেই কাব্যের কবিতা?
স্বপ্নগুলো বুনতে-বুনতে আঁকবো হাজার ছবি তা।'

আমি ওর কানে কানে বললাম-
'স্মৃতিরা সব ভিড় করেছে হৃদয় নদীর বাঁকে-
তোমার আশায় হৃদয় আমার অপেক্ষাতে থাকে।
আজকের এই দিনটিতে তোমার হাতটা ধরি-
হবো আমি তোমার লেখা নীল কাব্যের পরী।'

নীলের হাতটা ধরে ওপরে তাকিয়ে আছি। আজকেও কেমন দিগন্তরেখায় সেই প্রথম প্রেমের আভাস। বাতাসে তার স্নিগ্ধ গন্ধ ছড়ানো। কৃষ্ণচূড়ার লাল ফুলগুলি মাথার ওপর ঝরছে। আজকের এই প্রেমের নতুন সূচনা হিসাবে সাক্ষী থাকল কৃষ্ণচূড়া আর রাধাচূড়ার মিলন, যা একটা নতুনের প্রতিশ্রুতি। ( সমাপ্ত)

অন্যান্য গোয়েন্দা গল্প ও উপন্যাস:
নয়নবুধী   
কান্না ভেজা ডাকবাংলোর রাত    
মাণিক্য   
সর্দার বাড়ির গুপ্তধন রহস্য   
প্রেমিকার অন্তর্ধান রহস্য   
লুকানো চিঠির রহস্য   
সে তবে কে?   



All Bengali Stories    62    63    64    65    66    67    68    (69)     70    71   


## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers. The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation. Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##


◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717