Home   |   About   |   Terms   |   Library   |   Contact    
A platform for writers

অপুর কথা

-হরপ্রসাদ সরকার, ধলেশ্বর - ১৩, আগরতলা, ত্রিপুরা

All Stories   ◍    21    22    23    24    (25)     26    27    28    29   

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ আমাদের এই ওয়েবসাইট ( RiyaButu.com )-এ প্রকাশিত গল্পগুলির মধ্যে থেকে কিছু গল্প নিয়ে এবছরই প্রকাশিত হবে আমাদের 'রিয়াবুটু'র গল্প'।
--------------------------



অপুর কথা ( ৩ য় পর্ব )

পরদিন সেই কাক ভোরেই মিলি এক পুটলি ফুল নিয়ে রায় বাড়ির সদর দরজায় হাজির। শহরের নতুন দারোয়ান মিলিকে চিনে না, তার উপর দিদিমণি এখুনি ঘুম থেকে উঠেনি তাই সে মিলিকে ভীতরে যেতে দিল না। মিলি দরজার বাইরেই অপেক্ষা করতে লাগল।

কিছুক্ষণ পরেই ভীতর থেকে দারোয়ানের ডাক পরল। দারোয়ান যেমন দৌড়ে ভীতরে গিয়েছিল তেমনি দৌড়ে আবার ফিরে এসে সদর দরজা খুলে দিল আর খুবই সমাদর করে মিলিকে ভীতরে নিয়ে গেল, বসার জায়গা করে দিন। তার এমন ব্যবহারে মিলি অবাক। সে সেই সুন্দর চেয়ারটাতে বসল। সুন্দর সেই বাড়িটার এদিক ওদিক ফিরে ফিরে দেখতে লাগল।

কিছুক্ষণের মধ্যেই একজন এসে রাজকীয় জলখাবার দিয়ে গেল। এমন খাবার সে ভাবতেই পারে না। কাল থেকে সব অবাক করা ঘটনা সব তার সাথে হচ্ছে। একটু ভয় মিশ্রিত আনন্দে সে খাবারের দিকে মন দিল।

কিছুক্ষণের মধ্যেই একগাল মিষ্টি হাসি হেসে দিদিমণি সামনে হাজির। মিলি ধর-ফরিয়ে খাবার ছেড়ে, চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াল। মুখে তার খাবার ভরা তাই কিছু বলতেই পারল না। হা-হা করে হেসে উঠল অপু। পাশে এসে বসল। মিলির হাত থেকে ফুলের পুটলিটি নিয়ে কিছুক্ষণ প্রাণ ভরে দেখল মিলিকে, গালে আদর করল, মাথায় আদর করল। তারপর পিছনে রাখা একটা ছোট ব্যাগ মিলির হাতে তুলে দিল। বলল বাড়িতে গিয়েই যেন সে এ ব্যাগটা খুলে আর দুপুরে মা-বাবাকে নিয়ে যেন অবশ্যই পূজার মহা-প্রসাদ নিতে আসে।

মিলি বাড়িতে এসে খুব উৎসুক মনে সেই ব্যাগটি খুলল। ছানাভরা চোখে দেখল তাতে খুব সুন্দর একটা দামী জামা, ধবধবে সাদা ধুতি-পাঞ্জাবি, একটা সুন্দর শাড়ী। নতুন জামা পেয়ে মিলি খুশিতে নেচে উঠল। নতুন ধুতি-পাঞ্জাবি দেখে নেশার ঘোরেও ব্রজহরির চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ল। আধা অন্ধ, অসুস্থ মা ‘র কাছে আজ আর এই নতুন শাড়ীর তেমন কোন মূল্যই রইল না। তবু সে শাড়ীটা হাতে নিয়ে বলল “আমাকে ক্ষমা করে দে অপু, ক্ষমা করে দে।”

দুপুরে রায় বাড়িতে সারা গ্রামের লোকের ভিড়। পূজা শেষে মহা-প্রসাদ বিতরণ হচ্ছে। বিশাল প্যান্ডেলে প্রচুর লোক সারি বদ্ধ ভাবে মহা-প্রসাদ খেতে বসছে। তাদের খাওয়ার শেষে আবার নতুন দল খেতে বসেছে। এমনি সময় নতুন জামা কাপড় গায়ে মিলি তার মা-বাবার হাত ধরে রায় বাড়িতে ঢুকল। সাথে সাথেই সকালের সেই দারোয়ান দৌড়ে এল। খুব আদর আপ্যায়ন সহকারে তাদের ভীতরে নিয়ে গেল। বসতে দিল। তাদের বসিয়ে সে তেমনি দৌড়ে গিয়ে দিদিমণিকে খবরটা দিল।

কথাটা শুনে অপু যেন পাথরের মত কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল। সে যেন বিশ্বাসই করতে পারছে না বাবাকে আবার দেখবে, মা ‘কে আবার দেখবে। এতদিন পর সেই হারিয়ে যাওয়া অপু ফিরে চলল তার বাবার কাছে, তার মা ‘র কাছে। বাবা-মা কে প্রথমে চিনতেই পারেনি অপু।

অপু দুই হাতে তার মা ‘র চরণ ছুঁয়ে তাকে প্রণাম করল। ব্রজবাসী হঠাৎ চমকে উঠে বলল “ কে ?” মিলি পাশেই ছিল বলল “মা, দিদিমণি তোমাকে প্রণাম করেছেন।”

ব্রজবাসী প্রাণ ভরে তাকে আশীর্বাদ দিল “ ভাল থাক মা, খুব সুখে থাক, তোমার মঙ্গল হউক। আমি তো মা দীন দুখিনী, এক অভাগী, পাপের সাজা ভোগ করছি। তোমাকে কি আশীর্বাদ করব মা। চোখে আর তেমন দেখতে পাই না, তাই তোমাকে ও স্পষ্ট দেখতে পারছি না। তবু আশীর্বাদ করছি তুমি চিরদিন সুখে থাক মা, সুখে থাক।”

মা ‘র বুকের যন্ত্রণাটা যেন তীরের মত এসে অপুর বুকে লাগছিল। সে তেমনি মা ‘র সামনে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে মাকে দেখতে লাগল। ব্রজহরি মাটির দিকে তাকিয়ে বসেছিল এমন সময় দুটি হাত এসে পায়ে ঠেকল। সে প্রথমে বুঝতে পারেনি কি হল। তাই সে তেমনি বসে রইল, যখন বুঝল ভীষণ চমকে উঠল। গত কয়েক যুগ ধরে এমন কেউ তার পা ছুঁয়ে প্রণাম করেনি।

সে উপরের দিকে তাকাল কিন্তু চোখে সব ঝাপসা দেখতে লাগল। সে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে দেখল, ছলছল চোখে মেয়েটি তার দিকে তাকিয়ে আছে। সে একটু মাথা ঝুঁকিয়ে ভাল করে মেয়েটির চেহারা দেখার চেষ্টা করল। তার চোখের দিকে আরো গভীর ভাবে দেখার চেষ্টা করল। ধরধর করে ব্রজহরির চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়তে লাগল। সে কাঁপা হাতে অপুর মাথায় শুধু হাত রাখল, কিছু বলার খুব চেষ্টা করল কিন্তু পারল না। তার আবেগে, তার ভালবাসায় গলা এমন ভরে এল যে তার ঠোঁট দুটি কিছু বলার জন্য খুব কাঁপতে লাগল কিন্তু কোন শব্দ বের হল না।

অপু আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারল না। দ্রুত পায়ে সেখান থেকে চলে গেল। সোজা নিজের ঘরে। সেখানে বসে একা একা সে খুব কাঁদল। সে ভাবেনি বাবা-মা ‘কে এরকম ভাবে দেখবে। বাবা যে তাকে খুব চিনেছে তা বুঝতে বাকী নেই অপুর।

যথাসময়ে মহা-প্রসাদ গ্রহণের জন্য ডাক পরল মিলি তাদের। একজন চাকর সব সময়ই তাদের আগে পিছে ছিল তাদের দেখা শুনা করার জন্য। সেইই ঠিক করে দিল তারা কোথায় বসবে ? তাদের খাওয়া ঠিক ঠাক হচ্ছে কিনা? কিছু লাগবে কিনা ? সব সেইই দেখা শুনা করল। তাদের খাওয়া শেষ হলে সে ছুটে গিয়ে আবার দিদিমণিকে খবর দিল।

তাদের চলে যাবার সময় অপু মাথা নুইয়ে আবার বাবার সামনে এসে দাঁড়াল। তেমনি ধীরে বলল “মিলিকে রাখতে চাই। রাতে পৌঁছে দেব।” অতি উৎসাহে, আনন্দে তার বাবা সজল নয়নে হেসে শুধু মাথা নেড়ে সম্মতি জানাল। অপু মিলির হাত ধরে দাঁড়িয়ে থেকে দেখতে লাগল বাবা, মা ‘র হাত ধরে মাকে সাথে নিয়ে বাড়ির দিকে ফিরছে।

মা-বাবা অনেক দূর চলে যেতেই অপু মিলিকে হঠাৎ একেবারে ঝাপটে জড়িয়ে ধরল। তার দুই গালে দুটি চুমু খেল। মিলি এসবের মাথামুণ্ডু কিছুই বুঝে উঠতে পারল না।

অপু মিলির হাত ধরে তাকে উপেনবাবুর কাছে নিয়ে গেল। উপেন আর বিমলা পাশাপাশিই বসেছিল।

অপুঃ দেখতো বাবা আমি কাকে নিয়ে এসেছি ?

উপেন আর বিমল ভাল করে তাকালেন, কিছুক্ষণ ভাবলেন, কিন্তু চিনতে পারলেন না। মাথা নেড়ে বললেন “ নাঃ চিনতে পারলাম না তো।”

অপু তেমনি হাসি হেসে বলল “আমার ছোট বোন। ঈশানপুরের বাজারে প্রথম দেখা, ভাল লাগল তাই বোন বানিয়ে ফেললাম।”

মিলি মাথা নুইয়ে ছিল, অবাক চোখে এবার দিদিমণির দিকে তাকাল। প্রথমে এক-পলক ঝটকা খেয়ে উঠলেও বিমলা হা হা করে হেসে উঠল “বাঃ বাঃ তাহলে তো বেশ হয়েছে। এখন আমার দু-দুটি মেয়ে।”

উপেনবাবু পাশ থেকে বলে উঠলেন “ঠিক বলেছ, ঠিক বলেছ। চমৎকার হয়েছে। মা! তোমার নাম কি?”

মিলি কাছে গিয়ে উনাকে প্রণাম করতে করতে বলল “ মিলি।”

উপেনঃ বাঃ। বেশ সুন্দর নাম। ভারি মিষ্টি নাম।

বিমলাকে প্রণাম করার পর বিমলা মিলির দু হাত ধরে উঠে দাঁড়াল, তার নাম-ধাম জিজ্ঞাস করল। তারপর তার কপালে একটা চুমু খেয়ে বলল “ বেঁচে থাক মা, তোমরা দুজনেই সুখে শান্তিতে থাক। ”

অপু মিলিকে নিয়ে নিজের ঘরে ঢুকল। বিশাল ঘর, এমন ঘর মিলি প্রথম দেখল। কত সুন্দর ঝক-ঝকে, সাজানো গোছানো। মিলি হা ঘরের চারিদিক দেখছিল। এমন সময় টক করে আলমারি খোলার শব্দে তার চমক ভাঙ্গল। বড় বড় চোখে সে দেখতে লাগল আলমারি সুন্দর সুন্দর জামা কাপড়ে ভরা। অপু মিলিকে কাছে টেনে বলল “ যা-যা পছন্দ হয় নিয়ে নাও।”

মিলি যেন ঠিক বুঝতে পারল না। “ কি?”

অপুঃ বলছি যা যা পছন্দ হচ্ছে নিয়ে নাও।

মিলির যেন ঠিক বিশ্বাস হচ্ছিল না। সে তেমনি হা হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। অপু হেসে বলল “ আমি আদর করে তোমাকে দিচ্ছি।”

না মিলি কোন জিনিস নেয় নি। অপু বুঝল তার বোনটি যেমন তেমন নয়। খুব আত্ম-অভিমানী। জীবনের এই বয়সেই খালি পেট আর খালি হাত তাকে অনেক বাস্তব শিক্ষা দিয়ে দিয়েছে।

তারা বাইরে এসে বসল। অপুর পাশের চেয়ারেই মিলি বসল। হঠাৎ মিলি বলল “ দিদিমণি আমাকে কি কাজ করতে হবে ?”

অপু যেন একটু ঝটকা খেয়ে উঠল “ মানে ?”

মিলিঃ না মানে, আমি তো লোকের বাড়িতে কাজ করি। তখন কিছু পয়সা পাই।

অপুর খুশির চোখে যেন হঠাৎ একটা দুখের বিজলী দৌড়ে গেল। অপুর আর কিছুই বুঝতে বাকী রইল না। সে কয়েক পলক তেমনি বসে কি যেন ভাবল তার পর বলল “ ও হ্যাঁ, চল।”

দুজনে রান্নাঘরের কাছে গেল। বেশ কিছু লোক রান্না-বান্না করছে। অপু একজনকে ডেকে বলল “ দেখ, যারা প্রসাদ গ্রহণ করতে বসবে মিলি সবাইকে জল দেবে। তাকে সব দেখিয়ে দাও।”

মিলি কাজে লেগে গেল, পিছন পিছন অপু ও। উপেন রায় আর বিমলা দেখলেন অপু আর মিলি সবাইকে জল দিচ্ছে, তারা ও খুশি হলেন। উপেন রায় আর বিমলা খুব ভাল জানেন তাদের অপু আর দশটা সাধারণ মেয়ের মত কখনোই নয়। তাই কখনোই তাকে কোন কাজে বাধা দেন নি।

ক্রমে দিন ফুরিয়ে গেল, সন্ধ্যা প্রায় নেমে এল। লোক যে যার বাড়িতে ফিরে যেতে লাগল। এবার মিলির ও ফিরে যাবার পালা। অপু মিলিকে নিজের ঘরে নিয়ে এল। আলমারি খুলে তিনটি ১০০ টাকার নোট বের করে মিলির দিকে হাত বাড়িয়ে বলল “ ধর।”

মিলি অবাক চোখে দেখল তিনটি ১০০ টাকার নোট। এতো তাদের সারা মাসের খরচের টাকা।

মিলি সুর ধরে বলল “ দিদিমণি !”

অপু একটু রাগত সুরে বলল “ দেখ ভাই টাকাটা ধর। তা না হলে কিন্তু তোমাকে আর কাল থেকে কাছে ডাকব না। তোমার সাথে আর কোন কথা থাকবে না।” এই বলে সে টাকাগুলি মিলির হাতে গুজে দিয়ে বলল “কাল কখন আসবে ?”

মিলিঃ দিদিমণি আপনি যখন বলবেন ?

অপুঃ ভোরেই চলে এসে। দুজনে একটা নতুন কাজ করবো।

মিলি বেশ অবাক, বেশ খুশিতে বাড়ির দিকে পা বাড়াল। যখন ঘরে পৌঁছল তুলসী তলাতে প্রদীপ জ্বালাবার সময় হয়ে গেল।

## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers. The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation. Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##


◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717

পরবর্তী পর্ব

আগের পর্ব - ১ম পর্ব   ২ য় পর্ব


All Stories     21    22    23    24    (25)     26    27    28    29