Home   |   About   |   Terms   |   Contact    
RiyaButu
A platform for writers

দেহরক্ষী


বাংলা উপন্যাস


All Bengali Stories    22    23    24    25    26    27    (28)     29      

-হরপ্রসাদ সরকার, ধলেশ্বর - ১৩, আগরতলা, ত্রিপুরা ( পশ্চিম )

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ আমাদের এই ওয়েবসাইট ( RiyaButu.com )-এ প্রকাশিত গল্পগুলির মধ্যে থেকে কিছু গল্প নিয়ে এবছরই প্রকাশিত হবে আমাদের 'রিয়াবুটু'র গল্প'।
--------------------------

দেহরক্ষী
( বাংলা উপন্যাস )
- হরপ্রসাদ সরকার, আগরতলা, ত্রিপুরা

◕ ১ম পর্ব

অলোল খুব শৌখিন যুবক। কিন্তু খুব চুপ-চাপ, ধীর স্থির। তবে তার চোখে-মুখে এক সুপ্ত আগ্নেয়গিরির ছাপ। কথা কম বললেও, যা বলে তা এড়িয়ে যাবার মত নয়। অফিসের বা আশেপাশের লোকদের সাথে সে খুব একটা মেলামেশা করে না। তবে সে অসামাজিক নয় - সব সময়ই পড়াশুনা নিয়ে ব্যস্ত থাকে। কী যেন পড়ে? কি যেন লেখে? কি যেন ভাবে? কোথায় যেন হারিয়ে যায়!

এই অলোল মনে মনে বহুদিন থেকেই একটা সুন্দর ফুলদানি খুঁজছিল। কিন্তু পাচ্ছিল না। অনেক মেলা, হাট -বাজার ঘুরেও তার মনের মত ফুলদানিটি মিলছিল না। অফিস-অনুষ্ঠান, সভা - মিটিং, যেখানেই সে গেছে সেখানেই চারিপাশে চোখ ফিরিয়ে দেখেছে সেই ফুলদানিটির মত ফুলদানি দেখা যায় কিনা- যেমনটা সে ঐ বইটাতে পড়েছে। কিন্তু না চোখে পড়েনি। যে ফুলদানির রং হবে ফুলকচি শসার মত। তাতে বৈশাখী পূর্ণিমার চাঁদ উঠে থাকবে। আলোক-আধারিতে মিশে গিয়ে হাল্কা নীল ঝিলের ঝাউ গাছগুলি ঝড়ো হাওয়ায় একপাশে হেলে থাকবে। এমন সেই ফুলদানি যার দিকে একবার চাইলে আর চট্ করে চোখ ফিরানো যাবে না। কোথায় পাওয়া যাবে এমন সখের ফুলদানি যা কিনা অলোলের সাথে কথা বলবে?

না বহুদিন এমন ফুলদানি তার চোখে পড়েনি। না পড়ারই কথা। এটা তো আর আট-দশটা ফুলদানির মত ফুলদানি নয়। এই ফুলদানি কয়েকশ বছরেও নষ্ট হবে না। হাজার বছর পরেও হয়তো তেমনি থাকবে। কি আছে সেই ফুলদানিতে?

একদিন অফিস থেকে ফেরার পথে এক পুরাণ মাল-পত্রের দোকানে রাখা একটা ফুলদানির দিকে অলোলের নজর পড়ল। ফুলদানিটি দেখে সে আর চোখ ফেরাতে পারল না। মনে হচ্ছিল তার স্বপ্নের ফুলদানিটি যেন এই ফুলদানিটির সাথে মিশে গেছে। এত সুন্দর তার রূপ, চোখ ধাঁধায়ে যাচ্ছে। ফুলদানিটি যেন ইশারায় অলোলের সাথে কথা বলতে চাইছে। অলোল সাইকেল থেকে নেমে পড়ল। কিছুক্ষণ সেই ফুলদানিটির দিকে ঠায় তাকিয়ে রইল। না এর টান কাটানো সম্ভব হচ্ছে না। এটিই সেই ফুলদানিটি নয়তো? ধুক করে উঠল অলোলের বুকটা। দোকানের সামনে সাইকেল দাঁড় করিয়ে ফুলদানিটি হাতে নিয়ে সে উল্টে পাল্টে দেখতে লাগল। এটা মোটেই কাঁচের তৈরি নয়, আবার চিনামাটির তৈরিও নয়। মনে হয় হাত থেকে পড়লে এখুনি ভেঙে যাব। কিন্তু যেমন ধাতু দিয়ে তা তৈরি মনে হয় না সহজে তা ভেঙে যাবে। অলোল কোন রিক্স নিতে চাইল না। হতে পারে এই ফুলদানিটিই সেই ফুলদানি! কারণ বইটির সেই বর্ণনার সাথে এর সব কিছুই মিলে যাচ্ছে। সে দোকানদারের কাছে এই ফুলদানিটি সম্পর্কে জানতে চাইল।

দোকানদার বলল - এই কিছুক্ষণ আগে একটা বাড়ি থেকে কিছু পুরাণ মালপত্র কিনে আনলাম। শুনেছি এক আমলে তাদের সাথে নাকি ত্রিপুরার রাজবংশের কোন লেস-ফেস যোগ ছিল। সে কয়েকশ বছর আগের কথা। এখন সে সব আর কিছু নেই। এখন ঐ বাড়ীর একজন স্কুলের মাষ্টার আরেকজন মুদি-মালের ব্যবসা করে। কোন ভাবে সংসারটা টিকিয়ে রাখল আরকি। তা এই ফুলদানিটির তো বেশ ওজন - তাই পিতল ভেবে কিনে নিয়ে এলাম। দেখতেও তো বেশ সুন্দর। কিন্তু এখন তো দেখছি খুব ঠকেছি। এটা মোটেই পিতলের না। মনে হচ্ছে চিনামাটির। তা আপনি কিনতে চাইলে আমি কিন্তু পিতলের দামটাই রাখবো - না হলে যে আমার খুব লোকসান হয়ে যাবে।

অলোল ধীরে বলল - ঠিক আছে - ঠিক আছে! তুমি তোমার দাম বল - আমি দিয়ে দিচ্ছি।

দোকানদার যা দাম চাইল অলোল বিনা বাক্যে তা মিটিয়ে দিয়ে খুশি খুশি ফুলদানিটি বাড়ি নিয়ে এলো। এসেই বইটি খুলে বসল। খুব পুরানো বই। বইটির বয়স কী কয়েকশ বছর হবে? না! আরও বেশী। হাজার, দের-হাজার বছরের পুরানো তো হবেই কিংবা আরও পুরানোও হতে পারে। তাল পাতা আর শাল পাতার বই। বইটির ইতিহাস না হয় পড়ে পাঠককে বলব। তবে এই বইটিতে ফুলদানির যা বর্ণনা আছে তা অক্ষরে অক্ষরে মিলে যাচ্ছে নতুন ফুলদানিটির সাথে। খুশি আর আনন্দে অলোল মহা উত্তেজিত হয়ে উঠল। একটা দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে এল অলোলের বুক থেকে। অন্তহীন এক খোঁজের আজ পরিসমাপ্তি ঘটল। বহুদিন পর সে আজ খুব শান্তিতে ঘুমাতে পারবে। একটা দীর্ঘ দিনের ইচ্ছা আজ তার পূরণ হল।

এবার অলোলের ঘরটি সম্পর্কে একটু বলি। অলোলের ছোট্ট ঘরটি খুবই সুন্দর সাজানো গোছানো। ঘরটির এক পাশে একটা মাঝারি ধরনের কাঠের আলমারি আছে। অলোল তার উপরই তার সখের ফুলদানিটিকে রাখল। আলমারিটি এই মোটা মোটা বই দিয়ে ঠাসা। সামান্য কেরানির চাকরি করে অলোল। তবে পড়া শুনে নিয়ে তার উৎসাহের কোন কমতি নাই। দিন রাত নানান বিষয় নিয়ে পড়াশুনা করে।

অলোলের মা-বাবা, ভাই-বোন আছে কি নাই- কেউ জানে না। সে একাই এক কামরার ঘরটিতে থাকে। কিন্তু ঘরটি এমন ভাবে সাজানো যেন সেকালের খুব আমির এক রাজকর্মচারীর বৈঠকখানা। তাতে খুব একটা আহামরি দামের কিছু নেই বটে তবে যা আছে তা নিশ্চয়ই অতি সাধারণ নয়। হাত বাড়ালেই সহজে এই সব জিনিস বাজারে পাওয়া যাবে না। এই জিনিসগুলির মধ্যেই ছিল একটি ছুরি। গোপনে সে কোন এক চোরা কারবারি কাছ থেকে এটি কিনেছিল। হাতের তালুর মধ্যে তা অতি সহজেই রাখা যায় এবং হাতের তালুর মধ্যে তা রেখে দিলে - বাইরে থেকে কেউ টেরই পাবে না। এটি নাকি কোন আমলের কোনও এক মনিপুরী রাজার ছুরি। এই ছুরিটির বিশাল এক ইতিহাস। হাতে নিলেই বুঝা যায় এই ছুরি সাধারণ ছুরি নয়। সাংঘাতিক একটা মারণাস্ত্র। তবে বহু পুরানো - কমপক্ষে দুই - আড়াই হাজার বছরের পুরানো তো হবেই। কিন্তু এত দিন পরেও তার জৌলুস যেন কিছুই কমেনি - যেন ঠিক আগের মতই আছে। ধার এখনো এমন তেজ যে, যে কোন মুহূর্তে চাইলেই শেষ করে দিতে পারে একটা তাজা প্রাণ। এটি হাতে নিলে বুকের রক্তটা হঠাৎ থমকে উঠে। এ কী আর যেমন তেমন ছুরি?

এই ছুরিটি নাকি ছিল মনিপুরের রাজার গোপন হাতিয়ার। এটা সব সময়ই উনার কোমরে থাকত। একবার ব্রহ্মদেশ থেকে আসা এক বিদেশী, অকচ রাজার আক্রমণে, যুদ্ধে হেরে গিয়ে সে রাজা গোপন পথে সস্ত্রীক রাজপ্রাসাদ থেকে পালিয়ে যেতে লাগলেন। প্রায় আড়াই ক্রোশ লম্বা সেই অন্ধকার গুহার মধ্য দিয়ে বিশ জন মহা-পরাক্রমী, নিষ্ঠাবান, ক্ষিপ্র, সাহসী আর বলবান দেহরক্ষীরা রাজা-রানীকে সাথে নিয়ে হাওয়ার বেগে ঘোড়া ছুটিয়ে দিল। ক্ষীণ মশালের আলোতে দেহরক্ষীদের হাতের উদ্ধত তলোয়ারগুলি ঝিলিক মেরে উঠছিল। এ ছিল জীবন-মরণের লড়াই। যে কোন মুহূর্তে যে কোন রকমের অপ্রিয় ঘটনা ঘটে যেতে পারে। এই দেহরক্ষীরা যেন যেকোনো ঘটনার জন্য তৈরি হয়েই আছে। হয় প্রাণ দিতে হবে নয় প্রাণ নিতে হবে। তবে সব কিছুর বিনিময়ে রাজা-রানীকে বাঁচাতেই হবে। হয় নিজের প্রাণ দিয়ে নয় হাজার প্রাণ নিয়ে। ঘোড়ার বেগের মতই তাদের শরীরের রক্ত দৌড়াতে লাগল। চোখে বিজলীর আগুন, শ্বাসে ঝড়ের গতি, হাতের মুঠায় বজ্রের মত ধরে থাকা তলোয়ার। শুধু তুফানের প্রতীক্ষা। হয় সব শেষ নয় আবার সব শুরু।

কিন্তু বিশ্বাসঘাতকতার পরিণামে পেছন থেকে আচমকা ধেয়ে আসতে শুরু করল শত্রু পক্ষের সেনারা। তাদের ঘোড়ার পায়ের শব্দ আর প্রচণ্ড চিৎকারে সেই অন্ধকার গোপন পথের অনন্ত গোপনীয়তার আধার যেন খান খান হয়ে যেতে লাগল। কিন্তু যেমনই হোক, অচেনা এক নতুন পথে কাউকে ধাওয়া করা এত সহজ মোটেই নয়। তাও আবার এমন কুচকুচে অন্ধকারে? অবশ্যই কেউ তাদের পথ দেখিয়ে নিয়ে আসছে? কে তাদের পথ চিনিয়ে নিয়ে আসছে? নিশ্চয়ই সেই বিশ্বাসঘাতক! এ কথা বুঝতে আর কারো বাকি রইল না। এরই মাঝে দেহরক্ষীদের মধ্য থেকে কে যেন একটি তীক্ষ্ণ সুরে শিষ দিয়ে উঠল। সাথে সাথেই রাজার ক্ষুরধার দেহরক্ষীরা সেই হাওয়ার বেগে চলতে চলতেই চোখের পলকে, এই নিমিষে তাদের পরিকল্পনা বদলে ফেলল। সেই ক্ষণ থেকেই শুরু হয়ে গেল নতুন পরিকল্পনা।

তীব্র বেগে চলতে থাকা ঘোড়াগুলির উপর বসেই সব মশালগুলিকে মাটির সাথে ঘষে নিবিয়ে ফেলা হল। মশালগুলি নিভে যেতেই চারিদিকে শুধু কুচকুচে অন্ধকার। কিছুই দেখা যাচ্ছে না। এমন অন্ধকারেও কিন্তু ঘোড়া গতিবেগ মোটেই কমল না - তেমনি রইল। এই না হলে দেহরক্ষী! বিড়ালের মত তীক্ষ্ণ তাদের দৃষ্টি। এরা যেন আধারের মাঝেও সব কিছু দিনের আলোর মত দেখতে পায়। রাজা নিজের মুকুটটি খুলে দিলেন এক দেহরক্ষীর হাতে। তেমনি রানীও তার মুকুটটি খুলে দিলেন আরেক দেহরক্ষীর হাতে। আর সাথে সাথে দুই ভাগে ভাগ হয়ে গেল সেই বিশ জনের দলটি আর ভিন্ন দুটি পথে চলতে লাগল। একদলে থাকল রাজা-রানী আর অন্য দলে রাজার মুকুটটি পরে এক নকল রাজা। অন্ধকারে যে কেউই তাকে রাজা বলেই ভুল করবে। সোজা পথে না গিয়ে আসল রাজা-রানীকে নিয়ে সেই দেহরক্ষী দলটি একটি গোপন প্রকোষ্ঠের ভিতর দিয়ে অন্য আরেকটি গোপন পথে বিদ্যুৎ বেগে ছুটল। এ যেন গোপন পথের ভিতরেই গোপন পথ। দেহরক্ষীদের চোখে আগুনের হুঙ্কার। আজ তাদের কাঁধে এক বজ্র-সম দায়িত্ব, এক হার-জিতের ভার, সারা রাজ্যের জয়-পরাজয়ের ভার, মান অপমানের ভার, নিজেদের পরিচয় দেবার ভার। অন্ধকার ভেদ করে আট -দশ জনের দলটি তীরের মত ছুটে চলল। সেই মরণ বাঁচনের উন্মাদ মুহূর্তে রাজা তার কোমর থেকে গোপন ছুরিটি বের করে রানীর হাতে দিয়েছিলেন যদি রানীর আত্মরক্ষার কাজে লাগে।

অপর দিকে সেই নকল রাজার দলটি কিছুদূর গিয়ে তাদের গতি ধীর করে দিল। দুটি মশালও জ্বলে উঠল। যেন শত্রুরা বুঝতে পারে এই পথেই রাজা যাচ্ছে আবার নকল রাজাকে তারা চিনতেও না পারে। কিছুক্ষণের মধ্যেই শত্রু দলটির আভাষ পাওয়া গেল। পরিকল্পনা কড়াই গণ্ডাতে কাজ হয়েছে। শত্রুর দলটি আরও একটু কাছে আসতেই সেই বিশ্বাসঘাতকে চিনতে আর দেরী হল না দেহরক্ষীদের। সেইই শত্রুর দলটিকে পথ চিনিয়ে নিয়ে আসছিল। কি হল কি, কিছু বুঝার আগেই হাওয়ার মাঝ থেকে একটি তীর এসে সেই বিশ্বাসঘাতকের গলা চিড়ে এফোঁড়-ওফোঁড় করে দিল। হেঁ-ৎ শব্দ করে সেই বিশ্বাসঘাতকটি পড়ে গেল ঘোড়া থেকে ধুলার মাঝে। এক বাণেই কুচুৎ করে কেটে গেল সে - একটা চীৎকার ও দিতে পারল না। তার উপর দিয়ে তাকে বর্তা বানিয়ে চলে গেল পিছনের ঘোড়াগুলি। সেই তীব্র বেগে নিজেদের সামলানো কঠিন ছিল।

কে চালাল তীর? কোথা থেকে এলো? কেউ বুঝতেই পারল না। যেন গুহার আধারের কুজ-ঝটিকা ঢেকে রাখল সকল রহস্য। শুধু সেই দেহরক্ষী দলটি জানত তারা তাদের পরিকল্পনায় সম্পূর্ণ সফল। চোখের পলকে তারা নিজেদের মশালগুলি নিবিয়ে আবার আঁধির বেগে ছুটতে লাগল। যেন এক তুফান ধেয়ে যাচ্ছে। ভুতের মত তারা সেই গুহার আধারে মিলিয়ে গেল। খুব শীঘ্রই গোপন পথের অন্তিম প্রান্তে, দুটি দল আবার এক জায়গায় মিলিত হল। নির্বিঘ্নে ওরা গুহা থেকে বের হয়ে রাজাকে সাথে নিয়ে গভীর অন্ধকারে সেই গভীর পাহাড়ি জঙ্গলে গা ঢাকা দিল। অন্ধকার গুহায় অনেক চেষ্টা করেও শত্রু সেনারা আর এগোতে পারল না। এ যেন এক ভুল-ভুলাইয়া। একে তো নতুন জায়গা, গোপন পথ তার উপর এমন অন্ধকার রাত। তারা কিছুক্ষণের মধ্যেই পথ হারিয়ে ফেলল। সেই গোপন গুহাতে এমনই ভেলকির পথ, এমনি ভুল-ভুলাইয়ার মায়া যে, কোন পথে এত দূর পর্যন্ত এসেছে তাইই তারা আর খুঁজে পেল না। এগিয়ে যাবার চিন্তা ছেড়ে এবার তারা ফিরে যাবার পথ খুঁজতে লাগল।

শত্রু এই গোপন গুহা পথের সন্ধান পেয়ে গেছে। তারা নিশ্চয়ই দিনের আলোকে এর খুঁটিনাটি খোঁজে বের করবে। আর এই ভেলকির পথ বের করে যদি শত্রু এই বনে উঠে আসে তখন আর সামলানো যাবে না। তাই বিশ্বাসঘাতকের মৃত্যুর পর যখন শত্রু সেনারা গুহার ভিতর পথ হারিয়ে ফেলল আর অপর দলটি এসে গুহার মুখে রাজার দলের সাথে যোগ দিল তখন সুধামেল-র নির্দেশে আশুদাস গুহামুখের একটি বড় পাথরকে কয়েক চক্কর ঘোরাতেই গুহার মুখের ছাদ হতে একটা বড় পাথর বিকট আওয়াজে নিচে পরে গেল। আর দেখতে দেখতে অনেক অনেক দূর পর্যন্ত সমগ্র গুহাটা মাটিতে চাপা পড়ে গেল। গুহার ভিতরে কেউ আর জীবিত রইল না। নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল গুহা। উপরের পাহাড়-জঙ্গল সব ছিন্ন ভিন্ন হয়ে গেল। যেন কেউ মহানন্দ, মহা-উন্মাদে এখানে প্রলয় নৃত্য করে গেছে। গুহা বা সেই গোপন পথের কোন চিহ্নমাত্র আর থাকল না।

বিনা রক্তপাতে এত বড় দায়িত্ব, এত বড় পরিকল্পনাকে যে সফল করল সে আর কেহ নয় রাজার ছায়া সঙ্গী, রাজার প্রধান দেহরক্ষী সুধামেল। তার অদম্য সাহস, প্রখর বুদ্ধি, দূরদর্শিতা আর ক্ষিপ্ততায় আজ রাজা-রানী বেঁচে গেলেন এবং নিরাপদে থাকলেন। পাশাপাশি এক বিশ্বাসঘাতকের সমুচিত শাস্তি হল। কোথা থেকে পেল সুধামেল এত পরাক্রম, এত সাহস, এমন বুদ্ধিমত্তা আর এমন ক্ষিপ্ততা? সুধামেলের প্রতি অতি প্রসন্ন হয়ে রানী নিজের সেই ছুরিখানি সুধামেলের হাতে তুলে দিয়ে বললেন, "সুধামেল, তুমি সাথে থাকলে আর এটার কোন দরকার হবে না। আর তুমি না থাকলে এটা থাকা আর না থাকা সমান। রইল আমার আত্মরক্ষার কথা - সে আমি আমার হাতের আংটির বিষ দিয়েও করতে পারব।"

সুধামেল নতজানু হয়ে রানীর হাত থেকে সেই ছুরিটি উপহার নিল, বলল - "আপনার এই উপহার পেয়ে আজ আমি ধন্য মহারানী। আমার বংশ -আমার পূর্বপুরুষেরা সবাই আজ নিজেদের ধন্য মনে করবে। আমি আমার বংশের মুখ রক্ষা করতে পেরেছি। আজ যে আমার গর্বের দিন। তবে এ সফলতা আমার একার নয়। এ যে আমার সব সহযোগীদের দক্ষতায় সম্পূর্ণ হয়েছে - যারা নিজের জীবন বিপন্ন করে এই মহান কার্যে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। তাদের সেই সাহসিকতাকে, সেই পরাক্রমকে, সেই দেশপ্রেমকে আমি প্রণাম করি। দেশবাসী জানুক বা নাই জানুক কিন্তু দেশমাতা তাদের কথা কখনোই ভুলবে না।"

এই কথা শুনে রাজা সুধামেলকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন আর বললেন - "মহারানী একদম ঠিক কথাই বলেছেন। ওটাই আমার মনের কথা। তুমি যতক্ষণ পাশে থাকবে ততক্ষণ সেই ছুরিটি থাকা আর না থাকা সমান। তুমি পাশে থাকলে সবই সম্ভব। তোমরাই দেশের গর্ব - তবে এখন কাজ আরও কঠিন, কঠোর হয়ে গেল। আমরা এভাবে লুকিয়ে বসে থাকতে পারি না। এখন আমাদের পরের পরিকল্পনা নিয়ে ভাবতে হবে। কারণ আমারা পরাক্রমে কোন ভাবেই শত্রু পক্ষ থেকে কম নই বরং তাদের থেকে উৎকৃষ্ট। তবু হেরে গেলাম শুধু কিছু বিশ্বাসঘাতকদের কারণে। সেই বিশ্বাসঘাতকরা সংখ্যায় কমও মনে হয় না। তাদের আগে খুঁজে বের করাই হবে প্রথম কাজ। তারপর তাদের শাস্তি দিয়ে তবে দেশ স্বাধীনতার কাজ আরম্ভ করতে হবে - না হলে আবার এই পরিণতিই হবে। তোমরা পাশে থাকলে সব কিছুই আমরা করতে পারব। সবাই সবার দায়িত্ব সঠিক পালন করলে দেখতে দেখতে হয়ে যাবে।"

সবাই মাথা নেড়ে সম্মতি জানাল। আর সাথেই গুপ্ত বৈঠকে বিশ্বাসঘাতকদের খুঁজ বের করার পরিকল্পনার কাজ শুরু হয়ে গেল।

Next Part


## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers. The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation. Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##


◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717
All Bengali Stories    22    23    24    25    26    27    (28)     29