Home   |   About   |   Terms   |   Contact    
RiyaButu
A platform for writers

কানামাছি


বাংলা উপন্যাস


All Bengali Stories    18    19    20    21    22    23    24    25    (26)       

শ্যামল বৈদ্য

Syamal Baidya
ত্রিপুরা সরকারের সলিলকৃষ্ণ দেববর্মণ পুরস্কারপ্রাপ্ত শ্রী শ্যামল বৈদ্য ত্রিপুরার একজন বিশিষ্ট ঔপন্যাসিক। সময় সময়ে ওনার অনেকগুলি বই প্রকাশিত হয়েছে এবং পাঠকদের কাছে খুব সমাদৃত হয়েছে। ওনার লেখা দুটি উপন্যাস ক্রমপর্যায়ে আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হচ্ছে।


-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ আমাদের এই ওয়েবসাইট ( RiyaButu.com )-এ প্রকাশিত গল্পগুলির মধ্যে থেকে কিছু গল্প নিয়ে এবছরই প্রকাশিত হবে আমাদের 'রিয়াবুটু'র গল্প'।
--------------------------

কানামাছি
বাংলা উপন্যাস
লেখকঃ শ্যামল বৈদ্য, আগরতলা, ত্রিপুরা

Previous Parts: 1st Part     2nd Part    



৩য় পর্ব

চাঁপা ফুলের মিষ্টি ভারী গন্ধ কোনও দিক থেকে এসে ঘরের মধ্যে ঢুকছে। একটা মন মাতাল করা মাদকতা ছড়িয়ে পড়েছে ঘরে। অনেকটা সময় ধরে মাধবী এই মিষ্টি গন্ধটা পাচ্ছে। আর পারল না। অন্ধকার ঘরের জানালাটা খুলে ফেলল। সাথে সাথেই একবুক তাজা বাতাস আর সেই মিষ্টি গন্ধটা তেড়ে এল তার দিকে। আঃ কী দারুণ এই গন্ধ! কেমন নেশা ধরিয়ে দেয় মনে। জানালার সামনে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল সে। চাঁদকে আজ নীলাভ লাগছে, ঠিক যেমন সাদা শাড়িতে রবিন-ব্লু লাগালে পর দেখতে লাগে। ওই চাঁদটুকু ছাড়া আজ আর কথা বলার মতো আপন কেউ নেই তার কাছে। রাত হলে এই বাড়িটার লোকেদের ওঠানামা থেমে যায়। নামহীন মহিলা অনামিকা তো দিনে দু-বার মেয়েকে দিতে আর নিতে ছাড়া এদিকটায় আসেই না। একটা চার দেয়ালের ভিতর ঘূর্ণিপাক খেয়ে একজন আধুনিক নারী কী করে জীবন কাটিয়ে দিতে পারে? তার জীবনেও কি মাধবীর মতো দুঃখ আছে, অতৃপ্তি আছে? থাকবে না কেন? দুঃখ ছাড়া মানুষ হয়? সব মানুষের জীবনেই দুঃখ আর সুখ দুটোই আছে। তবুও মানুষ সব কিছু সহ্য করে বেঁচে থাকার চেষ্টা করে। কারণ এই বেঁচে থাকাটাই পৃথিবীর সবচাইতে সুন্দর শিল্প। কত ব্যথা, বেদনা, রোগ সহ্য করেও মুমূর্ষ মানুষ বাঁচতে চায়। অথচ মাধবী বেঁচে থাকার জন্য কোন লক্ষই ঠিক করতে পারল না। বাঁচতে গেলে যে নিজেকে ভালোবাসতে হয় তাই সে শিখল না।

মাধবী-র জীবনে তো দুঃখ বলতে কিছু ছিল না। একমাত্র শাশুড়ির গঞ্জনা ছাড়া ওই বাড়িতে শুধুই সুখ ছিল। অনিরুদ্ধ বউকে খুশি রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করেছে। মা-র সাথে ঝগড়া করেও সে তার মন পেতে চেয়েছিল। অনেকদিন মা ছেলেতে প্রায় কথাবার্তা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তাও তাকে সামন্য সম্মানটুকু দেয়নি মাধবী। বিয়ের পরদিনই মাধবী যখন বিছানা আলাদা করে ফেলল তখন প্রথম অনিরুদ্ধ-র আত্মমর্যাদায় লাগে। ভিখিরির মতো বারবার তার অধিকার চাইতে আসতো সে, কিন্তু তাকে এতটুকু সমাদর করেনি মাধবী। আমার অমতে যখন জোর করে বিয়ে করেছো তখন বুঝো কেমন লাগে। আমি তো তোমাকে জানিয়েছিলাম আমি কাউকে ভালোবাসি, সেই ছেলেটাকেই আমি বিয়ে করেতে চাই। তারপরও তুমি তোমার প্রতিপত্তি খাটিয়ে আমাকে বিয়ে করলে কেন? এভাবে একটা মেয়েকে জোর করে বিয়ে করা গেলেও তার মন যে কিছুতেই পাওয়া যায় না সেটা তোমাকে বোঝাতে হবে মি. অনিরুদ্ধ বোস। বিয়ের আগের দিনও তোমাকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করেছি, কেঁদে কেঁদে বলেছি, আমি আপনার যোগ্য নই, আরও অনেক ভালো মেয়ে পাবেন আপনি। আমি একজনকে ভালোবাসি, প্লীজ আমাকে রেহাই দিন। কিন্তু আমার এই আবেদন নিবেদন তুমি শুনলে না। একজন মেয়ের ইচ্ছে অনিচ্ছে এতই গুরুত্বহীন মি.বোস? এবার নিশ্চয় তার পরিণতি তুমি টের পাচ্ছো? আমি বিষকন্যা হয়ে ঢুকেছিলাম তোমার জীবনে তোমাকে ধবংস করে দেব বলে, তোমার অহংকার, টাকার গরম সব চূর্ণ করে দিতে। এতদিনে নিশ্চয় তোমার এই অহং থেমে গেছে তোমার মৃত্যুর সাথে সাথে। তুমি আর পালটা মারার কোনও সুযোগ কোনদিনই পাবে না। আমি আমার কাঙ্ক্ষিত পুরুষের হাত ধরেই এই পৃথিবীর আলো দেখব।

কিন্তু ছোট্ট একটা কাঁটা মাধবী-র বুকের মধ্যে বিঁধে রয়েছে। সেটা অনেক চেষ্টা করেও উপড়ে ফেলতে পারছে না। অনিরুদ্ধ তো তার ক্ষতি চায়নি বরং তার নিজের জীবনটা ভিক্ষে চেয়েছিল বারবার স্ত্রী-র কাছে, তাও তাকে মেরে ফেলতে পারলো মাধবী? তাকে খুন করেও আজ তার জন্য সামান্য দুঃখটুকুও তার মনে হচ্ছে না। তাহলে মাধবী কি অনুভূতি হীন হয়ে গেছে? যে মোরগ কাটতে দেখলেও অসহ্য যন্ত্রনায় মুখ ফিরিয়ে নিত সে আজ মানুষ খুনেও বিচলিত হয় না! শুধু অনিরুদ্ধ কেন, অনিরুদ্ধের বাবা যে তাকে নিজের মেয়ের চাইতেও ভালোবাসতেন তার জন্যও তার মনে কোনও কষ্ট অনুভব করছে না! কেন? মাধবী কি তাহলে মনটাকে হারিয়ে ফেলেছে? নাকি সেও প্রোফেশনাল খুনেদের মতো মানুষ হয়ে গেছে। অনিরুদ্ধকে শাস্তি দিতে গিয়ে সে তার জন্মদাতা পিতা-মাতাকেও কম হেনস্তা করেনি। এসব কী করে করতে পারল মাধবী?

হঠাৎ গেটে একটা বাইক থামার শব্দ হল। মুহূর্তে চমকে দরজায় ফিরে এল মাধবী! তরুণ আসেনি তো? কেন আসছে না তরুণ? কোথায় চলে গেল সে তাকে একা ফেলে? এখানে খাবার দাবারও প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। ঘর থেকে বেরিয়ে যাবারও কোনো পথ নেই। মাধবী একা একা পাগলের মতো বকবক করে যাচ্ছে। না গেটের শব্দটা আবার থেমে গেল। রাগ হলেও মনের মধ্যে রাগটা পুষে রাখল না মাধবী। সে ছুটে গেল আবার ওই জানালার কাছে। দূরে দূরে স্কাইস্কিপারগুলো দেখা যাচ্ছে। সেগুলির অ্যাপার্টমেন্টের ভিতর সাদা নিয়নের আলো বরফের মতো জমে বেরিয়ে আসতে চাইছে। মাধবী মনে মনে বলল, ধরে নিই ওই অ্যাপার্টমেন্টেই তরুণ থাকে। তার মানে তরুণকে সে এখন ওই সাদা আলোর ভেতর কল্পনা করতে পারছে, সে যেন চোখের সামনে হেঁটে চলে বেড়াচ্ছে। মাধবী ওর সাথেই একা একা কথা বলতে লাগলো।

এই তরুণ এসো না প্লীজ, আমার আর ভালো লাগছে না। এখানে কতদিন পড়ে থাকবো আমি? আমার কিছুই ভালো লাগছে না। অনিরুদ্ধ কবে মারা গেল সে খবরটাও আমি পেলাম না। আমারা কোথায় পালিয়ে যাবো কিছুই বললে নাতো আমাকে? আমি তোমাকে ছাড়া একা একা কী করে এখানে থাকি বলোতো?

অনিরুদ্ধ আর নেই- কথাটা মনে হতেই মাধবী-র মনটা খারাপ হয়ে গেল। মরে গেলে তাকে আর খারাপ বলতে নেই। আসলেই কী তার স্বামী হবার অনুপযুক্ত ছিল অনিরুদ্ধ? না তা নয়, বরং সব দিক বিবেচনা করলে একদম পারফেক্ট্। অন্তত তরুণের তুলনায় তো অনেক অনেক ভালো পাত্র। কিন্তু তার অহংকারটা ছিল মারাত্মক, তার চলাফেরার মধ্যেই অন্যকে অবজ্ঞা করার একটা ভাবনা লুকিয়ে থাকত সবসময়। একজন মেয়ের ইচ্ছের কোনও মুল্য থাকতে পারে তা সে বুঝতেই চায়নি। তবে মানুষ হিসেবে অনিরুদ্ধ খারাপ ছিল, সেটা বলা অন্যায় হবে। একদিন নিষেধ করে দেওয়ার পর আর কোনোদিন তার কাছে ঘেষার চেষ্টা করেনি সে। আবার তরুণ হল তার ঠিক উল্টো, কাছে পেলেই সারাক্ষন শুধু শরীর নিয়েই তার উন্মাদনা। দুটো কথা ভালো করে বলার জো নেই শুরু করে দেয় তার পাগলামি। বিয়ের পরও বারবার সে ধরা পড়েছে তরুণের হাতে। তাই তো অপবিত্র মন আর শরীর নিয়ে নতুন কোনও দেবতার নৈবদ্য সাজাতে চায়নি মাধবী। তরুণকে ছাড়া আর কারও কাছেই সমর্পিত হতে পারে না সে। একজন নারীর উপর অধিকার কতজন পুরুষের হতে পারে? না না মাধবী আর কাউকে কাছে ডাকতে পারবে না। অনিরুদ্ধ যতই মহাপুরুষ হোক না কেন এই উদ্যান শুধুই তরুণের, এখানে আর কাউকে অবাধে বিচরণ করতে দেওয়া যায় না। এই সাধারণ কথাটা কোনও পুরুষই বুঝতে চায় না। না বুঝল তার বাবা, না বোঝাতে পেরেছিল তার স্বামীকে।

যদিও অনিরুদ্ধ ধীরে ধীরে বদলে যাচ্ছিল। সে মাঝে মাঝে অন্য মেয়েদের সাথে মিশতে শুরু করেছিল তা মাধবী বুঝতে পারতো। দিনরাত ফেসবুক, টুইটারে পড়ে থাকত সে। মাঝে মাঝে একটু আধটু হুইস্কি গিলে বাড়ি ফিরতো। বাড়িতে আর কেউ টের না পেলেও ওদের স্বামী স্ত্রী-র দুরত্বটা টের পেতেন অনিরুদ্ধ-র মা। স্বামী স্ত্রী-র কেমেষ্ট্রি ঠিক যেমন হওয়া উচিত তা কখনোই তিনি দেখতে পেতেন না। আর তার ফলে শুরু হত মাধবী-র উপর নানারকম মানসিক অত্যাচার। নানান কৌশলে তিনি ঝগড়া বিবাদ আমদানি করতে লাগলেন বাড়িতে। ছেড়ে কথা বলার পাত্রী সে নিজেও ছিল না। তবু মাধবী মাঝে মাঝে হাঁপিয়ে ওঠতো শাশুড়ির যন্ত্রণায়। তিনি তো ফরমান জারী করে মাধবী-র বাড়ি থেকে একা একা বেরনো প্রথমে বন্ধ করে দিলেন। অনিরুদ্ধ তা চাইতো না তাই মা ছেলেতে অনেক ঝগড়াও হয়েছে। কিন্তু অনিরুদ্ধ পারেনি শেষ পর্যন্ত তার মা-র সাথে লড়াই করে। এমনকি বাপের বাড়িতে পর্যন্ত তিনি যেতে দিতেন না। সহদেববাবুকে নানা অসুবিধার কথা বলে পুরো একটা বছর বউকে বাপের বাড়িতে যেতে দেননি। তাও তার কোনও আপত্তি ছিল না। কিন্তু অবশেষে তিনি যখন মাধবী-র একান্ত আপন মোবাইলটা কেড়ে নিলেন তখন ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেল তার। সারাদিন মন খারাপের মাঝে যেটুকু শান্তি ছিল তা ওই মোবাইলের মধ্যে লুকিয়ে ছিল, তাও কেড়ে নিলেন তিনি। তরুণের সাথে আচমকাই সমস্ত যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেল। শাশুড়ি শুধু এখানেই থেমে থাকেননি। তিনি মোবাইল ঘেঁটে তরুণের সাথে ম্যাসেজের কনভারসেশান পড়ে মাধবীকে নানান প্রশ্নবাণে জর্জরিত করে তুললেন। আর সহ্য করতে পারল না মাধবী। এবার এই বন্দীজীবন থেকে তাকে মুক্তি পেতেই হবে। তাই অনিরুদ্ধ-র সাথে সে অভিনয় করতে শুরু করল। অনিরুদ্ধকে সঙ্গে নিয়ে সে বাড়ি থেকে বেরিয়ে নানাহ প্রোগ্রামে যেতে শুরু করল। অনিরুদ্ধও যেন তাই চাইছিল। বিয়ের পর থেকে যে স্ত্রীকে সে জিততে প্রাণপণ চেষ্টা করে গেছে তা আচমকা এত সহজে ফিরে আসায় সেও খুশিতে আত্মহারা হয়ে গিয়েছিল।

হঠাৎ দরজায় খট্ খট্ শব্দে চমকে উঠল মাধবী। কে এল? পুলিস নয়তো? নাকি তরুণ? তালা খোলার শব্দ হল। আস্তে করে দরজা খুলে দেখে তরুণ দাঁড়িয়ে আছে বাইরে। সে চোখের পলকে ঘরের ভিতরে ঢুকে হাঁপাতে লাগল। অন্ধকার ঘরে কিছুই দেখা যাচ্ছে না। চাঁদের যে সামান্য আলো ভিতরে ঢুকছে তা দিয়ে আবছায়া তরুণকে দেখা যাচ্ছে।

মাধবী জিজ্ঞাস করল, কী হয়েছে তরুণ? তোমাকে কেমন টায়ার্ড দেখাচ্ছে?

তরুণ মাথায় হাত দিয়ে কিছুক্ষণ চুপ করে বসে রইল। তারপর বলল, একটু জল খাওয়াতে পারবে মাধু? গলাটা একদম শুকিয়ে রয়েছে।

হ্যাঁ।

মাধবী জল এগিয়ে দিতেই ঢক্-ঢক্ করে পুরো জলটাই খেল। তারপর মাধবীকে কাছে বসিয়ে বলল, আমরা ভুল করেছি মাধু, বিরাট ভুল করে ফেলেছি, আবেগের তাড়নায় বড্ড বোকামি করে ফেলেছি। এটা সঠিক পথ ছিল না। এভাবে আমরা নিজেদের ভালোবাসা ফিরে পেতে পারি না।

তরুণের এই কথা শুনে চমকে উঠল মাধবী! এত আশা করে সে বসে রয়েছে নির্জনে একটু ভালো কথা, আগামীতে সুখে থাকার কথা শুনতে, কিন্তু এসেই তরুণ হতাশায় ডুবিয়ে দিল তাকে। কিছু একটা যে হয়েছে সে ব্যাপারে নিশ্চিত না হলে তরুণ এত মনমরা হয়ে পড়তো না। তাকে ভালো দেখতে পাচ্ছে না মাধবী, কিন্তু তার হতাশা সে অনুভব করতে পারছে। তার কথা শুনে একটু ভয় পেয়ে গেল সে।

কী হয়েছে?

অনিরুদ্ধ বেঁচে গেছে। তার মরে যাওয়ার চান্স আর নেই।

হঠাৎ ঘরের ভিতর যেন একটা বোমা ফেটে গেল! কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত শব্দ যে এত জোরে কানে আঘাত করতে পারে তা মাধবী আগে বুঝেনি। তরুণ তখনও বলে যাচ্ছে, সে আর মরবে না মাধু। তার চাপ্টার ক্লোজড্ নয় এখনও ভীষণভাবে ওপেন হয়ে গেছে। বিপদ এখন তেড়ে আসবে আমাদের কাছে। অনিরুদ্ধ যদি মুখ খুলে তাহলে প্রথম বিপদে পড়বে তুমি আর তোমার জন্য একদিন জালে আটকে যাবো আমি। চিত্রনাট্য লেখা শুরু হয়ে গেছে।

আমার বিশ্বাস হচ্ছে না। অনিরুদ্ধ কী করে বেঁচে যাবে? এত উপর থেকে গড়িয়ে পড়লে কেউ বাঁচতে পারে? তাছাড়া ফেলে দেওয়ার আগে মার খেয়েই তো সে মরে গিয়েছিল।

না মরেনি।

হে ঠাকুর - তুমি একি করলে! বারবার কেন আমার ভাগ্যের সাথে তুমি খেলা করো? সতিই আমি বিশ্বাস করতে পারছি না কী করে বেঁচে গেল অনিরুদ্ধ?

তরুণ বালিশটা টেনে বিছানায় শরীর ছেড়ে দিল। একটা ভয় তাকে আষ্টেপৃষ্টে বেঁধে ফেলেছে তা তার আচরণ দেখেই বোঝা যাচ্ছে। এই মুহূর্তে তাকে ভয় না দেখিয়ে সাহস দেওয়া দরকার। মাধবী বিছানায় তরুণের উপর লুটিয়ে পড়ল।

এই তুমি আমাকে ভয় দেখাচ্ছো নাতো? বলো ফাজলামি করছো?

এখন ভাল্লাগছে না মাধু - প্লীজ্ একটু ভাবতে দাও।

যদি সত্যিই তাই হয় হোক। তবে আমার মন বলছে আলটিমেটলি সে বাঁচবে না। কী করে বাঁচবে সে? আমার চোখের সামনেই তো তাকে মরে যেতে দেখলাম। এটা তো মিরাক্যাল হয়ে গেছে তাহলে!

আমারও তাই মনে হচ্ছে। আসলে মাথা ঠান্ডা রাখা উচিত ছিল, আগে কাজটা নিশ্চিত করে তারপর ফেলে দিলে ভালো হতো। কেউ যদি দেখে ফেলে সেই ভয়ে আমরা বেশি তাড়াহূড়ো করে ফেলেছি।

তাহলে এখন কী করবে?

বুঝতে পারছি না। তোমার কিডন্যাপের ঘটনাটা আর কেউ খাচ্ছে না। সবাই বুঝে গেছে অনিরুদ্ধকে মেরে ফেলতেই এই কাজ কেউ করেছে।

মানে?

মানেটা খুব সহজ মাধু। পুলিস আমাকে খুঁজছে। গতকালও দু-বার আমার অফিসে পুলিস গিয়েছিল। তার মানেটা খুব সহজ।

কী! তোমাকে পুলিস খুঁজতে শুরু করেছে? মাই গড!

তুমি আর আমি দু-জনে মিলেই যে প্ল্যানটা করেছি সেই ব্যাপারে কোনও সন্দেহ নেই পুলিসের। তোমাকে বা আমাকে পেলেই পুলিস জাল গুটিয়ে আনবে।

অনিরুদ্ধ কিছু বলেছে পুলিসকে?

বুঝতে পারছি না। আমার ভীষণ ভয় করছে মাধু। এমন করাটা আমাদের ভীষণ ছেলেমানুষী হয়ে গেছে।

যা হবার তা তো হয়েছে, এখন কী করে বাঁচা যায় সে ব্যবস্থা করো।

কী করবো?

আমি কী জানি, তোমার ভরসায় তো আমি এত কিছু করলাম। যা হোক একটা কিছু করো। না হয় চলো একরাতে নীরবে এখান থেকে আমরা পালিয়ে যাই।

তাই ভাবছি। কিন্তু পালিয়ে গেলে নির্দোষ সেটা প্রমাণ করবো কী করে?

আর মাথা কাজ করছে না কারোর, তাই দু-জনেই চুপ করে শুয়ে রইল বিছানায়। অনেকটা সময় চলে যাবার পর তরুণ ডাকল, মাধু।

বলো।

আমাদের স্বপ্ন অধরাই থেকে যাবে? আর কী করতে হবে আমাকে তুমিই বলো।

মাধবী জড়িয়ে ধরল তরুণকে। আর যেন বিপদের কথা শুনতে ভালো লাগছে না তার। যা হবার তা হবে, সে পড়ে দেখা যাবে। এত দিনের তৃষ্ণা বুকে জমে রয়েছে শুধু তরুণের জন্যই। ভালোবেসে কাছে টানতেই তরুণও সাড়া দিল। মাধবীকে বিছানায় ছড়িয়ে দিল নিজের ইচ্ছে মতো। তারপর তার বুকের উপর মাথা রেখে শুয়ে পড়ল।

এই মুহূর্তে তরুণের মনোবলটা ফিরিয়ে আনা দরকার। না হলে সে যদি ভেঙে পড়ে তাহলে মাধবী-র জীবনেও অন্ধকার ঘনিয়ে আসবে। আজ এত কাছে মাধবীকে পেয়েও তরুণের কোনও উৎসাহ নেই। সে চুপচাপ পড়েই রইল বিছানায়। একবার ভালো করে জড়িয়ে ধরার মতো ইচ্ছেটাও তার হচ্ছে না। শান্ত শিশুর মত শুয়ে রইল সে। মাধবী তাকে বুকে জড়িয়ে রেখে অনেকদিনের একাকীত্বের জ্বালাটা মিটিয়ে নিতে লাগল। মাধবী নিজের টি-শার্টটা খুলে ফেলে দিল। তরুণ তখনও চুপ করে আছে। তবু পুরুষের পেশীর চাপে ভেঙে পড়ছে তার শরীর। আহ কী অনুভব, কী আনন্দ এই মিষ্টি রাতে! তরুণের মুখটা নিজের কাছে এনে তার ঠোঁটে ঠোঁট চেপে শুয়ে রইল মাধবী। সারা শরীরে কাঙ্ক্ষিত পুরুষের স্পর্শ কী যে আনন্দ দেয় তা বলে বোঝানো যায় না। মাধবীর সারা শরীরে হিল্লোল জেগে উঠল। কিন্তু তরুণ যেন আধমড়া মানুষের মতোই শুয়ে রয়েছে তখনও। না কোনও আনন্দই আজ আর ছুঁতে পারছে না তাকে। মাধবী আস্তে করে জিজ্ঞেস করল, কী হল তরুণ তাকাও আমার দিকে। দেখো বাইরে কী সুন্দর চাঁদ উঠেছে। চাঁপা ফুলের মিষ্টি গন্ধ চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে।

তরুণ সে সব কথার উত্তর না দিয়ে লাফিয়ে উঠে বসল।

এসব এখন আর ভালো লাগছে না মাধু। প্লীজ স্যিচুয়েশানটা বোঝার চেষ্টা করো। বোকা বোকা রোমান্সের সময় এটা নয়। তোমরা মেয়েরা বড্ড ইয়ে জানো, আমার যে কী করে দিন কাটছে তুমি বুঝতে পারছো না। তোমার কথা শুনে এখন আমার জেল খাটতে হবে। আমি এটা ভাবতেই পারছি না। আমি তো ছেলে, তুমি মেয়ে, তুমি আমাকে বোঝাতে পারতে। মেয়েরা তো আরো ধীর স্থির হয়, তুমি আমাকে কন্ট্রোল করেতে পারতে। আমি কেন যে এমন কাজ বোকার মত করতে গেলাম! ওহ শিট্।

অবাক হয়ে উঠে বসল মাধবী! অন্ধকারে টি-শার্টটা গায়ে জড়িয়ে নিল। তার সৌন্দর্য ও যৌবন যাকে পাগল করে দিত সেই তরুণ তার খোলা শরীর পেয়েও নিস্পৃহ! এই তরুণকে সে আজ চিনতে পারছে না। আজ তার কোনও আগ্রহ নেই মাধবীর প্রতি! সেও যে সমান ঝুকি নিয়ে অনিরুদ্ধকে তাদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দিতে চেয়েছিল সে কথাটা তরুণ ভুলে গেছে। যদি তার শাস্তি হয় তাহলে মাধবীও যে বাঁচবে না সেটা কী তরুণ বুঝতে পারছে না? যদি শাস্তি হয় হবে, দু-জনে একসাথে শাস্তি ভোগ করে যেদিন বেরিয়ে আসবে সেদিন না হয় আবার এক হয়ে যাবে। নিজের কাজের জন্য মাধবী মোটেই অনুপপ্ত নয়। কিন্তু তরুণ এমন আচরণ করছে কেন? সে কী বুঝতে পারেনি তখন, যা সে করতে চলছে তা অপরাধ? যদি বুঝেই করে থাকে তাহলে আজ এত বিমর্ষ হওয়ার তো কোনও মানে নেই।

তরুণ বলল, শোনো মাধু এখন আমার জীবনে তুমি হলে প্রথম বিপদ আর তোমার জীবনেও আমি। যদি আমি ধরা পড়ি তাহলে তুমিও ফাঁসবে আর তুমি ধরা পড়লে আমি।

তার মানে? তুমি কী বলতে চাইছো আমি বুঝতে পারছি না।

দেখো যত কষ্টই হোক তুমি মুখ খুলবে না প্লীজ্। একমাত্র তুমি ছাড়া আর কেউ আমাকে ফাঁসাতে পারবে না। কেউ নেই এই পৃথিবীতে এটা প্রমাণ করতে পারবে যে এই ঘটনার পেছনে আমার হাত আছে। আমি খোঁজখবর নিয়েছি, আর এটা বুঝতে পেরেছি অনিরুদ্ধ তোমার ব্যাপারে কিছু বলেনি পুলিসকে। সে তোমাকে সেভ্ করতে চাইছে। দু-দিন ধরে আমি পুলিসকে ফাঁকি দিয়ে চলেছি কেন জানো?

কেন?

শুনেছি তোমার বাবা আমার আর তোমার নামে পুলিসের কাছে কিছু বলেছেন। কী যে বলেছেন তিনি সেটাই বুঝতে পারছি না এখনও।

বাবা! আমার নামে পুলিসে রিপোর্ট করেছেন?

হ্যাঁ।

বাবা এমন করলেন কেন?

ওসব ভেবে এখন কাজ নেই। শোনো যদি তুমি ধরা পড়ে যাও তাহলে বলবে তোমাকে অচেনা কিছু লোক কিডন্যাপ করে এখানে এনে রেখেছে। ওরাই বলেছে, চীৎকার চেঁচামেচি করলে অনিরুদ্ধকে মেরে ফেলবে। তাই ভয়ে তুমি চুপ করে বসে আছো। তুমি ওদের চিনতে পারোনি।

আর যদি তুমি ধরা পড়ে যাও?

আমি বলবো তোমাকে পেতে আমি এসব করেছি। এই ঘটনায় তোমার কোনও হাত নেই। তুমিও আমার বিরুদ্ধেই কথা বলবে। এক সাথে দু-জনেই বিপদে পড়ে কাজ নেই।

তরুণ!

তুমি জীবনে খুশি হলেই আমার সব ইচ্ছে পূর্ণ হবে মাধু। তোমার চোখের জল, তোমার অসুখী চেহারা আমি একদম সহ্য করতে পারি না। কী হবে পাঁচ-দশ বছর জেল খেটে আবার ফিরে আসবো। তখন হয়তো তুমি অনিরুদ্ধকে নিয়ে পাকা সংসারী হয়ে যাবে।

একদম বাজে কথা বলবে না তুমি। যদি দু-জনের কেউ একজনও ধরা পড়ে যাই তাহলে দু-জনেই জেল খাটবো। তার পর আমরা নিজেদের জীবন শুরু করবো। তবুও ওই ছেলের কাছে আমাকে আর ফিরে যেতে বলো না প্লীজ।

তরুণ তড়িঘড়ি ব্যাগে বয়ে আনা জিনিসপত্তরগুলি বুঝিয়ে দিল মাধবীকে। এখানে আরও দিন পনেরোর খাবার দাবার মজুদ আছে। তারপর হঠাৎ জড়িয়ে ধরল সে মাধবীকে। খুব কাছে টেনে ধরে বলল, মাধু ভয়ের কিছু নেই আমি তো আছি, দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে তুমি কিছু চিন্তা করো না। তারপর আমরা নিজেদের মতো করে জীবন কাটাবো। মাই স্যুইট হার্ট। শোনো এই ব্যাগে সব দরকারি জিনিসপত্তর নিয়ে এসেছি, তোমার দশ বারোদিন চলে যাবে।

তার মানে তুমি আরও দশ বারোদিন আমাকে এখানে বন্দী করে রাখবে?

তুমি রাগ করেছো?

উঁ।

আমি দুয়েক দিনের মধ্যেই আবার আসবো। তুমি একদম চিন্তা করবে না।

যদি না আসো? আমি এই অন্ধকারে একদিন ডুবে যাবো তরুণ। তোমাকে ছাড়া আমার একটা দিনও কাটছে না আর।

আমি জানি।

আমার মোবাইলটা দিয়ে দাও। তাহলে তো ফেসবুকে চ্যাটিং করতে পারি।

তোমার কী মাথা খারাপ হয়ে গেছে? সারা দুনিয়া ধরে নিয়েছে তুমি কিডন্যাপ হয়েছো। পুলিসের চোখ ঘোরাতে আমি মুক্তিপণের টাকা চেয়েছি। আর তুমি চ্যাটিং করবে। নারীবুদ্ধি সত্যিই ভয়ংকর।

তুমি কি টাকা পেয়েছো?

এই না না! টাকার জন্য আমি এসব করছি নাকি?

টাকাটা পেলে তো মন্দ ছিল না কী বলো? আমাদের পালানোর রাস্তাটা আরও স্মুথ্ হয়ে যেত। এই তুমি দেখো না চেষ্টা করে কিছু হয় কিনা।

এই এসব ছাড়ো তো। শোনো আমি যাচ্ছি - বাই।

বাই ডার্লিং।

কথাটা শেষ করেই যেমন নীরবে এসেছিল তেমনি দরজা বাইরে বন্ধ করে তালা লাগিয়ে ঝট্ করে তরুণ চলে গেল। বাইরে একটু পরে গেট খোলার একটা নিচু শব্দ মাধবী-র কানে ভেসে এল।

তরুণ চলে যেতেই ধপাস করে বিছানায় শুয়ে পড়ল মাধবী। তরুণ এলে তাকে কত কথা বলবে ঠিক করে রেখেছিল। কিন্তু সে এসে চলে না যাওয়া পর্যন্ত এসব কথা তার মনেই হয়নি। এখন সে চলে যেতেই সবগুলি কথা তার মনের উপর একসাথে ঝাঁপিয়ে পড়ল। না না এসব ভাবনায় এখন মগ্ন হলে চলবে না। তরুণ যেন তার বুকের উপর একটা পাথর চাপিয়ে দিয়ে চলে গেল। তার নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। তরুণ তাকে ঠিক কী বুঝাতে চাইল সেটাই বোঝতে পারছে না মাধবী। তরুণ একথা কেন বলল যে তার বেঁচে থাকাটাই এখন তরুণের জন্য বিপদের একমাত্র কারণ? তার মানেটা কী দাঁড়ালো? তরুণ কি মাধবীকে মেরে ফেলতে পারে? কারণ এটা তো ঠিক একমাত্র সে ছাড়া কেউ জানে না তরুণ এই ঘটনায় যুক্ত। তাহলে কি এই ভাবনাটাই এখন তরুণের মাথায় ঘুরছে? না না তা কী করে হয়? তরুণ তাকে ভালোবাসে, তার জন্য সে একটা খুন পর্যন্ত করেতে রাজি হয়েছিল। কিন্তু মাধবী-র মন আর তরুণকে বিশ্বাস করতে পারছে না, যে ছেলে তার হারানো প্রেমকে ফিরে পেতে একটা খুন করতে পারে সে ইচ্ছে করলে নিজেকে বাঁচাতে আরও একটা খুন করতে পারবে না কেন?

মাধবী-র অবস্থা এখন একটা মুরগির মতো, তরুণের খাঁচায় সে বন্দী হয়ে আছে, তরুণের ইচ্ছে ছাড়া একপা-ও তার সরে যাওয়ার পথ নেই। তাহলে কী সে এখান থেকে পালানোর চেষ্টা করবে এখন? চেঁচিয়ে দরজা খুলিয়ে সত্যি কথাটা বলে দেবে সবাইকে? নাকি পুলিসের কাছে গিয়ে বলবে তরুণ জোর করে এখানে তাকে আটকে রেখে দিয়েছে? সবচাইতে সেফ্ কথা হবে এটাই যে তরুণ তাকে কিডন্যাপ করেছে, তা হলে সে নিজে সম্পূর্ণ নিরাপদ। এমনকি অনিরুদ্ধও এই কথাটা অবিশ্বাস করবে বলে মনে হয় না। কারণ অনিরুদ্ধ নিশ্চয় বুঝতে পারেনি যে মাধবী ওদের সাথে জড়িয়ে আছে। যদি বুঝতো তাহলে সে নিশ্চয় জ্ঞান ফিরে পাওয়ার পর মাধবী-র বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিত। কিন্তু তা যখন হয়নি তখন এই পথটা এখনো তার জন্য বন্ধ হয়ে যায়নি। তরুণকে আর কিছুতেই বিশ্বাস করা যাচ্ছে না। বিপদে পড়তেই তার আসল চেহারা বেরিয়ে এসেছে। এতটুকু চোট পেতেই সে এত মড়িয়া হয়ে উঠল! কী হবে যদি ওরা ধরা পড়ে? ধরা পড়বে, জেল খাটবে তারপর তো নিজেরা এক হতে পারবে। কিন্তু অনিরুদ্ধ-র স্ত্রী হয়ে গেলে তরুণ আর কোনও দিন ওকে ফিরে পাবে না। এই সাধারণ সত্যিটা কেন বুঝতে পারছে না তরুণ? আর সত্যিই যদি সে তাকে ভালোবাসে তাহলে পাঁচ-সাত বছরের জেল জরিমানা তেমন কী বড় শাস্তি? মাধবী তো তরুণের জন্য নিজের জীবনটা পর্যন্ত দিয়ে দিতে পিছপা হবে না।

কথাটা কি মাধবী ঠিক বলল? তরুণের জন্য সে তার জীবনটা সত্যিই দিয়ে দিতে পারে কি? হ্যাঁ, পারে তো। তাহলে সে তরুণকে এখন সন্দেহ করছে কেন? তরুণ তাকে মেরে ফেলতে পারে এই ভয়টা তার মনে আসছে কেন? যদি তরুণের কাছে সে নিজেকে সমর্পণ করেই ফেলে তাহলে সে ভয় পাচ্ছে কেন? যদি তরুণ বিশ্বাসভঙ্গ করে সে দায় তো তার নয়। প্রেমিক হিসেবে হেরে যাবে তরুণ কিন্তু জিতে যাবে মাধবী। কিন্তু তারপরও শিউরে উঠল সে! একটা ছাগল ছানার মতো সেই মানুষের কোলে নিশ্চিন্তে শুয়ে থাকতে পারে না মাধবী; যখন সে জেনে যাবে যে ওই মানুষটা তাকে বলি দিতে মন্দিরের রাস্তা ধরেছে। তরুণ হয়তো তার শ্বশুর ও বাবার কাছ থেকে মোটা টাকা আদায়ও করবে। তারপর একমাত্র সাক্ষীকে মেরে এখান থেকে পালিয়ে যাবে; তা কিছুতেই হতে দেওয়া যায় না।

সে বিছানা থেকে উঠে একটা ফল কাটার ছুঁড়ি কোমরে গুঁজে নিল। এখন থেকে এটা তার হাত থেকে দূরে রাখা যাবে না। জানালার সামনে গিয়ে দাঁড়াল আবার। অনুশোচনায় নিজের ভিতরটা দগ্ধ হতে লাগল, আজ দু-কূল হারিয়ে ফেলল সে। অনিরুদ্ধ আর কোনওদিন তাকে বিশ্বাস করবে কিনা কে জানে? যতই সে পজেটিভ ভাবুক না কেন বাস্তবটা সবসময় মনের মতো হয় না। কারণ তরুণের সাথে সম্পর্কের ব্যাপারটা অনিরুদ্ধ নিজের চোখে বহুবার দেখেছে। এ-নিয়ে ঝামেলাও হয়েছে তাদের দু-জনের মধ্যে। ফলে তাকে মারধরের পর পাহাড় থেকে ফেলে দেওয়ার পেছনে যে মাধবী-রও হাত রয়েছে এটা বুঝতে অনিরুদ্ধ-র মতো ব্রিলিয়ান্ট ছেলের অসুবিধা হওয়ার কথা না। তবুও ঈশ্বরকে ধন্যবাদ অনিরুদ্ধ সুস্থ হয়ে উঠছে। তাকে প্রথম দেখার পর থেকেই অনিরুদ্ধ এত পাগল হয়ে উঠেছিল যে সে কোনও বারণই শুনতে চায়নি। একগুয়ের মত মাধবীকে বিয়ে করার জেদ্ ধরে বসেছিল। এমনকি মাধবী যখন ফোন করে ওকে বোঝাতে চেয়েছিল যে সে এনগেজড, অনিরুদ্ধ মানতে চায়নি। এমন কম বয়সে দু-চারটি প্রেম নাকি সবার জীবনেই থাকে, বিয়ের পর সবকিছুই ঠিক হয়ে যায়। মাধবী-র মধ্যে এমন কী দেখেছিল সে যে মাধবীকে বিয়ে করা ছাড়া অন্য কিছু ভাবতেই পারল না। তার মতো ব্রাইট্ একজন ছেলের নিশ্চয় মেয়ের অভাব হতো না। অথচ তার জন্য এমন পাগল একটা ছেলেকে কী নিষ্ঠুরের মত বঞ্চিত করে রেখেছে এতদিন মাধবী? না না এটা করা তার মোটেই ঠিক হয়নি। বেহায়ার মত বারবার তার কাছে ফিরে এসেছে অনিরুদ্ধ। তার মুখে একটু হাসি দেখার জন্য সে নিরন্তর চেষ্টা করে গেছে। কিন্তু উপেক্ষা ছাড়া কিছুই পায়নি। একটা বছর ধরে একটু সময়ের জন্যও মনের দরজাটা খুলে দেয়নি মাধবী। আজ কেন জানি না অনিরুদ্ধ-র জন্য অনুশোচনায় তার অন্তর জ্বলে যাচ্ছে।

রাত হয়েছে, অনেক রাত। দূরের উঁচু উঁচু অ্যাপার্টমেন্টের লাইটগুলি নিভে যাচ্ছে এক-এক করে। এক আধটা ঘরে এখনও জ্বলছে ছোটো আলো। অনেকেই তার মতোই রাত জেগে আছে বিমর্ষচিত্তে। তারাও বোধ হয় তার মতোই অন্তরদহনে ভুগছে। অথবা কেউ রিসার্চ করছে, কেউ গল্প, কবিতা লিখছে বা বাচ্চারা পড়াশোনা করছে। একমাত্র মাধবীই যেন অনুতাপের রাত জেগে জেগে সময় শেষ করছে। চাঁদটা হেলে পড়েছে, একটু পরেই অদৃশ্য হয়ে যাবে স্কাইস্কিপারের পেছনে। তখনও চাঁপা ফুলেরা তাদের গন্ধ বিলিয়ে যাবে। অনিরুদ্ধ যেন সেই ছেলে, সে ডুবে যাবার আগেও মাধবীকে ক্ষমা করে যাবে, ভালোবেসেই যাবে।


## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers. The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation. Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##


◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717
Next part

Previous Parts: 1st Part     2nd Part    

All Bengali Stories    18    19    20    21    22    23    24    25    (26)     27