Home   |   About   |   Terms   |   Contact    
RiyaButu
A platform for writers

বিপ্রকর্ষ


বাংলা স্বরচিত গল্প প্রতিযোগিতা - ২০২০, একটি নির্বাচিত গল্প


All Bengali Stories    53    54    55    56    57    58    59    (60)     61   

লেখিকা - মিঠু রায়, কোটাল হাঁট, বর্ধমান পূর্ব, পশ্চিম বঙ্গ

বিপ্রকর্ষ
নগেন্দ্র সাহিত্য পুরস্কার ২০২০
একটি নির্বাচিত গল্প
লেখিকা - মিঠু রায়, কোটাল হাঁট, বর্ধমান পূর্ব, পশ্চিম বঙ্গ

১৪-জুলাই, ২০২০ ইং

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ আমাদের এই ওয়েবসাইট ( RiyaButu.com )-এ প্রকাশিত গল্পগুলির মধ্যে থেকে কিছু গল্প নিয়ে এবছরই প্রকাশিত হবে আমাদের 'রিয়াবুটু'র গল্প'।
--------------------------



বিপ্রকর্ষ

লেখিকা - মিঠু রায়, কোটাল হাঁট, বর্ধমান পূর্ব, পশ্চিম বঙ্গ

( ১ )

গত মাসে তোমার ফোনটা যখন এসেছিল তুমি বলেছিলে কি যেন একটা অজানা ভাইরাস ওখানে আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে। কিছুদিনের মধ্যেই স্বাভাবিক হবে মনে হচ্ছে। তারপর ছুটি হলেই চলে আসবে। ব্যাস, এটুকুই কথা হয়েছিল। ভাবা যায়, তিন বছর পর দেশে ফিরছ। দারুণ এক্সাইটেড লাগছে। সেই রাতটা আমি প্রায় অনিদ্রায় কাটিয়েছিলাম।

কিছুদিন পরে সন্ধ্যাবেলায় আমি যখন মিষ্টি হাওয়ায় গা ভাসাচ্ছিলাম, হঠাৎ আবার তোমার ফোন এল। বললে, "এই ভাইরাস তো মহা জ্বালাচ্ছে। অফিস, মার্কেট, শপিং মল, সমস্ত বন্ধ। এক প্রকার গৃহবন্দি অবস্থায় আছি।"

জিজ্ঞেস করলাম, "তোমার ছুটি?"

"অনিশ্চিত!"

একটু হতাশ হলাম। বললাম, "ঠিক আছে, সব কিছু স্বাভাবিক হলেই এসো।"

একটু থেমে বললে, "আবার মনে হচ্ছে বিয়েটা সেরে ফেলতে হবে। অনেক প্রেশার তোমাকে দিয়েছি, আর নয়। এবার কিন্তু তোমাকে নিয়েই ফিরব। তাছাড়া দুজনের ফ্যামিলিও কত অপেক্ষা করবে বল?"

শুধু বললাম,"তুমি ঠিক আছে তো?"

উপহাসের সুরে বলল,"ফাইন আছি! সমস্ত সংসার নিয়ে গৃহবন্দী।" তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললে, "এবার একটু প্রেমের কথা বলি?"

"বল, শুনছি।"

হঠাৎ তুমি বলে উঠলে, "এই তুমি চুল খুলে আছো না? বৃষ্টিস্নাত বাতাস তোমার খোলা চুলে লুকোচুরি খেলছে। আকাশ নীল রঙের শাড়িতে দুর্দান্ত লাগছে তোমাকে।"

"বাহ!তুমি যে কবির ভাষা বলছ?"

"তাহলে এবার নিজের ভাষায় বলি, 'তোমার স্বপ্ন-চোরা আঁখিতে আমার মরণ দেখি।"

"না প্রিয়তম, আমি সিম্পল ড্রেসে আছি।"

তুমি হাসতে-হাসতে বললে, "আমাদের বিয়ের রাতে তুমি রবীন্দ্র কবিতার নায়িকার মত ... না-না, তুমি অর্কিডে সেজো। খুব সুন্দর করে অর্কিড ফুল খোঁপায় সাজিয়ো। কপালের মাঝখানে চন্দনের নক্সা এঁকো। আর চোখে কাজল। গলায় দিয়ো ঐ ফুলের মালা। লাল শাড়িতেই তোমাকে মানায় বেশ। পায়ে নূপুর, যখন তুমি হাঁটবে ছুম-ছুম আওয়াজ হবে। আর আমাদের বাসর বসবে তখন, যখন তারারা স্বপ্ন-ঘুমে যাবে।"

"এত রোমান্টিক! সত্যি আজ তোমাকে কবিত্ব ভর করেছে।"

( ২ )

যত দিন যাচ্ছে ক্রমশ এই জীবাণুর প্রাদুর্ভাব বাড়ছে এখানে। মানুষ এই মরণ ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে, প্রশাসন থেকে মানুষকে ঘরে থাকার আর্জি জানাচ্ছে। ছেলের মুখে কাপড়র টুকরো বেঁধে হাত ধরে বড় রাস্তার ধারে গিয়ে দাঁড়ালো 'সুখী'। পুলিশ বাবুরা খাবার দেবে। কতদিন ভালো করে খাওয়া হয়নি। তাই লোভ সামলাতে পারল না এই গৃহবধূ। হাড়-জিরজিরে কঙ্কালসার চেহারা ছেলেটার।

"মা, মুখে কাপড় দিলি, ভাত দিবি নি? খুলে দে না মা?"

সুখী তাকাল ছেলের দিকে। ধীরে-ধীরে সবার পেছনে দাঁড়ালো সে। আজ কতদিন, মরদটা কাজ করতে গেছে দু'মুঠো ভাতের ল্যেগা। গেরামে কাজ লাই। সেবার পিঠে-পরবে ফিতে, চুরি কত কি চেয়েছিল সুখী। মরদটা দিতে পারে লাই। বলেছিল, "গ্রামের লোকদের সঙ্গে অন্য জায়গায় কাজে যাবে, ওখানে অনেক পয়সা দেবে। এখানে তো ফি বছর কাজ লাই রে। ওখানে সারা বছর কাজ করবো আর পরবের সময় সবকিছু কিনে দেবো, যা লিবি সব দিব; ফিতা, কিলিপ, চুড়ি, কাঁচ পোকার টিপ, সব।"

সোয়ামিটা বড় সোহাগ করত। কি থেকে কি হয়ে গেল? সোয়ামিটা কোথায় আছে, কেমন আছে, সুখী কিছুই জানে না। তখন সারা বছর ভাত ছিল না, কিন্তু মেলা ছিল, পরব ছিল, সোহাগ ছিল। এখনও ভাত লাই, মেলা লাই, পরব লাই, সোহাগও লাই।

"মা! ও মা! খেতে দিবি না?" চমকে উঠল সুখী।

( ৩ ) রাতে খাবার টেবিলে বসে বাবা বললেন, "ওদিকের কি খবর? টিভিতে যা দেখছি?"

মা বললেন, "ভালো আছে তো?"

বললাম, "ও ভালো আছে?"

"যাক সাবধানে থাকতে বলিস"

রাতের খাওয়া সেরে ছাদে পায়চারি করতে গেলে নীলাঞ্জনা। আকাশের দিকে তাকিয়ে মনটা খারাপ হয়ে গেল, মনে-মনে অনুভব করলো, কোন তারাটা ওর কাছে? পাশের ছাদের একজন সেলফি তুলতে ব্যস্ত। আরেক ছাদে নাচের মহড়া চলছে। অসহ্য হয়ে নিজের ঘরে চলে এলো সে।

( ৪ )

" সুখী! ও সুখী!"

ঘর থেকে বেরিয়ে উঠুনে এল সুখী, " কি হল খুড়ি?"

"গাঁয়ের সবাই ফিরে আসছে, তোর মরদটাও আসছে রে।"

মহানন্দে খুশী ছুটে গিয়ে ছেলেকে জড়িয়ে ধরে বলল, " তোর বাপটা আসছে রে। তোর বাপটা ফিরে আসছে।"

প্রচণ্ড রোদ মাথায় নিয়ে সমস্ত পৃথিবীকে ব্যাগে ভরে হাটতে শুরু করলো। অনেক পথ অতিক্রম করতে হবে। রাতদিন অবিরাম হাঁটা, গন্তব্য বাড়ি। নিজ গ্রামের মাঠ-ঘাট, পুকুর, লাল মাটির রাস্তা চোখের সামনে ভেসে উঠছে। কত আশা নিয়ে এসেছিল এখানে, পরিবারকে একটু স্বাচ্ছন্দ্যে রাখতে। হায়রে অদৃষ্ট, কাজ গেল, আশ্রয় গেল, এখন পরিযায়ী রূপে পথে দাঁড়াল।

( ৫ )

আজ সকাল থেকে নীলাঞ্জনার মন উদাস হয়ে আছে। 'অরণ্য'-কে খুব মনে পড়ছে। চোখ বুঝে ওর গন্ধ, স্পর্শ অনুভব করতে ইচ্ছা করছে। ফোনটা অন করে দেখল; না অফ লাইন। কিছুদিন হল অরণ্য অন লাইন হচ্ছেই না। কলও করছে না।

( ৬ )

সঙ্গীরা অনেকটা এগিয়ে গেছে। আরও জোরে হাঁটতে হবে। দিনে তাপ, রাতে অন্ধকার, ঠিক ওদের জীবনের মত। কি চেয়েছিল? দু'বেলা পেট ভরে ভাত, পরবে নাচ, আমোদ আর আরেকটু দেশি মদ। শরীরটা টেনে নিয়ে যেতে আর পারছে না। শরীরের ভেতরটা উথাল-পাতাল করছে। এই তাগড়া শরীরটা যন্ত্রণায় কুঁকড়ে যাচ্ছে। একটু বিশ্রাম নিতে হবে। কিন্তু ওরা যে এগিয়ে যাবে! এই শরীর নিয়ে এক কত দেমাক ছিল কাল মিশমিশে লোহার পাতের মত চেহারা একবার যাত্রাপালায় কেষ্ট ঠাকুর সেজে ছিল। হঠাৎ শরীরটা টলতে শুরু করে, মাথার উপর প্রচণ্ড কড়া রোদ। শরীর দিয়ে আগুনের হল্কা বের হচ্ছে, তেষ্টায় ছাতি ফেটে যাচ্ছে। চোখ অন্ধকার হয়ে আসছে। নোনতা ঘামে মুখ মাখামাখি। আর নয়, লম্বা-চওড়া মানুষটা আছড়ে পড়ল রাস্তার উপর। চোখের সামনে মুছে যাচ্ছে গ্রামের মাঠ -ঘাট, গ্রামের মেঠো পথ। মুছে যাচ্ছে ছেলের মুখটা। হাত তুলে ছেলের মুখটা ধরতে গেলে। না হাত আর উঠল না। বউয়ের ডাকও কান অব্ধি পৌঁছল না। আস্তে-আস্তে চীর-অন্ধকার ঘুমের কোলে ঢলে পড়ল।

চমকে উঠল সুখী। এক ছুটে বড় রাস্তার ধারে। না, কেউ নেই, দূরে একটা নেড়ি কুকুর শুয়ে ঘুম দিচ্ছে। সুখী ফিরে এসে দাওয়ায় বসে পড়ল। মনটা খুব ডাকছে। ভেতরটা আকুলি বিকুলি করছে। নিজের অজান্তেই চোখের নোনা জলে গাল, মুখ ভেসে যাচ্ছে। পেটের ভেতর থেকে একটা কান্না ককিয়ে থেকে বেরিয়ে আসতে চেষ্টা করছি। পারছে না কিছুতেই পারছে না সুখী।

( ৭ )

আজ সকাল থেকেই আকাশের মুখ ভার। যেন অভিমান করে বসে আছে। রৌদ্র, মেঘ, বৃষ্টি, বাতাস সবার সঙ্গে আড়ি দিয়েছে। যেন সবার সাথে কথা বলার ইচ্ছা ত্যাগ করেছে। নীলাঞ্জনা বার-বার ফোন দেখছে, একবার যদি? হঠাৎ করে একটা মেসেজ এলো হোয়াটসঅ্যাপে, "নীল আমি অসুখে পড়েছি। জানিনা তোমার সঙ্গে আর আমার দেখা হবে কি-না?"

এ কথা শুনে বুকের ভেতরটা চিনচিন করে উঠল। তবু আমি তোমাকে সাহস দেবার জন্য লিখলাম, 'আমি তোমার সঙ্গে বেঁধেছি আমার প্রাণ ...' এতটুকু লিখতে-না লিখতেই অফ লাইন।

সন্ধ্যাবেলায় নীলাঞ্জনা খুব সাজল। লাল কাঞ্জিপুরম শাড়ি, অতি যত্নে চুলের খোপা, চোখে কাজল রেখা, কপালের মাঝখানে লাল টিপ চন্দনের কল্কা দিয়ে ঘেরা। অনেকক্ষণ নিজেকে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দেখল। বুকের ভেতরটা যেন ঠাণ্ডা হয়ে আসছে। মা দরজা খুলে মেয়েকে দেখে বলল, "কি রে? এই অবেলায় এত সেজেছিস কেন?"

নীলা মাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠে বলল, "মা! ও নেই! অরণ্য আর নেই মা!"

মা অবাক হয়ে পাথরের মত মেয়ের দিকে তাকিয়ে রইল।

অন্যান্য গোয়েন্দা গল্প ও উপন্যাস:
নয়নবুধী   
কান্না ভেজা ডাকবাংলোর রাত    
মাণিক্য   
সর্দার বাড়ির গুপ্তধন রহস্য   
প্রেমিকার অন্তর্ধান রহস্য   
লুকানো চিঠির রহস্য   
সে তবে কে?   



All Bengali Stories    53    54    55    56    57    58    59    (60)     61   


## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers. The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation. Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##


◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717