Home   |   About   |   Terms   |   Library   |   Contact    
A platform for writers

শিল্পের দাম

-হরপ্রসাদ সরকার, ধলেশ্বর - ১৩, আগরতলা, ত্রিপুরা

All Pages   ◍    6    7    8    9    (10)     11    12    13    ...

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ আমাদের এই ওয়েবসাইট ( RiyaButu.com )-এ প্রকাশিত গল্পগুলির মধ্যে থেকে কিছু গল্প নিয়ে এবছরই প্রকাশিত হবে আমাদের 'রিয়াবুটু'র গল্প'।
--------------------------



নয়ন কুমার আর অসীম দুই বাল্য বন্ধু। দুজনই ধনী ঘরের সন্তান। এক সাথে পড়াশুনা, এক সাথে খেলাধুলা। নয়ন কুমার ছোট বেলা থেকেই ভাল গল্প, কবিতা লিখত আবার ভাল গান ও গাইত। স্কুলে, পড়ার অনুষ্ঠানে সে তার লেখা গল্প, কবিতা পাঠ করে শোনাত। কোথাও আবার গান শোনাত। লোকের ও খুব ভাল লাগত। গল্প,কবিতা আর গান ছিল তার জন্মগত গুন।

অপর দিকে অসীমের আবার তেমন কোন গুন ছিল না। তবে সে বন্ধু নয়নের সাথে এখানে ওখানে অনুষ্ঠানে যেত। বন্ধুর সাথে সাথেই থাকত। নয়নের কবিতা, গল্প তার ও ভাল লাগত। আর এভাবেই ধীরে ধীরে তার মধ্যে গল্প, কবিতা লেখার সখ জাগল। সেও গল্প, কবিতা লেখতে লাগল কিন্তু তার লেখা নয়নের মত এত সুন্দর, এত ভাল হত না।

এভাবেই তার বড় হতে লাগল। স্কুল-কলেজ শেষ হওয়ার পর তাদের বিয়ের ও সময় এলো। অসীমের বাবা অসীমের জন্য এমন এক পাত্রী খুঁজলেন যার না ছিল রূপ, না ছিল ভাল শিক্ষা। এক বদ্ধ গ্রামের, অতি গরীবের মেয়ে অসীমের বৌ হয়ে ঘরে এলো। সে ছিল খুব কালো কিন্তু তার গুনের সীমা ছিল না। তার আচার-বিচার, চিন্তা-ভাবনা, বুদ্ধি সব ছিল খুবই বাস্তব এবং সুন্দর। সে তার গুন দিয়ে তার রূপ ঢেকে দিয়েছে।

অন্য দিকে নয়নের বাবা খুঁজে খুঁজে এক ধনী বাড়ির খুব সুন্দরী শিক্ষিতা মেয়ের সাথে নয়নের বিয়ে দিলেন। রূপে যেন নয়নের বৌ চাঁদকেও হার মানায়। নয়নের ঘরে যেন চাঁদের হাট এসে বসল। যারাই নতুন বৌকে দেখতে এলো তারাই তার রূপের খুব প্রশংসা করল। রূপ তার গুন ঢাকা পড়ে গেল।

নয়ন খুব উৎসাহে একদিন তার বৌকে তার গান শুনাতে গেল। তার গান শুনে বৌ খুব হাসতে লাগল। এই হাসি উপহাসের হাসি, উপেক্ষার হাসি। সে নয়নকে বলল “মনে হচ্ছে যেন কেউ গান গেয়ে ভিক্ষা চাইছে।” প্রথম প্রথম নয়নের বৌ, নয়নের গান শুনে উপেক্ষার আর উপহাসের হাসি হাসলেও ক্রমে ক্রমে সেই হাসি ধমকে পরিণত হল। যখনই নয়ন নিজের মন ভোলাতে একটু গান গাইতে শুরু করে তার বৌ হল্লা শুরু করে, সংসারের হাজার অভাবের কথা শুনাতে থাকে।

আর নয়নের কবিতা লেখা, গল্প লেখা? ঐ খাতা বই গুলিকে দেখিয়ে-দেখিয়ে তার বৌ দিনে দশ বার কথা শুনায়। কি হবে এই ছাই লিখে? কি হল এত দিন এই ছাই লিখে? ঘরে কি কোন পয়সা এলো? কে পড়বে তোমার এই বেল পাতা, তুলসী পাতা? আগা নেই, মাথা নেই সব জঞ্জালে খাতা, বই আর ঘর ভরে রেখেছ। নয়নের বৌ জানে না শিল্প কি আর শিল্পীই বা কি? শিল্পীর মন কি জিনিস? এক শিল্পী তার শিল্পকে কতটুকু ভালবাসে সে জানে না।

আজ আর নয়ন কবিতা লেখে না, গান ও গায় না। গান গাওয়ার, কবিতা বা গল্প লেখার ইচ্ছাও হয় না। তার সেই শিল্পী মনটাই মরে গেছে। এখন সকাল বেলায় সে মরার মত মরতে মরতে অফিসে যায় আবার মরার মতই ফিরে আসে। কাউর সাথে কথা বলে না। কাউর কথা শুনতেও তার ইচ্ছা হয় না। সব সময় সে চুপ করে বসে থাকে। বৌয়ের হাজার গালাগালিতেও কোন শব্দ করে না। তার জীবনে না রইল হাসি, না রইল সুখ।

অন্য দিকে অসীমের বৌ একদিন ঘর পরিষ্কার করতে গিয়ে অসীমের লেখা একটি কবিতার বই পেল। সে মন দিয়ে কবিতা গুলি পড়ল। এত ভাল লাগেনি তার কিন্তু মনে হল এমন এমন হলে কবিতা গুলি আরো সুন্দর হত। সে অবসর সময়ে এই কবিতা গুলির কথা অসীমকে বলল। বৌয়ের পরামর্শ অসীমের ঠিক লাগল আর সে কবিতা গুলিতে একটু একটু পরিবর্তন করতেই সে গুলি যেন হাসি দিয়ে উঠল। লাজে এত দিন সে তার লেখাগুলি তার বৌকে দেখায়নি। কিন্তু বৌকে একজন ভাল পরামর্শদাতা হিসাবে পেয়ে সে তার সব লেখা একে একে তার বৌকে পড়ে শুনাতে লাগল। তার বৌ বিচার বুদ্ধি দিয়ে ঐ কবিতা বা গল্পের দোষ গুন বলে দিতে লাগল। অসীম সেই হিসাবেই তার লেখাতে পরিবর্তন করতে লাগল। ফলে তার লেখার সৌন্দর্য হাজার গুন বেড়ে গেল।

বৌয়ের এত উৎসাহ পেয়ে সে খুব যত্ন সহকারে লেখার দিকে মন দিল। আর কিছুদিনের মধ্যেই তার কয়েকটি বই প্রকাশিত হল। একে একে বড় বড় প্রকাশকরা এসে জুটতে লাগল। অনেক টাকা অগ্রিম দিয়ে যেতে লাগল পরবর্তী লেখার জন্য।

অসীম তার বন্ধুর কথা ভালই জানত। সে তার বন্ধুর জীবনকে নিয়েই একটি উপন্যাস লিখল আর উপন্যাসটি তাকেই উৎসর্গ করল। উপন্যাসটি বই হয়েও প্রকাশিত হল। যে সেই বই পড়ল তারই চোখে জল এলো। একদিন নয়নকে নিজের বাড়িতে ডেকে এনে অসীম সেই উপন্যাসের বইটি নয়নের হাতে তুলে দিল। বইটিতে নিজের কাহিনী পড়তে পড়তে নয়ন কাঁদতে লাগল। যেন কত যুগের ঝড় তার বুকে, চোখে জমা হয়েছিল। আজ সব এক সাথে মুক্তি পেল। দুই বন্ধু একে অপরকে জড়িয়ে ধরে খুব কাঁদল। শেষে নয়ন এক অতি করুন সুরে অসীমকে মিনতি করল “তোর বাড়িতে আমাকে একটু বসে লিখতে দিবি বন্ধু? আমি যে লিখতে চাই। অনেক কিছু লিখতে চাই। তুই কি আমাকে একটু জায়গা দিবি লিখতে? আমি সন্ধ্যা পর এসে কিছুক্ষণ সময় লিখব!”

নয়নের এই কথা শুনে অসীমের যেন খুশির ঠিকানাই রইল না। আনন্দে, খুশিতে তার দুই চোখ ভরে এলো। সে দুই হাতে গভীর ভাবে বন্ধুকে জড়িয়ে ধরল। আজ তার কাছে এটাই সবচেয়ে বড় পাওনা।


## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers. The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation. Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##


◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717
All Pages     6    7    8    9    (10)     11    12    13    ...