Home   |   About   |   Terms   |   Library   |   Contact    
A platform for writers

নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস

নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ আমাদের এই ওয়েবসাইট ( RiyaButu.com )-এ প্রকাশিত গল্পগুলির মধ্যে থেকে কিছু গল্প নিয়ে এবছরই প্রকাশিত হবে আমাদের 'রিয়াবুটু'র গল্প'।
--------------------------



nalanda university
## নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচয়
নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় ( ৪২৭ খ্রীঃ থেকে ১১৯৭ খ্রীঃ) ছিল পৃথিবীর একটি বিখ্যাত শিক্ষাকেন্দ্র। যখন এই বিশ্ববিদ্যালয় গঠিত হয় তখন শুধু পৃথিবীতে তক্ষশীলার বিশ্ববিদ্যালয়েরই অস্তিত্ব ছিল। পাশ্চাত্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলি নালন্দার কয়েক শত বৎসর পরে স্থাপিত হয়।

তক্ষশীলা বিশ্ববিদ্যালয়: ( বর্তমানে উত্তর পাকিস্তান) আনুমানিক ৭০০ খ্রীষ্টপূর্বে স্থাপিত হয়। ইহা ৮ম শতকে হূন আক্রমণ দ্বারা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।

অল আজহর বিশ্ববিদ্যালয়: কাইরো'র এই বিশ্ববিদ্যালয় ৯৭২ খ্রীঃ গঠিত হয়।

বোলোগনা বিশ্ববিদ্যালয়: ইটালীর এই বিশ্ববিদ্যালয় ১০৮৮ খ্রীঃ গঠিত হয়।

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়: ইংল্যান্ডের এই বিশ্ববিদ্যালয় ১১৬৭ খ্রীঃ গঠিত হয়।

নালন্দা ছিল পৃথিবীর প্রথম আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়। এখানে ছাত্ররা থেকে-খেয়ে পড়াশুনা করতেন। গুপ্ত যুগে নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়। পরবর্তী সময়ে পাল রাজারা এর দেখাশুনা করেন। প্রায় ৮০০ বছর ধরে এই বিশ্ববিদ্যালয় হিন্দু এবং বৌদ্ধ রাজা বা সম্রাটদের অনুশাসনে চলেছিল। পালি ভাষায় নালম শব্দের অর্থ হল পদ্ম আর দা শব্দের অর্থ হল দেওয়া বা দান। পদ্ম আবার জ্ঞানের প্রতীক। এই দুই শব্দ 'নালম' আর 'দা' মিলেই হয়েছে নালন্দা। যার অর্থ বিদ্যা দান বা জ্ঞান দান। কথিত আছে যে নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনার বহু যুগ আগে, গৌতম বুদ্ধ তার জীবন কালে বহুবার এই স্থানে এসেছিলেন এবং থেকেছিলেন। ঠিক তেমনি তীর্থঙ্কর মহাবীর ও তার জীবন কালে এই স্থানে এসেছিলেন এবং প্রায় ১৪ বছর এখানে থেকেছিলেন। তখনো নালন্দার স্থাপনা হয়নি। ফলে হিন্দু, বৌদ্ধ ও জৈনদের কাছে এই স্থানটির গুরুত্ব অপরিসীম। শিক্ষার পীঠস্থানের পাশাপাশি এটি একটি পবিত্র স্থান ও ছিল।

## নালন্দার ভৌগলিক অবস্থান
নালন্দা তৎকালীন মগধ রাজ্যে অবস্থিত ছিল। বর্তমানে এই স্থানটি বিহার রাজ্যে অবস্থিত। পাটনা থেকে নালন্দার দূরত্ব প্রায় ৮৮ কিমি। বর্তমানে সেই বিখ্যাত নালন্দা, বহু রক্ত আর হত্যার সাক্ষী হয়ে একটি নির্বাক, নিথর ধ্বংসস্তূপে পরিণত।

## কিভাবে নালন্দা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়?
১১৯৭ খ্রীঃ মহান নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় এক মুসলিম বাহিনীর দ্বারা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। সেই বাহিনীর নেতৃত্ব দিয়েছিলেন মোঃ বিন বক্তিয়ার খলজী। তিনি ছিলেন মোহম্মদ ঘোরীর এক সেনাপতি। কথিত আছে যে বক্তিয়ার খলজী শুধু প্রশ্ন করেছিলেন যে এখানে কুরান আছে কিনা? এখানে কুরান পড়ানো হয় কিনা? যেহেতু উত্তরে উনার অনুগতরা ' না ' বলেছিল তাই খলজী মহান এই বিদ্যাপীঠটি, বিশ্ব বিখ্যাত এই স্থানটিকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেয়। হাজারো সাধু, ভিক্ষু, ছাত্র ও শিক্ষকদের জীবন্ত জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। হাজারো সাধু, ভিক্ষুর মুণ্ডচ্ছেদ করা হয়। কথিত আছে যে খলজী নালন্দাতে ৫০০০ ও বেশী ছাত্র ও শিক্ষককে এক সাথে হত্যা করেন। হাতে গোনা কয়েকজনই শুধু তাদের প্রাণ বাঁচাতে পেরেছিলেন। এখানেই শেষ না, খলজী নালন্দার আত্ম, নালন্দার পাঠাগারটিকে জ্বালিয়ে দেন। এই পাঠাগারে কয়েক লক্ষ্য বই পুড়ে ছাই হয়ে যায়। কথিত আছে যে এই পাঠাগারে এত বই ছিল যে ক্রমাগত ৩মাস পাঠাগারটি জ্বলেছিল। এই পাঠাগারটির সাথেই শেষ হয়ে গেল অমূল্য সব হাজার হাজার বই, হাজার হাজার জ্ঞান যা পৃথিবী আর কোনদিন পুনরুদ্ধার করতে পারেনি, হয়তো পারবেও না। চিকিৎসা শাস্ত্র, রসায়ন শাস্ত্র, আয়ুর্বেদ, মহাকাশ বিদ্যা, জ্যোতির্বিদ্যা, যোগ শাস্ত্র, তন্ত্রবিদ্যা, দর্শন শাস্ত্র প্রভৃতির বহু অমূল্য জ্ঞান ও বই চিরতরে পৃথিবীর বুক থেকে হারিয়ে গেল। এই ক্ষতি সমগ্র পৃথিবীর, সমগ্র মানবজাতির। সেই ধ্বংসলীলায় আরও একটি জিনিস ধ্বংস হয়ে যায়। সেই আক্রমণের ফলে বৌদ্ধধর্ম কয়েকশ বছর পিছিয়ে যায়। কারণ সেই আক্রমণে তার ধর্মীয়গ্রন্থ, ধর্মীয় বিদ্বানদের একটা বড় অংশ নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। সেই আক্রমণের পর থেকেই ভারতে বৌদ্ধধর্মের হার দ্রুত হারে কমতে থাকে। পরে যখন তিব্বতের বিদ্বান চাগ লো তাসাবা (Chag Lo-tsa-ba, 1197 - 1264), ১৯৩৫ সালে ভারত ভ্রমণে আসেন, তখন তিনি নালন্দাকে দেখেছিলেন একটি মৃত, ধ্বংসপ্রাপ্ত ইতিহাস রূপে। কিন্তু তিনি এ ও দেখেছিলেন যে, তখনো নালন্দাতে ৯০ বছরের একজন শিক্ষক, রাহুল শ্রীভদ্র তার ৭০জন ছাত্রের মধ্যে জ্ঞান বিতরণ করে চলছেন। স্থানীয় হিন্দুরা উনাকে সাহায্য করছিলেন। সম্ভবত সেটাই ছিল নালন্দায় শেষ শিক্ষাদান।

## আমরা কিভাবে নালন্দা সম্পর্কে জানতে পারি?
নালন্দার মুখ্য এবং গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলি আমরা চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাং এর লেখা থেকে জানতে পারি। এই চীনা পরিব্রাজক ৬২৭ খ্রীঃ এখানে এসেছিলেন এবং ২ বছর এখানে বৌদ্ধধর্ম নিয়ে পড়াশুনা করেছিলেন। তিনি তার লেখায় নালন্দা সম্পর্কে অনেক মূল্যবান তথ্য রেখে যান। পরবর্তীকালে তিব্বতের চাগ লো তাসাবা (Chag Lo-tsa-ba, 1197 - 1264), ১৯৩৫ সালে যখন ভারতে আসেন তিনি ও নালন্দার শেষ ইতিহাস সম্পর্কে অনেক মূল্যবান তথ্য লিখে রেখে যান।

## নালন্দার আকার আয়তন
প্রায় ১৪ হেক্টর জায়গা নিয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয় অবস্থান করছিল। হিউয়েন সাং এর তথ্য থেকে জানা যায় যে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ১০৮ টি মন্দির ছিল, সাথে ছিল ৮ টি বিশাল আলাদা আলাদা হল ঘর, ৩০০ টি আলাদা কামরা, একটি বিশাল পাঠাগার, ধ্যানের জন্য আলাদা হল ঘর এবং ক্লাসরুম। বিশ্ববিদ্যালয়ের চারিদিকে ছড়িয়েছিল বাগান এবং পুকুর। সমগ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমানা পাথরের উঁচু প্রাচীর দিয়ে ঘেরা ছিল। তাতে প্রবেশের শুধু একটি মাত্রই ফটক ছিল। নালন্দার স্থাপত্য দেখে বর্তমানের কি সাধারণ মানুষ, কি বাস্তুকার, কি বিজ্ঞানী সবাই অবাক হয়ে যান। নালন্দার পাঠাগারটিকে বলা হত ধর্মগজ্ঞ। ধর্মগজ্ঞতে ছিল ৩টি বিশাল বিল্ডিং। তাদের নাম ছিল রত্নসাগর, রত্নদধি, রত্নরজ্ঞক। এদের মধ্যে রত্নসাগর ছিল ৯ তলা বিশিষ্ট বিল্ডিং। নালন্দার পাঠাগারটিই ছিল নালন্দার প্রাণ ও আত্মা।

## নালন্দার ইতিহাস
নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় হাওয়ার পূর্বে সেই স্থানটি ছিল উন্নত এবং ধন-সম্পদপূর্ন একটি জনবসতি। এই অঞ্চলটির পাশ দিয়ে একটি মুখ্য বাণিজ্যিক রাস্তা মগধের তৎকালীন রাজধানী রাজগৃহ শহর পর্যন্ত চলে গিয়েছিল। সে রাজগৃহ শহরই বর্তমানে রাজগীর নামে পরিচিত।

## নালন্দার ছাত্র ও পড়াশুনা
নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ১০,০০০ ছাত্র পড়াশুনা করতেন। তাদের জন্য ছিলেন প্রায় ২০০০ শিক্ষক। বিশ্বের বহু দেশ থেকে এখানে ছাত্ররা পড়াশুনা করতে আসতেন। তাদের মধ্যে প্রধান দেশগুলি হল চীন, গ্রীস, ইন্দোনেশিয়া, জাপান, কোরিয়া, পারস্য, শ্রীলঙ্কা, তিব্বত প্রভৃতি। এখানে ভর্তির প্রক্রিয়া ছিল খুব কঠোর এবং কঠিন। শিক্ষার্থীকে অনেকগুলি পরীক্ষার মধ্য দিয়ে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করতে হত। এখানে অনেক অনেক বিষয় নিয়ে পড়াশুনা এবং গবেষণা হত। যে সব বিষয় নিয়ে এখানে পড়াশুনা এবং গবেষণা হত তাদের মধ্য মুখ্য বিষয়গুলি হল:
দর্শনশাস্ত্র, ব্যাকরণ, তর্কশাস্ত্র, আয়ুর্বেদ, চিকিৎসাশাস্ত্র, সংস্কৃত, পালি, হিন্দুশাস্ত্র, মধ্যমিকা, তন্ত্রশাস্ত্র, মহাকাশ বিজ্ঞান, জ্যোতির্বিদ্যা, যোগশাস্ত্র, সাহিত্য ইত্যাদি। ছাত্র বা শিক্ষক যারা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে যুক্ত ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন নাগার্জুন, আসঙ্গ, সন্তরক্ষিত, রাহুলভদ্র, কমলশীল, পদ্মসম্ভব, অতীশ, শীলভদ্র প্রমুখ।

## বর্তমানে নালন্দা
নালন্দা ধ্বংসের পর বহু সময় গড়িয়ে গেছে কালের স্রোতে। শেষে ১৯১৫ খ্রীঃ প্রথম এখানে খনন কার্য শুরু হয়। সেই খনন কার্য চলে ১৯৩৭ খ্রীঃ পর্যন্ত। পরে ১৯৭৪ সালে আবার খনন কার্য শুরু হয় আর তা শেষ হয় ১৯৮২ সালে। ১৯১৭ সালেই নালন্দার জাদুঘর গঠিত হয়। ১৫ই আগস্ট ২০০৭ সালে ভারতের জনপ্রিয় রাষ্ট্রপতি ডঃ এ. পি. জে আবদুল কালাম নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুনরুদ্ধারের কাজে এগিয়ে আসেন। ভারত সরকার নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়কে আবার নতুন রূপে শুরু করেন। নোবেল পুরস্কার বিজয়ী স্বনামধন্য অমর্ত্য সেনের মার্গ দর্শনে এই নতুন বিশ্ববিদ্যালয় আবার শুরু হয়। ইউনেস্কো মহান নালন্দা মহাবিহারকে বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতি দিয়েছে। নালন্দা চিরকাল ভারতবাসীর একটি গর্বের বিষয় থাকবে।
## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers. The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation. Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##


◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717