Home   |   About   |   Terms   |   Library   |   Contact    
A platform for writers

ব্যবসায়ী মগনলাল

-হরপ্রসাদ সরকার, ধলেশ্বর - ১৩, আগরতলা, ত্রিপুরা

All Pages   ◍    3    4    5    6    (7)     8    9    10    ...

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ আমাদের এই ওয়েবসাইট ( RiyaButu.com )-এ প্রকাশিত গল্পগুলির মধ্যে থেকে কিছু গল্প নিয়ে এবছরই প্রকাশিত হবে আমাদের 'রিয়াবুটু'র গল্প'।
--------------------------



এক গ্রামের কথা। মগনলালের বাবা দিনমজুর। দিন আনে দিন খায়। মগনলাল যখন ছোট তখন থেকেই সে পাশের দোকানটাকে ভালবাসত। সময় অসময়ে সেই দোকানের পাশে বসে থাকত। বাড়িতে এসে মাটি,ফুল দিয়ে একা একাই দোকান-দোকান খেলত। পড়াশুনা তার একদম ভাল লাগত না। সবাই স্কুলে যায়, তাই সেও স্কুলে যেত। কিন্তু স্কুলের বাইরের আচার, চানাচুর নিয়ে বসে থাকা লোকদের সাথেই সে বসে থাকত। এতে তার মজা লাগত খুব। এই ঘটনাটা তার এক শিক্ষক ঠিক লক্ষ্য করলেন। তিনি একদিন মগনলালকে কাছে ডেকে বললেন “মগনলাল, তুমি সবসময় তাদের কাছে গিয়ে বসে থাক কেন?”

ছোট্ট মগনলাল মহা-উৎসাহে উওর দিল “স্যার, আমি বড় হয়ে তাদের মতই হতে চাই। তাদের মতই আচার, বাদাম বেচতে চাই।”
শিক্ষক একটু হাসলেন বললেন “সে তো খুব ভাল কথা। মানে তুমি বড় হয়ে ব্যবসায়ী হবে। কোন কাজই ছোট নয়, কিন্তু তুমি আচার কেন বেচবে? এ তো এক সামান্য দিনমজুরের কাজ। তুমি বড় হয়ে এই বড় বড় জিনিস বেচবে। দেশ-বিদেশে, দুর-দূরান্তে তোমার মালপত্র বেচবে। অনেক লোক তোমার সাথে কাজ করবে। সেই রকম বড় ব্যবসা করবে। আর সে রকম ব্যবসা করতে হলে পড়াশুনার ও দরকার হয়।”

স্যারের কথা মগনলানের খুব ভাল লাগল। সে একটু এগিয়ে এসে বলল “ স্যার! সে রকম বড় ব্যবসা করতে তো অনেক টাকার দরকার?”
স্যার হেসে বললেন “মগনলাল, ব্যবসা শুধু টাকা দিয়ে হয় না। ব্যবসা হয় বুদ্ধি দিয়ে।” স্যারের এই কথাটা মগনলালের মন-মগজের প্রদীপকে যেন জ্বেলে দিল।

স্যারের কথাতে কাজ হল, মগনলাল নিজে থেকেই ভাল ব্যবসায়ী হওয়ার লক্ষ্যে ভাল পড়াশুনা করতে লাগল। স্যারের সেই কথাটা যেন তার কাছে গুরুমন্ত্র হয়ে গেল “ব্যবসা শুধু টাকা দিয়ে হয় না। ব্যবসা বুদ্ধি দিয়ে হয়।” যেমন-যেমন মগনলাল বড় হতে থাকল তার পড়াশুনাও ভাল চলতে লাগল। পাশাপাশি তার ব্যবসাও। কেমন ব্যবসা?

সে গ্রামের অন্য ছেলেদের মত মাঠে ঘাটে ঘুরে বেড়াত না। পড়ার শেষে সে কখনো এক চায়ের দোকানে গিয়ে কাজ করত। কখনো মুদির দোকানে কাজ করত। কখনো হাটের দিনে চানাচুর ওয়ালার পাশে বসে তার পুটলি বানিয়ে দিত। বিনা পয়সায় এক ভাল, ইমানদার, বুদ্ধিমান কাজের লোক পাওয়া গেলে আর কেহই বা মানা করত। তবে সবার সাথেই তার একই শর্ত থাকত, বাইরে থেকে কোন কিছু আনতে হলে মগনলালকেই পাঠাতে হবে। এতে বিনা পয়সায় দোকানদারদের এক মুটে ও জুটে যেত। মগনলাল সব কাজ নিজের মনে করে অতি উৎসাহে করত। কারণ তার লক্ষ্য ছিল ব্যবসা শিখা। ধীরে ধীরে সে জেনে গেল কোন জিনিসটা কোথায় সস্তায় পাওয়া যায়, কোথায় দামে পাওয়া যায়, কোথা থেকে কোন মাল আনতে হয়। সে খুব বুঝল যে শুধু বেচার মধ্যে ব্যবসা নয়, কিনার মধ্যেই আসল ব্যবসা হয়।

সে গ্রামের দোকানদারদের সাথে যেমন কাজ করত তেমনি গ্রামের কৃষকদের সাথেও কাজ করত। তাদের সাথে সে হাল চাষ থেকে শুরু করে ঝাড়াই-মারাই সব কাজই করত। তবে এখানে ও সে একটা শর্ত রাখল। যখন যে ব্যবসা শুরু করবে তখন যদি দরকার হয় তাকে কিছু ধান-চাউল দিয়ে সাহায্য করতে হবে। গ্রামের কৃষকরা বিনা পয়সায় এমন কাজের লোককে হাত ছাড়া করত না। মগনলাল এমন করে চাষ-বাসের কলা কৌশল ও অনেক জেনে গেল। যখন তার স্কুলের পড়া শেষ হল তখন তার আর কাজের অভাব রইল না।

তার মনে হল এবার সে ব্যবসা শুরু করতে পারে। কিন্তু কি ব্যবসা? ততদিনে সে জানত যে তার গ্রামে কি কি ধান চাষ হয়, কি কি ভাল চাউল পাওয়া যায়। আর কোন বাজারে সে চাউলের দাম কত সেটাও তার নখ দর্পণে ছিল। ব্যাস সেদিন থেকেই তার ব্যবসা শুরু হয়ে গেল। সে এক কৃষকের কাছে গেল তার প্রয়োজন মত কিছু চাউল নিলো। তবে বিনা পয়সায় নয়। সে কৃষককে বলল এগুলি বিক্রি করে তবেই পয়সা দেবে। একে তো সবাই মগনলালকে ভাল বাসত তার উপর গ্রামের ছেলে একটা নতুন কাজ শুরু করতে যাচ্ছে তাই সেই কৃষক বেশ খুশি-খুশিই রাজি হয়ে গেল।

মগনলাল সেই চাউল নিয়ে সোজা শহরের সেই বাজারে চলে গেল, যেখানে এই চাউলের চাহিদা খুব বেশী আর দামও ভাল পাওয়া যায়। শুরু হয়ে গেল মগনলালের ব্যবসা। যারাই তার কাছে সেই চাউল কিনতে আসত সে তাদের বলত যে, তারা যদি চায় তবে সে প্রতি মাসে তাদের ঘরেই সেই চাউল সস্তায় পৌঁছে দেবে। অনেকেই রাজি হয়ে গেল। যেহেতু মগনলালের চাউলের গুণাগুণ খুব ভাল ছিল এবং মগনলাল ইমানদার ও মিষ্টি ভাষী ছিল ফলে মাস ঘুরতে না ঘুরতেই মগনলালের চাউলের চাহিদা অনেক বেড়ে গেল। যারা তার চাউল নিয়ে গিয়েছিল তাদের অনেকেই আশে-পাশের লোকদেরকে মগনলালের নাম সুপারিশ করল। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই মগনলালের হাতের নীচে তিনজন গ্রামের লোক কাজ করতে লাগল। গ্রামের কৃষকদের সব চাউল অগ্রিম কিছু টাকা দিয়ে ও কিনে রাখল মগনলাল। কৃষকরা ও তাতে বেশ খুশি। গ্রামের ছেলে এত বড় ব্যবসা জুড়ে দিয়েছে। এখন আর ধান চাউল বেচতে অন্য কোথাও যাওয়ার দরকার নেই। চাউলের দাম নিয়ে দরাদরি ও করতে হবে না আর টাকা ফিরত পেতে দশবার চক্কর ও কাটতে হবে না।

কিছুদিনের মধ্যে সে চাউলের পাশা-পাশি তাজা সব্জির ব্যবসাও শুরু করে দিল। যেখানে-যেখানে সে চাউল বিক্রি করত তারাই তার সব্জির গ্রাহক। ক্রমে তার চাউলের চাহিদা এমন বাড়ল যে সে পাশের গ্রামের কৃষকদের কাছ থেকেও সারা বছরের চাউল-সব্জি কিনতে লাগল। কয়েক বছরের মধ্যেই মগনলাল এক ধনী শেঠ। তার নীচে গ্রামের প্রায় দশজন লোক কাজ করে। তবে সে পয়সার গরিমায় আকাশে উড়েনি। তার পা ঠিক মাটিতেই ছিল। রোজ সে গ্রামে একটা চক্কর লাগাত আর এর-ওর ঘরে গিয়ে বসত। তার হাল-চাল জানত। কোন প্রয়োজন হলে সাহায্য করত। এক মগনলাল সারা গ্রামটাকে যেন নিজের বুকে আগলে রাখল। আর গ্রামের লোক ও ভাবত যে তাদের কোন ভয় নেই, পিছনে মগনলাল আছে।

আর সেই শিক্ষক? সেই শিক্ষকের বাড়িতে প্রতি মাসে সবার আগে মগনলাল নিজে চাউল নিয়ে যায়। হাজার চেষ্টা, বকা-ঝকাতে করেও তিনি মগনলালকে সেই চাউলের জন্য এক পয়সাও দিতে পারেন নি।


## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers. The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation. Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##


◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717
All Pages     3    4    5    6    (7)     8    9    10    ...