Home   |   About   |   Terms   |   Contact    
RiyaButu
A platform for writers

দেহরক্ষী


বাংলা উপন্যাস


All Bengali Stories    22    23    24    25    26    27    (28)       

-হরপ্রসাদ সরকার, ধলেশ্বর - ১৩, আগরতলা, ত্রিপুরা ( পশ্চিম )

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ আমাদের এই ওয়েবসাইট ( RiyaButu.com )-এ প্রকাশিত গল্পগুলির মধ্যে থেকে কিছু গল্প নিয়ে এবছরই প্রকাশিত হবে আমাদের 'রিয়াবুটু'র গল্প'।
--------------------------

দেহরক্ষী
( বাংলা উপন্যাস )
- হরপ্রসাদ সরকার, আগরতলা, ত্রিপুরা



Previous Parts: 1st Part    2nd Part   


◕৩য় পর্ব

সেই জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণ মুহূর্তে রাজপ্রাসাদ থেকে গুপ্ত পথে পালিয়ে যাওয়ার আগে সুধামেল মাত্র কয়েক মুহূর্তের জন্য একটি বড় থামের পিছনে, আবছা আলোতে আনন আবৃত এক দাসীর সাথে দেখা করে। দু -এক কথার পরেই ঝড়ের বেগে সে ঘোড়ার পিঠে চড়ে বাকি দেহরক্ষীদের সাথে রাজা-রানীকে নিয়ে সেই গুপ্ত পথে অদৃশ্য হয়ে যায়। দাসীটিও এক মুহূর্ত আর রাজপ্রাসাদ থাকেনি। পাখির মত উড়ে প্রাসাদের পিছনের কর্দমাক্ত অংশ দিয়ে আরও অনেক নারী ও দাসীদের সাথে নিয়ে পালিয়ে যায় প্রাসাদ থেকে। ছড়িয়ে ছিটিয়ে লুকিয়ে পড়ে সবাই, তারপর পরিবার পরিজনের সাথে নগর ছেড়ে দূর দূরান্ত গ্রাম - পল্লীতে পালিয়ে যেতে থাকে। পরাজিত যুদ্ধের এ অবস্থায় শত্রুদের হাতে কোন নারী একবার এসে গেলে দুর্দশার অন্ত নেই।

এই দাসীটির কাঁধে এখন বিশাল এক গুপ্ত সমাচারের ভার। তার বীরত্ব, পটুতা, চতুরতার উপর নির্ভর করবে পরবর্তী সকল গুপ্ত কর্মকাণ্ডের শৃঙ্খল। সকল কর্মকাণ্ড আবার শুরু হবে তারই এক ইশারায়। তার কাজ সম্পন্ন হলেই সব পরিকল্পনা এক এক করে যথা সময়ে এগিয়ে যেতে থাকবে। তার এক ভুলে সকল পরিকল্পনা ভেস্তে যাবে। এই প্রতিকূল পরিবেশে আবার সব কিছু নতুন করে শুরু করা খুব কঠিন - হয়তো নিজেদের অনেক রক্ত ঝরবে তখন। না না - যে করেই হোক দু-দিন পর যথাসময়ে সমাচারটি পাঠাতেই হবে। সেই দাসীর প্রাণ আজ তার নিজের কাছেই অনেক দামি। দেশমাতা আজ তার পানে চেয়ে আছে। এই বরারোহা এক বৃদ্ধার বেশে একটি অর্ধ দগ্ধ, জীর্ণ কুঠিরে আত্মগোপন করল। এই দাসীটির নাম শতরূপা। পরবর্তী সময়ে এই শতরূপা ঐ রাজ্যজয়ের জন্য বিশাল ভূমিকা পালন করেছিল।

ঐ ঘটনার দু-দিন পরের ঊষাকাল। অতি গোপনে সেই জীর্ণ কুঠিরের পিছে, কপালে সিঁদুর মাখানো একটি সাদা গিরিবাজ আকাশে উড়িয়ে দিল শতরূপা। চোখের পলকে তা এক ফালি মেঘের ঐ পারে চলে গেল। আর দেখা গেল না। হর্ষে, খুশিতে, আনন্দে চোখে আনন্দধারা বয়ে এলো শতরূপার। দেশমাতার প্রতি নিজের গুরু দায়িত্ব সে সম্পন্ন করতে পেরেছে। আরও কঠিন কাজের জন্য সে নিজের মনকে শক্ত করতে লাগল। আকাশে হারিয়ে যাওয়া সেই গিরিবাজটি অনেকক্ষণ পর নেমে এলো শ্মশানবাসী নর-কপালধারী এক কাপালিকের কোলে। শত্রুর বুকে মৃত্যুর আঘাত হানতে বিশাল পরিকল্পনার প্রথম কাজটি অতি গোপনে সম্পন্ন হল।

এই ঘটনার পাশাপাশি আরেকটি ঘটনা চলছিল। যুদ্ধ বিধ্বস্ত রাজ্যের অস্থির অশান্ত রাজধানীর প্রাণকেন্দ্রে একজন বীণাবাদক শান্তিতে বসে নেই - কোন কিছুতেই তার মন বসছে না। তার নাম পদ্মবীণা - নাম শুনলে অনেকেই তাকে নারী বলেই ভাবে কিন্তু আসলে সে একজন পুরুষ। নগরের এক মুখ্য নর্তকী রত্নমালিকার প্রধান বীণাবাদক। তার হাতে যেন স্বয়ং মা সরস্বতীর আশীর্বাদ আছে। তার হাতে বীণা পড়লেই সেই বীণা কথা বলতে শুরু করে - তা সে নিকৃষ্ট বীণাই হোক আর উৎকৃষ্ট বীণাই হোক। তার বীণার ঝংকার যখন শুরু হয় তখন পরিবেশ হঠাৎ ঝলমল করে উঠে। একবার তার বীণা বাজতে শুরু করলে শ্রোতা যেন পাথার হয়ে বসে থাকে। সুরের অদৃশ্য আন্দু দিয়ে কেউ যেন বেঁধে রাখে স্রোতাদের। আর এ হেন বীণার সাথে বরারোহা রত্নমালিকার নৃত্য শুরু হলে এক সাথে কয়েক শতাব্দীর আধার চোখ মেলে চেয়ে উঠে। কোথা থেকে পদ্মবীণা শিখল এমন শিল্প?

মিতভাষী এই পদ্মবীণা মোটেই কাথিক নয়। সৌম্য তার রূপ - ঠিক যেন কুসুমেষু। নৃত্য-সংগীতের আসরে মুদ্রিত নয়নে একাগ্র চিত্তে সে তার বীণার ঝংকারে মনোনিবেশ করে - একাত্মা হয়ে যায় বীণার সুরের সাথে। সামনে কামদেবের রতি শিষ্যা রত্নমালিকা, স্বর্গের মেনকার মত বিপুল পরাক্রমে, বিপুল সম্ভারে তার সকল ঐশ্বর্য নিয়ে মহামুনি বিশ্বামিত্রের সামনে বৃথা একের পর এক মনমোহিনী নৃত্য করে যায়। নিজ রূপের অনলে রত্নমালিকা পুড়ে গেলেও এই কনককান্তা রত্নমালিকায় কোন মোহ নেই পদ্মবীণা-র। সৈকত ছেড়ে সেই রূপ সমুদ্রে কখনো সে নামতে চায় নি - বরাবর একটা ব্যবধান বজায় রেখেছে। তবে সে ডুবে থাকে সুরের এক অদ্ভুত সাগরে। রত্নমালিকার সৌন্দর্যতত্ত্ব, নন্দনতত্ত্ব বারে বারে হেরে যায় পদ্মবীণার মৌনতত্ত্ব-র কাছে। রাতের রঙিন ছলনাময়ী অনুরাগের কামানল আসরে একের পর এক ছড়িয়ে পড়তে থাকে পদ্মবীণার বীণার ঝংকার। তপ্ত কামান্ধ চোখ গুলি যখন ভরা যৌবনার নৃত্য দেখতে থাকে তখন পদ্মবীণা কেন উদাসীন মুদিত নয়নে তার সুরের সাগরে ডুবে থাকে?

তবে না! আসর জুড়ে মুদিত নয়নে থাকে না পদ্মবীণা। আকাশের বিজলীর মত হঠাৎ হঠাৎ সে জেগে উঠে। ক্ষণিকের লাগি তার আঁখি দুটি অতল সাগরের তল থেকে এক উন্মত্ত দামিনীর মতন জেগে উঠে ছড়িয়ে পড়ে সারা মহাকাশে - যেমন চোখ মেলে চায় মহাকালের ত্রিনেত্র। এক ঝলক সে তাকায় তার লক্ষবস্তুর দিকে। এই চাহনি সাধারণ চাহনি নয়। যেন লক্ষবস্তুটির প্রাণটি পর্যন্ত সে দেখে ফেলে তখন। হাজার দেওয়ালের ওপারের বস্তুটিও তখন তার চোখের আড়ালে যেতে পারেনা, ফাঁকি দিতে পারেনা। এ তার এক অদ্ভুত ক্ষমতা। এই গণিতজ্ঞের সামনে তখন সকল গণিত পরিষ্কার হয়ে যায়।

রত্নমালিকাও এক অয়স্কান্ত মণির মত। তার পদ্মআঁখি আর পদ্মপলাশ ঠোট এক হাসিতেই বশ করে রাখে বনের উন্মত্ত হাতীকে। সেই কুহক, সেই অনুপম দেহ বল্লরীর, সেই উথাল বন্যার টানে বারে বারে সেই রূপের হাটে উজির - নাজির কে না ছুটে আসে? নৃত্যশালায় রাতের আসরে রত্নমালিকা ছড়িয়ে দেয় কামাগ্নির এক দুর্বার ইন্দ্রজাল। রূপের পাহাড়, ষোল আনা চাঁদ যৌবনা রত্নমালিকার অবাধ যাতায়াত রাজার অন্তঃপুর পর্যন্ত। শেঠ - সেনাপতি সবার সাথে তার খুব সখ্যতা, খুব আনা-গোনা। ফলে রত্নমালিকার সাথে সাথে পদ্মবীণা-র ও অবাধ যাতায়াত রাজ্যের বহু শীষ-মহলে, বহু মন্দ ভাল জায়গায়।

প্রাসাদের ছাদের এক কোনায় খুব চিন্তিত মনে আকাশের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে পদ্মবীণা মনে মনে ভাবছে- তবে কি রাজশ্রেষ্ঠ ধরা পড়ে গেলেন? ওরা ধরে ফেলল আমাদের রাজাকে? না! মন কেন এ কথা মানতে চাইছে না? নিশ্চয়ই রাজশ্রেষ্ঠ নিরাপদে আছেন, ভালো আছেন। তা না হলে এতক্ষণে শহরময় তার মৃত্যুর সমাচার ছড়িয়ে পড়ত। রাজ্যবাসীর আত্মবল ভেঙ্গে দিতে শত্রু এই সমাচারটা সবার আগে ছড়িয়ে দিত। নাহ্! আজও কোন সমাচার পেলাম না। কিন্তু এ ভাবে বসে থাকলে যে চলবে না! রাজশ্রেষ্ঠ-র সাথে যে ভাবেই হোক সম্পর্ক স্থাপন করতেই হবে। কিভাবে ওনার সাথে যোগাযোগ স্থাপন করবো? যে মহামূল্যবান তথ্যটি জমা করেছি সেটি বুকে নিয়ে বসে থাকতে পারি না। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তা রাজশ্রেষ্ঠ-র কাছে পৌঁছে দিতে হবে, তা না হলে রাজ্যের আরও বিপুল ক্ষতি হবে, আরও অনেক প্রাণ চলে যাবে। শূন্য দৃষ্টিতে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইল পদ্মবীণা।

দুপুরে হঠাৎ নর-কপালধারী কাপালিক কাপট্যকানাতের গান আর ঢোলের ঠাপ পদ্মবীণা-র কানে ভেসে এলো। শ্মশানবাসী কাপালিক কাপট্যকানাত অশান্ত নগরীর মাঝে গলায় ঢোল নিয়ে হরি কীর্তন করতে, নগর ভ্রমণে বেরিয়েছে। তার হাতে-পায়ে ঘুঙুর বাঁধা। গান-বাজনা আর পায়ের তাল সব এক সাথেই চলছে। ঘুঙুরের সাথে সাথে দুই হাতে দুই পায়ে আছে মোটা রূপার কড়া। মাথায় মস্ত জটা। শরীরের গঠন এমন যেন একটি হৃষ্ট-পুষ্ট নিরেট বাদামী শিলাখণ্ড - এক ধাক্কায় ভেঙে ফেলতে পারে যে কোন প্রাচীর। গা থেকে ম-ম করে ছড়িয়ে পড়ছে সিদ্ধি আর মদিরার উগ্র গন্ধ। নেশার ঘোরে সোজা হয়ে দু-দণ্ড দাঁড়াতেই পারছে না। তার লাল চোখের গা ছম-ছম করা চাহনি দেখে যে কেউ ঘাবড়ে যেতে পারে।

নগরের এক প্রান্তে শ্মশান। এই শ্মশানেই একটি বদরিকার পাশে একটি বিশাল গুলঞ্চ লতার নীচে তার ছোট্ট কুঠির। তাতে রাত দিন নিজের তান্ত্রিক সাধনা নিয়ে পড়ে থাকে নর-কপালধারী কাপালিক কাপট্যকানাত। সে দিকে সাধারণ প্রজা ভয়েও পা মারায় না। কখনো কখনো লাল কৌপিনধারী উগ্র সাধকদের আনাগোনা দূর থেকে দেখা যায় ঐ শ্মশানে, কাপট্যকানাতের কাছে। তাদের দেখলেই আঁখি আপনি মুদে আসে ভয়ে। সাধকের চেয়েও তাদের ডাকাত বলে মনে হয় বেশী। সময়ে অসময়ে, যখন তখন মাতাল অবস্থায় তার আনন্ধ, তার ঢোল গলায় ঝুলিয়ে বেরিয়ে পরে কাপট্যকানাত। হরি নাম করতে করতে তার মত করে ঘুরে বেড়ায় সারা নগর, বন জঙ্গল, গলিঘুঁজি, অলি গলি। জানা অজানা সমস্ত প্রান্তেই তার সমান যাতায়াত।

আজ সকালে তারই কোলে এসে বসে একটি সাদা গিরিবাজ। তার কিছুক্ষণের মধ্যেই সে ঢোল কাঁধে নিয়ে অদ্ভুত এক গান ও তাল শুরু করে বেরিয়ে পড়ল। তবে এই গান আর তাল মোটেই সাধারণ নয়। গানের সুরে আর ঢোলের তালে লুকিয়ে রইল অনেক ইঙ্গিত। গান আর তালের মাঝে স্পষ্ট ভেসে ভেসে আসতে লাগল অনেক গোপন বার্তা। এসব যার বুঝার সেইই বুঝে। এবারও যার বুঝার সেইই বুঝল, সাধারণে কিছুই বুঝল না। মহা খুশিতে প্রায় লাফিয়ে উঠল পদ্মবীণা। সকল দুশ্চিন্তা চোখের পলকে তার শরীর-মন থেকে পালিয়ে গেল। একটি পাত্রে কিছু ফল-মুল নিয়ে দ্রুত পায়ে সে নগরের পথে বেরিয়ে এলো। কাপট্যকানাত যেন তার খুঁজেই বেরিয়ে ছিল। পদ্মবীণা ষষ্ঠাঙ্গে কাপট্যকানাতকে প্রণাম করতেই চটকরে গান-বাজনা সব থেমে গেল। মন্ত্রের মত সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে গেল কাপট্যকানাত। ষষ্ঠাঙ্গে প্রণাম সেরে দু হাত জুড়ে পদ্মবীণা বলল - বাবা, একটু আশীর্বাদ করুন।!
কাপট্যকানাত ভাল করে একটু তাকিয়ে দেখল পদ্মবীণাকে। তারপর আকাশের দিকে মুখ তুলে নিজের ভ্রু-র মধ্যে নয়নতারা স্থাপন করল, খনখনে গলায় বলল - " সন্ধ্যার পরের দ্বিতীয় প্রহরে দক্ষিণ আকাশে যদি ধ্রুব তারা থাকে তবে তুই মৃত, বিপদ। নয়তো সব উল্টা।"
এই বলেই পদ্মবীণা-র হাত থেকে খাবারের থালির সব ফল-মুল নিজের ঝোলাতে ঢেলে নিল। তার গানের বোল, ঢোলের ঠাপ সব এবার পাল্টে গেল। নতুন গান শুরু করে হেলে দুলে পথ চলতে শুরু করল সে।

কাপট্যকানাতের কথা শুনার পর একটি আনন্দ লহরী বয়ে যেতে লাগল পদ্মবীণার মনে। একটি খুশি ঝিলিক মেরে দেখা দিয়েই নিমিষে আবার মিলিয়ে গেল পদ্মবীণা-র চোখে। বুঝতে কিছুই আর বাকী রইল না তার। রাজশ্রেষ্ঠ-র খবর অতি সংগোপনে এসে গেছে তার কাছে। দক্ষিণ আকাশে ধ্রুব তারা কখনো কী থাকে? এ তো এক মাতাল পাগলের প্রলাপ। কিন্তু না! যে সমাচারটি এই মাত্র প্রদান করা হল তার মর্ম বুঝতে পদ্মবীণা-র কোন অসুবিধা হল না। কাপট্যকানাতের শেষ কথাটির গুরুত্বই সবচেয়ে বেশী। ' সব কিছু উল্টা ।' কী কী উল্টা? সন্ধ্যার পরের দ্বিতীয় প্রহর, দক্ষিণ আকাশ, মৃত, বিপদ। এই গুলিকে উল্টা করলে দাঁড়ায়, ভোরর আগের দ্বিতীয় প্রহর, উত্তর আকাশ, জীবিত, নিরাপদ। সংকেতের দিন-ক্ষণ-স্থান, রাজার সমাচার কিছুই বলতে-বুঝাতে-বুঝতে আর বাকী রইল না। এক পলকে শুধু দুই পঙক্তিতে দুই দিনের ইতিহাস বর্ণনা করে কাপট্যকানাত তার মতন করে চলে গেল। কোথা থেকে সে শিখল এমন বিদ্যা?

আজ সন্ধ্যা রাতেই ঘুমিয়ে পড়ল পদ্মবীণা। নিশ্চিন্তের গভীর ঘুম। ঘরের এক কোনে মিন মিন করে জ্বলছে ঘি ভরা রূপার প্রদীপ। রাত আড়াই প্রহর তখনো বাকী। ধপ্ করে চোখ মেলল পদ্মবীণা। বিছানা থেকেই জানালা দিয়ে পরিষ্কার আকাশের দিকে একবার তাকাল। তারপরর চুপচাপ অতি সহজ ভাবে উঠে গেল প্রাসাদ ছাদে। দূরের তারারা যেন আজ অনেক কথা বলতে চায়। বুক তার ধুর-ধুর করছে। কী সংকেত আসবে কে জানে?

ও দিকে গভীর অরণ্যে নিজের কুঠিরে কয়েকজনের সাথে ধনুক বাণ নিয়ে বসে প্রস্তুত হতে লাগল সুধামেল। ঘি-র সাথে মিশিয়ে নিল দুই তিন রকমের বনো পাতার রস। এক ফালি পাতলা কাপড়ে সেই ঘি মিশিয়ে তা একটি তীরে জড়িয়ে শক্ত করে বেঁধে দিল। অন্য চার পাঁচটি তীরের মাথায় শক্ত করে বেঁধে দিল বকুল দানার মত ছোট ছোট পুটলি। প্রস্তুতি শেষ করে সেই ধনুক বাণ হাতে নিয়ে আধার রাতে বনের একটি বড় শিলাখণ্ডের উপর দাঁড়াল ওরা। একটি মশাল এক দেহরক্ষীর হাতে টিম-টিম করে জ্বলছে। যথা সময়ে চারিদিকে একবার তাকিয়ে ঘি মাখানো তীরটি ধনুকে লাগিয়ে, ছিলা টেনে ধরে, মশালের আগুনের দিকে তা বাড়িয়ে দিল সুধামেল। আগুন লাগতেই ধপ-ধপ করে জ্বলে উঠল তীরটি। একটুও দেরী না করে সুধামেল সেটি ছুড়ে দিল আকাশে। বাকীরা তৈরিই ছিল। আনীল আগুন ঠোঁটে নিয়ে তীরটি উল্কার মত ছুটতে লাগল - যেন একটি অগ্নিমুখী সিন্ধুঘোটক। আর সেই তীরটির পিছু পিছু ছুটল আরও কয়েকটি তীর। নির্দিষ্ট উচ্চতায় সেই পুটলি মাখানো তীরগুলি অব্যর্থ লক্ষ্যে একে একে এসে আঘাত করতে লাগল আনীল তীরটিকে। আর প্রতি আঘাতেই ক্ষণিকের আগুনের ঝর্না তৈরি হতে লাগল - ছড়িয়ে পড়তে লাগল অন্ধকার আকাশে। যেন অন্তরিক্ষের আলোর মৌমাছিরা ছুটে যাচ্ছে আধার আকাশে। বহু দূর থেকে তা স্পষ্ট দেখা যেতে লাগল।

রাজধানীতে নিজ প্রাসাদের ছাদ থেকে এক গুপ্তচর এই সংকেত পেয়ে মনে মনে অতি প্রসন্ন হয়ে উঠল। রাস্তা পরিষ্কার, নিরাপদ। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রাজশ্রেষ্ঠ-র সাথে দেখা করতে হবে। নাহ্ - আর দেরী করা যায় না। আজ রাতেই বেড়িয়ে পড়তে হবে। কয়েক মুহূর্তেই নিজেকে তৈরি করে নিল পদ্মবীণা। প্রয়োজনীয় কিছু খাবার, কয়েকটি গুপ্ত হাতিয়ার আর নিজের তলোয়ারটি হাতে নিয়ে সেই আধারেই বেড়িয়ে পড়ল সে। দাসীর কাছে সমাচার রেখে গেল - এক আত্মীয় ঘোর অসুস্থ, মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী। তাকে দেখতে যাচ্ছি। আসতে কয়েকদিন সময় লাগবে। তবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ফিরে আসব। কেউ খোঁজ করলে এ সমাচার যেন দিয়ে দেওয়া হয়।

পরদিন ভোর হতেই একটি গিরিবাজ নতুন সমাচার নিয়ে উড়ে গেল আকাশে।
Next Part

Previous Parts: 1st Part    2nd Part   


## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers. The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation. Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##


◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717
All Bengali Stories    22    23    24    25    26    27    (28)